শেষ সময়ে মেডিক্যাল এডমিশন প্রস্তুতি

সুরাইয়া আহমেদ খান প্রভা

প্রিয় আপু ভাইয়ারা , খুব দ্রুতই চলে আসছে তোমাদের এডমিশন টেস্ট , অনেকের অনেক প্রশ্ন
কিভাবে পড়া উচিত??, কিভাবে এতো বড় সিলেবাস শেষ করা যাবে? আদৌ কি সম্ভব! , কতো পেলে চান্স পাওয়া যায়??, এতো দিন তো সেভাবে পড়িনি এখন পড়লে কি হবে??, এতো কম্পিটিশন, আমি কি পারবো? জিকে, ইংলিশ নিয়ে কি করবো? এসব প্রশ্ন আমারো ছিলো, কম বেশি সবারই থাকে।

আমার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু কথা বলবো।
চেষ্টা করছি এই প্রশ্ন গুলোরই উত্তর দিতে।

প্রশ্ন ১ : আপু কিভাবে পড়বো?
– আমি বলবো টপিক অনুযায়ী, অবশ্যই এটাই করা উচিত, ঘন্টা হিসেবে পড়ার চেয়ে, টপিক ফিক্স করে পড়া অনেক জরুরী। ধরো একদিনে ভেবে নিলাম বায়ো দুইটা পেপার এর ৩টা করে চ্যাপ্টার, ইংরেজি, জিকে থেকে কিছু সিলেক্ট করে নিলে, এবং তা শেষ করতে দিনের যতটুকু টাইম যাওয়ার তাই গেল।

এটা হলো টপিক বা সিলেবাস ফিক্স করে পড়া। এমন না যে আমার ফ্রেন্ড এর থেকে শুনেছি অমুকে ১২ ঘন্টা পড়েছে তাই চান্স পেয়েছে , আমাকেও পড়তে হবে! এসব করা বৃথা। এর পাশাপাশি প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম, খাওয়া দাওয়া অবশ্যই।

প্রশ্ন ২ : এতো বড় সিলেবাস কিভাবে শেষ করবো?

– কেন করা যাবেনা? অবশ্যই যাবে।
ধরো একদিনে যদি বায়ো দুই পেপার থেকে ৩টা করে চ্যাপ্টার পড় , এবং পাশাপাশি ইংরেজি জিকে কিছু কিছু, পরবর্তী দিন ফিজিক্স এর কিছু সিলেক্ট করলে, এর পরদিন কেমিস্ট্রি এর কিছু এমন করে একটু রুটিন ফলো করলে সিলেবাস শেষ হতে কতদিন! খুবই দ্রুত শেষ হবে এবং ভালো মতো রিভাইজ ও হবে।

প্রশ্ন ৩ : কতো পেলে চান্স পাওয়া যেতে পারে?
– প্রতিবছরের রেজাল্ট যদি দেখো তবে দেখবে ২৬৬ এর মধ্যে কমবেশি চান্স হয়েই যায়, তবে সবচেয়ে ভালো হয় যদি ২৭০ এর মতো অবটেইন করা যায়, এই মার্জিনে থাকলে অবশ্যই প্রথম সারির মেডিকেল গুলোর মধ্যেই নিজেকে খুঁজে পাওয়ার আশা রাখতে পারো।

প্রশ্ন সহজ কঠিন এর উপর মার্ক একটু উঠানামা করে, কিন্তু ২৭০ সেক মার্জিন। ঢাকার মেডিকেল গুলোতে অবস্থান করে নিয়ে ২৭৫ কে সেফ কউন্ট করা যেতে পারে।

প্রশ্ন ৪ : এতোদিন তো সেভাবে পড়িনি, এখন পড়লে কি হবে?

– এটা সম্পূর্ণ একজন মানুষ এর স্ট্রেটিজি এর উপর নির্ভর করে, তবে ইচ্ছাশক্তি মানুষের স্ট্রেটিজি এর নিয়ন্ত্রক। তোমার ইচ্ছা প্রখর হলে অবশ্যই চেষ্টা চালিয়ে যাবে, এবং তোমার দক্ষতা তুমি নিজেই তৈরি করে নিবে। ❤️

প্রশ্ন ৫ : এতো কম্পিটিশন, আমি কি পারবো?
– এটা কমবেশি সবাই জানি মেডিকেল এডমিশন দেশের সবচেয়ে বেশি কম্পিটিটিভ ভর্তি পরীক্ষা গুলোর একটি, কিন্তু একটি কথা না বললেই নয়, দেখা যায় প্রতি বছরই যত এ্যাপ্লিকেন্ট থাকুক না কেন, ধরে নিতে পারো ম্যাক্সিমাম ২৫-৩০ হাজার হলো তোমার জন্য কম্পিটিটর, সংখ্যা এর কম ও হতে পারে।

