প্রিয় শিক্ষকঃ অধ্যাপক সুশান্ত স্যার, নটরডেম

নটরডেম কলেজের অধ্যাপক সুশান্ত স্যার আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন। আমাদের কুইজ পরীক্ষার প্রশ্ন খুবই হার্ড হতো । স্যার কুইজ পরীক্ষা এবং টার্ম পরীক্ষাগুলোতে অনেক ছাত্রকেই ইচ্ছা করে ১০ নম্বর বেশি দিতেন। এটা অনেকেই প্রথম প্রথম বুঝতো না ।

এক কুইজ পরীক্ষায় আমি আবিষ্কার করলাম ১০০ তে পেয়েছি ৪৬ , যোগ করে দেখলাম মূল নম্বর পেয়েছি মূলত ৩৬ । মানে ফেল বা ডাব্বা মেরেছি । এই কুইজ নম্বরের একটা পার্সেন্টেজ যুক্ত হবে মূল পরীক্ষায় ।

১০ নম্বর বেশি পেয়েছি ! খুশীই হলাম । আবার অন্যদিকে বিবেক কুটকুটাচ্ছিলো । বিবেকের কূটকূটানী সাংঘাতিক ।

স্যার ক্লাসে প্রশ্ন করলেন – ‘ কারো কোনো সমস্যা আছে ? ‘ আমি সহ তিনজন দাঁড়িয়ে গেলাম । আমি বিড়বিড়িয়ে বললাম – ‘ স্যার ! আপনি ভুল করে ১০ নম্বর বেশি দিয়েছেন আমাকে । আমি মূলত ফেল করেছি কুইজে ।

স্যার মুচকি হাসলেন । আমাদের তিনজনকেই ঐ দশ নম্বর পুরষ্কার হিসেবে স্যার দিয়ে দিলেন । বাকীদের উদ্দেশ্যে বললেন – ‘ কাকে কাকে দশ নম্বর বেশি দিয়েছি , আমার কাছে লেখা আছে , সবার সামনে তাদের বিব্রত করলাম না ।

বাবারা , আজকের ক্লাসের শিক্ষা হলো – ছোটো খাটো লোভ সামলাতে হবে , নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে , তোমাদের মধ্যে যারা লোভ কে জয় করতে পারবা – তারা কখোনো জীবনে ঠকবা না । হাজার মানুষ ঠকাতে চাইলেও ঠকাতে পারবেনা, তারা টেনে ধরবে তোমাদের পেছন থেকে , তাও তোমরা এগিয়ে যাবা অপ্রতিরোধ্য গতিতে ।

যারা পার্থিব লোভে নিমগ্ন থাকবা – তারা শেষ পর্যায়ে নিজেকে আবিষ্কার করবা ঠকে যাওয়াদের কাতারে । আজ যারা ১০ নম্বরের লোভ সামলাতে পারলানা , তারা হয়তো একসময় কোটি টাকার লোভে বিবেকবোধ বিসর্জন দিয়ে দিবা । আমি চাইনা আমার ছাত্ররা অসৎ হোক ।

সৎ হবা , জীবনে কামিয়াব হবা ।

স্যারের কথাগুলা আজও মিস করি ভীষণ । অনুপ্রেরণা পাই পথচলার ।

-আসিফ সৈকত