জাহিদের পুলিশ ক্যাডারে প্রথম হওয়ার গল্প

৪১তম বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে প্রথম স্থান অধিকারী জাহিদ হাসানের জন্ম শরীয়তপুর জেলার সখীপুর থানার চরকুমারী ইউনিয়নে। পড়াশোনা করেছেন ভেদরগঞ্জ হেডকোয়ার্টার সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় ও আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে।

পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক পাস করেন। ৪০তম বিসিএসে সমবায় ক্যাডার পান। তবে পুলিশ ক্যাডারের স্বপ্ন থেকে ৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নেন। সবাইকে ছাড়িয়ে পুলিশ ক্যাডারে হন প্রথম। তাঁকে নিয়েই থাকছে আজকের আয়োজন।

বর্তমানে আমি ৪০তম বিসিএসে সমবায় ক্যাডারে আছি। অন্যান্য দিনের মতো ট্রেনিংয়ে ছিলাম। ট্রেনিংয়ের ক্লাস শেষে রুমে এলাম বিকেল ৪টায়। রুমে এসে রেজাল্টের জন্য অপেক্ষা করছিলাম। ল্যাপটপে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করে প্রথমে পুলিশ ক্যাডারের সিরিয়াল দেখি। দেখলাম প্রথম রোলটাই আমার। আমি তখন পুরোপুরি বিস্মিত হয়ে যাই। তারপর আবার মোবাইলে রেজাল্ট শিটটা ডাউনলোড করে মিলিয়ে দেখলাম। এ ক্ষেত্রেও রেজাল্টের নম্বর ঠিক আছে। তখন খুব ভালো লাগা শুরু হয়।

তৃতীয় বর্ষের শেষে প্রস্তুতি শুরু

এইচএসসি পর্যন্ত সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করেছি। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনার খুব ইচ্ছা ছিল। চুয়েটে পেট্রোলিয়াম ও মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে চান্স পেলাম। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি ইউনিটে পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিষয়ে চান্স পাই। তখন আমার বাবা বলেন, ‘তুমি যেহেতু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাওনি, সেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে যাও। আর এ বিষয় থেকে বিসিএস দিতে সুবিধা।’ তখন বাবার পরামর্শে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ভর্তি হওয়ার প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষে বিসিএসের তেমন চিন্তা করিনি। তৃতীয় বর্ষের শেষের দিকে বিসিএস দেওয়ার স্বপ্ন দেখি। সেই থেকে বিসিএসের পড়াশোনা শুরু করি।

যেভাবে বিসিএসের প্রস্তুতি নিয়েছি
পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে ভর্তি হওয়ার পর প্রতিবার বিসিএসের রেজাল্ট দেওয়ার পর দেখতাম, ভার্সিটির বড় ভাইয়েরা ক্যাডার হচ্ছেন। অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন। এসব বিষয় দেখে ভালো লাগত। তখন থেকে বিসিএসের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। তৃতীয় বর্ষের শেষ থেকে পুরোপুরি পড়াশোনা শুরু করি। সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় ম্যাথ আর বিজ্ঞান ভালো পারতাম। তাই এখানে তেমন ইফোর্ট দিইনি।

বাংলা সাহিত্য, বাংলাদেশ বিষয়াবলি ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি নিয়ে বেশি পড়াশোনা করি। এ বিষয়গুলো দিয়ে বিসিএসের পড়া শুরু হয়। বিসিএস প্রস্তুতিতে স্ট্রং ও উইক জোনগুলো খুঁজে বের করি। উইক জোনগুলো সময় নিয়ে পড়াশোনা করি। তারপর পুরো সিলেবাস ধরে পড়ি। কোনো কোচিংয়ে ভর্তি হইনি। প্রথমে হলে থাকলেও পরে বাসা নিয়ে থাকতাম। তাই পড়াশোনা ছিল আমার রুমেই।

পাশাপাশি দু-একটা টিউশনি
করেছি। নিয়মিত তিন-চারটি বিষয়ে পড়তাম। টার্গেট করে যত সময় লাগত, পড়া শেষ করতাম। প্রথমে আমার প্রিলিমিনারির পড়াশোনা ছিল। প্রিলিতে টু দ্য পয়েন্টে পড়ি আর লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে ওই বিষয়গুলো ডিটেইলসে পড়ি। লিখিত পরীক্ষায় আসলে নিজের বেসিক থেকে লিখতে হয়। প্রতিদিন পত্রিকা পড়া লিখিত পরীক্ষার ক্ষেত্রে কাজে দিয়েছে।

যাঁদের অনুপ্রেরণা পেয়েছি
আমার দুই মামা আর্মিতে জব করেন। বিসিএস ছাড়াও আমার পড়াশোনা ও অন্যান্য বিষয়ে অনুপ্রেরণায় ছিলেন তাঁরা। আমি যখন প্রাইমারিতে, তাঁরা তখন কলেজে পড়েন। তাঁদের হাত ধরেই একাডেমিক পড়াশোনা শুরু হয়।

আমার মা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। তাঁর কাছ থেকেই প্রথমে পড়াশোনার হাতেখড়ি শুরু হয়। তবে বিসিএসে আসা, এটা ছিল আমার বাবার ইচ্ছা। মামারা আমাকে সব সময় গাইড করতেন। এ ছাড়া ভার্সিটির বড় ভাইদের দেখে বিসিএসে আসার অনুপ্রেরণা পেতাম।

নতুনদের বিসিএস প্রস্তুতি
প্রথমে লাইফে গোল সেট করতে হবে। বিসিএস ক্যাডার হতে চাইলে প্রথম থেকেই ভালোভাবে শুরু করতে হবে। বিসিএসের সিলেবাস সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের স্ট্রং ও উইক জোন খুঁজে উইক জোন থেকে পড়াশোনা শুরু করতে হবে। আর ফোকাস সব সময় এক রাখতে হবে। ধারাবাহিকভাবে রুটিন ধরে পড়াশোনা করতে হবে।

প্রিলিমিনারির জন্য অনার্সের তৃতীয় বর্ষ থেকেই শুরু করতে হবে। টপিক ধরে বিস্তারিত পড়তে হবে। প্রিলিমিনারি ভালোভাবে শেষ করতে পারলে লিখিত পরীক্ষায় অনেক কিছু কভার হয়ে যাবে।

তখন লিখিত পরীক্ষার বাকি বিষয়গুলোতে সুন্দর প্রস্তুতি নিতে পারবে। প্রিলিতে ভালো পরীক্ষা হলে তার পর থেকেই লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এ ক্ষেত্রে আপডেট থাকা, নিয়মিত পত্রিকা পড়া এবং সিলেবাস অনুযায়ী যেকোনো প্রকাশনীর বই পড়তে হবে। এ ছাড়া কিছু সাপ্লিমেন্টারি বই পড়তে হবে। ভাইভাতে কনফিডেন্স থাকতে হবে। পাশাপাশি স্মার্টনেস শো করতে হবে। সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে হবে। নিজের পঠিত বিষয় সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা রাখতে হবে। আর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা রাখতে হবে।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পুলিশে এলে সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ অনেক বেশি। সমাজের কিছু উচ্চবিত্ত মানুষ অসহায় মানুষকে শোষণ বা অত্যাচার করার চেষ্টা করে। আমি সব সময় সমাজের এসব অসহায় মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করে যাব। পাশাপাশি সবার দোয়া নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে চাই।

অনুলিখন: আনিসুল ইসলাম নাঈম