বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য: এ বিতর্কের শেষ কোথায়?

আঙ্কারায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য

বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিশেষ করে, যেহেতু এখানে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে। আবার আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে যেসব আপত্তি আসছে, তার অ্যাকাডেমিক দিকটিও পর্যালোচনা করে দেখা উচিত

দেশে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে। ভাস্কর্য নিয়ে। আরও সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, নির্মীয়মান বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নিয়ে। একটি পক্ষ যে কোনো মূল্যে ভাস্কর্য নির্মাণ এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

অন্য পক্ষ ভাস্কর্য মাত্রেরই ঘোর বিরোধী, তারা যে কোনো মূল্যে এটার নির্মাণ ঠেকাতে চায়। বিতর্কের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে দেশময়। পাল্টাপাল্টি সমাবেশ-মিছিলে কেঁপে উঠছে রাজপথ।

রীতিমতো যুদ্ধংদেহী অবস্থা! তা, কেন এই বিতর্ক? কিইবা এর মূল ভিত্তি? শিল্প-কলা, ধর্ম, রাজনীতি? নাকি এর সবই। কতটুকু আবেগ কাজ করছে, আর কতটুকুই বা যুক্তিবোধে চালিত হচ্ছে এ বিতর্ক?

ঘটনা পরিক্রমা সচেতনভাবে অনুসরণ করে থাকলে আপনার মনে হতে পারে, উপরে উল্লিখিত সবগুলো উপাদানের মিশেলে একটি জগাখিচুড়ি অবস্থা তৈরি হয়েছে। যেখানে সবাই উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে চলেছে দিগ্বিদিক।

এ মহাবিশ্বে বিধাতার এক অপূর্ব লীলা হচ্ছে সৃষ্টির বৈচিত্র্য। জীব-জড়, প্রাণী-উদ্ভিদ যেদিকেই আপনি নজর দিন, আপনি দেখতে পাবেন কেবলই বৈচিত্র্য আর বৈচিত্র্য।

আল্লাহতায়ালা শত সহস্র রকমের প্রাণী ও উদ্ভিদ সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডকে সুশোভিত করেছেন সূর্য-চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র, পাহাড়-পর্বত, সাগর-নদী-এবম্বিধ বহুতর অপূর্ব সৃষ্টি দিয়ে। পৃথিবীর কোনো কোনো অঞ্চল যেখানে বাংলাদেশের মতো নাতিশীতোষ্ণ, শস্য-শ্যামলা, অন্য কিছু অঞ্চল প্রচণ্ড গরম, উষর মরুভূমি।

আবার একটি বড় অংশ প্রচণ্ড শীতল। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতে বিদ্যমান হাজারো প্রজাতির মধ্যে আর একটু ডিটেইলসে গেলে আপনি দেখতে পাবেন আরও অসংখ্য ভাগ-উপভাগ।

এবার আর একটু গভীরে যান। দেখবেন, বিচিত্র রকমের অসংখ্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণু-পরমাণু সমন্বয়ে এদের গড়ে ওঠা। বিধাতার বিচিত্র রকমের এই শত সহস্র সৃষ্টির মধ্যে আপনি অনেক অমিল যেমন খুঁজে পাবেন, মিলও পাবেন এন্তার।

তবে, এত সব বৈচিত্র্যের মধ্যে যে বিষয়টি আপনাকে বিমোহিত করবে সেটা হলো, এরা সবাই মিলে এ মহাবিশ্বে তৈরি করেছে এক অপূর্ব ঐক্যতান, সবে মিলে আবদ্ধ হয়েছে ঐক্যের এক বাগডোরে।

কোথাও কোনো বিরোধ নেই, সবাই মিলে মিশে একাকার হয়ে যার যার কাজ করে যাচ্ছে। পবিত্র কুরআনের ভাষায়, “তুমি আল্লাহর সৃষ্টিতে কোনো বিরোধ/অমিল খুঁজে পাবে না (আল-কুরআন ৬৭:৩)।

এবার আদম সন্তানদের কথা ভাবুন। এ পৃথিবীর ঊষর-উর্বর, গরম-ঠাণ্ডা সর্বত্র আল্লাহ আদম সন্তানদের ছড়িয়ে দিয়েছেন। তাদের বিভক্ত করেছেন বিভিন্ন জাতি, বর্ণ, গোত্রে। আবহাওয়া ও এলাকা ভেদে তাদের মন-মেজাজে বিস্তর ফারাক দেখা যায়।

অসংখ্য ভাষা-উপভাষায় তারা কথা বলে। এলাকা ও ধর্মভেদে তাদের মধ্যে বিচিত্র রকমের কৃষ্টি-কালচার গড়ে উঠেছে। তবে সাদা-কালো-বাদামি নির্বিশেষে সকলের ভেতরটা একই রকম, সকলের রক্তের বর্ণই লাল।

