আবরার হত্যায় যে যেভাবে জড়িত

আবরার হত্যা

১। মেহেদী হাসান রাসেল : মৃত আবরারকে পুলিশে দেওয়ার জন্য থানায় ফোন দেয় সে। পুলিশ চলে আসলে সে জানায় হলে শিবির ধরা পড়েছে। কিন্তু ততক্ষণে আবরার মৃত।

স্ট্রেচারে আবরারের নিথর দেহকে নির্দেশ করে ডাক্তার মাসুক এলাহীকে বলেন, ‘ওকে (আবরার) ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই।’ জবাবে ডাক্তার মাসুক এলাহী বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ মিনিট আগে মারা গেছে ছেলেটা। ওকে হাসপাতালে পাঠিয়ে কী হবে?’

২। মুহতাসিম ফুয়াদ : হত্যার পর মামলার আলামত ক্রিকেট স্টাম্প, তোষক, বালিশ, ল্যাপটপ-মোবাইল ও স্টিলের পুরাতন চাপাতি শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুম থেকে এবং সিঁড়ি ল্যান্ডিং স্থান থেকে সরিয়ে নিয়ে একই হলের ২০১০ নম্বর রুমে রেখে দেন।

৩। অনিক সরকার : স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু, পা, পায়ের তালু ও বাহুতে মারতে থাকে সে। এক দফা মার শেষ করে রাত ১১টার দিকে অনিক সরকার আবার আসে। হঠাৎ অনিক স্টাম্প দিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি প্রয়োগ করে এলোপাতাড়ি শতাধিক আঘাত করে।

অনিক খুবই অনিয়ন্ত্রিতভাবে আবরারকে মারতে থাকে। তাঁর মারা দেখে সবাই ভয় পেয়ে যায়। আনুমানিক রাত ১২টার পর অনিক আবরারকে মারা থামিয়ে রুমের বাইরে চলে যায়। পরে আবরার অসুস্থ হয়ে পড়লে ইফতি তাকে কল দেয়। সে নির্দেশ দেয় আবরারকে গোসল করিয়ে মলম লাগিয়ে দিতে।

৪। মেহেদী হাসান রবিন : মেসেঞ্জার গ্রুপে সে-ই প্রথম নির্দেশ দেয় যে ‘আবরার শিবির করে, তাকে ধরতে হবে। পরে ঘটনার দিন ক্যাম্পাসে কারা কারা শিবির করে, তা জানতে চায় আবরারের কাছে। কিছুক্ষণ পর শুরু করে চড় থাপ্পর।

এক দফা মার শেষ হলে ফোন দিয়ে ডেকে আনে রাসেলকে। প্রচন্ড অসুস্থ অবস্থায় আবরার যখন কাতরাচ্ছিল, তখন সে বলে, ও (আবরার) নাটক করছে। শিবির চেনস না, শিবির চেনা কষ্ট।

৫। ইফতি মোশাররফ সকাল : তার কক্ষেই নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয় আবরারকে। মারপিটে সরাসরি অংশ নেয় সে। আদালতের সামনে ইফতিই প্রথম স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

আবরারের কাছ থেকে কথা বের করার জন্য স্টাম্প দিয়ে প্রথম চার-পাঁচটি আঘাত করেন ইফতি। এতে স্ট্যাম্প ভেঙে যায়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তিনি ক্যানটিনে খেতে যান। মিনিট বিশেক পর ফিরে এসে দেখেন, আবরার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তিনি মেঝেতে শুয়ে আছেন। তিনি তখন আবরারকে ধমক দিয়ে উঠে দাঁড় করান। কয়েকটি চড় মারেন। আবার স্টাম্প দিয়ে আবরারের হাঁটু ও পায়ে আঘাত করেন।

আবরার অসুস্থ হয়ে পড়লে, শ্বাসকষ্ট শুরু হলে তখন আবরারের মাথার নিচে দুটি বালিশ দেয় সে। এর কিছুক্ষণ পরই আবরার বমি করেন।

৬। মনিরুজ্জামান মনির : শিবির করার প্রমাণ মিলেছে, এই অভিযোগ তুলে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটাতে থাকে সে। পরের আবরারের অবস্থা খারাপ হলে এম্বুলেন্সে ফোন দেয়।

৭। মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন : কারা শিবির করে জানতে চাইলে আবরার কোনো সদুত্তর না দিতে পারায় চড় মারেন এবং স্টাম্প দিয়ে হাঁটুতে বাড়ি দেন।

৮। মোঃ মাজেদুর রহমান : –

৯। মোজাহিদুর রহমান : কক্ষে থাকা স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারকে মারেন।

১০। তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর : আবরারকে ধরে এনে তার স্মার্টফোন নিয়ে ঘাটাঘাটি করতে থাকে যেন কোনভাবে প্রমাণ করা যায় যে আবরার শিবিরকর্মী। এক পর্যায়ে চড় থাপ্পর মারে আবরারকে।

১১। হোসেন মোহাম্মদ তোহা : –

১২। মোঃ আকাশ : ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হাত পা ধরে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়।

১৩। মাহমুদুল জিসান : –

১৪। মোঃ শামীম বিল্লাহ : স্কিপিং রোপ দিয়ে আবরারের পিঠ ও পায়ে আঘাত করে। ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হাত পা ধরে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়।

১৫। নাজমুস শাদাত : আবরারকে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হাত পা ধরে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে শুরু করে দ্বিতীয় দফায় মারধোর।

১৬। এহতেশামুল রাব্বি তানিম : আবরারের রুমে এসে আবরারকে ঘুম থেকে ডেকে নিয়ে যায় সে। মারধোরের এক পর্যায়ে স্ট্যাম্প ভেঙে গেলে আবার স্ট্যাম্প আনে সে। আবরার মৃত্যুবরণ করলে এম্বুলেন্স আসতে দেরী করায় নিজের বাইক নিয়ে গিয়ে বুয়েটের চিকিৎসককে ডেকে আনে। চিকিৎসক এসে জনায় আবরার মারা গেছে।

১৭। মোর্শেদ অমর্ত্য ইসলাম : বাইরে থেকে স্ট্যাম্প নিয়ে আসে। পরে আবরারকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করে।

১৮। মোয়াজ আবু হোরাইরা : ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হাত পা ধরে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। আবরারকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেয়।

১৯। মুনতাসির আল জেমি : আবরারের ব্যাচমেট। আবরারের ল্যাপটপ চেক করার দায়িত্ব পরে তার কাঁধে। আবরার বমি করলে জেমি রুমে এসে আবরারের একটি গ্রামীণ চেকের শার্ট ও একটা ট্রাউজার নিয়ে যায়।

পরে ২০১১ নম্বর কক্ষ থেকে হাত পা ধরে ২০০৫ নম্বর কক্ষে নিয়ে যায়। মারধোর শেষে আবরারের হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসলে সিড়িতে শুইয়ে মালিশ করতে থাকে।

২০। অমিত সাহা : মেসেঞ্জার গ্রুপে সে পরামর্শ দেয় সবাইকে যে, আবরার বাড়িতে আছে। বাড়ি থেকে ফিরলেই যেন ওকে ধরা হয়। ঘটনার দিন সে বুয়েটে ছিল না। কিন্তু কিছুক্ষণ পরপর মেসেঞ্জারে সঠিকভাবে আবরারকে মারা হচ্ছে কি না সে বিষয়ে আপডেট নিতে থাকে।

দুইবার বমি করার কথা জানালে সে নির্দেশ দেয় আরো মেরে যেন কথা বের করা হয় পেট থেকে। পরে অবস্থা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সে আবরারকে হল থেকে বের করে দিতে বলে।

২১। মুজতবা রাফিদ : ঘটনার দিনে তার বাড়ী যাওয়ার কথা ছিল। শুধু আবরারকে ধরতে হবে বলে সে বুয়েটে থেকে যায়। ঘটনার প্রারম্ভে আবরার শিবির করে কি না তা প্রমাণ করার জন্য আবরারের একটি মোবাইল ঘাটে সে।

২২। ইসতিয়াক হাসান মুন্না :-

২৩। শামসুল আরেফিন রাফাত : রুমে স্ট্যাম্প না থাকায় বাইরে থেকে সে-ই প্রথম স্ট্যাম্প আনে। এনে ইফতি মোশাররফের হাতে দেয়।

২৪। মিজানুর রহমান : চার্জশিটে আবরার হত্যার মূল হোতা এবং আবরারকে মারধরের ঘটনার সূচনাকারী। আবরারের রুমমেট। সে-ই প্রথম মেসেঞ্জার গ্রুপে জানায় আবরারকে তার শিবির বলে সন্দেহ হয়।

২৫। মাহামুদ সেতু : রাত ১১টার পর রুমে এসে অন্যদের আবরার ফাহাদের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এসময় অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল ও মুজাহিদুল ইসলাম বলে, সে (আবরার) কোনো তথ্য দিচ্ছে না।

তখন সেতু অন্যদের বলে, ‘মারতে থাক।’ ওই নির্দেশের পর আবরারকে আরও বেশি মাত্রায় পেটানো শুরু হয়। স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা ছাড়াও তারা আবরারের পুরো শরীরে কিল-ঘুষি, লাথি মারতে থাকে।

মারপিটে সরাসরি জড়িত ১১ জন। যথাক্রমে – ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১৪, ১৫, ১৬, ১৯।