২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে নতুন জাতীয় সংগীত প্রচলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। বৃহস্পতিবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন জাতীয় সংগীতের পরিবর্তনের ঘোষণা দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীতের একটি শব্দ বদলে দেওয়া হয়েছে। নতুন বছরের উৎসবে অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন এ কথা জানিয়েছেন। জাতীয় ঐক্যের বার্তা দিতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে ঘোষণা করেছেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত অ্যাডভান্স অস্ট্রেলিয়া ফেয়ার। এর দ্বিতীয় ছত্রে ছিল ফর উই আর ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি। তা পালটে দিয়ে করা হয়েছে ফর উই আর ওয়ান অ্যান্ড ফ্রি।
পরিবর্তিত কথা অনুসারে, অস্ট্রেলিয়াকে তরুণ ও মুক্ত উল্লেখ করা হবে না। বরং থাকবে আমরা এক এবং মুক্ত, যা দেশটির দীর্ঘ দেশীয় ইতিহাসের প্রতিফলন ঘটাবে।
অস্ট্রেলীয় প্রধানমন্ত্রীর এই পরিবর্তনের ঘোষণা আকস্মিক হলেও সরকারের বিভিন্ন স্তরে এটিকে স্বাগত জানানো হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসনের ঘোষণার পর ২০২১ এর ১ জানুয়ারি থেকে অস্ট্রেলিয়ানরা তাঁদের জাতীয় সংগীতের একটি ভিন্ন সংস্করণ গাইবেন৷ জাতীয় সংগীতে অস্ট্রেলিয়াকে আর ‘ইয়াং অ্যান্ড ফ্রি’ হিসেবে অভিহিত করা হবে না৷
আদিবাসীদের সুদীর্ঘ ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রতিফলন ঘটানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই পরিবর্তন৷
মরিসন বলেছেন, তিনি আশা করছেন এই পরিবর্তন ঐক্যের চেতনা সৃষ্টি করবে।
গত বছরের শুরুতে নিউ সাউথ অয়েলস রাজ্যের নেতা গ্ল্যাডিজ বেরেজিকলাইন জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার সুপারিশ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী মরিসন দাবি করেছেন, এর ফলে ঐক্যের বার্তা তুলে ধরা হবে। এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গত বছর ধরে আমরা আরও একবার অস্ট্রেলীয়দের অপরাজিত শক্তির দেখা পেলাম, তাঁদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা বরাবর আমাদের একটি জাতি হিসেবে তুলে ধরেছে।
এবার দেখার সময় এসেছে, যাতে এই অসামান্য ঐক্য আরও পূর্ণভাবে আমাদের জাতীয় সঙ্গীতে প্রতিফলিত হয়।
এই জাতীয় সঙ্গীতের পরিবর্তনের প্রস্তাব আনে কমনওয়েলথ। অস্ট্রেলীয় গভর্নর জেনারেল ডেভিড হার্লে সেই প্রস্তাবে সম্মতি দেন, ঠিক হয়, ১৯৮৪-র পর এই প্রথম জাতীয় সঙ্গীতে সংশোধনী আনা হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী মরিসনের এই ঘোষণা।
অ্যাডভান্স অস্ট্রেলিয়া ফেয়ার গানটি লিখেছেন পিটার ডডস ম্যাককরমিক এবং প্রথমবার এটি গাওয়া হয় ১৮৭৮ সালে।
১৯৪৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বব হকের আনা প্রস্তাবে সম্মতি দিয়ে এটিকে অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে গ্রহণ করা হয়।
জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা আরো কয়েকটি দেশ
লিঙ্গবৈষম্য থেকে শুরু করে ভাবমূর্তি পরিবর্তন – এ সব নানা কারণে বিভিন্ন দেশ তাদের জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন এনেছে৷
