ব্রাকে অধ্যাপনা করতেন যুবলীগের চেয়ারম্যান পরশ

শেখ ফজলে শামস পরশ

যুবলীগের নতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন শেখ ফজলে শামস পরশ। শনিবার (১৪ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটশন মিলনায়তনে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কংগ্রেসে নতুন নেতৃত্বের নাম ঘোষণা করা হয়।

কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে তার নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

যুবলীগের আগের ৬ সম্মেলনের চারটিতেই নেতৃত্বে দেখা গেছে যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি এবং তার নিকটাত্মীয়দের। পরশকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করে সে ধারাবাহিকতা এবারো অক্ষুণ্ন থাকলো।

শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠ পুত্র। বঙ্গবন্ধুর বোন শেখ আছিয়া বেগমের বড় ছেলে শেখ মনি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাবা শেখ মনি ও মা আরজু মণিকে চিরতরে হারান পরশ। তখন তার বয়স মাত্র ৬। ছোট ভাই তাপস মাত্র ৪ বছরের শিশু।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হয় পরশ-তাপসকে। কখনও আত্মীয়দের বাসায় লুকিয়ে থাকতে হয়েছে, কখনোবা পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। এভাবে দুই বছর কাটার পর ১৯৭৮ সালে তারা ভারতে চলে যায়।

শেখ আছিয়া বেগম তাদের ভারতে নিয়ে যান। চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, শেখ ফজলুর রহমান মারুফ, ফুপু শেখ হাসিনা, শেখ রেহেনা তারাও তখন বিদেশে শরণার্থী। তার ছোট ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস ঢাকা-১২ আসনের সংসদ সদস্য।

সপ্তম কংগ্রেসের প্রথম অধিবেশন শুরু হওয়ার আগে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে চাচা শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ভাই শেখ ফজলে নূর তাপস, চাচাত ভাই শেখ ফাহিম, শেখ নাঈমসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে সম্মেলন ভ্যেনুতে আসেন পরশ।

ঝাঁকড়া চুলের দীর্ঘদেহী মানুষটি যখন মূল মঞ্চের দিকে যেতে থাকেন তখন সেখানে উপস্থিত জাতীয় নেতৃবৃন্দ তাকে অভিবাদন জানান।

এরপর যুবলীগের একজন নেতা পরশকে মূল মঞ্চে তুলে নেন। মঞ্চে থাকা যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে প্রথম সারির ৫টি চেয়ারের সর্বডানে বসেন তিনি।

তার বামে বসেন ওবায়দুল কাদের, তার বামে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এরপর সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক চয়ন ইসলাম ও সদস্য সচিব হারূনুর রশীদ আসন গ্রহণ করেন।

যুবলীগের বিদায়ী কমিটির কোনো পদে না থাকা পরশের মঞ্চে আসন গ্রহণ নিশ্চিত করে দেয় যে তিনিই হতে যাচ্ছেন যুবলীগের ভবিষ্যৎ কান্ডারি।

এরপর বাকিটা ছিল অনুষ্ঠানিকতা। দ্বিতীয় অধিবেশনের আগে ততক্ষণে পরশ ঘিরে শুরু হয় যুবলীগ কর্মীদের পরশ উন্মাদনা।

ছবি, সেলফি আর স্লোগানে স্বাগত জানিয়ে নেতা-কর্মীরা তাকে দ্বিতীয় অধিবেশনের ভ্যেনু ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে নিয়ে যান।

এসময় পরশের সঙ্গে ছিলেন মামাতো ভাই বাগেরহাট ২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ।

এরপর বিকেল সোয়া চারটায় দ্বিতীয় অধিবেশনে তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দীতায় যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।

এর মধ্য দিয়ে বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান রাজনীতিতে একদম নতুন পরশের রাজনৈতিক পথ চলা শুরু হতে যাচ্ছে। আগামী তিন বছরের জন্য তিনি যুবলীগ চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন শেখ ফজলে শামস পরশ।

যুবলীগের ৭ম কংগ্রেসের দ্বিতীয় অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পরশ। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার নাম ঘোষণা করেন।

যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনির বড় ছেলে হলেন শেখ ফজলে শামস পরশ। তার ছোট ভাই একাধিকবারের সংসদ সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপস।

কংগ্রেসের আগে তাদের দুই ভাইয়ের নাম আলোচনায় থাকলেও তাপস যুবলীগের নেতত্বে আসতে আগ্রহ দেখাননি বলে জানা গেছে। পরে বড় ভাই পরশকেই বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষে যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে ইংরেজি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

গত ১০ বছর ধরে রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। পরশের বর্তমান বয়স ৫১ বছর।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারসহ আরও যাদের হত্যা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে শেখ ফজলে শামস পরশের বাবা শেখ ফজলুল হক মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা মা আরজু মনিও ছিলেন। তখন পরশের বয়স ছিল ছয় বছর। আর তাপসের চার।

যুবলীগের কংগ্রেসের আয়োজনের শুরুর দিকে তেমন আলোচনা ছিল না তাকে নিয়ে। তবে শেষ মুহূর্তে হঠাৎ করে পরশের নাম আলোচনায় আসে। এক পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হওয়ার আগেই তার চেয়ারম্যান হওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়।

সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনের অধিবেশনে কংগ্রেস প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান চয়ন ইসলাম পরবর্তী চেয়ারম্যান হিসেবে পরশের নাম প্রস্তাব করেন। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ তা সমর্থন করেন।

এ পদে আর কোনো নামের প্রস্তাব না ওঠায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন পরশ। পরে অধিবেশনস্থলে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

শেখ ফজলে শামস পরশ যুবলীগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পাওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদ এবং পঁচাত্তরের শহীদদের স্মরণ করে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।