‘I am a doctor, Abbu’

হাসিবুর রহমান এমবিবিএস ১ম বর্ষ স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ

‘I am a doctor, Abbu’

দশম শ্রেণির শুরু থেকে মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া অবধি আমার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড ছিল উপরিউক্ত বাক্যটি।

মায়ের কাছ থেকে শোনা, যখন আমি খুব ছোট। আমি মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তাম। তখন আমাকে নিয়ে সবাই বিচলিত থাকত। প্রতি সপ্তাহে দু’বার করে ভ্যাক্সিনেশন করা লাগত। আমাকে তখন যে ডাক্তারের চেম্বারে নিয়ে যাওয়া হত তার চেম্বারে ছিল একটি কৃত্রিম ব্যাঙ।

আমার এখনো মনে পড়ে আব্বু দূরে থাকায় মা আমাকে নিয়ে সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকতেন। খুব সম্ভবত আমার মায়ের মত মায়েদের দুশ্চিন্তার সময় যেন একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, এই অনুভূতি থেকে আমার ডাক্তার হওয়ার স্নপ্ন মনে বাসা বাঁধতে শুরু করে।

ধীরে ধীরে পঞ্চম শ্রেণিতে উঠলাম। জেলা সদরের নামকরা একটি কিন্ডারগার্টেন থেকে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা দিয়ে সবাই যখন জেলার সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয়ে চান্স পেতে ব্যস্ত তখন আমি বাড়ি বসে শিখছি সরফের সীগাহ, নাহুর ছোট ছোট সংজ্ঞা।

টুকটাক বাংলা থেকে আরবি করতে পারা শিখা। কারণ, সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে ষষ্ঠ শ্রেণিতে আমি ভর্তি হচ্ছি বাড়ি থেকে অনেক দূরের তা’মীরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসা,টঙ্গীতে।

পরিচিতের মধ্যে সেখানে পড়ালেখা করতেন এলাকার শ্রদ্ধেয় মিসবাহ ভাই। যিনি বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পঞ্চম বর্ষে অধ্যয়নরত।

২০১৩ সাল। আমি সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি। আমার শ্রেণীতে অবস্থান ছিল দশের বাইরে। তখন টঙ্গী ক্যাম্পাস থেকে মেডিকেল কলেজে চান্স পেতেন ৪-৫ জন করে।

আমার মা বলতেন, যদি মেডিকেলে চান্স পেতে চাও তাহলে তোমার অন্তত প্রথম ৩ জনের ভিতরে আসতে হবে। ধাক্কা খেয়েছিলাম তাঁর কথায়। বার্ষিক পরীক্ষায় রোলনম্বরের উন্নতি হয়ে ছয়ে এসে ঠেকে।

অষ্টম শ্রেণিতে ক্লাস ক্যাপ্টেন নির্বাচিত হই। যে ছাত্রাবাসে থাকতাম সেই ছাত্রাবাসের শিক্ষক আমার মনে প্রোথিত করে দিলেন যে আমার ক্লাসে ফার্স্ট হতে হবে।

আলহামদুলিল্লাহ পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়া শুরু করলাম। এভাবে ভাল রেজাল্ট করে পুরো অষ্টম শ্রেণি শেষ করলাম।

জেডিসি পরীক্ষা দিয়ে সবাই যখন বাড়ি চলে গেল তখন আমি কি করলাম? আমি টঙ্গীতে বসে নবম শ্রেণির পদার্থবিজ্ঞানের নিউটনের সূত্র, বলের সূত্র, গতির সমীকরণ, রসায়নের ব্যাপন, ডাল্টনের সূত্র, মোল গননা, জীববিজ্ঞানের শ্রেণিবিন্যাসের সাথে টুকটাক পরিচিত হতে থাকলাম। আমার জন্য হোস্টেল সুপার আলাদা একজন স্যার ঠিক করে দিয়েছিলেন।

