দ্য ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডস

মাসকাওয়াথ আহসান

সেই যে সংগ্রাম পত্রিকার যারা আইয়ুব খানের ও ইয়াহিয়ার আদরের কানমলা খেয়ে যারা উন্নয়ন ঢোল বাজাতো; তাদের জীনগত আশ্লেষে দৈনিক দিনকে রাত করা পত্রিকার পাজি সিরাজেরা যেমন গোলাপী রাণীর আদরের কানমলা খেয়ে উন্নয়ন ঢোল বাজাতো; ঠিক তেমনি গোপালী রাণীর আদরের কানমলা খেয়ে খঞ্জনি খুকনেরা তেমনি দৈনিক মেটামরফসিস বা দিনকে রাতে রূপান্তরের রাজভোঁদড় হয়েছে।

রাজাকার থেকে রাজভোঁদড়ে রূপান্তরের এই গল্পটি পিম্পস অফ পাপিয়া লাইফ গল্পে আরো যেন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আজ ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডস-এর দুলালেরা ইয়াহিয়ার অংকশায়িনী ব্ল্যাক বিউটিদের প্রতি ঘৃণার গল্প করোটি খুঁড়ে বের করে আনে; যৌবন জ্বালা পর্ন ওয়েবসাইটে।

অথচ রাজাকারেরা যেরকম ব্ল্যাক বিউটি সাপ্লাই করতো ক্ষমতার হারেমে; ঠিক তেমনি করে দিনকে রাত করা রাজভোঁদড়েরা অদিতিদের পৌঁছে দিয়ে এসেছে হাওয়া প্রাসাদে। যুবরাজের জন্য হলুদিয়া পাখির উপঢৌকন পৌঁছে দিয়ে সাংস্কৃতিক কালা বাবুলেরা যেরকম হম্বিতম্বি করে বাতাবি বেতার আর বাতাবি টিভিতে; সে এক দৃশ্যাতীত বর্বরতা।

সুরের জাদুঘর পুড়িয়ে দেয়া উটবাড়িয়ার রক্ত যেন কালা বাবুল ও কালা দুলালদের ক্ষমতার কোলধরা রাজভোঁদড়ে পরিণত করে।
সুচিন্তার সুবাতাসে ধারাপাত ভাইয়ারা যখন ‘দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট বিতরণী কেন্দ্র’ গড়ে তোলে; তখন দেশ যে দুর্জয় উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে গেছে; তখন ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডরা ওয়েস্ট ইনে সার্টিফিকেট বিতরণের পিউ-পাপিয়া কনভোকেশন নাইটস এর আয়োজন করে।

দেশপ্রেমিকেরা একে একে পরতে থাকে সহি দেশপ্রেমের দক্ষিণীয় বা গামছা। চেতনার গামছা পরিয়ে দেন ইতিহাসের মুনতাসির ফ্যান্টাসির ‘ছুটিতে থাকি’ উপাচার্য ভাগ্নেটি; আর পাপিয়া তখন সোফায় বসে থাকে ভালোবাসার লাঠি নিয়ে। সে লাঠি দিয়ে পেছনে একটি বাড়ি খেলে দেশপ্রেমের প্রজাপতি চুম্বন পড়ে যায় বিভাজিত পেছন মুবারকে।

জিডিপি গ্রোথ উন্নয়ন পুরুষদের মানসম্পদ বলয়ে তোলপাড় তোলে। দেশপ্রেম মাথায় উঠে গেলে, তখন স্বদেশী আন্দোলনের নায়কদের যুবতী নারীর কোল আর মৌরালা মাছের ঝোল খাইতে মুঞ্চায়।

দ্য ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডসরা এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা, বেক্সিমকো, শেখ লজিটিকসের উন্নয়নের হারেমের খোঁজা বালক যেন। অন্য দেশে বিজনেস কোম্পানি থাকে; কিন্তু বিজনেস কোম্পানির একটি দেশ আছে। তাদের দায়িত্ব হচ্ছে শ্রমিক ও মেহনতি মানুষের রক্ত স্নানের বাবল বাথ নিয়েই বৈদেশিক মুদ্রার ঝনঝনানির হারেমে প্রবেশ।

সেইখানে ইউনিভার্সিটি অফ পাপিয়া, স্কুল অফ পিয়াসা-র সার্টিফিকেট পাওয়া কমফোর্ট উইমেন থরে থরে সাজিয়ে রাখে; আলো অন্ধকারে যেতে।
একাত্তরের জামাত থেকে একুশের হেফাজত উভয়েই তখন ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, একাই খাবি; নাকি আমগোরেও দিবি।

তখন তাদেরকে ভাগ দিতে হয়। অসাম্প্রদায়িক চেতনার কস্টিউম বদলে ইসলামি চেতনার কস্টিউম পরিয়ে স্ট্যালিনের রেড স্প্যারোদের পাঠাতে হয় সোনারগাঁ। পুরোনো রাজধানীতে। নতুন রাজধানীর বালাখানা কেবল অসাম্প্রদায়িক চেতনার ‘ধাক ধাক কারনে লাগাদের জন্য।’ কিন্তু সোনারগাঁও নিরাপদ নয়।

গুমগঞ্জের অসাম্প্রদায়িক চেতনার খেলা হবে এসে জিজ্ঞেস করে, তুমার সোনালী কাবিন কুথায়। অমনি রবীন্দ্র বিলাসী চারুলতারা প্রশ্ন তোলে তোতা পাখির মতো বলতে থাকে, কাবিন কুতায়; কাবিন কুতায়!

