আবরার হত্যাকাণ্ডে আজীবন বহিষ্কৃত বিটুর ক্লাসে ফেরার বিরুদ্ধে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন

আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে আজীবন বহিষ্কৃত আশিকুল ইসলাম বিটুর ক্লাসে প্রত্যাবর্তনের বিরুদ্ধে বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আজ বিকেলে বুয়েট শহীদ মিনারে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচির নিয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের বিবৃতি –

৭ই অক্টোবর, ২০১৯ বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শেরে বাংলা হলে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। হিংস্র ছাত্ররাজনীতির বলি হয়ে নিজেরই হলে কিছুমানষুরূপী জানোয়ারের নির্যাতনের স্বীকার হন আবরার ভাই। এর প্রতিবাদে তীব্র আন্দোলন শুরু করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সকল ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ এবং জড়িতদের আজীবন বহিষ্কারসহ বেশকিছুদাবী বুয়েট অথরিটির কাছে তুলে ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

দ্রুত বহিষ্কারাদেশের দাবিতে বুয়েট কর্তৃপক্ষের সাথে একাধিকবার আলোচনায় বসে এবং শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিদাওয়ার প্রতি সম্মান রেখে বুয়েট প্রশাসন তাৎক্ষণিকভাবে বুয়েট সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে এবং অভিযুক্ত সকলের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের আদেশ জারি করে।

অভিযুক্তদের আইনি প্রক্রিয়ার বিষয়ও ত্বরান্বিত হয় শিক্ষার্থীদের প্রবল দাবির মুখে। এই ঘটনায় জড়িত মোঃ আশিকুল ইসলাম (বিটু) অন্যান্যদের মত বুয়েট থেকে আজীবন বহিষ্কৃত হয়।

Bituএখানে উল্লেখ্য, অন্যতম আসামী অমিত সাহা বেশিরভাগ সময় সশরীরে হত্যার স্থানে
অবস্থান না করলেও ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে অংশগ্রহন দেখা যায় এবং বিভিন্ন দিক নির্দেশনা দিতে দেখা যায় তাকে এবং তারই রুমে নিয়ে এসে নির্যাতন করা হয় আবরার ফাহাদকে। তাই ঘটনাস্থলে উপস্থিতি কম থাকলেও তদন্ত সাপেক্ষে এবং উপযুক্ত তথ্যপ্রমাণসাপেক্ষে চার্জশীটে অমিত সাহার নাম উঠে আসে।

একইভাবে সিসিটিভি ফুটেজে মোর্শেদ উজ জামান জিশান এর স্বল্প সময়ের উপস্থিতি দেখা গেলেও তদন্তে তার উল্লেখযোগ্য সম্পৃক্ততা উঠে আসায় তার নামও চার্জশীটে অন্তর্ভুক্ত হয়।

অন্যদিকে ছাত্রলীগের পদধারী সদস্য হিসেবে এবং ঘটনার দিন সারাদিন খুনিদের সাথে অবস্থান করা সত্ত্বেও কুখ্যাত র‍্যাগার বিটুর নাম রহস্যজনকভাবে চার্জশিট থেকে বাদ যায়। তার নিজের বর্ণনাতেই তখন চাইলেই আবরারকে বাঁচানো যেত।

এরপর বুয়েট আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে (বিজ্ঞপ্তি নং ডি.এস.ডব্লিউ/ডি-৩৪) ২১ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে, আবরার ফাহাদ হত্যার প্রায় দেড়মাস পরে ২৬ জনকে আজীবন বহিষ্কার করে নোটিশ দেয়, যাতে স্পষ্ট ভাবেই উল্লেখ ছিলো মোঃ আশিকুল ইসলামের (বিটু, ১৬০২০১৬) নাম ।

কিন্তু তারপর বিগত ২২ মে, ২০২১ তাকে কেমিকৌশল’১৭ ব্যাচের একটি কোর্সের অনলাইন ক্লাসে উপস্থিত থাকতে দেখা যায়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট কোর্স শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় কোর্টের স্টে অর্ডার নিয়ে ডিপার্টমেন্ট অফিসে যোগাযোগ করে লেভেল-৩ টার্ম-১ এর অন্তত চারটি কোর্সে রেজিষ্ট্রেশন করে।

কিন্তু আবারও সাধারণ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই গতকাল ৬ আগস্ট তাকে পুনরায় কেমিক্যাল ১৯ ব্যাচ এর সাথে ক্লাসে দেখা যায়।

এই ঘটনায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা চরমভাবে ক্ষিপ্ত। এত সহজে বুয়েটের তদন্তে প্রমাণিত একজন অপরাধী ফিরে আসতে পারলে আবরার ফাহাদের আত্মত্যাগ অর্থহীন হয়ে যায় এবং এর বিনিময়ে পাওয়া বর্তমান বুয়েটের নিরাপদ পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ে।

আমরা কোনভাবেই আমাদের ভাইয়ের একজন খুনির সাথে ক্লাস করতে রাজি নই। আবরার ফাহাদ ছিলো বুয়েটে বিরাজমান লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতির ক্ষমতা প্রদর্শনের বলি। আর বিটু সেই সময়কার বুয়েট ছাত্রলীগেরই সহ-সম্পাদক।

বিভিন্ন মিটিং মিছিলে যোগ দিতে বাধ্য করা এবং মিছিলে না গেলে রাতের বেলা নির্যাতনের মাধ্যমে শেরে বাংলা হলকে অনিরাপদ করে তুলেছিলো এই অপরাধী। এমনকি এসব সমাবেশের পর যারা যোগ দেয়নি তাদেরকে মাঝরাতে হলের ছাদে তুলে অসহ্য নির্যাতন করার অনেক উদাহরন রয়েছে এই বিটুর বিরুদ্ধে।

এরকম অত্যাচারী ও খুনের দায়ে অভিযুক্ত একজনের পুনরায় বুয়েট ক্যাম্পাসে ফিরে আসায় সকল সাধারণ শিক্ষার্থী শঙ্কিত ও ক্ষুব্ধ। আমরা আশা করছি যে , দ্রুততম সময়ে তার কোর্স রেজিস্ট্রেশন বাতিলসহ সকল একাডেমিক কার্যক্রম বাতিল করে পুনরায় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করে তোলা হবে। এবং একইসাথে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নিয়ে বেশকিছুসাম্প্রতিক ঘটনায় দেশব্যাপী বুয়েটের লেজড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি এবং মৌলবাদ মুক্ত পরিবেশ নিয়ে বিভিন্ন আলচনা এবং গুজবের সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে সকল সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আমাদের সুস্পষ্ট অবস্থান জানানো হবে আগামীকাল দুপুুর একটায়।