আবারো সুসম্পর্ক গড়ার পথে তুরস্ক-ইসরায়েল

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান (বাঁয়ে) ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলের সঙ্গে তুরস্কের সুসম্পর্কের ইতিহাস দীর্ঘদিনের। কিন্তু ফিলিস্তিন ইস্যুতে ১০ বছর আগে দেশ দুটির সম্পর্কে অবনতি হতে শুরু করে। আড়াই বছর হলো তুরস্কের কোনো রাষ্ট্রদূত নেই ইসরায়েলে। তবে এ তিক্ততা কাটিয়ে ফের সুসম্পর্ক গড়ার ইঙ্গিত দিয়েছে তুরস্ক।

বুধবার আল মনিটরের বরাত দিয়ে আলজাজিরা জানিয়েছে, আড়াই বছর পর ইসরায়েলে নতুন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ দিচ্ছে তুরস্ক।

ইসরায়েলকে স্বীকৃত দেওয়া প্রথম মুসলিম প্রধান দেশ তুরস্ক। ১৯৪৯ সালে ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত দেয় তুরস্ক। গত ছয় দশকে দেশ দুটি ছিল ঘনিষ্ঠ মিত্র। ২০০২ সালে রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ক্ষমতায় আসার পরও আঙ্কারা এবং তেল আবিব বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা ও পর্যটন খাতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।

২০১০ সালে ফিলিস্তিনের গাজায় অবরোধ দেয় দখলদার ইসরায়েল। গাজার বাসিন্দাদের সহায়তা করতে ‘মাভি মারমারা’ নামে একটি জাহাজে খাদ্য ও ওষুধ নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবকরা।

তবে ইসরায়েলের সেনারা তাতে হামলা চালিয়ে ৯ তুর্কি নাগরিক ও এক আমেরিকান-তুর্কি সহায়তাকর্মীকে হত্যা করে।

এ ঘটনায় দুই দেশের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকে। ছয় বছর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ওই ঘটনায় ক্ষমা চাইলে দেশ দুটির সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

তবে ২০১৮ সালে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয়। এর প্রতিবাদে আন্দোলনরত ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলের সেনারা হামলা চালায়।

এর প্রতিবাদে তেল আবিব থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নেয় তুরস্ক। শীর্ষ পর্যায়েরর কূটনীতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে দুই দেশ। তার পরও দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য চলেছে পুরোদমে।

আল মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তুরস্ক নতুন রাষ্ট্রদূত হিসেবে ৪০ বছর বয়সী উফুক উলুতাসকে নিয়োগ দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক।

উলুতাস ‘অত্যন্ত মার্জিত’ এবং ‘ফিলিস্তিনপন্থি’ হিসেবে পরিচিত। তিনি জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ে হিব্রু ও মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। তবে তিনি পেশাদার কূটনীতিক নন।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপ এবং অর্থনৈতিক দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে তুরস্ক সম্ভবত ইসরায়েলে দূত নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া বাইডেন প্রশাসনের মানবাধিকার নীতির কারণে চাপে পড়তে পারে তুরস্ক।

বিভিন্ন ইস্যুতে তুরস্কের ওপর অবরোধ আরোপে একমত যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ। এসব সংকট কাটাতেই এরদোয়ান ইসরায়েলের প্রতি নরম হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।