সকলের মধ্যেই একই রকম আনন্দ-বেদনার অনুভূতি কাজ করে। বিশ্বমানবতার কল্যাণে কেউ যখন কোনো যুগান্তকারী আবিষ্কার করে, অন্যরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তার কৃতিত্বে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে অভিনন্দন জানায়।

আর কোনো এলাকায় যখন বন্যা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা ভূমিকম্পের মতো কোনো বড় দুর্যোগ দেখা দেয়, শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সব দেশই তাদের পাশে এসে দাঁড়ায়।

এই যে সার্বজনীন সহানুভূতি-সহমর্মিতা এটা কি এ স্বাক্ষ্যই দেয় না, শত বিরোধ আর বৈপরীত্যের মধ্যেও আমরা সবাই মিলে একটি অভিন্ন জাতি, এক আদমেরই সন্তান।

মোটা দাগে, আপনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিন্তা-দর্শন ও জীবনাচারে অনেক মিল ও অমিল খুঁজে পাবেন।

আপনি এমন কিছু বিষয় পাবেন, যেখানে ধর্ম-বর্ণ, গোত্র-জাতি নির্বিশেষে পৃথিবীর সব মানুষ অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেন, যেমন ধরুন- সত্য কথা বলা, সদাচরণ করা, বিপন্ন মানুষকে সহায়তা করা, অন্যায়ভাবে পরাস্বপহরণ না করা, ইত্যাদি।

অন্যদিকে, আপনি দেখে থাকবেন, সময়ের পরিক্রমায় কিছু বিষয়ে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের দৃষ্টিভঙ্গিতে মৌলিক ফারাক তৈরি হয়েছে। প্রাচ্যে এখনও পারিবারিক বন্ধন অনেক সুদৃঢ়। বিয়ে বহির্ভূত যুগল জীবন এখনও এখানে সামাজিক স্বীকৃতি পায়নি।

অন্যদিকে, পাশ্চাত্যে লিভ-টুগেদার একটি স্বীকৃত সামাজিক ব্যবস্থা। বিয়ে বহির্ভুত সন্তান জন্মদান তাদের কাছে কোনো বিষয় নয়। এমনকি, সমলিঙ্গের মধ্যে বিয়ের মতো বিষয়ও পাশ্চাত্যের অনেক দেশে আইনি স্বীকৃতি লাভ করেছে।

অথচ, প্রাচ্যে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কমবেশি সবখানেই এটি একটি দুরাচার হিসেবে বিবেচিত হয়। এখানে, ধর্মের একটি বড় ভূমিকা থাকতে পারে। আধুনিক যুগে খ্রিষ্টীয় পাশ্চাত্যে জনজীবনে চার্চের প্রভাব অনেক দুর্বল হয়ে গেছে।

অন্যদিকে, প্রাচ্যে ইসলাম, হিন্দু বা বৌদ্ধ – যে কোনো ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে প্রাত্যহিক জীবনাচারে এখনো ধর্মের প্রভাব অনেক শক্তিশালী। সন্দেহ নেই, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা পাশ্চাত্যের কাছে আমাদের অনেক কিছুই শেখার আছে, তবে তার মানে নিশ্চয়ই এই নয় যে তাদেরকে সব বিষয়েই আমাদের মডেল মানতে হবে।

তবে, প্রাচ্য সমাজে প্রধান তিনটি ধর্মের মধ্যেও আপনি মৌলিক আকিদা-বিশ্বাসে একটি প্রধান পার্থক্য দেখতে পাবেন। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অনেক দেব-দেবীর পূজা-অর্চনা করে।

এসব দেব-দবীর মূর্তি বানিয়ে এদের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন তাদের নিয়মিত ধর্মাচারের অংশবিশেষ। অন্যদিকে, বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা গৌতম বুদ্ধের মূর্তি তৈরি করে তার প্রতি তাদের শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে।

কিন্তু, ইসলাম অত্যন্ত কঠোরভাবে এক আল্লাহতে বিশ্বাস করে। তার সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাউকে অংশীদার করাকে আমার্জনীয় পাপ হিসেবে বিবেচনা করে।

মহানবী (সা.) আরব থেকে মূর্তি পূজাকে সমূলে উৎপাটন করেন। তার অনুসারীরা এ বিষয়ে সদা সোচ্চার ছিলেন এবং আছেন।

ছোট-বড় যত ত্রুটি-বিচ্যুতিই এসে থাকুক না কেন, গত দেড় হাজার বছরের ইতিহাসে মুসলিম সমাজের কোথাও কি মূর্তি পূজা জায়গা করে নিতে পেরেছে?

