পর্ব ৩: কিভাবে সেলস বাড়াবেন?

good days for noodles market

যেহেতু গত দু’পর্বে কাস্টমার এক্সপেরিয়ান্স নিয়ে লিখেছি, এ পর্বে লিখবো কি করে Customer Buying Behaviour বুঝতে হয় & সে মত কাজ করে সেলস বাড়াতে হয়।

একটা প্রপার কাস্টমার এক্সপেরিয়ান্স ডিজাইন করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ঐ প্রোডাক্ট কিংবা সার্ভিস যে সকল কাস্টমারদের কাছে বিক্রি করা হবে তাদের Purchasing Behaviour টা বোঝা।

একটা ব্র‍্যান্ডের সাথে কাস্টমারদের যতগুলো Touch Point আছে বুঝতে হবে কোন পয়েন্ট কাস্টমারকে বেশি ইনফ্লুয়েন্স করে। এই পয়েন্ট Product to Product, Industry to Industry & Channel to Channel ভ্যারি করে।

(Touch Point – যে যে পয়েন্টে কাস্টমার ব্র‍্যান্ড সম্পর্কে জানতে পারে যেমন, advertising in digital, bill boards, google; pr, activation, friends & family, retails, POS, news & documentaries ইত্যাদি)

তার আগে একটা ছোট গল্প বলি,
ম্যাগীর উত্থান-পতন-উত্থান।

আপনারা অনেকেই জানেন ২০১৭-১৮ তে Maggi Instant Noodles বেশ সাফার করছিল মার্কেটে। বাংলাদেশের এক নাম্বার ইন্সট্যান্ট নুডলস হটাৎ করেই প্রান দিয়ে রিপ্লেসড হয়ে যায়।

তারপর ১৯-২০ এর এগ্রেসিভ রিপজিশনিং এবং স্ট্র‍্যাটেজিক ডিসিশনের কারনে Maggi আবারও নুডলস ক্যাটাগরিতে এক নাম্বারে চলে আসে।

তখন আসলে কি হয়েছিল জানার আগে, নুডুলস কেনার সময় মানুষ আসলে কি চিন্তা করে ঐটা দেখি।

নুডুলসের ক্ষেত্রে মানুষের প্রথম রিকোয়েরমেন্ট টেস্ট এবং ফ্লেভার। অর্থ্যাত খেতে মজা কিনা এবং স্বাদের ভিন্নতা পাওয়া যায় কিনা। এই কারনেই Knor কিংবা Chop Stick খুব একটা সুবিধা করতে পারে নাই। ওদের টেস্ট খুবই ব্লান্ট!

যেহেতু নুডলস এই মুহুর্তে একটা হাউস হোল্ড প্রোডাক্ট, মাসিক কিংবা সাপ্তাহিক বাজারের লিস্টে নুডলস অবশ্যই থাকে। তাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটার ৪ পিসের টা এক সাথে কেনা হয়।

সাধারনত টেস্টে এবং দামে আকাশ পাতাল কোন পার্থক্য না থাকলে ব্র‍্যান্ড খুব একটা ম্যাটার করে না। ডিস্কাউন্ট, দাম, ফ্রি গিফট এবং হাতের নাগালে পাওয়া যায় কিনা এটাই বেশি ম্যাটার করে। সাথে দোকানদারের একটু পুস মার্কেটিং।

ম্যাগীতে ফিরে আসি…

সে সময় ম্যাগির মুলত একটা ফ্রেভারই মার্কেটে পাওয়া যেত। এবং কঞ্জিউমার প্রোমোশনও তেমন ছিল না। প্রাইসও মোটামুটি একটু প্রিমিয়াম ছিল।

অন্যদিকে Pran তখন ৪ পিস, ৮ পিস এবং ১৬ পিসের সাথে ফ্রি প্রোডাক্ট দেয়া শুরু করে। আপনারা দেখেছেন কিনা জানি না, তবে ৮ পিস এবং ১৬ পিসের সাথে ওরা যেই কন্টেইনারটা দিত সেটার মান আসলেই ভালো ছিল।

এবং মামা তখন বেশ ভালো একটা অবস্থানে ছিল এর কারন মামা তখন অনেকগুলো ফ্লেভার এ্যাভেইলেভেল ছিল।

যাদের মেইন ফোকাস টেস্ট এবং ফ্লেভার ছিল তারা মামাটা পছন্দ করতো আর যাদের মেইন ফোকাস দামে সাশ্রয়ী কিন্তু মানও ভালো, তাদের মেইন ফোকাস ছিল প্রান।

