বদলে যাচ্ছে অস্ট্রিয়ার এই গ্রামের নাম

গ্রামের নাম ফাকিং৷ তা নিয়ে ইন্টারনেটে বহু ঠাট্টা হয়েছে৷ অগত্যা গ্রামের নাম বদলানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা৷

হাজার বছরের পুরনো নাম বদলে ফেলেছে অস্ট্রিয়ার গ্রাম ফাকিং৷ জার্মানির সীমান্তে অবস্থিত ছোট্ট এই গ্রামে লোকসংখ্যা শখানেক৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই গ্রামের নাম ফাকিং৷

ইন্টারনেট আসার আগে পর্যন্ত গ্রামের নাম নিয়ে কোনো সমস্যাও ছিল না৷ কিন্তু ইন্টারনেট আসতেই শুরু হলো সমস্যা৷

বাড়লো পর্যটকদের উৎপাত৷ অন্য কোনো কারণে নয়, সকলেই গ্রামের নাম লেখা সাইনবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন৷ কেউ কেউ খুলে নিয়ে যান গ্রামের নাম৷ ফলে শেষ পর্যন্ত গ্রামের মানুষ নাম বদলানোর সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হন৷

প্রশাসনকে জানানো হয়৷ আগামী ১ জানুয়ারি থেকে নাম বদলে হচ্ছে ফাগিং৷

জার্মান ভাষায় ফাকিং শব্দের কোনো অর্থ নেই৷ উচ্চারণ ফাগিং৷ এত দিন এই নাম নিয়ে যে বিপত্তি হতে পারে, তা বুঝতেই পারেননি গ্রামের মানুষ৷ বস্তুত এই গ্রামের অদূরেই রয়েছে আরো দুইটি গ্রাম– কিসিং এবং ওয়েডিং৷

বহু পর্যটকই জার্মানির মিউনিখ থেকে সালজবুর্গের রাস্তায় এই গ্রামগুলিতে নেমে ছবি তোলেন৷ সাইনবোর্ড তুলে নেন সংগ্রহে রাখার জন্য৷ ইন্টারনেটে নামের জন্য ভাইরাল হয়ে গিয়েছে এলাকাটি৷ ফলে সাধারণ মানুষের সমস্যা বেড়েছে৷

ফাকিং শব্দের অর্থ জানার পরে গ্রামের মানুষেরও বিপত্তি বেড়েছে৷ কোনো কোনো ব্যক্তি ফাকিং সাইনবোর্ডের গায়ে লিখে দিয়েছেন ‘আমাদের আবহাওয়া ফাকিং গুরুত্বপূর্ণ’৷ গ্রামের মানুষ চাইছিলেন না, এই বিপত্তি চলুক৷ সে কারণেই তাঁরা নাম বদলের সিদ্ধান্ত নেন৷

ফাকিং নাম বদলানোর সিদ্ধান্ত নিলেও একই ধরনের আরো বেশ কয়েকটি জনপদ এখনো পুরনো নাম বদলের কথা ভাবেনি৷ তেমনই দুইটি গ্রামের নাম ওবারফাকিং, উনটারফাকিং৷ জার্মান সীমান্তে পাহাড়ের কোলে এই দুইটি গ্রামও কি ফাকিংয়ের পথ অনুসরণ করবে?

পালটে গেছে আরো যে দেশের নাম
বাংলাদেশ

এক সময় বিশ্ব মানচিত্রে পূর্ব পাকিস্তান নামে পরিচিত ছিল আজকের স্বাধীন বাংলাদেশ৷ অর্থনৈতিক মুক্তি, ভাষার দাবি, সামাজিক শোষণ, এমন নানা কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় বাঙালিরা৷ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে স্বাধীনতা অর্জন হয় ঠিকই, কিন্তু বিনিময়ে বিসর্জন দিতে হয় ৩০ লক্ষ শহীদের প্রাণ, ২ লক্ষ নারীর সম্ভ্রম৷ বাঙালির নতুন দেশ পরিচিত হয় বাংলাদেশ নামে৷