নবম শ্রেণিতে কি নিব? মানবিক না বিজ্ঞান? এই প্রশ্ন করার কোন সুযোগ ছিলনা আমার কাছে। কেননা আমিতো ডাক্তার হব। সুতরাং বিজ্ঞানেই তো পড়তে হবে।

নবম শ্রেণিতে যারা বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চায় তাদের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়।।মনে আছে,স্যারেরা আমার ভাইভা পরীক্ষা নেন নি। বরং, রসাসনের স্যার অন্য স্যারকে বলেছিলেন এই ছেলের আবার কিসের ভাইভা নিবেন? ও তো এমনিতেই সব পারবে।

নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে স্বাভাবিকভাবেই ভাল ছাত্র ট্যাগ নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। ক্লাসে যা পড়াতেন তা আগের রাতেই পড়ে যাওয়া অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। আমার কাছে তখন রেটিনার একটি প্রসপেক্টাস ছিল।

যেখানে আমার মাদরাসার সিনিয়র, ডা: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভাইয়ের ছবি ছিল। যিনি ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জাতীয় মেধায় প্রথম স্থান অধিকার করেন।

প্রসপেক্টাসটিতে মেডিকেলের বিগত বছরগুলোর কিছু প্রশ্নও দেওয়া ছিল আমি সেগুলো পড়তাম। পড়ার উদ্দেশ্য ছিল মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা সম্পর্কে ধারণা নেওয়া। তখন আমি সারাক্ষণ কল্পনার চিত্রপটে ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুরাতন হাসপাতাল ভবনের ছবিই আঁকতাম।

যখন ক্লাস হত আর মিল্লাতের মসজিদে যুহর আদায় করতে যেতাম, তখন হঠাৎ কল্পনা করতে ভালো লাগত মেডিকেলের মসজিদ কেমন হবে।

নবম শ্রেণিতেই আমার দাখিলের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ পড়াগুলো শেষ হয়ে গিয়েছিল, আলহামদুলিল্লাহ। তখন একটি বিষয় বিশেষ করে উল্লেখ করা দরকার বলে মনে করছি তা হল, নবমে থাকতেই আমার টেবিলে ইন্টারমিডিয়েটের হাজারী স্যারের রসায়ন, ইসহাক স্যারের পদার্থবিজ্ঞান এবং গাজী আজমল স্যারের জীববিজ্ঞান বইগুলো ছিল।

গুরুত্বপূর্ণ টপিকগুলো যেমন রসায়নের রাসায়নিক বন্ধন,পদার্থবিজ্ঞানের মহাকর্ষ অভিকর্ষ বা চল তড়িৎ কিংবা জীববিজ্ঞানের সমন্বয়, পরিপাক এগুলো তখনই ইন্টারমিডিয়েটের বই থেকে পড়ার চেষ্টা করতাম। যার ফলে ইন্টারমিডিয়েটের বইয়ের সাথে আগেভাগেই পরিচয় ছিল।

নবম শ্রেণির শেষের দিকে ২০১৫ সালের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শত মেধাবী ছাত্রের হৃদয় ভঙ্গের কাহিনী রচিত হয় সেই পরীক্ষায়। প্রশ্নফাঁসের এক ভয়ানক ট্রাজেডি। তখন আমার এলাকার শ্রদ্ধেয় ভাই, যার কথায় প্রভাবিত হয়ে আমি পড়ালেখা করার চেষ্টা করতাম, অনেক আশা ছিল তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাবেন।

তিনি আল্লাহর ফায়সালায় প্রশ্নফাঁসের খপ্পরে পড়ে দিনাজপুর মেডিকেলে চান্স পান। চান্স পাওয়ার পর তার ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল অনেকটা এরকম:

“First e mon kharap chilo. But pore vablam jak ontoto #Medical e to chance peyechi. Alhamdulillah”

তখন আমিও দৃঢ়ভাবে সংকল্প করেছিলাম, চার বছর পর আমি যেন ভাইয়ের যেখানে পড়ার ইচ্ছা ছিল সেই ঢাকা মেডিকেলে চান্স পাই। যার ফলে নবমে থাকতেই মেডিকেলের প্রশ্নের ধরন, কোন বিষয়ে কত নম্বর, বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট কিভাবে হিসাব করা হয় তা ভালভাবেই জেনে নিয়েছিলাম।

দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা তুলনামূলক কম হল। তখন বিজ্ঞান অলিম্পিয়াড, বিজ্ঞান সেমিনার, ব্রিটিশ কাউন্সিল আয়োজিত প্রতিযোগিতা সহ বিভিন্ন ধরনের সহশিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়ে পড়ি।

অনলাইনে বিভিন্ন টেডএক্স ভিডিও সহ গুরুত্বপূর্ণ বই, বিভিন্ন সাহিত্যিকের বই তখন প্রচুর পড়তাম। সে তালিকায় বিলেতের চার্লস ডিকেন্স থেকে শুরু করে এদেশের হুমায়ুন আহমেদ কেউই বাদ ছিল না। পাশাপাশি গড়ে উঠেছিল অনলাইনে সময় নষ্ট করার এক বাজে অভ্যাস।

যাইহোক, দাখিল পরীক্ষা দিলাম। স্বাভাবিকভাবেই সব বিষয়ে লেটার মার্কস আসল। অনেক ইচ্ছে ছিল নটরডেম কলেজে পড়ার। সেবছর প্রথমবারের মত অনলাইনে ফর্ম পূরণের সিস্টেম করা হয়েছিল ।

কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় হল, সেখানে মাদরাসা ছাত্ররা ফরম পূরণ করতে পারল না। তারপর কলেজে যেয়ে ফরম পূরণ করলাম কিন্তু আমার নাম প্রথম মনোনয়নেই বাদ পড়ল। তারপর ইচ্ছে ছিল তা’মীরুল মিল্লাতেই থেকে যাওয়ার। কলেজ চয়েজের জন্য ফার্স্টে তা’মীরুল মিল্লাতের নামই ছিল। তবে মাঝেমধ্যে মনে হত, ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল বা আদমজীতে যাব কিনা?

এই প্রশ্নের উত্তর না-বোধক করতে আমার উস্তাজ বলেছিলেন, মাদরাসাতেই থাকো। ভাল করে পড়লে এখান থেকেই চান্স পাবে। মা বলেছিলেন মাদরাসায় পড়লে পরবর্তীতে ফাজিল, কামিল করতে পারবে।

এছাড়া পরামর্শ দিয়েছিলেন মিল্লাতের বড়ভাই সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের নাঈম ভাই। উনি একটি কথা বলতেন, ‘ কলেজ কোন ফ্যাক্টর না, নলেজ ফ্যাক্টর।’

তা’মীরুল মিল্লাতে আলিম শ্রেণী শুরু করলাম। প্রথম ছয়মাসে ক্লাস থেকে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিলাম। এক নামকরা কোচিং সেন্টারে একাডেমিক কোচিং করতাম।

এটিও ঠিক আমার সেই শ্রদ্ধেয় মিসবাহ ভাইয়ের অনুসরণই বটে। পরবর্তীতে অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন ভোগার দরুন আর সেখানে নিয়মিত থাকা হল না। ফলে আলিমের ১ম বর্ষ সাধারণ ছাত্রদের মতই চলে গেল। আলিম ২য় বর্ষে যেহেতু সময় অনেক কম।

এবং পড়াশোনাও খুব কম হল। যার ফলে আমার তুলনামূলক অধঃপতন হল। বিভিন্ন স্যারদের কাছে থেকে তিরষ্কার শোনা, শিক্ষক কমনরুমের ‘ছেলেটা দিনে দিনে খারাপ হয়ে যাচ্ছে’ এই ধরনের মন্তব্য যখন কানে আসত তখন মনটা খারাপ হয়ে যেত।

এই মন খারাপের কারণই ছিল আমার আবার পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসার প্রেরণা। আলহামদুলিল্লাহ,এখন সেইসব স্যারদের জন্য প্রাণখুলে দু’আ করি।

