টারজান আসছে

সেলিনা আহমেদ

মন্নুজান হল
সমাজ বিজ্ঞান বিভাগ
ভর্তি সেশন ১৯৭৭-৭৮

টারজান আসছে —-

আমাদের সেই সময়ে মন্নুজান হলে রুমে রান্না করে খাওয়ায় বেশ কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা ছিল।কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমরা দিব্যি হিটার জ্বালিয়ে রুমে রুমে রান্না -খাওয়া চালাতাম।

১৯৮৩ র দিকের ঘটনা সম্ভবত। আমাদের বিদায়ের ঘন্টা বাজছে। আমাদের ব্যাচ প্রায় সবাই থাকি এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে।আমার রুম নং–২৮৪।

হলের ডাইনিং এ কি হয়েছিল এতোদিন পরে ঠিক মনে নেই।শুধু মনে পড়ছে, আমরা তিন বেলায়ই প্রায় রুমে রান্না করে খাচ্ছিলাম।

আর একটা প্রেক্ষাপট বলা প্রয়োজন। তখন মোবাইল ছিলো না,টিভিতে হাজারো চ্যানেল ছিলো না। ছিল শুধু বিটিভি।

প্রতিমাসের শেষদিকে “এমাসের নাটক ” শিরোনামে বিশাল দৈর্ঘ্যের এক নাটক হতো,সবাই যেটার অপেক্ষায় থাকতাম।আর পরবর্তী কয়েকটা দিন যেত সেটার ব্যবচ্ছেদে।

যে সময়ের কথা বলছি, তার কদিন আগেই নাটক হয়ে গেছে “টারজান আসছে “।

আগেই বলেছি, রুমে রান্না নিষেধ। কর্তৃপক্ষ তাই মাঝেমধ্যেই সারপ্রাইজ ভিজিট দিতেন হাতেনাতে অপরাধী ধরার জন্য। আমরা আরও সেয়ানা।
একদিন দুপুরের আগ দিয়ে রুমে রুমে মহা সমারোহে রন্ধন উৎসব চলছে।

আমার দায়িত্ব সেদিন পাহারাদারের। বারান্দায় দাঁড়িয়ে ইতিউতি তাকাই,বেসুরো গলায় গুনগুনাই (আহা,মোবাইল থাকলে কি মজাই না হতো)। হঠাৎ দেখি,সদলবলে এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ে ঢুকছেন ” হাস আপা “।

ওমনি পূর্বনির্ধারিত কথামতো আমি চিল চিৎকার দিলাম —-টারজান আসছেএএএএএএএ!

ব্লকের সবাই সজাগ হয়ে গেল।ঝপাঝপ বেরিয়ে রুমে তালা লাগালো কেউ কেউ,কারো রুম ভিতর থেকে বন্ধ হয়ে গেল। সুনসান চারদিক।

” হাস আপা ” উঠে আসছেন সিড়ি দিয়ে, পাশ কাটিয়ে একটা সুবোধ সালাম দিয়ে নেমে গেলাম।
————
———-
এখন বুঝি, আপা তো তাঁর উপর অর্পিত দায়িত্বই পালন করতেন। আর আমরা ——???

১৯৮৪ তে ক্যাম্পাস ছাড়ি, আর যাওয়া হয়নি।
২০১৭ তে সুযোগ এলো।ক্যাম্পাসের বদলে যাওয়া চেহারা দেখে থমকে গেলাম। নিজেকে খাপছাড়া মনে হলো একা একা। ইতি-উতি ঘুরে কিছু ছবি তুলে ফিরে এলাম।

*লেখা : সেলিনা আহমেদ