ঢাবি ভর্তিঃ বিভাগীয় পর্যায়ে কেন্দ্র, প্রশ্নফাঁস ঠেকানোই এখন চ্যালেঞ্জ

করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় এবার ২০২০-২০২১ স্থাতক সম্মান শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ।

এজন্য সুনিদির্ষ্ট পরিকল্পনা নেওয়ার কথাও ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরীক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা চিন্তা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়াকে সমর্থন করেছেন শিক্ষাবিদসহ অনেকে।

তবে তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রশ্নফাঁস ঠেকানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পারলে এটি শিক্ষার্থীবান্ধব একটি সিদ্ধান্ত হবে।

ঢাবি ভর্তিপরীক্ষা বিভাগীয় শহরে, মানবন্টনে পরিবর্তন

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এই বছর থেকে কার্যকর হতে যাওয়া গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে যাচ্ছে না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বরং শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি কমাতে এবার বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এছাড়াও আগামী বছর থেকে ইউনিট কমিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার কথাও ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এখানে দুটি বিষয় রয়েছে।

প্রথমত, করোনা পরিস্থিতিতে শুধু ঢাকাতে পরীক্ষা নেওয়া হলে বিশাল ভিড় হবে, তখন একটি বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি হবে। সেই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বিভাগীয় শহরের পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এবারের করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতি বিবেচনায় বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায়ও ছিল না। এখন প্রশ্নপত্র যাতে ফাঁস না হয়, সে বিষয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এদিকে গত বছরের মতো এবারও সরকারি নিরাপত্তা বাহিনীর সহযোগিতায় প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে সর্তক থেকে সব ধরনের ব্যবস্থাগ্রহণ করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।

বিভাগীয় শহরে কীভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ের বড় কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বড় কোনও কলেজে কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আমাদের অনুষদের ডিনরা সমন্বয় করে পরীক্ষা নেবেন।

অতীতেও আমাদের ঢাকার বাইরে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল, সেই অভিজ্ঞতা আমরা এবার কাজে লাগাবো। আর বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নিতে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে, তা চিহ্নিত করে সমাধান করেই এগোবো।’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য আমরা সব সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ বাহিনী, র‌্যাব, সিআইডি’র সহায়তার নিয়েছি, এখনও নেওয়া হবে।

যখন শিক্ষার্থীরা ভর্তির জন্য আবেদন করবে, তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা হিসেব করে কোন এলাকায় কীভাবে নিরাপত্তা জোরদার করা যায়, সেটি ভাবা হবে।’

প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অন্যান্য বছরের মতো কঠোর পদক্ষেপ নেবে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) বলেন, ‘গত বছর প্রশ্নফাঁসের কোনও অভিযোগ ছিল না। প্রশ্নপত্র প্রণয়ন এবং ছাপানো সব কিছুতেই আমরা সতর্ক ছিলাম।

আর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর থেকেও সহযোগিতা নিয়েছি। এবছরও সেই সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে, প্রশ্নপত্র ফাঁস ঠেকাতে আমরা সফল হবো।’

উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘বিভাগীয় শহরে কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে উপাচার্য ভালো বলতে পারবেন।

তবে ইউজিসি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতার অবশ্যই প্রয়োজন হবে। সারাদেশে ভর্তি পরীক্ষা নিতে হলে বিশাল যজ্ঞের প্রয়োজন রয়েছে।’

ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামান
ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামান

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘বিভাগীয় পর্যায়ে পরীক্ষা নিতে আমাদের পরিকল্পনা আছে, সেটি সংশ্লিষ্ট অনুষদের ডিনরা নেবেন। তারাই এ সম্পর্কে ভালো বলতে পারবেন।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. তোফায়েল আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘কেবল বিভাগীয় পর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষার কেন্দ্র করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এরপর এইচএসির ফলাফল প্রকাশ হবে, তখন ভর্তিচ্ছুরা আবেদন করবে, তারপর কীভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে, সেই পরিকল্পনা নেবো। এখন এটি নিয়ে ভাবা হচ্ছে না।’

//সিরাজুল ইসলাম রুবেল