আই ডোন্ট হেল্প মাই ওয়াইফ!

রান্নাঘরে থালা বাসন পরিষ্কার করছিলাম। এমন সময় দরজায় কলিং বেলের শব্দ। হাত ধুয়ে দরজা খুলে দেখি- বন্ধু দাঁড়িয়ে আছে। ভুলেই গেছিলাম ওর সাথে আজ বের হওয়ার কথা। ওকে বসিয়ে বললাম- তুমি দশ মিনিট অপেক্ষা করো। আমি এই ডিশগুলো ক্লিন করে আসছি।

আমার কথা শুনে ওর মনে হলো- আমি মনে হয় মঙ্গল গ্রহে ল্যান্ড করতে যাচ্ছি। তারপর বললো- তুমি তোমার বউকে সাহায্য করো – ভালো। কিন্তু আমি করিনা। মন চাইলেও করিনা। কয়েকদিন আগে নিজ থেকেই কিচেন ফ্লোর পরিষ্কার করলাম। প্রশংসা করবে দূরের কথা । একটা ধন্যবাদ পর্যন্ত জানালো না।

আমার বউ তখনো বিছানায় ঘুমাচ্ছে। বন্ধুর চাহনিতে এটাও একটা বিরাট প্রশ্ন। আমি থালা বাসন ধুচ্ছি। আর বউ এখনো ঘুমাচ্ছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার। ওকে বললাম – চলো সানরুমে গিয়ে বসি। চাচ্ছিলামনা- আমাদের কথোপকথনের শব্দে বউয়ের ঘুম ভেঙ্গে যাক। বেচারি ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে সারাটা রাত জেগেছে। বলতে গেলে দু মিনিটের জন্য চোখ বন্ধ করতে পারেনাই । ফজরের পর মা ছেলে এখন ঘুমোচ্ছে। এখন, একটু শান্তিতে ঘুমাক।

আমি বললাম- আসলে আমিও আমার বউকে সাহায্য করিনা। কারণ ওর সাহায্যের প্রয়োজন নেই।
আমি ঘর পরিষ্কারে সাহায্য করিনা। কারণ- এই ঘরেতো আমিও বাস করি। তাই ঘর পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমার।
রান্নায়ও আমি ওকে সাহায্য করিনা। কারণ- ও তো শুধু একা খায়না। আমিও খাই। তাই মাঝে মাঝে রান্না করার দায়িত্বও আমার।
থালা বাসন পরিষ্কারেও আমি ওকে সাহায্য করিনা। কারণ-খাওয়ার পর আমার থালা বাসনও ময়লা হয়। তাই এগুলো পরিষ্কারের দায়ভার শুধু ওর একার না।
সন্তাদের দেখাশুনায়ও ওকে সাহায্য করিনা। কারণ- এরাতো আমারও সন্তান। ও শুধু ওদের মা না। আমিও তো ওদের পিতা।
কাপড় পরিষ্কারেও আমিও ওকে সাহায্য করিনা। কারণ- এসব কাপড়তো আমাকেও পরতে হয়। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখা, গুছিয়ে রাখার দায়িত্ব দুজনার।
আমিতো পরিবারের শুধু হেল্প না। আমিতো এই পরিবারেরই অংশ।

আর তুমি যে ধন্যবাদ দেয়ার কথা বললে- বলোতো দিনের পর দিন এই রান্না করে যাওয়া, থালা বাসন ধুয়ে রাখা, কাপড় পরিষ্কার করে গুছিয়ে রাখা, বাচ্চাকে ঠিক সময়ে খাওয়ানো, একবার খাওয়াতে কমপক্ষে দু থেকে তিন ঘন্টা সময় লাগে, গোসল করানো- ঘর গুছিয়ে রাখা -এসবের জন্য তুমি কতদিন তোমার বউকে ধন্যবাদ বলেছো। হাস্যকর শুনাচ্ছে তাইনা? মনে করছো – এসবতো গৃহস্থালী দৈনন্দিন কাজ। এসব তারই করার কথা। এখানে, আবার ধন্যবাদ জানানোর কি দরকার। অথচ, সারা জীবনে একবার কিচেন ফ্লোর পরিষ্কার করে ধন্যবাদ না পেয়ে তোমার মনক্ষুণ্ন হয়েছে। তোমার এই কাজকে গ্লোরিফাই করেনি বলে- মন ভারাক্রান্ত করেছো। অথচ, এই কাজগুলো কোনো অভিযোগ অনুযোগ ছাড়াই একজন মা- একজন নারী দিনের পর দিন, মাসের পর মাস করে যাচ্ছেন। কারণ- আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থাটা এমন ভাবে গড়ে ওঠেছে- যেখানে মনে করা হয়- এসব কিছু সবসময় একজন নারীরই কাজ। আমাদের বদ্ধমূল ধারণা এই কাজগুলো ঘরে এমনি এমনি হয়ে যায়। এর পেছনে কোনো শ্রম দিতে হয়না। যদি তাই মনে না করো- তবে তুমি যেভাবে প্রশংসিত হতে চাও। তাকেও সেভাবে প্রশংসিত করো। একজন সন্তানকে যতই উপদেশ দাও নারীকে শ্রদ্ধা করতে শিখো, সম্মান করতে শিখো। সে তা কোনোদিনই করবেন না। যতক্ষণ না সে দেখে- তার পিতা তার মাকে সম্মান করছে। স্বামী যদি তার স্ত্রীকে ইজ্জত করে সন্তান অবশ্যই তার মাকেও সম্মান করতে শিখবে। ঠিক তেমনি একজন নারী যদি তার স্বামীকে সম্মান করে। একজন সন্তানও মানুষকে সম্মান করতে শিখবে।

মানুষকে সম্মান করার এই মহান শিক্ষা ঘর থেকেই শুরু হয়। আর এ ঘরের সবচেয়ে উত্তম শিক্ষক হলো বাবা -মা। বাবা মায়ের আচরণ যত সুন্দর হবে সন্তান তত আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠবে। দুঃখের বিষয় নারী দিবসের নানা আলোচনায় ভারী ভারী কথা বলা হয়- কিন্তু এই আসল কথাগুলো বলা হয়না।

তুমি ঘরে আসলে খাওয়া দাওয়া করলে, টিভি দেখলে, শুয়ে পড়লে-এবং এর জন্য বিল পরিশোধ করলে- এটাতো হোটলের অথিতিরা করে। কিন্তু আমরাতো হোটেলের অতিথি না। একজন স্ত্রী ঘরে হোটেলের অতিথি চায়না, সাহায্যকারীও চায়না। সে চায় একজন সমব্যথী । সে চায় একজন জীবন সাথী।

সংসার আর জীবনের বাতিঘর সব নারীদের জন্য বিশ্ব নারী দিবসে হৃদয়ের গভীর থেকে রইলো বিশুদ্ধ শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।

মূল ভাবনাঃ ডায়েরীস উইসপারিং
ভাষান্তরঃ আরিফ মাহমুদ