মেডিকেলে চান্স পেতে যতটা পরিশ্রম দরকার, ততটাই ভাগ্য

মাহমুদুল হাসান ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (

আমার বাবা একজন পল্লিচিকিৎসক। ছোটবেলা থেকেই শুনতাম আমাকে ডাক্তার বানাবেন। ডখন এটা উনার স্বপ্ন ছিলো,ছেলে ডাক্তার হবে।

কিন্তু সময়ের আবহে কখন যে সেই স্বপ্নটা আমারও একমাত্র স্বপ্ন হয়ে গেলো বুঝতে পারি নি৷ মুটামুটিভাবে ভালো রেজাল্ট করে ময়মনসিংহের অন্যতম সেরা শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজে ভর্তি হলাম।

কলেজ জীবনটা তেমন সুখকর কাটে নি। এখনও স্পস্ট মনে হয়, আমি পরীক্ষার আগে বাদে কিছুই পড়ি নি, প্রাইভেটও ঠিকঠাক পড়তাম না। কিন্তু একটা জায়গায় নিজেকে সমৃদ্ধ করেছিলাম মানুষের জন্য কিছু করার মেন্টালিটি।

বেশকিছু সোস্যাল এক্টিভিটিজে যুক্ত হয়ে সেবার মানসিকতা জন্মায়। এই সেবার মানসিকতাই আমার ভর্তিযুদ্ধে সফল হবার অন্যতম শক্তি ছিলো। কিভাবে?

এডমিশন টাইমে যখনই হতাশ হয়ে পড়তাম, তখনি এই ভেবে নিজেকে সাহস আর শক্তি যুগাতে পারতাম যে, আমি চেষ্টা করেছি মানুষের জন্য ভালো কিছু করার তবে কেন আল্লাহ তাআলা আমাকে এই সুযোগটা দিবেন না!!!

একটা সত্যি বলি, আমার মনে হতো.. আমাদের দেশে মেডিকেলে চান্স পেতে যতটা পরিশ্রম দরকার, ততটাই ভাগ্য দরকার।

আল্লাহ তাআলা আপনাকে বাছাই করবে, হ্যাঁ আপনি যোগ্য একজনের জীবনে হাসি ফিরিয়ে দেবার জন্য।

আমি রেটিনা ময়মনসিংহ ব্রান্চে কোচিং করেছি। এখানেও আমি অতটা উজ্জ্বল ছিলাম না। রেটিনা যে স্পেশাল ব্যাচটা করেছিলো সেটায় ছিলাম না।এছাড়াও কোচিংয়ের এক্সামগুলোতে মোটামুটি পেতাম।

কারণ ছিলো, আমি শুধু মেইন বুক পড়তাম। রেটিনা ডাইজেস্ট+এক্সট্রা ইনফরমেশন শিট দিয়েছিলো ওগুলো পড়তাম না। ফলে যে প্রশ্নগুলো রেগুলার বই থেকে হতো ওগুলো পারতাম, বাইরের গুলো আজব জিনিস লাগতো।

এর ফলে বরাবরই আমি নিজেকে অনেকটা পেছনে ভাবতাম। আমার খুব মনে পড়ে, পরীক্ষার একদিন আগেও আমি প্রচন্ড ডিপ্রেসড ছিলাম কেননা আজমল স্যার মুটামুটি আয়ত্বে থাকলেও আলীম স্যার কিচ্ছু পারি না।

তখন নিজেকে এই বলে শান্তনা দিয়েছিলাম যে, আমার যতটুক প্রিপারেশন আছে এটুকু নিয়েই এবার পরীক্ষা দিবো, চান্স নাহলে ২য় বারে সব পড়বো(অন্য বইগুলোও)।

আমার এক্সপেক্টেশন অতটা ছিলো না, কিন্তু নামাজ পড়ে দোআতে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ-ই চাইতাম। পরীক্ষার হল এক আজিব জায়গা লেগেছে।

আপনি যখন কোশ্চেন পারবেন না, তখন দুইটা বিষয় কাজ করে ১. প্রশ্ন কঠিন ২.প্রিপারেশনে ঘাটতি।

কাজেই প্রশ্ন পাবার পর কিছুই বুঝতে পারি নি৷ শুধু নিজের পারার মধ্যে যতটুক ছিলো সেগুলো ভালো করে দাগিয়েছি।

কিন্তু শেষদিকে এটকু খামখেয়ালি করেছিলাম। শুধু শুধু দাগিয়েছি যেগুলো সবগুলোই প্রায় ভুল ছিলো। একটা রীতি হয়ে গেছিলো যে, অনেক দাগাতে হবে সেই সুরেই তাল মিলিয়েছিলাম।

যাহোক, আল্লাহ তাআলার অশেষ রহমতে অবশেষে স্বপ্নপূরন হয়েছে।

আমি বলবো, আমার সাফল্যের পেছনে ছিলো দোয়া+ স্বপ্নটাকে আপন করতে পারা+ ডেডিকেশন।

আমরা তিন বন্ধু একসাথে থাকতাম মেসে৷ তিনজনই মেডিকেল কোচিং করতাম। শেষদিকে এমন হয়েছে এক সপ্তাহ পর বাহিরের আলো দেখতাম।

আসলে আপনাকে সম্পূর্ন কনসেনট্রেশান আনতে হলে নিজেকে চারদেয়ালের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখতেই হবে। এতে ফুল এটেনটিভ হতে পারবেন।

স্বপ্ন সবাই দেখে কিন্তু যারা স্বপ্নটাকে আপন করে দেখতে পারে তারাই স্বপ্নের কাছাকাছি পৌছতে পারে।

একাগ্রতা+বিশ্বাস+ডেডিকেশন +লাক সবগুলো একসাথে হলেই সাকসেস।

একটা বিষয় সবসময় মাথায় রাখা উচিত, যে পরিশ্রম করে সে কখনো বিফল হয় না।

দেখা যায় অনেকে পরিশ্রম করার পরেও মেডিকেলে চান্স পায় না। এক্ষেত্রে আমি বলবো হয়তো অন্য কিছুর জন্যই সে মনোনীত।

স্বচক্ষে দেখেছি এবার, পরিশ্রমী ছিলো মেডিকেলে চান্স হয়নি এরপর বিভিন্ন ভর্তিপরীক্ষায় অভাবনীয় সাফল্য দেখিয়েছে। তাই নিরাশ হবার কোনো কারন নেই।।।

যারা সামনে পরীক্ষা দিবেন, তারা যদি এখান থেকে কিছু শিখতে পারেন বা কাজে লাগাতে পারেন তবেই একঘন্টার টাইপিং সার্থক হবে। লেখার ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ।

মাহমুদুল হাসান
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ (ম-৫৬)
সেশনঃ ২০১৮-২০১৯