ক্ষমা চাইলেন সাকিব

গত ১২ নভেম্বর বেনাপোল হয়ে ভারত যাওয়ার পথে বেনাপোল বন্দর ইমিগ্রেশনে এক ভক্তের ফোন ভেঙেছিলেন সাকিব আল হাসান।

এই ঘটনা এবং ভারতের পূজা উদ্বোধনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়ে এক ভিডিও বার্তায় ক্ষমা চেয়েছেন ওয়ানডে ক্রিকেটের এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার।

সেদিন বন্দরে সাকিবকে দেখেই তাঁর কাছে দৌড়ে গিয়ে ছবি তুলতে চেয়েছিলেন এক ভক্ত। তবে সাকিব তাঁকে সড়াতে গেলে ফোনটি পড়ে ভেঙে যায়। সাকিব সবাধানতার কারণে তাঁকে সরাতে চেয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘আমি কখনোই বুঝতে পারি না আমার আসলে অন্য একজনের ফোন ভেঙে কী উপকার হবো বা লাভ হবে। আপনারা হয়তো ভালো উত্তর দিতে পারবেন। যার ফোন ভাঙা নিয়ে কথা হচ্ছে।

আমি তার ফোনটা কখনোই ইচ্ছেকৃতভাবে ভাঙিনি। যেহেতু করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার চেষ্টা করছিলাম।

কীভাবে নিজেকে নিরাপদ রেখে চলা যায় সেটা চেষ্টা করছিলাম। যেহেতু অনেক মানুষ ছিল এবং ভীড় ছিল, সবাই চেষ্টা করছিল ছবি তুলতে। আমিও চেষ্টা করছিলাম কীভাবে তাদের কাছে না গিয়ে আমার কাজগুলো সম্পূর্ন করতে পারি ইমিগ্রেশনের।’

সাকিব যোগ করেন, ‘স্বাভাবিকভাবে একজন উৎসুক জনতা একদম আমার শরীরের উপর দিয়ে এসে ছবি তুলতে চায়। আমি তাকে সরিয়ে দিতে গেলে তার হাতের সাথে আমার হাত লেগে ফোনটি পড়ে যায়।

পরে হয়তো ভেঙেও যায়। তার ফোন ভাঙার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। কিন্তু আমার মনে হয় তারও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত ছিল। আর এই করোনার সময়ে সবারই সেটা করা উচিত।’

ভারতে কালি পূজা উদ্বোধন নিয়েও কথা বলেছেন সাকিব। তিনি জানিয়েছেন, নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান মনে করেন তিনি। নিজের ভুলের জন্য সাকিব ক্ষমা চেয়েছেন। তাঁর কর্মকান্ডে কেউ যদি কষ্ট পান সেজন্যও ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন এই অলরাউন্ডার।

তাঁর ভাষ্য, ‘অবশ্যই খুবই সেনসেটিভ। আমি প্রথমেই বলতে চাই আমি নিজেকে একজন গর্বিত মুসলমান হিসেবে মনে করি এবং আমি সেটাই চেষ্টা করি পালন করার।

ভুল ত্রুটি হবেই এবং ভুল ত্রুটি নিয়েই আসলে আমরা চলাফেরা করি। আমার কোন ভুল হয়ে থাকলে অবশ্যই আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনাদের মনে কষ্ট দিয়ে থাকলে সেজন্যও আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি।’

সাকিব জানিয়েছেন তিনি কোনো পূজা উদ্বোধন করতে যাননি। পূজার কার্ড দেখিয়ে সেটা প্রমাণও করেছেন বাংলাদেশের এই অলরাউন্ডার।

তিনি বলেন, ‘এখন আসি আসলে পুজার বিষয়টি নিয়ে, পুজার বিষয়টি এখানে আসলে নিউজ, মিডিয়া কিংবা সোশ্যাল মিডিয়া সব জায়গায় এসেছে আমি পুজার উদ্বোধন করতে গিয়েছি। যেটা আসলে আমি কখনও আমি যাইও নি কিংবা করিও নি।

এটির প্রমাণ আপনারা অবশ্যই পাবেন। যেটি হচ্ছে অনেক সাংবাদিক ভাই বোনেরাই সেখানে ছিলেন যাদেরকে হয়তো ইনভাইট করেছেন কিংবা আপনারা যদি সেখানের ইনভাইটেশন কার্ডটা দেখেন, কার্ডে লেখা আছে কে আসলে ওইটার উদ্বোধন করেছেন।’