প্রশ্ন হচ্ছে, মূর্তি আর ভাস্কর্য কি এক? কোথাও কি মূর্তির ন্যায় ভাস্কর্যের পূজা হচ্ছে? তাহলে এটা নিয়ে এত শোরগোল হচ্ছে কেন? ভাস্কর্য আসলে কি? ভাস্কর্য নির্মাণের পেছনে কি উদ্দেশ্যই বা কাজ করে থাকে?

বিশ্ব সভ্যতার ক্রমবিকাশের দিকে তাকান। এখানে বিজ্ঞান, ধর্ম ও শিল্প-কলা- প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

বিজ্ঞান যখন মানুষের দৈনন্দিন জীবনের সমস্যা সমূহের সমাধানে নিরন্তর কাজ করে যাচ্ছে, ধর্ম তার নৈতিক সত্ত্বাকে বিচ্যুতির হাত থেকে রক্ষায় রয়েছে সদা ব্যাপৃত।

আর, শিল্প-কলা? আনন্দ-পিপাসু মানুষের চিত্তবিনোদনের অফুরন্ত উৎস হিসেবে কাজ করে গেছে। শুধুই কি তাই? ধর্মের যেমন রয়েছে অতুলনীয় উজ্জীবনী শক্তি, শিল্প-কলাও বিনোদনের পাশাপাশি জনমানস গঠনে রাখতে পারে অনন্য সাধারণ ভূমিকা।

এখানে ভাস্কর্যের অবস্থান কোথায়? একটি চিত্রকর্ম দ্বিমাত্রিকভাবে অনেক কথাই বলতে পারে, তবে এটাকে বড় জোর কোথাও ঝুলিয়ে রাখতে পারবেন। কিন্তু, ভাস্কর্য নামের ত্রিমাত্রিক শিল্পকর্ম যদি দৃষ্টি-নন্দন হয়, পাবলিক প্লেসে স্থাপন করেন, এটি অগণিত মানুষের জন্য দর্শনীয় স্থানে পরিণত হতে পারে।

মানুষ এটা দেখবে, এর নির্মাণ-শৈলী আর শিল্পগুণে বিমোহিত হবে, আর এটি যে বার্তা দিতে চায় তা সাথে করে নিয়ে ঘরে ফিরে যাবে। কাজেই, ক্ষেত্রভেদে একটি ভাস্কর্য হতে পারে একটি চলমান ইতিহাস, একটি জাতির অহংকার, গৌরব ও বীরত্বের জয়গাঁথা, একটি সমাজের কোনো স্মরণীয় মুহূর্তের প্রতিবিম্ব, একটি দেশের কোনো মহান নেতার স্মৃতিফলক কিংবা কোনো ধর্মীয় সম্প্রদায়ের দেব-দেবীর প্রতিমূর্তি।

তবে, কখনও আবার এটা একজন পুরুষ বা নারীকে এমন দৃষ্টিকটু ভাবে উপস্থাপন করতে পারে, যা আপনার কাছে মানসিক বিকার বলে প্রতীয়মান হবে। ব্যাপার যাই হোক, আপনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন, একটি ভাস্কর্য তার নান্দনিকতা ও দর্শনীয়তা গুণে জনসধারণ্যে বিশেষ বার্তা পৌঁছে দেওয়ার শক্তিশালী মাধ্যম হতে পারে।

এবার একটু দেখা যাক, মুসলিম বিশ্বে ভাস্কর্যের ব্যাপৃতি কেমন? পত্র-পত্রিকার রিপোর্ট অনুসারে, পৃথিবীর অনেক মুসলিম দেশেই প্রয়াত জাতীয় নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ভাস্কর্য রয়েছে।

এদের মধ্যে তুরস্কের কামাল আতাতুর্ক, পাকিস্তানের কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মিশরের জামাল আব্দুল নাসের, ইরানের ইমাম খোমেনি ও ইরাকের সাদ্দাম হোসেনের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

সাদ্দাম হোসেনের ভাস্কর্যগুলো পরবরর্তীতে সরিয়ে ফেলা হয়। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন আল্লামা ইকবাল, শেখ সাদী, ফেরদৌসী, রুমী প্রমুখ। আরব উপদ্বীপেও কিছু ভাস্কর্য আছে বলে সংবাদ মাধ্যমের খবরে এসেছে, যদিও কোনো ব্যক্তির ভাস্কর্য আছে কিনা তা সুস্পষ্ট নয়।

তাহলে, সমস্যাটা কোথায়? এদেশের আলেম-উলামারা ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতা করছেন কেন? তাদের কাছ থেকেই শোনা যাক। তারা বলছেন, কোনো মুসলিম দেশে ভাস্কর্য থাকার মানে এই নয় যে, ইসলাম এটাকে অনুমোদন করে।

