কুষ্টিয়ায় শেখ মুজিবের মূর্তি ভাঙ্গা কেন?

বঙ্গবন্ধু ভাঙ্গা ভাস্কর্য মূর্তি

কুষ্টিয়া শহরের পাঁচরাস্তার মোড়ে নির্মাণাধীন শেখ মুজিবের মূর্তির হাত ও মুখের কিছু অংশ ভাঙ্গা পাওয়া গেছে।

শুক্রবার রাতের কোন এক সময় দুর্বৃত্তরা শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মাণাধীন মূর্তির হাত ও মুখের কিছু অংশ ভেঙে ফেলে।

পুলিশ সুপার এসএম তানভির আরাফাত জানান, সিসি টিভির ফুটেজ দেখে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার উদ্যোগে একই বেদিতে শেখ মুজিবের তিন ধরণের তিনটি মূর্তি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়া, এই বেদিতে জাতীয় চার নেতার মূর্তিও নির্মাণ করা হবে।

নির্মাণাধীন মূর্তি ভেঙে ফেলার এ ঘটনায় কুষ্টিয়া জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৫ ডিসেম্বর) মূর্তি চত্ত্বরে বিক্ষোভ করেছে জেলা শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা।

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার (এসপি) এস এম তানভীর আরাফাত জানান, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দেখা গেছে রাত ২টার দিকে দুজন ব্যক্তি মূর্তি ভাঙচুর করছে। তাদের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। অচিরেই তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, “এ ধরনের নোংরা কাজ কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।

যারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে এবং মদদ দিয়েছে, তাদের প্রত্যেককেই খুঁজে বের করে কঠিন শাস্তি প্রদান করা হবে। যে বা যারা ভাঙচুর করেছে তাদের কাউকে এক চুলও ছাড় দেওয়া হবে না।”

কুষ্টিয়া পৌরসভা সূত্র জানায়, শহরের সৌন্দর্যবর্ধনের অংশ হিসেবে ২০০৩ সালে পাঁচ রাস্তার মোড়ে জাতীয় ফুল শাপলার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এরপর থেকে এটি “শাপলা চত্বর” হিসেবে পরিচিত মানুষের কাছে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে বর্তমানে শাপলার ভাস্কর্‍্য ভেঙে চলতি বছরের নভেম্বর মাসে পৌরসভার নিজস্ব অর্থায়নে শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে তিনটি মূর্তি নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

সেখানে নিচের দিকে জাতীয় চার নেতার মুর‌্যাল থাকবে।
দরপত্রের মাধ্যমে যশোরের একজন ভাস্কর মাহবুব জামাল শামীম এ মূর্তি নির্মাণের কার্যাদেশ পান। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

১৭ নভেম্বর থেকে কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে মূর্তি তৈরির কাজ প্রায় শেষের দিকে ছিল। কিন্তু গতকাল শুক্রবার রাতে কে বা কারা মূর্তির মুখ-হাতসহ বিভিন্ন অংশ ভেঙে ফেলে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, মূর্তি নির্মাণকাজের প্রায় ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছিল। মূর্তি ভাঙার ঘটনায় পৌরসভার পক্ষ থেকে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী বলেন, “ধারণা করা হচ্ছে যারা আওয়ামী লীগের বিরোধী, বঙ্গবন্ধুকে যারা মানতে পারে না; তারাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। পৌরসভার পক্ষ থেকে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হচ্ছে। এদিকে এ ঘটনার পর জেলার সবগুলো ভাস্কর্যে অতিরিক্ত নজরদারি শুরু হয়েছে।”

জেলা প্রশাসক (ডিসি) আসলাম হোসেন বলেন, “এ ঘটনার পর কালেক্টরেট চত্ত্বরসহ জেলায় যতগুলো ভাস্কর্য আছে সবগুলো সিসি ক্যামেরার আওতায় নেয়া হয়েছে।

পাশাপাশি নজরদারি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ইউএনওদেও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এদিকে, সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে পুরো শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনার প্রতিবাদে এরইমধ্যে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী, জাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন।