ঢাকা কলেজের নেপথ্যে: আন্দোলন, চাঁদাবাজি, নিউমার্কেট এবং অন্যান্য

এই লেখায় কিছুদিন পূর্বে ঘটে যাওয়া ঢাকা কলেজের সম্পূর্ণ আন্দোলন নিয়ে একটি ওভারভিউ ও মানুষের সঠিক-ভুল সকল মতামতের ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। সম্পূর্ণ না পড়ে কোনো মতামত দিবেন না।

শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ঢাকা কলেজ অন্যতম। এখানকার শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই কোনো সমস্যা হলেই দেখা যায় সব ডিসিয়ানরা একত্রিত হয়ে যায়। কিছুদিন পূর্বে এমনই এক সমস্যার কারণে ঢাকা কলেজের সাথে নিউমার্কেটের একটি বিবাদ আন্দোলনে রূপ নেয়।

কিন্তু সাধারণ মানুষজনের মধ্যে কেউ ঢাকা কলেজকে চাঁদাবাজ কিংবা সন্ত্রাস ইত্যাদি ট্যাগ লাগিয়ে পুলিশের এমন পক্ষপাতিত্বকে জাস্টিফাই করে আবার কেউ নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের সম্পর্কে সকল নেগেটিভিটি ছড়িয়ে ঢাকা কলেজকে সমর্থন করে। পুরো আন্দোলনে কিছু বিচ্ছিন্নভাবে ঘটনা ঘটেছিল তা একে একে বর্ণনা করবো।

১. আন্দোলনের সূত্রপাত:

মিডিয়াতে প্রথম থেকে একেকবার একেক ঘটনা বলে আসছিল আন্দোলনের ব্যাপারে। কোনো জায়গায় বলছিল খেয়ে বিল না দেওয়ায় এমন হয়েছিল, আবার কেউ বলছিল চাঁদাবাজি করতে গিয়ে মারামারির এক পর্যায়ে এমন আন্দোলনের শুরু।

কিন্তু মুল ঘটনার কোনো প্রমাণ না পেয়েই এমন ভুল তথ্য মানুষের মাঝে ছড়ানোর ফলে মানুষ প্রথম থেকেই অনেক দ্বিধায় থাকে। তখন থেকেই মানুষজন ঢাকা কলেজকে দোষারোপ করা শুরু করে।

কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় ঘটনার সূত্রপাত হয়েছিল দুটি দোকানের মধ্যে সমস্যা থেকে। সেখানে চাপাতি নিয়ে একজন যুবককে প্রবেশ করতে দেখা যায়। সেই যুবক ডিসিয়ান হউক বা নন ডিসিয়ান হউক, তাকে আপনি গ্রেফতার করেন সেটিতে আমাদের কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু আপনি তা না করে পুরো ক্যাম্পাসে গিয়ে হামলা চালালেন। এটি কতটুকু যৌক্তিক?

এখানে স্পষ্টত: এমন এক ঝামেলার সময়ে সেখানে কোনো পুলিশের উপস্থিতি ছিল না। অথচ সেসময়ে এত বড় একটি সমস্যার প্রথমেই উচিত ছিল পুলিশের উপস্থিতিতে মিমাংসা করা।

পুলিশ না থাকায় সেখানে ঘটনাটি আরও বড় আকার ধারণ করা শুরু করে। পরে ঢাকা কলেজ ও নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। যদি এতটুকুই ঘটনা হতো, তবে পুরো ডিসিয়ানদের সবাই কখনোই আন্দোলন বা এমন কোনো কিছু করতো না। কিন্তু একে তো পুলিশ ঘটনার সূত্রপাতে উপস্থিত ছিল না।

তার উপর এমন একটা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় পুলিশ ডিসিয়ানদের উপর একপাক্ষিকভাবে হামলা চালায়। যেখানে পুলিশের উচিত ছিল নিরপেক্ষ হয়ে দুই পক্ষকে শান্ত করা। শুধু তা করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা ক্যাম্পাসের ভিতরেও হামলা চালায়।

মেইন গেইট বরাবর পুরো জায়গাটি টিয়ারগ্যাসে ভরা ছিল। যার ফলস্বরূপ ছাত্ররা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে নি এমন ঘটনাটি। সেখান থেকেই মূল আন্দোলনের সূত্রপাত।

অর্থাৎ মূল আন্দোলনটির সূত্রপাত কখনোই ব্যবসায়ীর দুই পক্ষের ঝামেলার কারণে নয় বরঞ্চ পুলিশের এক তরফা ছাত্রদের উপর হামলা এবং কলেজ ক্যাম্পাসকে রক্তাক্ত করার জন্যই হয়েছিল।

কিছুদিন আগেও টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাথে অনার্স-মাস্টার্সের ভাইদের মারামারি হয়েছিল। সেখানে আপনি আমাকে দেখান কয়টা সাধারণ ছাত্র সেই আন্দোলনের পক্ষ নিয়েছে? সেখানেও যদি পুলিশ এভাবে এক তরফা হামলা করতো তখনও একইভাবে আমরা ঢাকা কলেজের পক্ষেই থাকতাম।

২. এডিসি হারুনের গুলি চেয়ে থাপ্পড় মারার ঘটনা:

প্রথম ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার রাতে পুলিশ এক তরফা গুলি চালিয়েছিল ছাত্রদের উপর। যাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল এডিসি হারুন। প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি চালিয়েছিল। ঐ এক রাতেই ৪০+ জন আহত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ৪ জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিল।

সেদিন ব্যবসায়ীদের কেউই আহত হয়নি। এক পর্যায়ে একটি ভিডিওতে দেখা যায় এডিসি হারুন গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় আরেক পুলিশ অফিসারকে থাপ্পড় মারে। যাকে কোনোভাবেই আপনি জাস্টিফাই করতে পারেন না।

৩. সমঝোতা করতে চাওয়ার পরেও শিক্ষকদের উপর হামলা:

অনেককেই দেখলাম নিউমার্কেট ব্যবসায়ীদের সাদা পতাকা দেখানোর ব্যাপারটায় অনেক সিম্প্যাথি দিয়েছে। অথচ এর আগেই ঢাকা কলেজের শিক্ষকরা সমঝোতা করতে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলতে চেয়েছিলেন। অথচ সেসময় ব্যবসায়ীরা সমঝোতা করলোই না, উল্টো শিক্ষকদের উপর হামলা চালালো।

পুলিশ দ্বিতীয় দফায় শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়ে প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে আহত করলো। এমনকি এই পৈশাচিক বাহিনী কলেজের টিচার্স লাউঞ্জের সামনে গিয়েও টিয়ারগ্যাস মারলো। কলেজের শিক্ষকরাও অনেকে আহত হলেন।  ক্যাম্পাসের প্রবেশদ্বারের পুরো জায়গাটি টিয়ারগ্যাসে ভরা ছিল।

শিক্ষকদের উপর এমন হামলাকে জাস্টিফাই করা যায় না কখনোই।

৪. সাংবাদিকদের উপর হামলা:

একটা আন্দোলন যখন হয়, তখন সেই আন্দোলনে সাংবাদিকদের কাজ থাকে সেখানে গিয়ে সেই আন্দোলনের আপডেট জানানো। এই আন্দোলনেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অথচ এমন আন্দোলনেও ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালালো।

অনেক সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। অথচ সেই সাংবাদিকদের উপর হামলা নিয়ে কোনো রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। এই হামলায় শিক্ষার্থীরা একদম নিস্ত্রিয় ছিল। পক্ষান্তরে ব্যবসায়ীরা সাংবাদিকদেরও ছাড় দেয়নি।

৫. অ্যাম্বুলেন্সের উপর হামলা:

ঢাকা মেডিক্যালে যাওয়ার পথিমধ্যেই ঢাকা কলেজের অবস্থান। আর সেই ঢাকা কলেজের সামনেই ২য় দিনের আন্দোলন চলছিল। সেই সময়েই একটি অ্যাম্বুলেন্স এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যাওয়া শুরু করে। সেখানে শিক্ষার্থীরা সেই অ্যাম্বুলেন্সটিকে জায়গা করে দিলেও ব্যবসায়ীরা দেয়নি।

