ইরান ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে “জি-সেভন এবং ন্যাটো” র কঠোর হুশিয়ারি

ইরানের পারমাণবিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা রোধে একটি চুক্তিতে রাজি হওয়ার সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে হুশিয়ারি দিয়েছে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-সেভেন। অন্যদিকে, রাশিয়াকে ইউক্রেন আক্রমণের পরিণতি সম্পর্কেও সতর্ক করেছে সংগঠনটি।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা উত্তর-পশ্চিম ইংল্যান্ডের লিভারপুলে দু’দিনব্যাপী সম্মেলন থেকে গতকাল রবিবার এই হুশিয়ারি দেন। এই জোট বৈশ্বিক হুমকির বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী ঐক্যফ্রন্ট উপস্থাপন করতে সম্মেলন করেন।

ইরানের বিষয়ে জি-সেভেনের আয়োজক ব্রিটেন বলেছে, ভিয়েনায় পুনরায় আলোচনা শুরুর অর্থ হচ্ছে ইসলামিক প্রজাতন্ত্রটির জন্য একটি গুরুতর সমাধানের উদ্দেশে আলোচনার টেবিলে আসার শেষ সুযোগ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস আলোচনা শেষ হওয়ার পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ইরানের হাতে এখনও সময় আছে এই চুক্তিতে সম্মত হওয়ার।

ইরান এবং বিশ্বশক্তির মধ্যে ২০১৫ সালে করা চুক্তি পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করার জন্য বৃহস্পতিবার আলোচনা পুনরায় শুরু হয়েছে, যা থেকে ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।

পশ্চিমা শক্তিগুলো বলছে, ইরানের সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে। যদিও ইরান দাবি করে, তারা কেবল একটি বেসামরিক সক্ষমতা বিকশিত করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি চুক্তিতে ফিরে যেতে প্রস্তুত। ইরানের কর্মকর্তারা মনে করেন, তারাও আলোচনায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী। কিন্তু পশ্চিমা শক্তিগুলো তেহরানকে এই বছরের শুরুর দিকে আলোচনার অগ্রগতিতে পিছিয়ে দেয়ার অভিযোগ এনেছে এবং বলছে, তারা কেবল কালক্ষেপণ করছে।

অন্যদিকে, ইরানের পাশাপাশি সাবেক সোভিয়েত রাষ্ট্র ইউক্রেনে সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কা এবং সীমান্তে রাশিয়ার সৈন্য মোতায়েন আলোচনায় গুরুত্ব পায়। ট্রাস বলেন, সকলে একযোগে বলেছে… যে ইউক্রেনে অনুপ্রবেশ, রাশিয়ার জন্য ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনতে পারে।
সূত্র : ভয়েব অব আমেরিকা/ডি-ডাব্লিউ

ন্যাটো নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না দিলে যুদ্ধ শুরু হতে পারেঃ রাশিয়া

রাশিয়ার অন্যতম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ বলেছেন, যদি আমেরিকা এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী নিরাপত্তার নিশ্চয়তা না দিতে পারে তাহলে যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে।

রাশিয়ার রিয়া নিউজ এজেন্সি আজ (সোমবার) রিয়াবকভের এই মন্তব্য তুলে ধরেছে।

এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একই দাবি করে বলেছিলেন, ন্যাটো জোটকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, তারা আর সেনা মোতায়েন বাড়াবে না এবং সীমান্তের কাছে কোনো অস্ত্র মোতায়েন করবে না।

আমেরিকা এবং ব্রিটেনের সঙ্গে যখন ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার বিরুদ্ধে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য আলোচনা করছে বলে খবর বেরিয়েছে ঠিক তখনই রাশিয়ার উপমন্ত্রী এই মন্তব্য করলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনায় সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার মানসিকতায় আছি। তবে সোমবারের আগে কোনো সিদ্ধান্ত আসবে না।” ভিয়েনায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছে।

জোসেফ বোরেল সুস্পষ্ট করে বলেন, আমরা পরিষ্কার সিগন্যাল দিচ্ছে যে, “যদি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়া আগ্রাসন চালায় তাহলে রাশিয়াকে উচ্চ মূল্য দিতে হবে। আমরা বিষয়টি নিয়ে আমেরিকা ও ব্রিটেন এর সঙ্গে সমন্বিতভাবে পর্যালোচনা করে দেখছি কখন, কি হতে পারে।”

এর আগে শুক্রবার রিয়াবকভ বলেছিলেন, ন্যাটোভুক্ত সদস্য দেশগুলো মন্ট্রা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে এবং তাদের এই পদক্ষেপ মোটেই গ্রহণযোগ্য হবে না। রুশ মন্ত্রী আরো বলেন, মন্ট্রা কনভেনশনের কারণে কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চলে কয়েক দশক ধরে স্থিতিশীলতা বিরাজ করছিল কিন্তু পশ্চিমা দেশগুলো সেই চুক্তি লঙ্ঘন করছে।

১৯৩৬ সালের ২০ জুলাই মন্ট্রা কনভেনশন সই হয় এবং ৯ নভেম্বর থেকে তা কার্যকর হয়। এই কনভেনশনের ফলে বসফরাস প্রণালী দিয়ে কৃষ্ণসাগর এবং ভূমধ্যসাগরে জাহাজ চলাচলের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে তুরস্ক।

কন্ট্রা কনভেনশনের পর এই প্রণালী দিয়ে শান্তিকালীন বেসামরিক জাহাজ চলাচল করতে পারত এবং কৃষ্ণসাগরীয় দেশগুলোর বাইরের রাষ্ট্রগুলোর জাহাজ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু সম্প্রতি আমেরিকা ও ব্রিটেনের কয়েকটি জাহাজ এই প্রণালী দিয়ে কৃষ্ণসাগরে প্রবেশ করেছে যা নিয়ে বারবার আপত্তি জানাচ্ছে রাশিয়া।

সূত্রঃ পার্সটুডে/এসআইবি/১৩