এসএসসি জুনে, এইচএসসি জুলাইয়ে, বিশেষ অধ্যাদেশ জানুয়ারিতে: শিক্ষামন্ত্রী

দীপু মনি

করোনার কারণে চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া না গেলেও ২০২১ সালের জুন নাগাদ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা এবং জুলাই-আগস্ট নাগাদ এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে জুন নাগাদ এসএসসি পরীক্ষা নিতে পারবো।

আর জুলাই-আগস্ট নাগাদ এইচএসসি ও সমানের পরীক্ষা নেওয়া যাবে। মঙ্গলবার (২৯ ডিসেম্বর) অনলাইনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে একথা জানান তিনি।

মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনে আসছেন দীপু মনি

এছাড়া আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হতে পারে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

দীপু মনি বলেন, যদি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে তাহলে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ক্লাস হতে পারে। এ সময়ে পিছিয়ে পড়া সিলেবাস শেষ করা হতে পারে।

এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ক্লাস করানোর চেষ্টা করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল- এই সময়কালে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পড়ানোর উদ্যোগ নেবো, সেই চেষ্টা করছি।

সিলেবাস ছোট করে আগামী এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নেওয়া হতে পারে বলেও জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, সিলেবাস ছোট করার কাজ চলছে। ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিস্তারিত জানানো হবে।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, গত ১৬ মার্চ থেকে প্রত্যক্ষ শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে ২০২১ সালের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়নি।

পরের স্তরে যেতে যেগুলো প্রয়োজন সেগুলোকে মাথায় রেখে সিলেবাস কাঁটছাট করে ছোট করা হবে, সেটি আমরা জানিয়ে দেবো।

দশম ও দ্বাদশ শ্রেণি যেন নতুন সিলেবাসে ক্লাসে ক্লাস করে পরীক্ষা দিতে পারে সে চেষ্টা করা হবে।

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, করোনার কারণে এ বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা না হওয়ায় বোর্ড থেকে সনদ দেওয়া হলেও তাতে কোনো নম্বর উল্লেখ থাকবে না।

শুধু উত্তীর্ণ লেখা থাকবে। এ ছাড়া মাধ্যমিকে রোল নম্বরের পরিবর্তে আইডি প্রথা চালু করা হবে। অর্থাৎ পরীক্ষার ভিত্তিতে আগে যে রোল নম্বর থাকত, তা আর থাকছে না। আইডির ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের কার্যক্রম চলবে।

এইচএসসির ফল প্রকাশ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা বাতিল করায় দুই পরীক্ষার ফলের গড় করে ফল প্রকাশ করতে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। শিগগির এই অধ্যাদেশ জারি হবে, তারপর ফল।

‘এইচএসসির ফলাফল তৈরি হয়ে আছে। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে অধ্যাদেশ জারি করা হবে। অধ্যাদেশ হয়ে গেলে সাথে সাথে ফল প্রকাশ করা যাবে। ’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত আইন রয়েছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে ফল প্রকাশে একটি অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। খুব সহসাই অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

তিনি বলেন, জেএসসি এবং এসএসসির বিষয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে এইচএসসির ফল প্রকাশ করা হবে। কোন কোন বিষয় সমন্বয় করা হবে তা বিশেষজ্ঞরা মতামত দিয়েছেন।

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, কোনো শিক্ষার্থী ফলাফলে সংক্ষুব্ধ হলে তারা বোর্ডে আবেদন করতে পারবেন। আশা করি সংক্ষুব্ধ হবার মতো ঘটনা ঘটবে না।

ফরম পূরণের অব্যয়কৃত অর্থ ফেরত প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ফরম পূরণের অব্যয়কৃত অর্থ ফেরত প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফল প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বোর্ড ওয়েবসাইটে নোটিশ প্রকাশ করবে।

এর আগে গত ২৫ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছিলেন, জেএসসি ও এসএসসির ফলাফলের ভিত্তিতে চলতি বছরের এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হবে।

তবে এসএসসি পরীক্ষা যেহেতু বেশি গুরুত্বপূর্ণ, তাই এ ফল থেকে ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসির ফল থেকে ২৫ শতাংশ নম্বরের ভিত্তিতে ফল প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর ডিসেম্বরের মধ্যেই এইচএসসির ফল প্রকাশ করার কথা থাকলেও এখন সেটা হচ্ছেনা।

শিক্ষামন্ত্রী বলেন,  এ ছাড়া এবার করোনা ভাইরাসের কারণে আসন্ন পয়লা জানুয়ারি উৎসব করে পাঠ্যবই দেওয়া হবে না। ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মোট ১২ দিনে এসব বই দেওয়া হবে।

প্রতিটি শ্রেণির শিক্ষার্থীরা তিন দিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে বই নেবে। তার আগে ৩১ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বই উৎসবের কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন।

উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রাখা হয় দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এর পর বেশ কয়েক দফায় বাড়ানো হয় ছুটি। সর্বশেষ আগামী ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি বাড়িয়েছে সরকার।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক বক্তব্য রাখেন।