সেই ব্যবসায়ীরা অ্যাম্বুলেন্সটিকেও ছাড় দিলো না। এই যে একটি অসুস্থ মানুষের অ্যাম্বুলেন্স আটকিয়ে ভাঙচুর করলো, তার ব্যাপারে কোনো স্টেপ এখনও নেওয়া হয়নি।

৬. মোরসালিন এবং নাহিদ হত্যা:

পুরো আন্দোলনের এত এত অংশ ছেড়ে শুধুমাত্র এই একটি পার্ট নিয়ে মানুষের যত রকম মতামত, মানুষ জাজ করা শুরু করলো ঢাকা কলেজকে। ঢাকা কলেজ সন্ত্রাসীদের কলেজ, ঢাকা কলেজ চাঁদাবাজদের কলেজ এভাবে অনেক বিশেষণে বিশেষায়িত করেও আমাদের কলেজের এই আন্দোলনটিকে অসমর্থন জানানো শুরু করে।

প্রথম থেকে দেখা যায়, মিডিয়া থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ সবাই বলা শুরু করে, নাহিদ একজন পথচারী ছিল। একজন পথচারীকে হত্যা করা কখনোই সমর্থনযোগ্য ছিল না। মোরসালিনের ব্যাপারে মিডিয়া এতটা ফোকাস করেনি, শুধুমাত্র নাহিদের বেলায় করেছিল।

এই নাহিদ কে আগে সেটি একটু বলেনি, তারপর এই ঘটনা নিয়ে আরও কথা বলবো।

প্রথমত:

একটা মারামারি কিংবা সংঘর্ষের মধ্যে কখনোই একজন পথচারী মাঝখানে গিয়ে সেই আন্দোলনটিকে উপভোগ করার কথা না। এমনকি সে যদি কোনো কোইনসিডেন্সের মধ্যে না জেনেও পড়ে যাওয়ার কথা, তবে সে সেই জায়গা থেকে সরে অন্য জায়গায় যাওয়ার কথা। কিন্তু সে যায়নি।

আমার এখনও মনে আছে। ছোট থাকতে যখন আমি মুসলিম হাইয়ে পড়তাম সেসময়ে একবার কোন একটি আন্দোলন চলছিল পুরো দেশব্যাপি। আমি প্রবর্তক মোড়ে যখন এসে পৌছুলুম, তখনই দেখি একরাশ মানুষ দৌঁড়ে আমার দিকে আসছে।

আমি ভয় পেয়ে সাথে সাথেই শিশু একাডেমির গলিতে ঢুকে গেলাম। অথচ সেদিন আমার বাসায় যাওয়ার তাড়া ছিল। কোনো কো-ইনসিডেন্সে পড়তাম না যদি কিনা ঢাকা কলেজ-নিউমার্কেটের মত টু ওয়ে রাস্তায় কোনো আন্দোলন হইতো। আগে থেকেই সরে যেতাম। কিন্তু সেখানে ছিল চৌরাস্তা।

অর্থাৎ ঘটনাটি এইজন্যই বললাম কারণ কোনো কমন সেন্স ওয়ালা মানুষও এমন আশঙ্কাজনক পরিস্থিতিতে সেখানে পথচারী সাজতে যাবে না।

দ্বিতীয়ত:

পরবর্তীতে নাহিদের ব্যাপারে সত্যতা পাওয়া যায় এই যে নাহিদ ব্যবসায়ীদের পক্ষ হতে মারামারি করছিলো, তাও একদম অগ্রভাগে। এই সত্যতা নিয়ে মিডিয়া এখনও পর্যন্ত কোনো কিছু বলে নি। শুধুমাত্র তার নতুন বিয়ে আর মেহেদির রং শুকায়নি এসব বলে সিম্প্যাথি নিচ্ছে জনগণের।

অর্থাৎ এটি একদম স্পষ্ট যে, নাহিদ কোনো পথচারী ছিল না। অপরপ্রান্তে মোরসালিন কোনো পথচারী ছিল না এবং আন্দোলনে একদম সক্রিয় ছিল বলে তাকে নিয়ে কোনো কথা বলা হয়নি। সেও তো আন্দোলনে মারা গিয়েছে। তাহলে তার জন্য আপনাদের বিচার চাওয়ার বুলি কোথায়?

