রাবিপ্রবি ভিসির সাথে দুর্ব্যবহার করে বিপাকে প্রধান শিক্ষক

RMSTU VC

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবিপ্রবি) ভিসি ড. সেলিনা আক্তারের সাথে দুর্ব্যবহার করায় রাঙামাটি শহরের শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

পরে সেই প্রধান শিক্ষক ‘ক্ষমা চাইলে’ সংকটের নিরসন হয়।

Rmstu Protest
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, ‘ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) বিকেলে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেয়ার জন্য অস্থায়ী হল পরিদর্শনে আসেন রাবিপ্রবি উপাচার্য।

এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের সাথে কুশলাদি বিনিময় ও তাদের সমস্যা ও প্রতিকারের উপায় বিষয়ে নানা কথা বলেন।

সমস্যার কথা শুনে ভাড়া করা হলের দায়িত্বে থাকা শাহ্ স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ মজিবুর রহমানের সাথে আলোচনা করার জন্য তাঁকে আমন্ত্রন জানান প্রভোস্ট।

স্বাভাবিক আলোচনার এক পর্যায়ে মুজিবুর রহমান মেজাজ হারিয়ে উপাচার্যের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করলে শিক্ষার্থীরা তাঁর উপরে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন।

এসময় তিনি রাবিপ্রবিয়ানদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের চেষ্টা করেন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সহকারী প্রভোস্ট সজীব ত্রিপুরা বাধা দিলে তিনি তার চোখে ঘুষি দিয়ে পালিয়ে যান।

এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থী ক্ষুব্ধ হয়ে প্রধান শিক্ষকের অফিস ঘেরাও করেন।

অসৌজন্যমূলক আচরণে কষ্ট পেয়ে শিক্ষার্থীরা বারে বারে বিচারের দাবিতে শ্লোগান দিতে থাকেন।

স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্যে দীর্ঘ এক ঘন্টার আলোচনার পরে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পুলিশি প্রহরায় আলোচনার স্থান থেকে বেরিয়ে যান মজিবুর।

সবার সামনে বিনয়ীভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পরে তিনি বলেন-‘আমি আমার আচরণের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চাই। ভবিষ্যতে এমন ঘটনা আর ঘটবে না বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

RMSTU VC
রাবিপ্রবি ভিসি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার

এই প্রসঙ্গে রাবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. সেলিনা আখতার বলেন, আমরা শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি ছাত্রাবাস ভাড়া নিয়ে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য হল হিসেবে ব্যবহার করি।

হলটির বাথরুমের অবস্থা ভালো না হওয়ায় স্কুল কর্তৃপক্ষ সংস্কারের দায়িত্ব নেয়।

কিন্তু বাথরুমে ভালো টাইলস না লাগানো, শাওয়ার বা পুরনো কমোড ব্যবহার করার কারণ জানতে চাইলে তিনি আঙুল তুলে আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেন এবং রুম থেকে চলে যান।

যাওয়ার পথে তিনি ছাত্রদেরও দেখে নেয়ার হুমকি দেন। এতে ছাত্ররা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে।’

অভিযোগ বিষয়ে শাহ্ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুজিবুর রহমান বলেন, ভিসি ম্যাম আমাকে ডেকে নেয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সামনে প্রধান শিক্ষক হিসেবে আমার কোন রুচিবোধই নেই বলে মন্তব্য করেন।

এই মন্তব্য শোনার পরই আমি তাঁকে বলে তাঁর রুম থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করি।

কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ভিসি ম্যামের উপস্থিতিতেই আমার উপর চড়াও হওয়ার চেষ্টা করে এবং আমাকে ভিসি ম্যামের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে।

কিন্তু আমি চলে আসি।

আমি চলে আসার পরই ছাত্ররা আমার বিরুদ্ধে আপত্তিকর স্লোগান দিতে থাকে।

এই ব্যাপারে রাঙামাটি কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল আমিন বলেন, শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং রাবিপ্রবি’র ভিসির সাথে সামান্য একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) সহ প্রশাসনের উপস্থিতিতে এই ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমা বিনতে আমিন বলেছেন, ‘ঘটনা শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে ছাত্রদের সাথে আলোচনা করে প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ থেকে বের করে নিয়ে আসি।

ওনি ( প্রধান শিক্ষক) ভিসি মহোদয়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এখন পরিবেশ শান্ত আছে।’

প্রসঙ্গত, রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫ সাল থেকে ক্লাস শুরু হলেও এখনো নিজস্ব কোন ছাত্রাবাস নেই।

শহরের মাঝেরবস্তি এলাকায় শাহ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে একটি ভবন ভাড়া নিয়ে সেখানে অস্থায়ী ছাত্রাবাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্কুল নিজের ব্যবহারের জন্য ছাত্রাবাসটি তৈরি করলেও এখন সেটি ভাড়া দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে,অথচ স্কুলটির শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা তীব্র আবাসন সমস্যায় জর্জরিত।