গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের নতুন নাম গভ. কলেজ ওব এপ্লাইড হিউমেন সায়েন্স

গার্হস্থ অর্থনীতি কলেজের নতুন নাম গভ. কলেজ ওব এপ্লাইড হিউমেন সায়েন্স

গতকাল ৩রা জুন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে গার্হস্হ্য অর্থনীতি কলেজের নতুন নাম গভর্নমেন্ট কলেজ অব এ্যাপ্লাইড হিউম্যান সাইন্স হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ঢাকার আজিমপুরে অবস্থিত গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের একটি পেশাভিত্তিক মেয়েদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এটি আমেরিকার ফোর্ড ফাউন্ডেশন ও যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহামা স্টেট ইউনিভার্সিটির সহায়তায় ঢাকায় স্থাপিত হয়।

বর্তমানে এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর জীববিজ্ঞান অনুষদের অধীভুক্ত একটি কলেজ। এর ভর্তি কার্যক্রম হয় গার্হস্থ অর্থনীতি ইউনিটের অধিনে এবং ভর্তি পরীক্ষা হবে আগামী ২৭ আগস্ট।

১৯৬১ সাল থেকে কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক এবং ১৯৬৩ সাল থেকে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে পাঠদান শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের পাশাপাশি স্নাতক সম্মান (গার্হস্থ্য অর্থনীতি) কোর্স চালু হয়। ১৯৮৫-৮৬ শিক্ষাবর্ষে সমন্বিত গার্হস্থ্য অর্থনীতি থেকে ৫টি বিভাগে ৫টি সম্মান কোর্স চালু করা হয়।

বিভাগগুলি হলো খাদ্য ও পুষ্টি বিজ্ঞান, সম্পদ ব্যাবস্থাপনা ও এন্টারপ্রেনরশিপ, শিশুবিকাশ ও সামাজিক সম্পর্ক, শিল্পকলা ও সৃজনশীল শিক্ষা এবং বস্ত্র পরিচ্ছদ ও বয়ন শিল্প। ২০০২-২০০৩ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান কোর্সে অনুরূপ ৪ বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মান কোর্স এবং ১ বছর মেয়াদি স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করা হয়।

আজিমপুরে প্রায় ১০.৩ একরজুড়ে রয়েছে মনোরম ক্যাম্পাস।

মোট ক্যাম্পাস এলাকা ১০.৩ একর। এতে রয়েছে
শ্রেণীকক্ষ ২১
সেমিনার রুম ০৫
পরীক্ষাগার ০৪
লাইব্রেরী ০১
বাসস্থান ০১
হোস্টেল ০৩
ক্যাফেটেরিয়া ০১
মাঠ ০২
পুকুর ০১
প্রার্থনা রুম ০২

কলেজের নাম পরিবর্তন করায় মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থী,শিক্ষক এবং অভিভাবকবৃন্দ।

তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, বিদ্যমান পাঠক্রমের সাথে সংগতিপূর্ণ কলেজের এই নতুন নাম শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন নেতিবাচক অভিজ্ঞতা থেকে অব্যাহতি দিবে ,অধিকতর কর্মক্ষেত্রের সুযোগ সৃস্টি করবে,সমাজের সর্বস্তরে এ বিষয়ের গ্রহনযোগ্যতা ও মান বৃদ্ধি পাবে।

এই নতুন নাম বিভিন্নক্ষেত্রে সাফল্য অর্জনকারী বহু প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠের শিক্ষার্থীদের জন্য মুজিব বর্ষের এক বিশেষ উপহার যা নারী শিক্ষায় দেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে স্মৃতিচারণ করেছেন কলেজের শিক্ষক মোঃ শামিমুল হক –

খুব সম্ভবত ২০২০ সালের শুরুর দিকে,অডিটোরিয়ামে একটা মিটিং কল করা হয়েছিল। সকল বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী,শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক কর্মকর্তাদের নিয়ে মিটিংটি আয়োজন করা হয়েছিল।

বিষয়ঃ কলেজের নাম পরিবর্তন, শিক্ষার্থীদের দাবী ছিল যে আমাদের যে পাচটি বিষয় পড়ানো হয়,তা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতেও পড়ানো হয়। এবং আমাদের সিলেবাসের সাথে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সিলেবাস প্রায় সামঞ্জস্যপূর্ণ।

কিন্তু আমাদের প্রতিষ্ঠানের নামের জন্য বিষয়ের নাম উপেক্ষিত হয়।এবং বিভিন্ন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা নামের কারণে অবহেলিত হয়। তাদের যুক্তি ছিল বিভিন্ন চাকরির ভাইভা বোর্ডে,ইন্টার্নিশিপে একই বিষয়ের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগী যখন প্রতিযোগিতা করে। তখন এই নামের কারণে সেখান থেকে তারা পিছিয়ে পরে।অথচ প্রায় প্রতিবছরই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সিলেবাস মডিফাই করা হয়।

প্রতিটি বিভাগের সম্মানিত বিভাগীয় প্রধানদের নেতৃত্বে বিভাগীয় শিক্ষকগণ সিলেবাস মডিফাই করে থাকেন।পরবর্তীতে সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয় এবং উপাধ্যক্ষ মহোদয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা করে সিলেবাস মডিফাই করে থাকেন,কিন্তু এরপরেও ঠিক ফলাফল আসছিল না। শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠানের নামের জন্য ডিপার্টমেন্টের নাম উপেক্ষিত থাকে।

শিক্ষার্থীদের দাবী অনুযায়ী কলেজের নাম পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, এরপরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন সম্মানিত অতিরিক্ত সচিব,এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক স্যারের অংশগ্রহণে নাম পরিবর্তনের যৌক্তিকতা নিয়ে সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।সেমিনারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য।

এরপর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ঢাকার প্রতিনিধি,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদল,এবং জেলা প্রশাসক,ঢাকার প্রতিনিধিগণ বিভিন্ন বিষয় যাচাই বাছাই করে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আলাদা আলাদা চিঠি প্রেরণ করেন।মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয় এবং সম্মানিত শিক্ষা সচিব মহোদয় আবার যাচাই বাছাই করে নাম পরিবর্তনে সম্মতি জ্ঞাপন করেন ।যা গতকাল রাতে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।

নাম পরিবর্তনে বিষয়টি যুগোপযোগী, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন বিভাগের নাম যুগের চাহিদা অনুসারে নিয়মিত পরিবর্তন হয়।আশা করছি নতুন নামটি শিক্ষার্থীদের জন্য আশীর্বাদ বয়ে আনবে।এবং যুগের চাহিদা অনুসারে তাল মিলিয়ে চলতে সহায়তা করবে।

ধন্যবাদ জানাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী মহোদয়কে,নারীর ক্ষমতায় নিশ্চিত করতে উনারা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।সেইসাথে একাডেমিক সেক্টরের আধুনিকায়ন করতে সচেষ্ট ভূমিকা রেখে যাচ্ছেন।

কলেজ অব ইকোনমিকস এর নতুন পরিচয়
“Govt. College of Applied Human Science”

আরো তথ্যঃ বাংলাপিডিয়া