(গত লেখাতেই বলেছি প্রানের ডিস্ট্রিবিউশন এবং রিটেল ম্যানেজমেন্ট বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডে এখনও বেস্ট)

Product Variety : ২০১৯ এর শেষের দিকে অথবা ২০ এর শুরুর দিকে ম্যাগী নতুন করে মার্কেটে আসে অনেক গুলো ফ্লেভার নিয়ে।

ম্যাগী মাসালা, ম্যাগী চিকেন তান্দুরী সহ আরো অনেক গুলো ফ্লেভার। এবং এগুলোর টেস্ট সেই সময় মামা থেকেও অনেক ভালো ছিল।

Huge Promotion & Consumer Activation: মোটামুটি লংচিং এর সাথে সাথে ম্যাগী প্রচুর এ্যাক্টিভেশন আর প্রোমোশন দেয়া শুরু করে।

একদিকে ফ্রি স্যাম্পলিং এবং টেসস্টিং অন্যদিকে ৮ টা কিনলে ৪ টা ফ্রি, ৪ টা কিনলে একটা ফ্রি সহ আরো বেশ কিছু এক্সাইটিং প্রোমোশন নিয়ে আসে।

সে সময় আমি স্বপ্নে কর্মরত। করোনা শুরুর আগে আগে স্বপ্নের সব প্রাইম জোন গুলোতে ওদের টেস্টিং চলছিল।

পুরো প্রোগ্রাম এর কোওর্ডিনেশনের দায়িত্বে থাকায় আমি প্রায় তাদের সেলস সম্পর্কে খোজ খবর নিতাম।

ভাগ্য ক্রমে নেসলের যে আপু এই প্রোগ্রাম এক্সিকিউশনের দায়িত্বে ছিল উনি আমার পুর্ব পরিচিত ছিল। একদিন কথায় কথায় জিজ্ঞেস করলাম, সেলসে রিটার্ন কেমন এসেছে; তার উত্তর ছিল, “মাচ হায়ার দ্যান এক্সপেক্টেড” (কনফিডেনশিয়াল কারনে নাম্বারটা বলতে পারলাম না)

Post Trial, Purchase & Post Purchase Phase: এক সময় ফ্রি টেস্টিং বন্ধ করে দিলেও প্রোমোশন গুলো অনেক দিন ছিল (স্বপ্নে প্রায় ১ বছর ছিল);

যার কারনে যারা টেস্ট এবং কঞ্জিমার প্রোমোশনের কারনে অন্য ব্র‍্যান্ডে সুইচ করেছিল তারা আবার ফেরত এসেছে। এবং তারা আর ফেরত যায় নি অন্য ব্র‍্যান্ডের কাছে।

Brand Visibility in All Media through Exciting Contects:

মূলত সব মিডিয়াতেই তারা এক্সাইটিং কন্টেন্ট নিয়ে হাজির হয়। যেটার মুল কমিউনিকেশন পয়েন্ট ছিল “ভিন্ন স্বাদের ম্যাগী”

প্রোডাক্ট ভেদে মুলত ৩ ধরনের কঞ্জিউমার পার্চেজিং বিহেবিয়র দেখা যায়।

১। ধরেন একটা গাড়ি কিংবা বাসার জন্য একটা ডিপ ফ্রিজ (যেহেতু সামনে কোরবানী আসছে) কিংবা দামী মার্বেলের একটা সুন্দর ডাইনিং টেবিল (বাজার দাম প্রায় ১.২ লক্ষ থেকে ২.৫ লক্ষ পর্যন্ত)

এখন এই প্রোডাক্ট কেনার সময় কাস্টমার আসলে কি করে, পরিচিত মানুষ জনের সাথে কথা বলে, ইন্টারনেটে একটু পড়াশোনা করে, কেনার আগে সব গুলো ব্র‍্যান্ড ঘুরে ঘুরে দেখে তবে সবচেয়ে যেটা বেশি করে, একজন কিংবা একাধিক এক্সপার্টের সাথে কথা বলে।

এবং এই প্রসেস টা অনেক লম্বা সময় নিয়ে হয়। অনেক সময় এটা ৬-১২ মাস লাগে শেষ হতে। তাই এটাকে বলে Extending Decision Making Behaviour

২। প্রতিটা মানুষের নির্দিষ্ট সময় পর পর ফিক্সড কিছু জিনিস অবশ্যই লাগে, এইগুলা না হলে জীবন আসলেই চলবে না। যেমন, চাল, ডাল, আটা-ময়দা সহ যাবতীয় গ্রোসারি আইটেম।