মিয়ানমার

সামরিক জান্তা ১৯৮৯ সালে বার্মার নাম পালটে মিয়ানমার রাখে৷ রাজধানী রেঙ্গুনের নাম পালটে রাখা হয় ইয়াঙ্গুন৷ অনেকেই অবশ্য সামরিক জান্তার দেয়া নাম সহজে মেনে নিতে চাননি৷ অং সান সুচিসহ গণতন্ত্রের দাবিতে আন্দোলনরত সকলেই মিয়ানমারের বদলে বার্মা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার পর আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারই ব্যবহার হচ্ছে৷

এসোয়াতিনি

ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ৫০ বছর পর ২০১৮ সালের এপ্রিলে নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফ্রিকার সোয়াজিল্যান্ড৷ দেশটির রাজা তৃতীয় এমসোয়াতি সিদ্ধান্ত নেন, ঔপনিবেশিকদের দেয়া নাম নয়, দেশ ফিরবে তার আসল নামে– এসোয়াতিনি৷ এসোয়াতিনি অর্থ সোয়াজিদের ভূমি৷

বুরকিনা ফাসো

১৯৫৮ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পরও অনেকদিন পশ্চিম আফ্রিকার দেশটির নাম আপার ভোল্টাই ছিল৷ ১৯৮৪ সালে দেশটির প্রধান দুই ভাষা থেকে নেয়া হয় এ নাম৷ মোসি ভাষা থেকে ‘বুরকিনা’ এবং ডিউলা ভাষা থেকে ‘ফাসো’ শব্দ নেয়া হয়েছে৷ বুরকিনা ফাসো অর্থ– ন্যায়পরায়ণ মানুষদের দেশ৷

কম্বোডিয়া

১৯৭০ সালে প্রিন্স নরোডোম সিহানোক এক অভ্যূত্থানে ক্ষমতা দখলের পর কিংডম অব কম্বোডিয়ার নাম পালটে রাখেন খেমার রিপাবলিক৷ ১৯৭৫ সালে পল পটের খেমার রুজ ক্ষমতা দখলের পর দেশের নাম আবার পালটে রাখে ডেমোক্র্যাটিক কাম্পুচিয়া৷ পরে ১৯৭৯ সালে ভিয়েতনামের সমর্থনে খেমার রুজ উৎখাত হলে দেশের নাম হয় পিপলস রিপাবলিক অব কাম্পুচিয়া৷ ১৯৮৯ সালে আবার রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পর কম্বোডিয়া তার পুরনো নাম ফিরে পায়৷

বেনিন

ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের ১৫ বছর পর দাহোমে নাম পালটে পিপলস রিপাবলিক অব বেনিন নাম ধারণ করে৷ উপনিবেশ-পূর্ব সময়ে আফ্রিকায় একই নামে এক শক্তিশালী রাজত্ব ছিল৷ দক্ষিণ-পশ্চিম নাইজেরিয়ার একটি প্রদেশের নামও সেই রাজ্যের অংশ ছিল, সে প্রদেশের নামও বেনিন৷ (খবর – ডয়চে ভেলে)

এছাড়া বাংলাদেশেও সম্প্রতি অনেকগুলো গ্রাম এবং বিদ্যালয়ের নাম বদলে গেছে।pinterest sharing buttonlinkedin sharing button

গ্রামের নাম ‘চোরের ভিটা’, নাম পরিবর্তন চায় এলাকাবাসী

চোরের ভিটা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে বিজয়নগর করার দাবীতে ২৫ নভেম্বর মানববন্ধন করেছেন নেত্রকোনার পূর্বধলার ধলামূলগাঁও ইউনিয়নের চোরের ভিটা গ্রামের মানুষজন।

এছাড়া গত ৬ আগস্ট প্রাথমিক শিক্ষামন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারা দেশে এমন কিছু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম আছে যা শ্রুতিমধুর নয় এবং ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সুশোভন নয়। যা নিয়ে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে হাস্যরসের সৃষ্টি হচ্ছে।

এমন বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে দেশের ভাষা ও সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শোভন নামকরণের প্রস্তাব যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।

ইতিমধ্যেই নীলফামারি সদর উপজেলার ‘মানুষমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ নাম বদলে ‘মানুষ গড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ করা হয়েছে।

নেত্রকোণার ‘চোরের ভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের’ নাম বদলে দেওয়া হয়েছে। ৩০ বছর পর পূর্বধলা উপজেলার স্কুলটির নাম বদলে যাচ্ছে। স্কুলের নাম ‘আলোর ভুবন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়’ প্রস্তাব করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পাঠানো হয়েছে।