আলিম প্রি-টেস্ট শেষ হলে আবার বুঝতে পারি পড়াশোনা করা দরকার। এন্ড্রয়েড ফোন বাড়িতে রেখে আসলাম। আবার পড়াশোনায় নিয়মিত হলাম। মাদরাসার পাশে এক স্যারের কাছে ইংরেজি পড়তাম।

আমার সারাদিনের আকাঙ্খিত সময় ছিল স্যারের ওই ইংরেজি ক্লাস। দিনে দিনে স্বভাবে বিনয়ী ভাব, আমল বেড়ে যাওয়া সহ নিয়মিত পড়াশোনা হতে লাগল। তখন প্রতি সপ্তাহের সোমবার এবং বৃহস্পতিবার রোজা রাখার অভ্যাস গড়ে উঠেছিল আলহামদুলিল্লাহ। তাহাজ্জুদ পড়া হত। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা শুরু করলাম, আল্লাহ ভাল কিছু রেখেছেন।

টেস্ট পরীক্ষার পর, আমাদের ইমেডিয়েট সিনিয়র সদ্য স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চান্স পাওয়া আহমাদুল্লাহ ভাই আমাদের ক্লাসের কয়েকজনকে নিয়ে আমাদের পড়াশোনার কি অবস্থা, কিভাবে পড়াশোনা করতে হবে সার্বিক বিষয়ে খোঁজখবর রাখতেন।

অনুপ্রেরণা দিতেন। ভাইয়ের কথানুযায়ী টেস্ট পরীক্ষার পর থেকে আলিম মূল পরীক্ষা পর্যন্ত সময়টিতে কিভাবে প্রতিটি বিষয়ে সমান প্রস্তুতি নেওয়া যায়, গ্যাপ গুলো পূরণ করা যায় এই চেষ্টা করেছিলাম।

এই সময়ে মূল কাজ ছিল বেশি করে প্রশ্নপত্র সমাধান করা। যেহেতু মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ থাকা গুরুত্বপূর্ণ। তাই চিন্তা ছিল কিভাবে প্রতিটি বিষয়ে জিপিএ-৫ রাখা যায়।

আলিম পরীক্ষার আগে বিশেষ করে একটি দু’আ করতাম। তার সারকথা হল, আল্লাহ যদি ডাক্তারি পেশায় আমার কল্যাণ রেখে রাখেন তাহলে যেন তিনি নিজ রহমত দ্বারা আমাকে মেডিকেল কলেজে সুযোগ করে দেন।

আলিম পরীক্ষা হল। ফার্মগেটে চলে আসলাম কোচিং করতে। তখন আমার কি নবম শ্রেণির ওই অবস্থা ছিল যে আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভাইয়ের মত প্রথম হবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলাম? না ছিল না। তখন আল্লাহর কাছে দু’আ করতাম যেন ভালমতো পড়াশোনা করতে পারি। আর তিনি যেখানে চান সেখানে কবুল করেন।

কোচিং-এ রেজাল্ট ভাল ছিল। নিয়মিত ছিলাম। কোচিং এর সময় সবচেয়ে বড় নিয়ামত ছিল যেখানে ছিলাম তার পরিবেশ। রাত ২ টা বাজলেই কান্নার আওয়াজ পাওয়া যেত। সবাই তাহাজ্জুদ পড়তেন,আলহামদুলিল্লাহ।

সবারই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সাথে পড়া হত। এভাবে চলতে থাকল, তারপর কিছু ঘটনাপ্রবাহ ছিল নিম্নরূপ :

১) ১৭ ই জুলাই : আলিম পরীক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত এবং মহান রব্বুল আ’লামিনের রহমতে গোল্ডেন এ+ প্রাপ্তি। ( এর মাধ্যমে এপর্যন্ত জীবনের সকল বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল ধ্রুব থাকে।)

২) জীবনে প্রথমবারের মত ঈদ-উল-আযহা পরিবার ছাড়া কাটানো হয় । উদ্দেশ্য ছিল যাতে সিরিয়াসনেস আসে। চোখে পানি আসে, আল্লাহর কাছে দুয়া করলে যেন কবুল হয়।

