ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে “মুয়েট” করার দাবী

Muet chai

ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং তথা আন্ডার গ্রেজুয়েট লেভেলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। প্রথম ক্লাস শুরু হয় ২০০৯ সালের ৪ জুলাই।

এরপর থেকে এটি প্রকৌশলী তৈরী করে যাচ্ছে যারা বিদেশে স্কলারশিপ, শিক্ষক, সরকারি, আধা সরকারি, বেসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে।

Muet

সমসাময়িক অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতায় কোনভাবেই আমরা পিছিয়ে নেই। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে গড়ে তোলা দরকার ছিল তা হয়নি।

Muet

কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ২ অভিভাবক এর গ্যাঁড়াকলে পড়ে মূলত এটির কোন অভিভাবকই ছিল না।

প্রথম দিকে ভর্তি পরীক্ষা কারিগরি অধিদপ্তর নিলেও পরে ঢাবি তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে এটিসহ আরও সরকারি বেসরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নিয়ে প্রযুক্তি ইউনিটের বাণিজ্য খোলে।

মূলত এই কলেজের প্রকল্প যারা হাতে নিয়েছিলেন তারা কি বুঝে এই ব্যর্থ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ সিস্টেমে আবার এগুলেন তা আজও বোধগম্য নয়। জানলাম আরও ৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ হবে নড়াইল,খাগড়াছড়ি,ঠাকুরগাঁও, নওগাঁ তে ।

তারাও এই একই সমস্যায় পড়বে। যে কলেজ সিস্টেম এর ব্যার্থতা প্রমাণিত হয়েছে ১৯৮৬ তে। সেসময় সব ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে বিআইটি করার মাধ্যমে সেটার সমাপ্তি ঘটেছিল। আজ আবারও সেই ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ নামক বিষফোঁড়া দেশের গায়ে তৈরী করা হয়েছে।

এটাই কি প্রসেস ধরে নিতে হবে যে, প্রথমে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সেখানের একাডেমিক, শিক্ষক নিয়োগ, পরীক্ষা জটিলতার জন্য BIT, তারপর সেটারও জটিলতা নিরসনের জন্য আন্দোলন সংগ্রাম৷

তারপর প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। সেই পুরোনো সমস্যা গুলো আবার ফিরে এসেছে। শিক্ষক নিয়োগ হয় বহু জটিল প্রক্রিয়ায়, যেটুকু হয় তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তারা আবার চলে যায় উন্নত চাকরির আশায়। ভর্তি পরীক্ষা হয় ঢাবির অধীনে।

কিছু শিক্ষার্থীরা ঢাবির লোভে এসে এখানে ধোঁকা খায়। যতই বুঝাই লাভ নাই। এই ঢাবির ট্যাগ অতি অল্প সংখ্যক “আত্মপরিচয়হীন inferiority complex এ আক্রান্ত রোগীরা” আঁকড়ে ধরে রাখতে চায় সাগরে খড়কুটো ধরার মত।

( এখন হয়তো কমবে affiliated শব্দ দেখে)।

অধিভুক্ত কলেজের সার্টিফিকেটে পরিবর্তন এনেছে ঢাবি
অধিভুক্ত কলেজের সার্টিফিকেটে পরিবর্তন এনেছে ঢাবি

হঠাৎ করে সেমিস্টার পরীক্ষাও ঢাবি কেন্দ্রীয় ভাবে নেয়া শুরু করে যেটা পরীক্ষার জটিলতাকে আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়।

ল্যাব ফ্যাসিলিটিসও অপ্রতুল। থিসিসের সময় অন্য জায়গায় গিয়ে টেস্ট করা লাগে।

আর ৬ একর জায়গায় একটা আন্ডার গ্রেজুয়েট লেভেলের প্রতিষ্ঠান কোন এঙ্গেলে হয় সেটা সেই প্রকল্প পরিচালক কে জিজ্ঞেস করতে খুব ইচ্ছে হয়৷