সাকিব বলেন, মিডিয়াতে এসেছে আমি পূজা উদ্বোধন করতে গিয়েছি। আসলে আমি পূজার উদ্বোধন করতে যাইনি আর করিওনি। পূজার ‍উদ্বোধন আমি যাবার আগেই করা হয়েছে। আপনারা পূজার ইনভাইটেশন কার্ড দেখলেই বুঝতে পারবেন কে পূজার উদ্বোধন করেছে।

সাকিব বলেন, আমি সেখানে অন্য একটি অনুষ্ঠান গিয়েছিলাম। সেই অনুষ্ঠান শেষে আমার গাড়িতে উঠার রাস্তা ছিল পূজা মন্ডপের মধ্য দিয়ে।

আমি যার ইনভাইটেশনে গিয়েছি (পরেশ দা) তার অনুরোধে আমি সেখানে শুধু প্রদীপ প্রজ্জ্বলন করি আর পরেশ দার সাথে ছবি তুলি। আমি পুরো ৩০ থেকে ৪০ মিনিট আমি যে প্রোগ্রামে গিয়েছিলাম সেখানে কোন ধর্ম বর্ণ নিয়ে আলোচনা হয়নি।

আর পূজা মন্ডপের ঘটনা নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে, আমি আসলে একজন সচেতন মুসলমান হিসেবে তা করবোনা। তারপরও হয়তো আমার ওখানে যাওয়াটা ঠিক হয়নি। ভবিষ্যতে যাতে এরকম কোন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয় তা খেয়াল করবো।

এসময় তিনি ওই পূজার উদ্বোধকের নামও জানান। পূজার উদ্বোধক ছিলেন কলকাতা পৌরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।

এরমধ্যে গত সপ্তাহে সাকিব কলকাতায় গিয়ে কালীপূজার অনুষ্ঠান উদ্বোধন করেছেন, এমন খবরের পর তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যার হুমকি আসে ‘মহসিন তালুকদার’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে।

হত্যার হুমকি দেওয়ার রাতেই অবশ্য ওই যুবক তার ভিডিওর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে। তবে হুমকির দেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যে ‍এখন সাকিবই নিজের ইউটিউব চ্যানেলে এসে ক্ষমা চাইলেন।

সোমবার দিবাগত রাত ১২টার পর মাথায় টুপি পরে ফেসবুক লাইভে এসে সালাম দেয় মহসিন তালুকদার নামের এক যুবক।

চাপাতি হাতে লাইভে মহসিন তালুকদার সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিচ্ছেন
চাপাতি হাতে লাইভে মহসিন তালুকদার সাকিব আল হাসানকে উদ্দেশ্য করে হুমকি দিচ্ছেন

এরপর সিলেটের আঞ্চলিক ভাষায় সাকিবকে অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে। এক পর্যায়ে ওই যুবক সাকিবকে দেয় হত্যায় হুমকি, ‘সাকিব আল হাসান কয়দিন আগে দেশে আইছইন।

কিছুদিন আগে তাইন হজে গেছিলা, তখন খুশি হইছিলাম। কিন্তু তাইন ইবার দেশে আইয়া আবার গেলাগি ইন্ডিয়াত পূজা উদ্বোধন করাত।

ইটায় মুসলমানের কলিজায় আঘাত করছে। আমি ফাইলে (একটি চাপাতি প্রদর্শন করে) তারে কোপাইয়া কোপাইয়া কাটিমু।’

যদিও ওই ভিডিওর পর ভোর ৬টা ৪ মিনিটে আবারও একটি লাইভে হাজির হয়ে উত্তেজিত ভিডিওর জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ওই যুবক। তবে এবার সাকিবকে জাতির উদ্দেশে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানায়।

এ সময় মহসিন বলেছে, কারও চাপে পড়ে এখন এই ভিডিওটি নির্মাণ করছে না সে। সাকিবকে একটা সুযোগ দেওয়ার জন্য এবং সাকিবের মতো অন্য সব সেলিব্রেটিদের সঠিক পথে চলার বার্তা দিতে আবারও লাইভ করছে বলেও জানায়। এই পরিস্থিতির মধ্যে সাকিব নিজেই এবার ক্ষমা চাইলেন।