জার্মানি
দেশটির সমতা বিষয়ক কমিশনার ক্রিস্টিন রোজে-ম্যোরিং জাতীয় সংগীতে আরও বেশি লিঙ্গ সমতা আনার প্রস্তাব করেছেন৷ তিনি গানের যে অংশে ‘ফাটারলান্ড’ অর্থাৎ ‘পিতৃভূমি’ বলা হচ্ছে, সেখানে ‘হাইমাট’ অর্থাৎ ‘জন্মভূমি’ লেখার প্রস্তাব দিয়েছেন৷ তবে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলসহ অনেকে মনে করছেন, জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনার প্রয়োজন নেই৷
অস্ট্রিয়া
২০১২ সালে অস্ট্রিয়ার জাতীয় সংগীতে ‘ছেলেরা’-র জায়গায় ‘মেয়েরা এবং ছেলেরা’ লেখা হয়৷ উদ্দেশ্য লিঙ্গ সমতা আনা৷
ক্যানাডা
উত্তর অ্যামেরিকার এই দেশটিও সম্প্রতি তাদের জাতীয় সংগীতকে আরও লিঙ্গ নিরপেক্ষ করেছে৷ সংগীতের দ্বিতীয় লাইনে ‘তোমার সব ছেলেরা’-র জায়গায় ‘আমরা সবাই’ লেখা হয়েছে৷
নেপাল
২০০৮ সালে নেপালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়৷ তার আগের বছর নেপালে নতুন একটি গানকে জাতীয় সংগীতের স্বীকৃতি দেয়া হয়৷ ১৯৬২ সালে গ্রহণ করা নেপালের আগের জাতীয় সংগীতে রাজতন্ত্রের প্রশংসা ছিল৷ তাই এতে পরিবর্তন আনা হয়৷
আফগানিস্তান
দেশটিতে বেশ কয়েকবার জাতীয় সংগীতে পরিবর্তন আনা হয়৷ তালেবান শাসনামলে আফগানিস্তানে কোনো জাতীয় সংগীতই ছিল না৷ তালেবানের পতনের পর ২০০২ সালে পুরনো জাতীয় সংগীতকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল৷ পরে ২০০৬ সালে তৎকালীন কারজাই সরকার সবকিছু নতুন করে শুরু করতে জাতীয় সংগীতও পরিবর্তন করে৷
রুয়ান্ডা
আফ্রিকার এই দেশটির কথা উঠলেই গণহত্যার কথা মনে পড়ে৷ ১৯৯৪ সালে মাত্র একশ দিনের মধ্যে সে দেশে পাঁচ থেকে ১০ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা হয়েছিল৷ গণহত্যা পরবর্তী রুয়ান্ডার ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে দেশটি ২০০১ সালে একটি নতুন জাতীয় সংগীত বেছে নেয়৷
দক্ষিণ আফ্রিকা
দেশটি ১৯৯৭ সালে আগের দু’টি জাতীয় সংগীত থেকে কিছু অংশ নিয়ে নতুন একটি জাতীয় সংগীত তৈরি করে৷ আফ্রিকান্স ও ইংরেজি ভাষায় গানটি রচিত৷ তবে আফ্রিকান্স ভাষার অংশটি বর্ণবাদ আমলে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীতের অংশ হওয়ায় এর সমালোচনা করেন অনেকে৷
নেলসন ম্যান্ডেলা সেটি রিকনসিলিয়েটরি ব্যবস্থা হিসেবে বর্ণবাদ-পরবর্তী দক্ষিণ আফ্রিকার সংগীত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছিলেন৷
রাশিয়া
ভ্লাদিমির পুটিন ২০০০ সালে রুশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ১৯৯০ সালের আগে ব্যবহৃত জাতীয় সংগীত ফিরিয়ে আনেন৷ তবে গানের কথায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়৷
১৯৯০ সালে যে জাতীয় সংগীত গ্রহণ করা হয়েছিল তাতে কোনো কথা না থাকায় আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়া অ্যাথলিটরা এর সমালোচনা করেছিলেন৷ তাঁদের বক্তব্য ছিল, কথাবিহীন গান তাঁদের নাকি উদ্বুদ্ধ করতে পারেনি।
বাংলাদেশের জাতীয় সংগীতের সম্পূর্ণ গানের পরিবর্তন নিয়েও বেশ কয়েকবার আলোচনা হয়েছিলো।
এরকম কোনো পরিবর্তন নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
লেখাটির পাঠক সংখ্যা: 213