নিজের ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে গভীর রাতে পরীক্ষা

আগামী ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন মাদরাসার অধ্যক্ষ। মাত্র ছয় দিন হাতে থাকতেই তড়িঘড়ি গভীর রাতে মাদরাসাতেই লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা করলেন ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে। আর এই পরীক্ষায় প্রক্সি হিসেবে রাখেন অপর দুই ছেলে ও এক মেয়েকে।

ঘটনা টের পেয়ে এলাকার লোকজন ছুটে আসলেও ততক্ষণে পরীক্ষা শেষ। এ অবস্থায় পরীক্ষা নিতে আসা ডিজির প্রতিনিধি ধাওয়া খেয়ে নিজের গাড়ি নিয়ে পালিয়ে যান। গত শুক্রবার রাতে পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার রসুলপুর আলীম মাদরাসায়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, মাদরাসায় শূন্যপদে সহকারী লাইব্রেরিয়ান পদে একজনকে নিয়োগ দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বিভিন্ন জটিলতার কারণে এতদিন ওই পদে নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি।

এ অবস্থায় মাদরাসার অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের চাকরির মেয়াদও শেষ হবে আগামী ৩১ ডিসেম্বর। এর মধ্যে অত্যন্ত গোপনে কৌশলে নিয়োগ পরীক্ষার দিন-তারিখ ধার্য করেন গত শুক্রবার। বিষয়টি অনেকেরই জানা ছিল না। ওই একটি পদের জন্য অখ্যাত পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হওয়ায় ব্যাপক প্রচারও হয়নি।

তার মধ্যে নিয়মমোতাবেক চারজন প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য প্রবেশপত্র দেওয়া হয়। ওই চারজনই হচ্ছেন মাদরাসার অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামের তিন ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে মো. মোস্তাক আহম্মেদ নামে ছেলেকে চাকরি পাইয়ে দিতে বাকিরা ছিলেন ‘প্রক্সি’। রাত ১২টার দিকে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন প্রার্থীরা।

সেখানে ছিলেন মাদরাসা পরিচালনা পরিষদের অনেক সদস্য ছাড়াও কয়েকজন শিক্ষক। পরীক্ষা শুরু হওয়ার প্রায় ৩০ মিনিট পরে আসেন ডিজির প্রতিনিধি বাদশা মিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি হচ্ছেন মাদরাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিদর্শক। সাদা একটি প্রাইভেট কারযোগে গভীর রাতে মাদরাসায় প্রবেশ করাতে অনেকের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে ঘটনাটি জানতে পেরে লোকজন ছুটে এলে তিনি গাঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

একপর্যায়ে লোকজনের তোপের মুখে দ্রুত এলাকা ছাড়েন। এ সময় তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় রাতে কেন তিনি এখানে এসেছেন। উত্তরে তিনি জানান, ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার সময় তাঁর গাড়িটি নষ্ট হয়ে যায়। মেরামত করে আসতে দেরি হয়ে গেছে।

এই জন্য তিনি ক্ষমাও চান। শনিবার ফের তাঁকে ফোন দিলে তিনি রাতের ঘটনাটির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অধ্যক্ষের ফাঁদে পড়ে তিনি মাদরাসায় গিয়েছেন।

যা আদৌ ঠিক হয়নি। এটা তাঁর ভুল হয়েছে। এ সময় তিনি এ প্রতিনিধি অবস্থান জানতে চেয়ে বলেন, আপনার কাছে আমার লোক যাবে একটু ঠিকানাটা দিন।

মাদরাসার অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, ভাইরে আমার চাকরিটা শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই রাতেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে সবই নিয়মের মধ্যে হয়েছে।

এ জন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই। আমার ছেলে মানে আপনারও তো ছেলে। মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সদস্য তারা মিয়া বলেন, হুজুরের চাকরি শেষ।

তাই নিজের ছেলেকে চাকরিটা দিতেই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

অন্যদিকে জানা যায়, ওই মাদরাসায় উপাধ্যক্ষ পদে জামায়াতে ইসলামীর মনোনিত সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল সালামকে নিয়োগ দেওয়ার পর এলাকাবাসীর মধ্যে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা হয়।

ফলে প্রতিষ্ঠানটির ওপর কঠোর নজরদারি করতে শুরু করে এলাকাবাসী। গত শুক্রবার মধ্যরাতে নিয়োগ পরীক্ষা আয়োজন করলে এলাকার লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগ নিয়ে কর্তৃপক্ষ যা ইচ্ছা তা-ই করে যাচ্ছেন।

এসব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণের জন্য নান্দাইল উপজেলায় কি কোনো কর্তৃপক্ষ বলতে কিছু নেই।

মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি হাবিবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তা ছাড়া এসব মাদরাসার সভাপতি শুধু মাত্র অলঙ্কার।

নান্দাইল উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রোকন উদ্দিন আহমেদ বলেন, আলিম পর্যায়ের মাদরাসার নিয়োগ কমিটিতে তাঁর কোনো প্রতিনিধি থাকেন না। তাই তাঁদের জানার কথা না।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন জানান, তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তবে রাতে নিয়োগ পরীক্ষা এটা তো প্রশ্নই থাকে। এলাকার লোকজন জানান, এক ব্যক্তি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষা প্রতিযোগিতামূলক হলে গ্রামবাসীর কোনো আপত্তি নেই।