সাদা ভাল্লুক

সাহেব ৷ কিছু মনে কইরেন না, আপনেরে একখান কথা কওনের লাইগা মনটায় খচ খচ করতাছে। আপনে এইহানে আর থাইকেই না। জায়গাটা ভালা না। মেলা বদনাম আছে এই জায়গা লইয়া। আপনে তো শুনছেনই। কেউই আর এইহানে থাকবার চায় না। সবাই জানের ভয়ে পলায় যাইতেছে ।

কেই বা মরবার চায় কন! আর যাগোরে অন্য কোথাও যাওনের যায়গা নাই, হেরা সন্ধ্যার পর আর ঘর থাইক্যা ব্যাইর হয় না। মাইনষে ডরায়! রাইত হইলেই এইহানে ভাল্লকেুকের দেখা পাওন যায়! সাদা ভাল্লকু ! সাহেব আপনি অনেক ভালা মানুষ আছেন ।

আমার ছেলে টারে আপনে নিজের খরচে ঢাকায় পড়াশোনা করাইতেছেন। আপনের কিছু হইলে আমি মইরাও শান্তি পামুনা।আপনে এইহানে আর থাইকেন না।

কথাগুলো একটানা বলে বড় বড় চোখ করে শরিফ সাহেবের দিকে চেয়ে থাকলেন বাড়ির কেয়ারটেকার মতিন মিয়া।

শরিফ সাহেব আজকেই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এসেছেন তার পুরোনো বাড়িতে ।এখানে মতিন চাচা ছাড়া কেউই আর থাকেনা। শুধু বাড়ির মালিক শরিফ সাহেব মাঝে মাঝে এখানে আসেন তার ফ্রি সময়টা কাটাতে । কিন্তু এবার তিনি এসেছেন অন্য কারনে !

শরিফ সাহেব চোখ বন্ধ করে চেয়ারে বসে থেকে ই মতিন চাচার উদ্দেশ্যে বললেন
– মতিন!
– জি সাহেব
– আপনিতো সাদা ভাল্লকুটিকে দেখেছেন তাই না?
– জি সাহেব।
– কোথায় দেখেছেন?
-বাড়ির পিছনের জংগলের ভিতরে ।
-কটার দিকে ?

– তা ঠিক কইবার পারি না সাহেব। তয় মাঝ রাইত হইবো
– আপনি এত রাতে বাড়ির পিছনে জংগলের ভেতরে কি করছিলেন?
– ঘুম আসতেছি ল না সাহেব। তাই বাইরে বের হইছিলাম। তহন জংগলের ভে তর থাইকা শব্দ শুনবার পাই। আমি চোর ভাইবা কাছে গেছিলাম আর তখনই…..

শরিফ মতিন চাচার দিকে তাকালেন। মতিন চাচার দুচোখ জ্বর জ্বল করছে। মুখে মৃদু হাসি ! শরিফ সাহেব চোখ সরিয়ে নিয়ে চোখে মুখে অনেকটা বিরক্তি নিয়ে বললেন

– মতিন চাচা, আপনি জানলে অবাক হবেন যে বাংলাদেশ এ একসময় ৩ প্রজাতির ভাল্লুক পাওয়া যেত।সময়ের সাথে সাথে সব জংগল আর পারহাড় কেটে ফেলার কারণে সব প্রজাতির ভাল্লকুই বিলুপ্ত হয়ে যায়। আর এই ৩ প্রজাতির মাঝে সাদা ভাল্লকু ছিলো না।আপনি ভুল দেখেছেন মতিন চাচা। আপনি অন্য কোনো কিছুকে সাদা ভাল্লকেুকের সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন।

মতিন চাচা শরিফ সাহেবের দিকে বড় বড় চোখ করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন
– সাহেব আমি ভুল দেহি নাই। আমি জানি আমি কি দেখছি ।
– আপনার কথার কোনো ব্যাখ্যা দাড় করানো যায় না
– সাহেব পৃথিবীতে অনেক কিছুই হয় যার কোনো ব্যাখ্যা পাওন যায় না।
শরিফ সাহেব চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালেন।
– মতি ন চাচা?
– জি সাহেব
– আপনি কি আমাকে সেই জায়গাটা দেখিয়ে দিবেন যেখানে আপনি সেই সাদা ভাল্লকুটিকে দেখেছেন?

– সাহেব আপনের অই পাশে এই রাইতে যাওন ঠিক হইবো না
– সেটা আমি বুঝে নিবো। আপনি আমাকে সেই জায়গাটা দেখিয়ে দিন
– সাহে ব!

শরিফ সাহেব আর কথা বাড়ালেন না।তিনি বাংলোর পি ছনে যাওয়া শুরু করলেন। জায়গাটা আজ খুব অদ্ভত রকমের শান্ত হয়ে রয়েছে । দম বন্ধ করা নিরবতা। বাড়ির পি ছন পাশটায় কোনো আলো নেই। শরিফ সাহেব পকেট থেকে ফোনটা বের করে লাইট অন করলেন।হেটে চাললেন সেই জায়গাটির উদ্দেশ্যে। সেই জায়গা!

শরিফ সাহেব এখন দাড়িয়ে আছেন তার বাংলোর পিছনে খালি জায়গাটিতে । জায়গাটা খুব একটা বড় না হলেও ছোট বলা যায় না। মতিন চাচা আসেনি তার সাথে । শরি ফ সাহেব একাই দাড়িয়ে আছে সেই জায়গাটিতে যেখানে মতিন চাচা সেই সাদা ভাল্লকুটিকে দেখে ছিল।

শেষাংশঃ শরিফ সাহেব দৌড়াচ্ছেন প্রাণপণে । তার শরীর কাপছে । সেই জায়গা! না জায়গাটিতে কোনো সাদা ভাল্লকু ছিলো না।সেখানে একটি দেহ পড়ে ছি ল।মতিন চাচার দেহ।দেহটির নিচের আংশ ছিন্ন ভিন্ন যেন কোনো প্রাণী খুবলে খেয়েছে । শরিফ সাহেবের মাথায় কিছু ঢুকছে না। এতোক্ষণ তাহলে তার সাথে কে ছিল? হঠাৎ শরিফ সাহেব শুনতে পেরো বীভৎস এক অট্টহাসি । কে যেন পেছন থেকে বলতে লাগলো

– সাহেব কইছিলাম না,পৃথিবিতে মেলা কিছুই ঘটে যার কোনো ব্যাখ্যা পাওন যায় না। জায়গাটা ভালা না সাহেব। আপনে এনে আর আইসেন না কখনো। মাইষে ডরায়। সাদা ভাল্লুকের ডর।

গল্পঃ সাদা ভাল্লুক
লেখকঃ রুবায়েল হাসান সুমন