ইসলামের গাইডলাইন আসে কুরআন ও হাদীস থেকে। একাধিক নির্ভরযোগ্য হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়, ইসলাম কঠোরভাবে মানুষ বা অন্য কোনো প্রাণীর ত্রিমাত্রিক ইমেজ তৈরিতে নিষেধ করেছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, হাদীস থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, অতীতে বিভিন্ন জাতির মধ্যে শিরকের সূত্রপাত ঘটেছে শ্রদ্ধা প্রদর্শন ও অনুপ্রেরণা লাভের উদ্দেশ্যে প্রয়াত বিশিষ্ট জনদের ছবি টাঙানো বা ইমেজ তৈরির মধ্য দিয়েই।

শয়তান এভাবে মানুষকে বিভ্রান্ত করে শিরকের দরজা উন্মুক্ত করে। তারা আরও দাবি করেন, রাসূল (সা:)-এর সময় থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেম-উলামাদের এ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে। ভাস্কর্য নির্মাণের বিরোধিতার মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ (সা:)-এর উত্তরসূরী হিসেবে তারা তাদের উপর ন্যস্ত দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র।

যদিও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক চলমান, তর্কের খাতিরে ধরে নিচ্ছি আপনাদের বক্তব্যই সঠিক। বিশেষ করে, ধর্মীয় বিষয়ে আপনাদের বক্তব্য অগ্রাধিকার পাবে, এটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন হচ্ছে আপনারা কি আপনাদের দায়িত্ব পালনে সঠিক পন্থা অনুসরণ করছেন? আপনাদের বক্তব্য সাধারণ্যে ও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে সুন্দরভাবে বিজ্ঞতার সাথে তুলে ধরুন না কেন?

একজন দায়ীর প্রতি এটাই আল্লাহর হেদায়েত নয় কি? শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে আপনারা অবশ্যই মানুষকে বুঝানোর চেষ্টা চালাতে পারেন, কিন্তু এমনভাবে কথা বলা কি সঠিক হবে, যাতে জনসধারণ্যে মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনার সৃষ্টি হতে পারে?

কেউ যদি বলে বসেন, “ওটা ভেঙে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেব”, তাতে আদৌ কাজের কাজ কিছু হবে কি? মনে রাখা চাই, এ দেশ একজন মুসলিম শাসক দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। এ দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান ছিলেন।

আজকের এই যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন, সেটা তারই হাতে গড়া। আমাদের জানা মতে, তার কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান, নিয়মিত নামাজ আদায় করেন।

এদেশের কোনো সরকারই সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে কখনো অবস্থান নেননি। যেসব তরুণ-যুবরা আপনাদের কথা শুনতে চাচ্ছেন না বলে ভাবছেন, তাদেরও বেশির ভাগ মুসলিম পিতা-মাতার ঔরসে জন্ম নিয়েছেন। আপনারা যদি আন্তরিকতার সাথে বিশ্বাসযোগ্যভাবে আপনাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারেন, কেউ তো দ্বিমত পোষণের কথা নয়? তা না করে যদি খালি মাঠ গরম করেন, মশা মারতে কামান দাগান, করতেই পারেন। আখেরে লাভের গুড় পিঁপড়েয় খাবে!

পরিশেষে, সবার উদ্দেশে বলব, বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। বিশেষ করে, যেহেতু এখানে বঙ্গবন্ধুর নাম জড়িয়ে আছে। তিনি এদেশের ঐক্যের সূত্র। তিনি গত হয়ে গেছেন। আল্লাহ যেটুকু তৌফিক দিয়েছেন, এ দেশ, এ জাতির জন্য তিনি তা করে গেছেন।

এখন আমাদের স্বার্থেই তাকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখা চাই। কারও কোনো কথায়, কোনো কাজে যেন তার অশ্রদ্ধা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি।

আবার অহেতুক আবেগ তাড়িত না হয়ে, আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে যে সব আপত্তি আসছে, তার অ্যাকাডেমিক দিকটিও পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। খেয়াল রাখা দরকার, অহেতুক উত্তেজনা সমাজে ধূম্রজাল সৃষ্টি করতে পারে, তা সাধারণ্যে বিরূপ ধারণা তৈরি করবে। সবাইকে আস্থায় নিয়ে ধীরে সুস্থে আগানোই বুদ্ধিমানের কাজ নয় কি?

বঙ্গবন্ধু এখন আমাদের মাঝে নেই, কিন্তু এদেশে শান্তি, সুস্থিতি ও ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হলে তার পরলোকগত আত্মা প্রশান্তি লাভ করবে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে বুঝার তৌফিক দিন।

ড. মুহম্মদ দিদারে আলম মুহসিন, অধ্যাপক, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্তই নিজস্ব।