“মুস্তাক এমন কিছু জানতো, যা বের করার জন্যই এই অমানুষিক নির্যাতন “

কিশোরের বর্ননায় মুশতাক ভাইএর ইন্টারগেশনের ঘটনাগুলো জানার পর থেকে গত দুইদিন আমার মাথার ভেতর প্রতিটি শব্দ হাতুরী পেটা করছিল😭!

মানসিক ভাবে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না! তার মত একজন নিপাট সাদা মনের মানুষকে কিভাবে ওরা এটা করতে পারল? কিভাবে? কিভাবে? এটা শুধু কিশোরের কার্টুন আঁকা এবং সেই কার্টুনে মুশতাক ভাইয়ের দুই লাইন লেখার কারনে হতে পারে না?

কুমির ভাই কিছু একটা জানত যা বের করার জন্যই এই অমানুষিক নির্যাতন এতে কোন সন্দেহ নাই!

আজকে কাজের ফাঁকে প্রফেশনাল দৃষ্টিকোন থেকে ঘটনাটি বিশ্লেষন করে আমার মুখে হাসি ফুটে উঠল। আসলে কুমির ভাই এর সামনে তার ইন্টারগেটররা আসলে দাঁড়াতেই পারে নি!😄

ইন্টারোগসন গোয়েন্দা প্রশিক্ষনের একটি কম্লিকেটেড বিষয়, প্রতিটি গোয়েন্দা প্রশিক্ষন সাধারণত ১০%-২০% ছাত্র ইন্টারোগটর হিসাবে রিকোমেন্ডসন পেয়ে থাকে। এটা জটিল বিষয় এ কারনে যে এটা সাধারণত সাবজেক্ট এবং ইন্টারগেসনকারীর ভিতর “Battle of Wits” বা বুদ্ধির যুদ্ধ। কে কাকে আউটস্মার্টে করবে তার প্রতিযোগিতা।

ইন্টারোগেসনের বেসিক নিয়ম হচ্ছে প্রথমে আমি সাবজেক্ট সন্মন্ধে সব তথ্য জানব বিশ্লেষন করব তার পর তার জন্য উপযোগী ইন্টারোগেসন পদ্ধতিটা নির্ধারণ করে সেই অনুযায়ী এগিয়ে যাব। যদি এর মাঝে নতুন তথ্য পাই তবে ইন্টারোগেশন পদ্ধতি পরিবর্তন করা যেতে পারে।

আমার যতদুর মনেপড়ে আমরা মোট ১০টি ইন্টারোগেসন পদ্ধতি মেনে চলি।এর মধ্য একটি পদ্ধতি হচ্ছে “Matt and jeff” তবে পশ্চিমা দেশে এটাকে বলে “Good cop bad cop”. বিষয়টি সোজা, একজন মাইর দিবে আর একজন তাকে বাঁচাবে আর সাবজেক্ট সব তথ্য ভাল ইন্টারোগেটরকে দিয়ে দিবে।

তবে অফিসিয়ালি মারধোর বা ইলেকট্রিক শক দেওয়া আমাদের প্রশিক্ষন বইতে ছিলনা! আমরা শিখেছি যখন এই বুদ্ধির খেলায় ইন্টারোগেটর কোন তথ্য বের করতে না পেরে ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে যায় তখন মারধোর ইলেক্ট্রিক শক এ সবের আস্রয় নেয়!

মুস্তাক আহমেদ, কিশোরের উদ্দেশ্যে

আমি আমার চাকুরীজীবনে অনেক ইন্টারোগেসন করেছি এবং সফল হয়েছি। তবে সত্যিকারের বুদ্ধির খেলা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে জেএসএস এর এককালিন এক সাধারন সম্পাদকের ইন্টারোগেসন।

আমাদের সম্মিলিত ইন্টারোগসেন সেলে আড়াই দিন পর তিনি হত্যাকাণ্ডের কথা স্মীকার করেন এবং সংশ্লিষ্ট সব আলামত এবং অন্যান্য সব বিস্তারিত বলেন। আমরা তার গায়ে একটি ফুলের টোকাই দেইনি।

এই ইন্টারোগেসনের পর বস্তুত আমি একজন পরিপূর্ন ইন্টারোগেটর হয়েছি বলে আমি বিশ্বাস করি এবং এও বিশ্বাস করি যে কোন সাবজেক্টকে কথা বলানোর জন্য মারধরের দরকার পরে না।

সবাই একসময় কথা বলে! তবে এটাও ঠিক কিছু উচ্চ বুদ্ধিমত্তার এবং বেশীরভাগ নিম্ন বুদ্ধিমত্তার সাবজেক্ট মারের মোশন করলেই গড়গড় করে সব বলে দেয়।

এবার আসি মুশতাক ভাইএর ইন্টারগেসন প্রশংগে, এটা পরিস্কার মুশতাক ভাই কিছু জানতেন তাই তাকে বহুবার ইন্টারোগেশন করা হয়েছে, তার জামিন বার বার নাকচ করেছে এই ভয়ে যদি তিনি কিছু ফাঁস করে দেন!

এবং শেষের দিকে তার ইন্টারোগেটররা তাকে মারধর এবং ইলেকট্রিক শক দেয়। আমাদের এই প্রশিক্ষনে কিভাবে যুদ্ধবন্দী বা যে কোন সময় শত্রুর হাতে ধরা পরলে কিভাবে তথ্য গোপন বা শত্রুকে বিভ্রান্ত করা যায় তার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়!

আমি উপরের প্যারাতে আমার বিশ্বাস থেকেই বলেছি সবাই একসময় কথা বলে! কিন্তু কুমির ভাই আমাকে ভুল প্রমানিত করেছেন, কোন প্রশিক্ষন ছাড়া শুধু মানসিক শক্তি দিয়ে তিনি লড়ে গেছেন।

আমি কল্পনায় দেখতে পাই তার ইন্টারোগেটর তাকে কষ্টদিয়ে তাকে কথা বলানোর চেস্টা করছে আর তিনি হুমায়ুন আহমেদের আগুনের পরশমনি বইএর রেশেদুলের মত(বই এর রাসেদুল, একই নামের মুভির রাসেদুল নয়) বলছেন “আমাকে মেরে ফেল, মানুষকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না”😭 ইলেক্ট্রিক শক খেয়ে যখন তার শরীরের নার্ভগুলো আর নিয়ন্ত্রনে ছিলনা তখনো তিনি মাথা নত করার চিন্তা করেননি! ভাবা যায়?

তখন তার বাবা মা প্রিয়তমা স্ত্রীর কথা মনে করে বাঁচার আকুতি জাগার কথা ছিল কিন্তু তিনি দেশের কথা ভাবছিলেন!

মুশতাক ভাই তোমাকে অভিবাদন! তুমি আমার অনুপ্রেরনা!

লেখকঃ মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান
সাবেক লেফটেন্যান্ট কর্নেল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী