সমুদ্রের প্রতি জ্ঞানের ঘাটতি ই তবে উদাসীনতার মুখ্য কারণ?

ঘনিয়ে আসছে ওয়ার্ল্ড মেরিটাইম ডে এর দিন।নীল অর্থনীতির অন্যতম সম্ভাবনাময় একটি দেশ কতটুকু জ্ঞান রাখে সমুদ্রের ব্যাপারে? পরিসংখ্যান বলে সে সংখ্যা নেহাতই নগণ্য।

তাই চলুন, সমুদ্রকে ঘিরে জেনে নেওয়া যাক কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃপৃ

থিবীর উপরিতলের ৭০ শতাংশেরও বেশি অংশ আবৃত করে রাখা লবণাক্ত পানির পরস্পর সংযুক্ত জলরাশিকে সমুদ্র বলে অভিহিত করা হয়।স

মুদ্র পৃথিবীর জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রিত করার পাশাপাশি জলচক্র,কার্বন চক্র ও নাইট্রোজেন চক্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। প্রকৃতির এই রহস্যময় সৃষ্টির প্রতি প্রচন্ড আগ্রহ থেকে প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ সমুদ্র পরিভ্রমণ করছে ও সমুদ্রাভিযান চালিয়ে আসছে।

তবে সমুদ্র-সংক্রান্ত বিজ্ঞানসম্মত চর্চার সূচনা করা হয় মোটামুটিভাবে ১৭৬৮ থেকে ১৭৭৯ সালের মধ্যে ক্যাপ্টেন জেমস কুকের প্রশান্ত মহাসাগর অভিযানের সময়।

তাছাড়া মানবজাতির বিকাশ ও বাণিজ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে সাগর বরাবরই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে এসেছে।

সমুদ্রের জলে সর্বাধিক পরিমাণে যে ঘনবস্তু দ্রবীভূত অবস্থায় রয়েছে তা হল সোডিয়াম ক্লোরাইড। এছাড়া অন্যান্য অনেক মৌলের সাথে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম,ক্যালসিয়াম ও পটাসিয়ামের লবন! কয়েকটি মৌল রয়েছে অতিসূক্ষ্ম কেন্দ্রীভূত অবস্থায়।

সমুদ্রজলের লবণাক্ততা সর্বত্র সমান নয়। পৃষ্ঠতল ও বড় বড় নদীর মোহনার কাছে জলের লবণাক্ততা কম; অন্যদিকে সমুদ্রের গভীরতর অংশে লবণাক্ততা বেশি। যদিও বিভিন্ন মহাসাগরগুলির মধ্যে দ্রবীভূত লবনের আপেক্ষিক অনুপাতের পার্থক্য কমই হয়।

সমুদ্রের পৃষ্ঠতলের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু তরঙ্গ সৃষ্টি করে। সেই তরঙ্গ সমুদ্রের অগভীর স্থানে প্রবেশ করে ভেঙে পড়ে।

সমুদ্রের উপরিতলের সঙ্গে বায়ুর ঘর্ষণের ফলে সমুদ্রস্রোতেরও সৃষ্টি হয়। এই সমুদ্রস্রোতগুলি ধীরগতিতে অথচ নিয়মিতভাবে মহাসাগরগুলির মধ্যে জল প্রবাহিত করে।

মহাদেশ সমুহের গড়ন ও পৃথিবীর আবর্তন(কোরিওলিস প্রভাব) সহ কয়েকটি কারণ এই প্রবাহের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করে।

বিশ্ব পরিবহণ বেষ্টণী” নামে পরিচিত গভীর-সমুদ্রস্রোতগুলো মেরু অঞ্চল থেকে ঠান্ডা জল প্রত্যেকটি মহাসাগরে বহন করে আনে।

নিজের অক্ষের চারিদিকে পৃথিবীর আবর্তন, পৃথিবীর চারিদিকে পরিক্রমণরত চাঁদের মাধ্যাকর্ষণ বল, সামান্য পরিমাণে সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে সাধারণত দিনে দু’বার সমুদ্রপৃষ্ঠের উত্থান ও পতন ঘটে।

এই ঘটনা জোয়ার-ভাটা নামে পরিচিত। উপসাগর ও নদীর মোহনায় জোয়ার-ভাটার মাত্রা অত্যন্ত বেশি হয়।

মহাসমুদ্রের নিম্নবর্তী ভূগর্ভে ভূ-সাংগাঠনিক পাতের নড়াচড়ার ফলে সমুদ্রের তলদেশে ঘটা ভূমিকম্পের ফলে বিধ্বংসী সুনামির উদ্ভব ঘটে। অবশ্য আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, প্রবল ভূমিধ্বস, উল্কাপিণ্ডের সংঘাতেও অনেক সময় সুনামির সৃষ্টি হয়ে থাকে।

সমুদ্রে বিভিন্ন ব্যাক্টেরিয়া, শৈবাল, উদ্ভিদ, ছত্রাক ও প্রাণীর সন্ধান পাওয়া যায়। এইজন্য সমুদ্রে একটি বৈচিত্র্যময় সামুদ্রিক বাসস্থান ও বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে।

এই জাতীয় বাসস্থান ও বাস্তুতন্ত্র সমুদ্রের উপরিতলের সূর্যালোকিত জলভাগ ও তটরেখা থেকে উল্লম্বভাবে শীতল ও অন্ধকার সমুদ্রতলস্থ ক্ষেত্রেরজলের উচ্চচাপযুক্ত সুগভীর অংশ এবং উত্তর মেরুঅঞ্চলের বরফের তলায় স্থিত শীতল জল থেকে অক্ষরেখা বরাবর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলের বর্ণবৈচিত্র্যময় প্রবাল প্রাচীরগুলি পর্যন্ত প্রসারিত রয়েছে।

উদ্ভিদ ও প্রাণীদের বেশ কিছু প্রধান গোষ্ঠীর বিবর্তন ঘটেছে সমুদ্রে। এমনকি কিছু চাঞ্চল্যকর তত্ত্ব প্রমাণ করে জীবনের উৎপত্তিও সম্ভবত সমুদ্রেই ঘটেছিল।

সমুদ্র মানবজাতিকে প্রচুর খাদ্য সরবরাহ করে। এর মধ্যে মাছই প্রধান। তবে শেলফিস,স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সামুদ্রিক শৈবাল পাওয়া যায় সমুদ্র থেকে। এগুলো হয় জেলেরা জাল ফেলে ধরে অথবা জলের তলায় চাষ করা হয়।

এছাড়াও মানুষ সমুদ্রকে ব্যবহার করে বাণিজ্য, পর্যটন, খনিজ উত্তলন, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যুদ্ধ, সাঁতার, প্রমোদ ভ্রমণ ও স্কুবা ডাইভিং ইত্যাদি অবকাশ যাপনের কাজে। এসব কাজকর্মের জন্য সমুদ্র দূষিত হয়।

মানব সংস্কৃতিতে সমুদ্রের গুরুত্ব নেহাত কম নয়। হোমারের ওডিসি মহাকাব্যের যুগ থেকে সাহিত্যে, সামুদ্রিক শিল্পকলায়, থিয়েটারে ও উচ্চাঙ্গ সংগীতে সমুদ্রের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

সবশেষ আমরা বুঝতেই পারছি, সমুদ্র আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্যে অতুলনীয় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।

তবু যেন উদ্ভট উটের পিঠে চড়ছে দেশ! সমুদ্রকে নিয়ে চরম উদাসীন আমরা। খুব শীঘ্রই আমাদের টনক নড়বে আশা রাখছি। নিজেদের স্বার্থের জন্যেই নাহয়!