বাবুনগরী-মামুনুলকে গ্রেফতারের দাবীতে মানববন্ধন, কোথা থেকে টাকা আসছে জানতে চান যুবলীগ চেয়ারম্যান

আজ মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বরে এক মানববন্ধনে অনুষ্ঠিত হয়। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য সম্পর্কে ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের প্রতিবাদ এবং মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটসহ ৬৪টি সংগঠনের যৌথ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ কেন্দ্রীয় যুবলীগের এই মানববন্ধন হয়।

এতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও সংবিধান অবমাননার অভিযোগে হেফাজতে ইসলামের আমির জুনাইদ বাবুনগরী এবং যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবীদের ৬০টি সংগঠন।

বেলা ৩টার দিকে নগরীর মৎস ভবন থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ছবির হাট পর্যন্ত এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘আমরা মনে করি, ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের কোনও বিরোধ নেই। কাজেই যারা বাংলাদেশে ভাস্কর্যের সঙ্গে ধর্মের সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি করছে, এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

আমরা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে ভূলুণ্ঠিত করার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’

মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপগোষ্ঠীগুলোর যে ধৃষ্টতা দেখছি, তা একদিনে তৈরি হয়নি উল্লেখ করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সহ-সাধারণ সম্পাদক সঙ্গীতা ইমাম বলেন, অবিলম্বে সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করে বাহাত্তরের অসাম্প্রদায়িক সংবিধানে ফিরে যেতে হবে। মৌলবাদের জুজুর ভয়ে রাষ্ট্রের প্রশ্রয়-আপসের অবসান ঘটাতে হবে।

সামাজিক-সাংস্কৃতিক শক্তির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে মৌলবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এখন প্রগতিশীলতার বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু্।

তিনি বলেন, জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙে নদীতে ছুঁড়ে ফেলার মতো বক্তব্য দেওয়ার ধৃষ্টতা তারা দেখিয়েছে। তারা কারা ? তারা হচ্ছে একাত্তরের পরাজিত সৈনিক, একাত্তরের পরাজিত শত্রু, তাদেরই উত্তরসূরি, একেবারেই তাদের প্রতীকী রূপ।

মানববন্ধনে যুবলীগ সভাপতি শেখ ফজলে শামস, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, সাংবাদিক আবেদ খান, ইতিহাসের অধ্যাপক, গবেষক মুনতাসীর মামুন, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তসহ আরও অনেকে কর্মসূচিতে যোগ দেন।

মানববন্ধনে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ।

তিনি বলেছেন, ‘এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে। এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়। বাংলাদেশে একটা কুচক্রী মহল সৃষ্টি করে ফায়দা লোটা, এটা বারবার হবে না।’

মানববন্ধনে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ বলেন, কোথা থেকে টাকা আসছে, কী তাদের (মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি) অ্যাজেন্ডা—এসব ব্যাপারে প্রশাসনিক তদন্ত হওয়া উচিত। প্রশাসনের তদন্তের মাধ্যমে আসল ষড়যন্ত্রকারী ও তাদের মদদদাতাদের চিহ্নিত করতে হবে এবং এই দেশের মাটিতেই তাদের শাস্তি দিতে হবে।

তাদের একেবারে নির্মূল করে দিতে হবে। তারা যেন বারবার আমাদের স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-দেশপ্রেমকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে না পারে।

যুবলীগ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এবার যখন আমরা ধরব, ফাইনাল হয়ে যাবে। এবার আর কোনো কম্প্রোমাইজ (আপস) নয়।

বাংলাদেশে একটা কুচক্রী মহল সৃষ্টি করে ফায়দা লোটা—এটা বারবার হবে না। এবারই আমরা এটা ফাইনাল করব। প্রশাসনকে আহ্বান করছি, তদন্তের মাধ্যমে এদের (মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তি) চিহ্নিত করুন।

আমরা মাঠে আছি দেখে নেব তাদের। চোরের দশ দিন, গেরস্তের এক দিন। আমরা এবার তাদের দেখে নেব।’ যুবলীগের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সজাগ ও সোচ্চার থাকবেন। আমরা এদের দমন করব, ইনশা আল্লাহ।

মানববন্ধনে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মুজিবর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে নাঈম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান, প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দীসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার কয়েক শ নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। বেলা আড়াইটা থেকে চারটা পর্যন্ত এই মানববন্ধন হয়।

কর্মসূচির মূল দাবি অবিলম্বে হেফাজতে ইসলামের আমীর জুনাইদ বাবুনগরী, যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হককে গ্রেফতার এবং জামায়াত-হেফাজতের মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক, সন্ত্রাসী রাজনীতি নিষিদ্ধ করা।