নাহিদ ও মোরসালিন উভয়েরই দোষ ছিল। এরপরও তাদের দোষ থাকার পরেও তাদের উপর হত্যা করাকে আমরা কখনোই জাস্টিফাই করতে পারি না। কোনো ঢাকা কলেজের সাধারণ ছাত্রকে এখনও পর্যন্ত দেখলাম না মোরসালিন ও নাহিদ হত্যা নিয়ে প্রাউড ফিল করতে।

বরঞ্চ আমাদের সবার মাথা নিচু হয়ে আছে এই কারণেই কারণ আমাদের মোটিভ কখনোই হত্যা ছিল না, আমরা তাদের বিচার চাই যারা তাদের হত্যা করেছে। কিন্তু সবকিছু ছেড়ে দিয়ে নাহিদকে যেভাবে ইননোসেন্ট রূপে ভিক্টিমাইজ করা হচ্ছে, তার কারণে আন্দোলন পুলিশের ও ব্যবসায়ীদের এমন কার্যকলাপকে যে ঢাকা দিয়ে দিচ্ছে সেটিও কোনোভাবে জাস্টিফাইড হতে পারে না।

আরেকটি ব্যাপার লক্ষণীয়, নাহিদ ও মোরাসালিন হত্যা নিয়ে কোনো ময়না তদন্ত সঠিকভাবে হয়নি। হলেও জনগণকে জানানো হয়নি। কারণ, ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা গিয়েছিল নাহিদতে চাপাতি দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়নি। তাকে পায়ের দিকে আঘাত করা হয়েছিল।

ময়না তদন্তের মাধ্যমে এই ব্যাপারটি একদম স্পষ্ট করা দরকার, তাদের মৃত্যুর পিছে আসলেই কারণ কি ছিল।

ঢাকা কলেজের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ট্যাগ যেটি লাগে সেটি হল চাঁদাবাজি। কথায় কথায় আমাদের অনেকে বলে উঠে, ডিসিয়ানরা নিউমার্কেটে গিয়ে চাঁদাবাজি করে। আমরাও মানি কিছু শিক্ষার্থী আসলেই চাঁদাবাজি করে কলেজের ট্যাগ দিয়ে। কিন্তু এই চাঁদাবাজির পিছনে অনেক কারণ আছে।

১. নিউমার্কেটের সব ব্যবসায়ীরা কখনোই সাধু না। নিউমার্কেটের ফুটপাতে যেসব দোকান আছে, সবগুলোই অবৈধভাবে বসেছে। মেয়র তাপসের কাজের কারণেই এমনটি হয়েছে। এসব ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা এমনিতেই পুলিশকে চাঁদা দেয় আর খুব সস্তায় দোকান ভাড়া করে সেখানে। পুলিশ চাঁদা নেয় বলেই এইসব কলেজের চাঁদাবাজরা একটি সুযোগ পেয়ে যায়। আগে পুলিশ আর তাপসের এই ফুটপাতের দাপটকে থামাতে হবে এই জন্যে।

২. সব প্রতিষ্ঠানেই কিছু না কিছু এমন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাস পাবলিক থাকবেই। এদেরকে অন্যায় কাজ করার আগেই আপনার থামাতে হবে। ধরেন কেউ অন্যায়ভাবে এমন কোনো চাঁদাবাজি করলো। আপনি পুলিশকে জানাতে পারলেন না, ভালো কথা। কিন্তু যদি সেই শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি থাকে, তবে সেই প্রতিনিধির একটি দায়বদ্ধতার কারণে সেই চাঁদাবাজি বন্ধ হয়ে যাবেই। ঢাকা কলেজে সেইরকম কোনো প্রতিনিধি নেই বলেই আজকে এই অবস্থা। যেদিন থেকে কলেজের ছাত্র সংসদ ভেঙ্গে গিয়েছে সেদিন থেকেই কলেজে একের পর এক এভাবে চাঁদাবাজি বেড়ে যেতে লাগলো।

