যা থাকছে বশেমুরমেবির ওশানোগ্রাফিতে

আমাদের দেশের সমুদ্রসীমা ১,১৮,৮১৩ বর্গ কি.মি.। যা আমাদের স্থলভাগ থেকে শুধুমাত্র ২৮,৭৫৭ বর্গ কি.মি. ই কম।

সমুদ্রের এই অঞ্চলগুলো নিয়ে গবেষণা এবং পরবর্তীতে সম্পদ আহরণের জন্য যথোপযুক্ত দক্ষ কারিগর তৈরি করতে আজকের এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের আগমন।

সমুদ্রবিজ্ঞান ও জলবিজ্ঞান বিভাগটি আর্থ এন্ড ওশান সাইন্স অনুষদের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

সমুদ্র সম্পর্কে পড়াশোনা ও গবেষণার যথেষ্ট প্রয়োজন রয়েছে। সমুদ্রবিজ্ঞান মুলত চার অংশে বিভক্ত।

• তাত্ত্বিক সমুদ্রবিজ্ঞান (বায়োলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি): যেখানে মূলত সামুদ্রিক জীবজগৎ সম্পর্কে পড়ানো হয়।

• রাসায়নিক সমুদ্রবিজ্ঞান (কেমিক্যাল ওশানোগ্রাফি): এই অংশে থাকে সমুদ্রের রাসায়নিক উপাদান, সেগুলোর বিন্যাস ও বিক্রিয়া নিয়ে পড়াশোনা।

• ভৌত সমুদ্রবিজ্ঞান (ফিজিক্যাল ওশানোগ্রাফি): এই অংশে পড়ানো হয় সমুদ্রস্রোত, জোয়ার–ভাটা, তাপমাত্রা, ঘনত্ব ইত্যাদি ভৌত বিষয় সম্পর্কে।

• ভূতাত্ত্বিক সমুদ্রবিজ্ঞান (জিওলজিক্যাল ওশানোগ্রাফি): যে অংশে প্রাধান্য পায় সমুদ্র তলদেশের ভূতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

এই চারটি অংশের যেকোনো একটিতে বিশেষায়িত হওয়ার সুযোগ থাকলেও, সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করার ক্ষেত্রে প্রতিটি অংশই সমান গুরুত্বপূর্ণ।

নব্যযুক্ত এই বিভাগের ভবিষ্যৎ ঠিক কী?

বর্তমানে সমগ্র পৃথিবীতে ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতি বেশ সম্ভাবনাময়। আমাদের দেশে সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ অথবা জীবজগৎ বিষয়ে যতটা গবেষণা হয়েছে, সমুদ্রের ভৌত, রাসায়নিক এবং ভূতাত্ত্বিক বিষয়ে এখনো ততটা গবেষণা হয়নি।

বঙ্গোপসাগর সম্পর্কিত বহু বিষয় এখনো অজানা। কাজেই বাংলাদেশে সমুদ্রবিজ্ঞানে প্রচুর গবেষণার ক্ষেত্র রয়েছে। সামুদ্রিক পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করা, সমুদ্রদূষণ, জলবায়ুর প্রভাব ও অন্যান্য বিরূপ অবস্থা প্রতিরোধ ও প্রতিকারের জন্য সমুদ্র–সম্পর্কিত সব ধরনের তথ্য সংগ্রহের প্রয়োজন।

কিন্তু দেশে সমুদ্র গবেষণার ক্ষেত্রে দক্ষ জনশক্তির অভাব রয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী তাঁর মেধাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন।

ক্যারিয়ার পার্সপেক্টিভঃ

সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশোনা করলে সব সময় যে কেবল সমুদ্রে ঘুরে ঘুরে বেড়াতে হবে—তা কিন্তু নয়।
তথ্য সংগ্রহের কাজে কখনো কখনো সমুদ্রে অথবা সমুদ্র উপকূলে যাওয়ার প্রয়োজন হতে পারে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্যাটেলাইট ডেটা অথবা কম্পিউটারে মডেলিং করার মাধ্যমেও সমুদ্রে না গিয়ে কাজ করা সম্ভব। কিছু কিছু কাজ ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে করা যায়।
কাজেই সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত কাজের ক্ষেত্র ব্যাপক ও বিস্তৃত।

সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ে গবেষণা অথবা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। সে ক্ষেত্রে সমুদ্রবিজ্ঞানের কোনো বিশেষ অংশের ওপর পিএইচডি করে নেওয়া ভালো।

আমাদের দেশে সমুদ্রবিজ্ঞান–সম্পর্কিত বেশ কিছু গবেষণা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট।
সরকারি, বেসরকারি ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পরিবেশ–সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিষ্ঠান অথবা বিভিন্ন নীতিনির্ধারণী প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে কাজের সুযোগ রয়েছে।

কারা পড়বে?

সমুদ্র দেখতে অথবা সমুদ্রের পাড়ে বেড়াতে ভালোবাসে না—এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। তবে সমুদ্রবিজ্ঞান পড়তে হলে সমুদ্রের প্রতি ভালোবাসা থাকার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থীকে অবশ্যই বিজ্ঞানমনস্ক হতে হবে।

পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত এবং জীববিজ্ঞানের ওপর ভালো দখল থাকতে হবে। একই সঙ্গে ভালো ইংরেজি তো জানতেই হবে। কারণ, এ বিষয়ের বেশির ভাগ বই ইংরেজিতে লেখা।

ভৌত সমুদ্রবিজ্ঞান পড়ার ক্ষেত্রে কম্পিউটারের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ জানা থাকলে ভালো।

এ ছাড়া সমুদ্রবিজ্ঞান গবেষণার ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানের প্রয়োজন হয়।

সমুদ্রের অজানা রহস্যকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ করার মতো যার উৎসাহ ও আগ্রহ আছে সমুদ্রবিজ্ঞান তার জন্যই।

 

তাসনুর জাহান মীম,

বশেমুরমেবি প্রতিনিধি।

তথ্য সহায়তায়ঃ রাহাত রেজওয়ান!