কিন্তু বিএনপি আমলের সেসব আমলা সচিবরা কি আর আছে? কোথায় কোন বেগমপাড়ায় গিয়ে আয়েশ করছে কে জানে! এসব কে অবহেলা, খামখেয়ালিপনা, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, নোংরা রাজনীতির শিকার যে নামেই আখ্যা দেন দিতে পারেন।

তবে এগুলো থেকে মুক্তি লাভ করতে হলে স্বায়ত্তশাসন তথা পূর্ণাঙ্গ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই। অতীতেও ছিল না।

যাই হোক, জটিলতা নিরসনের তেমন কোন আগ্রহ আমাদের মূল অভিভাবক কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তরের নেই।

তাই আবারও সেই একই পথ। আন্দোলন। এই আন্দোলন যে মুজিব বর্ষ বলে কেবল হচ্ছে তা নয়। ২০১৪ সালে তৎকালীন সিনিয়ররা এর সূত্রপাত করে।

তাদের কারণেই মইকে স্থায়ী শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে। তারপর ‘১৮ সালেও আন্দোলন হয়েছে। করোনা না থাকলে হয়ত এ বছর আন্দোলন বহুদূর এগিয়ে যেত৷

Muet

এখন অনলাইনে কতটুকু আন্দোলন করা যাবে তা সময়ই বলে দিবে। কিন্তু আন্দোলন ইনশাআল্লাহ চলতেই থাকবে। কখনো উত্তপ্ত, কখনো স্তিমিত।

কখনো রাজপথে, কখনো ফেসবুকে। যতদিন না সংসদে বিল পাশ হয়। তবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি চাই এটি রূপান্তর হলে অবশ্যই Mymensingh University of Engineering & Technology – MUET নামেই হোক।

অন্য কোন নামে নয়। হয়ত এ জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব যে সংসদে মুয়েট বিল পাশ হয়েছে।

কিংবা পারব না। তবে প্রচেষ্টা অব্যহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।

ইদানিং কালে নাটোর, নারায়ণগঞ্জ, মেহেরপুর, কিশোরগঞ্জ, পিরোজপুর, চাঁদপুর, লক্ষীপুরসহ যত্রতত্র বিশ্ববিদ্যালয় খোলার মহোৎসব শুরু হয়েছে, হোক।

গত একযুগ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে অনেক উন্নয়ন করেছে । খাদ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব সাফল্য এসেছে। যা আগের কোন সরকার করতে পারেনি।

তবে এরকম একটি জেলা, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কি মাহাত্ম্য সেটা বুঝতে আমি অক্ষম। আরও ৪ টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলারই বা কি প্রয়োজন?

দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাম্পার ফলন এই খবর বিটিভিতে দেখানোর জন্য? যেগুলো দেশে ইতোমধ্যে আছে সেগুলোর একটু যত্ন নিন না! আগের সন্তানগুলোই তো অবহেলায়, অনাদরে, ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় জর্জরিত।

সেগুলোর দিকে একটু তাকান। নতুন করে আরও ডজন ডজন সন্তান প্রসব করছেন কিসের উদ্দেশ্যে? সেগুলোকে মানুষ করতে পারবেন তো? এখনকার কতগুলোই তো মানুষ হয়ে উঠতে পারে নি।

পরিশেষে কবি কৃষ্ণচন্দ্র মজুমদারের ভাষায় বলি,
” কাঁটা হেরি ক্ষান্ত কেন কমল তুলিতে,
দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি মহীতে?”

চট্টগ্রাম বিআইটি যদি এতো দলবদল, ক্ষমতা বদলের পরও নিজেদের দাবী আদায় করে ছাড়তে পারে তাহলে আমাদেরকেও দাবায়ে রাখা যাবে না। আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বেই ইনশাআল্লাহ।

Muet

দেখা হবে রাজপথে, কথা হবে স্লোগানে।
“দাবী মোদের একটাই, মুয়েট চাই, মুয়েট চাই।”

লেখকঃ তামিম বিন আহমেদ

৩য় ব্যাচ, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