৩. নিউমার্কেটের কোনো ব্যবসায়ীকে আমি ধরেও নিলাম চাঁদাবাজের ঘটনা দেখেই সাথে সাথে পুলিশকে জানাবে। কিন্তু সেইরকম কোনো পুলিশ প্রটোকলও নিউ মার্কেটের মতো জায়গায় নেই বললেই চলে। এত বড় একটি মার্কেটের আশেপাশেও একটি সক্রিয় পুলিশ বক্সের দেখা মেলা বড়ই কষ্টসাধ্য বিষয়। কিন্তু ঠিকই দেখবেন টিটি কলেজের সামনে একঝাঁক পুলিশ প্রায় বসা থাকে। যেখানে দরকার সেখানে নেই, যেখানে দরকার নেই, সেখানে থাকে।

আজকে সময় টিভির একটি প্রতিবেদন বের হয়েছে। যেখানে সাংবাদিকরা এই নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদেরকে চাঁদাবাজির ব্যাপারে প্রশ্ন করেছিল। তখন ব্যবসায়ীরা বলছিলো, শুধুমাত্র পুলিশ এবং স্থানীয় কিছু নেতা চাঁদাবাজি করে, ঢাকা কলেজের কেউ করে না।

অতএব, এটি খুবই স্পষ্ট এখানে চাঁদাবাজি ট্যাগটাই পুরো কলেজকে করা কখনোই উচিত না। এরপরও আমরা ধরে নিলাম কিছু কিছু চাঁদাবাজি ঢাকা কলেজের কেউ করে। তাদেরকে যে আপনি ধরাই দিবেন, সেটির জন্য আপনার প্রশাসনই তো শক্ত না। কাদের জানাবেন আপনি?

তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে, কি করা যেতে পারে এইজন্য?

১. ঢাকা কলেজ ছাত্র সংসদ পুনর্গঠন করা, যাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি থাকে যাদের উপর দায়ভার দেওয়া যায়।
২. নিউমার্কেট অবৈধ ফুটপাতের দোকান আজীবনের জন্য বন্ধ করা।
৩. দুদক, ভোক্তা অধিকারের কাউন্সিলিং বৃদ্ধি করা, যাতে কোনোভাবেই ব্যবসায়ীরা ওভারপ্রাইসিং করতে না পারে।
৪. এডিসি হারুনকে প্রত্যাহার করে পুলিশি অপরাধীর দৃষ্টান্ত স্থাপন করা।
৫. নিউমার্কেটে পুলিশের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা ও পুলিশ বক্সের যথাযথ প্রয়োগ করা।
৬. নাহিদ ও মোরসালিন হত্যা নিয়ে তাদের লাশের ময়না তদন্তের ফলাফল উন্মোচন করেই তাদের হত্যার বিচার করা।
৭. শিক্ষক, সাংবাদিক, শিক্ষার্থী, অ্যাম্বুলেন্স সকলের উপর হামলার তদন্ত করা এবং সঠিকভাবে বিচার প্রক্রিয়া করা।

সবকিছু মিলিয়ে একটি কথা বলি,

যখন কোনো একটি আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলনে উভয় পক্ষের কমবেশি দোষ থাকে। কিন্তু কোনো একটি পক্ষের দোষ একটু বেশিই থাকে। উপরে আপনাদের আমি অনেকগুলো প্রেক্ষাপট প্রদর্শন করলাম। সেইসব প্রেক্ষাপটের মধ্যে বেশিরভাগই ব্যবসায়ী এবং পুলিশদের কারণেই হয়েছে।

তবে সবচেয়ে বড় দোষ যাদের সেটি হচ্ছে পুলিশ। পুলিশ চাইলেই এমন ব্যাপারটি খুব সহজেই মিমাংসা করতে পারতো যদি না এক তরফা হামলা না চালাতো। কিন্তু তারা সেটি করেনি। তাদেরকে অবশ্যই এর জবাব দিতে হবে।

মনে রাখবেন, আজকে আমাদের প্রতিষ্ঠানে এই পুলিশের পদাতিক বাহিনী হামলা করেছে, কালকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানে করতে পারে। তখন হয়তো বুঝে উঠতে পারবেন কেন আমরা আন্দোলন করেছি।

ধন্যবাদ।

লেখায়:
মিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ

সহযোগিতায়:
মো. সৈয়দুর রহমান
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