অনেকেই প্রিপারেশন ছাড়াই পরীক্ষা দেয়, শুধুমাত্র হল এক্সপিরিয়েন্স এর জন্য,তাই এতো কম্পিটিশন এর কথা ভেবে চিন্তিত হবার কিছু নেই। তোমার কম্পিটিটর তুমি নিজেই, তুমি যদি মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৩০০ নম্বরে ২৭০ + / অন্তত ২৭০ অর্জন করতে পারো, নিশ্চিত হয়ে নেও, যদি ২লাখ কম্পিটিটর ও হয়, তোমার সিট কেউ নিচ্ছেনা।

প্রশ্ন ৬ : জিকে, ইংলিশ নিয়ে কি করবো?
– আমার এডমিশন এর সময় এটি ছিলো আমার জন্য সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, দেখা যায়, যারা চান্স পায় তারা বায়ো, ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি তে এভারেজলি পারেই, তবে এই ইংরেজি আর জিকে এ দুটোই তখন ম্যারিট সিরিয়াল নির্ণায়ক হয়ে দাঁড়ায়।

ইংরেজি এর জন্য আমার সময় আমি, ভোকাবুলারি আইটেম এর মধ্যে synonyms antonyms নিয়ে তেমন মাথা ঘামাইনি, কেননা এতো হাজার হাজার synonym antonym মুখস্থ করা যতটা কষ্টকর, তা মনে রাখা আরো কষ্টসাধ্য,
তাই আমি গ্রামার আইটেম বেশি বেশি প্রাক্টিজ করেছি, বিগত বছরের প্রশ্ন ঘাটলেই বুঝতে পারবো কোনসব আইটেম এর কথা বলছি।

আমার সিলেক্টেড যেসব গ্রামার আইটেম ছিলো ( Parts of speech, Subject Verb Agreement, Redundancy, Embedded Questions, Conditional sentence, Appropriate Preposition, Voice, Narration, Tag questions, Parallel Structure)

ভোকাবুলারি আইটেম এর মধ্যে (Translation, Proverbs, Phrase and idioms, Group verb – এটা তো মাস্ট, spelling mistake)

এই কিছু টপিক এর বিগত বছরের বিসিএস এবং বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সলভ করলে অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হবে আশা করি।

এবার আসি জিকে নিয়ে কিছু কথা,
★ এর জন্য প্রধান হলো সাম্প্রতিক ঘটনাবলী★
“বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ ” শুধু এই টপিকটার কথা, যতই সিলেবাসে বলা থাকুক না কেন, সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকেই বেশি প্রশ্ন করা হয়। “বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ “তো পড়তেই হবে, পাশাপাশি সাম্প্রতিক ঘটনাবলী পড়া খুবই ভালো, এটি মেডিকেল এবং বিশ্ববিদ্যালয় সহ সকল ভর্তি পরীক্ষার জন্য সেফ একটি উপায়।

আশাকরি কিছুটা হলেও তোমাদের জিজ্ঞেসার উত্তর দিতে পেরেছি , আমি শুধুমাত্র, এই সময়ে আমার নিজের জিজ্ঞেসা গুলোর উত্তর দিতে চেয়েছি।
★★★ এই সময় মেন্টাল হেলথ্ এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, কোন ফ্রেন্ড কতো ঘন্টা পড়ে, কার প্রিপারেশন কতো ভালো, কে রেটিনা, উন্মেষ, মেডিকোর টপার, কার ঘরে কতটি ক্রেস্ট জমলো, এসব নিয়ে চিন্তিত হবার কিচ্ছু নেই।

এখন এর পরিস্থিতি এবং মেডিকেল এডমিশন হলের পরিস্থিতি এক থাকেনা। অনেক স্ট্রেস, প্রেশার কাজ করে। তাই ফোকাস এসবে না দেয়াই ভালো, তবে নিজের প্রাক্টিজ চালিয়ে যেতে হবে।
অবশ্যই তুমি ভালো করবে, নিজের সর্বাত্মক চেষ্টা এবং ভাগ্য দুটির মিলিত ফল হচ্ছে যেকোনো এডমিশন রেজাল্ট।

অনেক অনেক শুভকামনা জানিয়ে শেষ করছি এই বিশাল রচনা। ❤️

সুরাইয়া আহমেদ খান প্রভা
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ
(৬১ তম এম বি বি এস) ব্যাচ।

প্রস্তুতির জন্য আমাদের মডেল টেস্ট গুলোতে অংশগ্রহণ করতে পারো। লিংক