৭ দফা দাবিতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আল্টিমেটাম

৭ দফা দাবীতে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের আল্টিমেটাম। ছবিঃ সমকাল

সমাবেশ থেকে জাতির পিতাকে অবমাননা করায় আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ও হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতারের দাবিতে আল্টিমেটাম দেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

এর আগে এক বিক্ষোভ সমাবেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য নির্মাণ বন্ধের দাবি জানান হেফাজতে নেতা মামুনুল হক।

এর প্রতিবাদে সোমবার ( ১৬ নভেম্বর) ঢাবির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

মঞ্চের অন্যান্য দাবিগুলো হলো-

  1. দেশের প্রতিটি উপজেলায় বঙ্গবন্ধুর ভার্স্কয নির্মাণ করা,
  2. বাংলাদেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা,
  3. বিভিন্ন ধর্মীয় সভা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় উস্কানিমূলক গুজব ছড়ানো ও অপপ্রচারকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া,
  4. ধর্ষণের ন্যায় বলাৎকারের অপরাধে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা,
  5. মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের যৌন নিপীড়ন বন্ধে মনিটরিং সেল গঠন করে নজরদারি বাড়ানো এবং
  6. মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত জাতীয় সংগীত বাজানো, জাতীয় পতাকা উত্তোলন, শহীদ মিনার নির্মাণ ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস জানানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইবুনালের সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ, ভাস্কর শিল্পী রাশা, গৌরব ৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীন, মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতি মিলন ঢালী প্রমুখ।

সমাবেশের শুরুতে প্রয়াত সাবেক ডেপুটি স্পিকার ও মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শওকত আলীর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

সমাবেশে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতাকারীরা কখনোই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী এহেন বক্তব্যের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। সংবিধান লঙ্ঘন করে জাতির পিতাকে অবমাননা করা হয়েছে। এদের অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, সৌদিআরব, ইরানসহ বিশ্বের সব মুসলিম দেশে ভাস্কর্য রয়েছে। জাতির পিতার ভাস্কর্য অপসারণের দাবি যারা তুলেছে, সেই মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত পদক্ষেপ না নিলে আমরা দেশ ও জাতির ‘সমূহ বিপর্যয়ের’ আশঙ্কা প্রকাশ করছি।

আমরা গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য স্থাপনে বাধা প্রদান এবং স্থাপিত ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার ভয়ঙ্কর হুমকি দিয়েছে চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধী, মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক অপশক্তি।

সমাবেশে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ বলেন, গত ১৩ নভেম্বর করোনাকালীন যাবতীয় বিধিনিষেধ লঙ্ঘন করে তারা যেভাবে গেণ্ডারিয়ার ধূপখোলার মাঠে সমাবেশ করেছে এবং যে ভাষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিষেদগার করেছে, তা রাষ্ট্রদ্রোহিতাতূল্য অপরাধ হলেও এখন পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে সরকারি ব্যবস্থা কিংবা সরকারদলীয় কোনো প্রতিবাদ আমাদের নজরে পড়েনি।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করা হয়েছে।

আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ধর্ম ব্যবসায়ী মামুনুল হককে গ্রেপ্তার না করলে সমগ্র দেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ আরোও কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করবে।