৩)৩ সেপ্টেম্বর : জীবনে প্রথমবারের মত অপারেশন থিয়েটারে রোগী হয়ে প্রবেশ। ( আলহামদুলিল্লাহ মহান আল্লাহ সুস্থ করেছিলেন তার রহমতের পরশ দ্বারা, বন্ধুমহল এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা তখন অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন।

আল্লাহ তাদের মর্যাদাকে বৃদ্ধি করে দিন।বিশেষত, আমার আব্বু টানা ৭ দিন কম্বাইন্ড মিলিটারি হসপিটালে আমার বেডের পাশে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। মহান রবের কাছে প্রার্থনা, আল্লাহ যেন তাঁকে পরকালে সফলকাম করেন। শুরু থেকেই পেটের পীড়াকে আল্লাহর রহমত বলে মনে হচ্ছিল।

বন্ধু সায়েম ও সাদিক এর জন্য মহান রবের নিকট দু’আ করি।ওরা মাঝরাতে আমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেলে নিয়ে যায়।)

৪)১১ অক্টোবর : স্বপ্নকে সত্যি করার সুযোগ আসে এদিন।মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২০১৯ অনুষ্ঠিত হয়। ( পরীক্ষা ৪ তারিখ ছিল,কিন্তু এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। এটা আমার জন্য মহান মালিকের পক্ষ হতে অনেক বড় নিয়ামত ছিল)

৫)১৫ ই অক্টোবর : মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা ২০১৯ এর ফলাফল প্রকাশিত। মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণীতে জাতীয় মেধায় ৩০০ তম হয়ে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজে চান্স পাই। ( এই অনুভূতি লিখে কি শেষ করা যাবে!?

তাই দু’আ চাই, যে মহান ব্রতকে সামনে রেখে চিকিৎসক হওয়ার জন্য অগ্রসর হচ্ছি আল্লাহ যেন সেই ব্রতকে আমরণ স্থায়ী করার তাওফিক দেন।)

আলহামদুলিল্লাহ ,আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। এসকল কিছুই মহান আল্লাহর নিয়ামত।যে নিয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করে শেষ করা যাবে না।

*উপরিউক্ত বিশাল আলোচনায় যে বিষয়গুলো আমি ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি তা হল:

১. ইসলামকে যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
২. সর্বপ্রথম মহান রবের সাহায্য লাভের জন্য দু’আ করতে হবে। মা-বাবাকে সন্তুষ্ট রাখতে হবে।

৩. যার ইচ্ছে যেদিকে যাওয়া তার সেদিকের প্রতি আন্তরিকভাবে ঝোঁক থাকতে হবে।

৪. সবকিছু ঠিক রেখে অ্যাডভান্স থাকতে হবে।
৫.কখনো পিছিয়ে পড়লে হতাশ না হয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে সবরের সহিত এগিয়ে যেতে হবে।

৬. যার যেদিকে যাওয়ার আগ্রহ, সেদিকের সিনিয়র ভাইদের কাছে থেকে প্রতি পদক্ষেপে পরামর্শ নিতে হবে।

৭. নিজে এমন কিছু কাজ করতে হবে, যার ফলে দিনশেষে সেগুলো দ্বারা নিজে নিজেকেই অনুপ্রেরিত করা যায়।

এত বড় লেখা পড়তে গুরুত্বপূর্ন সময় ব্যায় করার জন্য সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

আমার এই সংক্ষিপ্ত যাত্রাপথে যারা পিঠ চাপড়ে দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন সেসকল শিক্ষক, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষী সকলের জন্য আমি মহান রবের দরবারে প্রাণ খুলে দু’আ করি।

সকলের কাছে মহান রবের শোকর গুজার বান্দা হওয়ার জন্য দু’আ চাই। সাথে সাথে মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করছি যেন তাঁর কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে তাঁর দরবারে হাজির হতে পারি।

হাসিবুর রহমান
এমবিবিএস ১ম বর্ষ
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