চৈতা পাগল লুটোপুটি খেতে খেতে থেকে থাকা আদিম হরষে; তারপর ভব’র ভাঁড় থেকে ভাং খেয়ে বলে, খাসামা বিন লাদের চরিত্র খারাপ। বিয়ার আশ্বাস দিয়া ধর্ষণ করছে। জান্নাতের জন্য ন্যায় বিচার চাই।

ফোনে হেফাজতের পালোয়ানের স্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর গাম্ভীর্যে বলে, আপনি আগে বাসায় আসেন। অমনি বাংলা লিক্স বুয়া কল ফাঁস করে দিলে, চক্কোত্তি খিল খিল হাসিতে পাড়া মাতিয়ে বলে ছাগু কুনহানকার; জয়শ্রীরাম! জঙ্গীডারে ধরছে। ডিম আন্ডে দেও; অস্ত্র খুঁজতে বাইরাও গো প্রদীপ দাদু।

হেফাজতের খিলাফতিরা আবার মনে করে, খাসামা বিন লাদেন যা করেন উহাই সহি; নারী হইতেছে গণিমতের মাল। উটবাড়িয়ার জিহাদের পর বিন লাদেন একটু ইশক করবেন তাতে অসুবিধা কী! আওমি করলে সংস্কৃতি লীলা আর কওমি করলে ক্যারেক্টার ঢিলা; এ কেমন বিচার।

দাঁড়া আগে খিলাফতের খুঁটি গাইড়া নিই; তারপর চাড্ডি গো দেখামুনে; নারায়ের তাকবির।
খিলাফতিরা সারাদিন ফেসবুকে নারীদের পর্দা করার হিতোপদেশ দিয়ে বেড়ায় চ-বর্গীয় শব্দের বহু বর্ণিল ব্যবহারে। আওমি হোক কওমি হোক, বিম্পি হোক জমাত হোক; ‘নিজে করলে হালাল; অন্যে করলে হারাম’; হিপোক্রেসিটা কমন এই চিন্তাগ্রামে।

ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডের টকশো বাঈ ও অনুসন্ধানী খোঁজা বালকদের কাজ হচ্ছে; হেইলা দুইলা দরবার মাতানো। তাই কোন নারী নিহত হলে সে যে এই অত্যন্ত সচ্চরিত্র সমাজে কতো পাপিষ্ঠা দুঃশ্চরিত্র; তা তুলে ধরতে সক্রিয় থাকে বাংলালিক্স বুয়া, অনুসন্ধানী খোঁজা ও টকশো বাঈ ত্রিভুজের স্তম্ভটি। এই স্তম্ভ এঞ্জেলিনা জোলির চেয়েও সোন্নত সাহসের।

সত্যম শিবম সুন্দরম বিচার-নির্বাহি-বণিকের মানদণ্ড রাজদণ্ড হওয়া সার্কাস; তিনটি স্তম্ভই; ধ্যানমগ্ন সিংহ হয়ে উন্নয়নের হারেমে ঢোকে; কিন্তু চতুর্থ সোন্নত স্তম্ভটির জাদু হ্যায় নেশা হ্যায়তে কিছুক্ষণের মধ্যেই এমন প্রেম তাপস হয়ে পড়ে যে; মুনিয়ার পায়ের কাছে বসে, মাঝবয়েসি সুগার ড্যাডি আনভির তার ইক্ষুকল চালু করে।

বাড়িতে একটি ফর্সা মোটাসোটা বৌ; যার কাজ দুবাইয়ে শপিং আর পারসোনায় রূপসজ্জা; আর অবৈধ উপার্জনের অবিরাম গোল্ড ডিগিং। তার দিন রাত ফোন, এখন তুমি কোথায়! বাসায় আসোনা কেন! এমন উত্তর কী দেয়া যায় আমি এখন বাদশাহ আকবর; আছি যোধা বাঈয়ের আলো-অন্ধকারে; হোক সে মুহূর্তের ভালোবাসার অভিনয়; তবু ভালোবাসা তো।

সেই যে কবে, হেলেনের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে কোন লেখক ‘হেলেন অফ ট্রয়’ লিখেছিলেন; সুতরাং যোধা বাঈ নিহত হলে সমাজ তাকে মুনিয়া অফ ট্রয় বলে গালাগাল করে। নিয়মিত মৃতদেহকে গালি দেয়া; তার স্বাস্থ্যপান এই শতবছরের নরভোজিপুরের ঐতিহ্য। নারীর কপালের হুরমতীর ছ্যাঁকা দেয়া বিজন এই গ্রামে কখনো মেট্রোপলিটনের হাওয়া ঢুকতে পারেনা।

কেউ যদি একে গ্রাম বলে তখন ডেইলি হিলারিয়াস বাস্টার্ডের চিন্তা রাখাল এসে তাকে জিজ্ঞেস করেন, কইনচ্যান দেহি, আই ডোন্ট নো মানে কী।

চিন্তাপুরকে চিন্তানগর বানানোর আহবান জানানো লোকটি উত্তর দেয়, আমি জানি না।
অমনি মধ্যবয়েসি পারবেন আপারা খিল খিল করে হেসে বলে, লোকটা জানে না; লোকটা জানে না কিছুই। আমরা সব জানি; আর আমগো চিন্তা রাখাল হইতেছে সর্বজ্ঞ; সে যে কোন সময় লাকা দেরিদা নিয়া ঝাকা-নাকা দিতে পারে।

উন্নয়নের বালাখানায়; খুনি ইফতার প্যাকেট পাঠায় ওলামা সংঘে; তারা বেশ সৌদি আরবের খেজুর খেয়ে চক্ষু মুদিয়া দোয়া করে বসুন্ধরার জন্য। শুকরিয়া মেহেরবান; ‘ছেড়ে দে নৌকা মাঝি; আমি যাবো মদিনা।”

– মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক ও সাংবাদিকতার শিক্ষক
প্রধান সম্পাদক, ই-সাউথ এশিয়া