প্রিয় শিক্ষকঃ টেরেন্স পিনেরো, নটরডেম

নটরডেম কলেজের ইংরেজী বিভাগের জাঁদরেল অধ্যাপক , প্রয়াত টেরেন্স পিনেরো স্যারের বেল্টের বাড়ি যেই কয়টা পোলাপান খাইছে – সবগুলা লাইনে চইলা আসছে । পুরা সরল রেখায় !

আমিও খাইছি ….. একবার না , বেশ কয়েকবার। প্রতিবারই বাঁন্দরামীর জন্য । একবার এক সুন্দরী মিস আমাকে বেল্টের বাড়ি খাওয়াইছিলো ।

মিসের নাম ছিলো – ‘ রোজ মেরি গুডা ! ‘ মিস আমাদের ইংরেজী পড়াতেন ! কিসের ইংরেজী পড়বো …….. আমি হা কইরা মিসের দিকে তাকায়া থাকতাম । এতো সুন্দর মানুষ হয় !!! কলেজ জীবন , খুবই প্রমত্তা !

একদিন কলেজের সিঁড়ি দিয়া উঠতেছি ! মিসও উপর থেকে নামতেছেন , হঠাৎ মিস ডাইনে যান , আমিও ডাইনে , মিস বামে গেলে আমিও বামে ! সত্যি সত্যিই ক্রস হচ্ছিলো বারবার , অনিচ্ছাকৃত । মিস ভাবলেন আমি তাঁর সাথে বান্দরামী করতেছি ! মিস দাঁড়িয়ে গেলেন , আমিও দাঁড়ায়া গেলাম । মিস অনেকক্ষণ মুখের দিকে তাকিয়ে নেমে গেলেন ।

একটু পর ক্লাস থেকে টেরেন্স স্যার ডেকে পাঠালেন , স্যারের রুম থেকে যখন বের হলাম , বেন্চে নিতম্ব বসাতে গিয়ে দেখি জ্বলতেছে ! চুল আর চেহারার জিওগ্রাফী পুরা চেইন্জ আমার !

মিস রোজ মেরি গুডা হয়তো অনুতপ্ত হয়েছিলেন ! আমাকে ডেকে জিজ্ঞেস করেছিলেন ট্যারেন্স পিনেরো স্যার বেশি মেরেছিলেন কিনা ! আমার যতোদূর মনে পড়ে আমি বিড়বিড়িয়ে বলেছিলাম – ‘ আমি কি দোষ করেছিলাম ! আপনি এতো অহংকারী কেনো ? ‘
এরপর থেকে মিস রোজ মেরি যেই পথে আসতেন আমি তার উল্টো পথে আসতাম , কি দরকার হুদাহুদি ক্রসফায়ারে পড়ার ! মিস আজ কেমন আছেন কে জানে !

টেরেন্স স্যারের একটা জার্মান শেফার্ড কুকুর ছিলো ! ঐটারে নিয়া কলেজে আসতেন । ঐটা স্যারের চেয়েও তেজী ছিলো । সারাক্ষণ ঘেডি ঘুরাইতে থাকতো কম্পাসের কাঁটার মতো ।
মনে হইতো হেতে নিজেই শার্লক হোমস ।

কলেজের পোলাপানের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতেছে । একটু পর ঘেউ ঘেউ কইরা টেরেন্স পিনেরো কে বলবে – ‘ ওস্তাদ !!! ঐটা একটু আগে বিড়ি টানছে কলেজের চিপায় ….. ঘেউ ! ওরে একটু বেল্টের ডোজ দিয়া দেন ….. ঘেউ ঘেউ ! বুস্টার ডোজ , ঘেউ ঘেউ ঘেউ !!!

স্যারের শেফার্ড টা মরে গেলো হঠাৎ ! স্যারের সে কি কান্না , আর আমাদের সে কি আনন্দ , যেনো ঈদে পটকা ফুটাইতেছি !

অদ্ভুত সুন্দর ইংরেজী পড়াতেন স্যার ! Marjorie Kinnan Rawlings এর ‘ A Mother in Mannville ‘ পড়ানোর সময় প্রতিটা স্টুডেন্টই হাউমাউ করে কাঁদতো । কি আবেগ ! কি উচ্চারণ , কি বাচনভঙ্গী !

আমি চিকিৎসক হবার পর স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম আরামবাগ ! স্যার খুবই অসুস্হ্য তখন , অবসরে গেছেন ! পাশে বসালেন , নিজে চা বানিয়ে খাওয়ালেন ! আমার হাঁটু কাঁপতেছে দেখে বললেন – ‘ My dear Child ! Don’t be nervous ! Now you are beyond the range of my belt . You are the most respected person . I am proud of you . ‘
আমার চোখ দিয়ে গলগল করে পানি বেয়ে পড়ছে , বুড়ো টেরেন্স চায়ে চুমুক দিচ্ছেন !

টেরেন্স পিনেরো স্যার মারা গেছেন ! আমি তাঁর বেল্টের বাড়ি গুলা মিস করি , আমি আমার পার্থিব অপার্থিব ভুল শুধরানোর জন্য চাই – টেরেন্স পিনেরোর মতো আবার কেও আমাকে বেল্ট দিয়ে পিটাক , দিন রাত পিটাক , ট্রস ট্রস করে পিটাক !

ওপারে ভালো থাকবেন স্যার ! যতোগুলা বাঁদরকে আপনি মানুষ বানিয়েছেন বেল্ট দিয়ে পিটিয়ে , একটার মনেও আপনার উপর কোনো অভিযোগ নেই , সবগুলাই প্রতিষ্ঠিত , একটাও জীবনে হতাশ হয়নাই , ঝরে পড়ে নাই ! আপনার হাজার হাজার প্রতিষ্ঠিত ছাত্র আমরা সবাই আজও সেই চামড়ার বেল্টের বাড়ি গুলা সীমাহীন মিস করি , আমৃত্যু করবো !

লেখা:- Asif Soikot ( আসিফ শুভ্র )