মেয়েদের জন্য স্যানিটারি ন্যাপকিন, ছেলেদের জন্য শেভিং আইটেম। এইগুলা কেনার সময় আসলে কাস্টমার খুব একটা চিন্তা ভাবনা করে না। যেহেতু প্রতি মাসেই লাগে দাম কিংবা ভ্যারাইটি খুব একটা ম্যাটার করে না।

Availability & POSM (পয়েন্ট অব সেলস মার্কেটিং) টাই বেশি ম্যাটার করে!
তাই এগুলোকে Habitual Decision Making Behaviour বলে।

৩. না হলে জীবন চলবে না, তানা, তবে না থাকলে জীবিন বোরিং লাগে যেমন, নাস্তার আইটেম যেমন নুডলস, বিস্কিট, ফ্রোজেন ফুড কিংনা স্কীন কেয়ার আইটেম যেমন, সাবান, শ্যাম্পু, বডি ওয়াশ, লোশন ইত্যাদি ইত্যাদি। মানুষের রেগুলার প্রয়োজন হয় তবে এইগুলো মানুষ এক এক সময় এক এক ব্র‍্যান্ড কিংবা এক এক ফ্লেভার পছন্দ করে।

কারন তারা নতুন নতুন এক্সপেরিয়ান্স খোজে খোজে, নতুন নতুন স্বাদ খোজে। এবং এই বিহেবিয়রকে Variety Seeking Behaviour বলে।

এখন বিহেভিয়ার তো বুঝলেন, Sales কিভাবে বাড়াবেন?

১. আপনার বিজনেস প্রোডাক্ট যদি এক হয়, এইক্ষেত্রে সবচেয়ে ইম্পোর্টেন্ট, Word of Mouth & Commited to Respective Quality.

আর যা করেন তা করেন, কোয়ালিটিতে হের ফের করা যাবে না, ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্ট ধরে ধরে তার থ্রুতে মানুষকে জানাতে হবে, এবং যারা অল্রেরেডি আপনার প্রোডাক্ট কিনেছে তাদের মাধ্যমে Communicate করতে হবে নতুন কাস্টমারদের!

Sales Kickstar: Communication & Promotion Through Existing Customers & Industry Expert, Indirect PR)

2. আপনার প্রোডাক্ট যদি দুই হয় সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট “কনভেনিয়েন্স, কাস্টমারের হাতের নাগালে পন্য রাখা” যেন হাত বাড়ালেই সবার আগে আপনার প্রোডাক্ট পাওয়া যায়।

Sales Kickstart: Convenience, Last Mile Availability, Similar Pricing, POSM & Brand Visibility in Mass Media

৩. আর আপনার পন্য যদি ৩ নাম্বার হয়ে থাকে, তাহলে তো বুঝতেই পারছেন, নিত্য নতুন ভ্যারাইটি লঞ্চ করতে হবে, কাস্টমারদের টেস্ট বাড বুঝে স্বাদ নির্ধারন করতে হবে এবং তার সাথে নানা রকমের এ্যাক্টিভেশন এবং এক্সাইটিং প্রোমোশন দিতে হবে শুরুর দিকে (বার্গার কিং যখন প্রথম বাংলাদেশে আসে তখন ওরা একটা সিভিয়ার ব্যাকলিস খায় কারন ওদের বার্গার খুবই ড্রাই ছিল।

ইন্টারন্যাশানালী বার্গার ড্রাই থাকে কিন্তু আমাদের দেশের মানুষের কাছে বার্গার হচ্ছে, খাওয়ার সময় চুইয়া চুইয়া সস, মেয়োনিজ, পিয়াজ পড়তে থাকবে)

Sales Kickstart: Varity with Quality, Taste, Exiting Activation & Communication, Brand Visibility in Social Media through Content

আমি যতটা পেরেছি ছোট করে যতটুকু সম্ভব সব কিছুই মোটামুটি লিখার চেষ্টা করেছি। আর এটার সাথেই Customer Experience সিরিজটা শেষ করছি।

আশা করছি নতুন কোন সিরিজ নিয়ে আবার হাজির হবো। তবে চাইলে আপনারাও জানাতে পারেন Customer Experience এর কোন পার্টটা নিয়ে আপনারা আরো জানতে চান, পড়তে চান।

(নিচে আগের দুইটা লেখার লিনক দেয়া আছে, যারা পড়েন নাই পড়ে দেখতে পারেন)

পর্ব-১: ব্যবসার সাস্টেইনেবল গোল এবং সেলস ফানেল

পর্ব ২: কিভাবে ব্যাবসার ধরন বুঝে কাস্টমার এক্সপেরিয়ান্স ডিজাইন করবেন