প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর তারিখ নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে নোবিপ্রবি

NSTU

দেশের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে উচ্চশিক্ষা বিস্তারে লক্ষ্যে ২০০৬ সালে নোয়াখালী তে প্রতিষ্ঠা করা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

সেই সালের ২২ জুন ২০০৫-২০০৬ শিক্ষাবর্ষের ১৮০ জন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ২৭ তম পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের প্রধানতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়) বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রত্যক্ষ করলে দেখা যায় তাদের সবাই শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর দিনটিকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে।

একই কারণে ২২ জুনকেই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পালন করা হয়।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার ২০০৮ সালের নিবার্চনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পরেও নোবিপ্রবির ২য় এবং ৩য় ভিসির মেয়াদকালেও ২২ জুনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতি বছরের ২২ জুন এই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কিন্তু গত ২০১৬ সাল থেকে ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

প্রতি বছর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আসলে এ নিয়ে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়।

বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন সংক্রান্ত তথ্য থেকে দেখা যায় প্রাক্তন উপাচার্য এ কে এম সাঈদুল হক চৌধুরী স্যারের সময়ে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথমবার অত্যন্ত আড়ম্বর আয়োজনের মাধ্যমে পুরো নোয়াখালী জুড়ে এই দিবসটি পালিত হয়।

যা নোয়াখালীবাসির মনে আজও ঠায় নিয়ে আছে। ২০১৫ সালে নোবিপ্রবির ৪র্থ ভিসি অধ্যাপক ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান স্যার দায়িত্বে এলে তিনিও প্রথমবার ২২জুনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করেন।

পরবর্তীতে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহলের চক্রান্তের কারণে ১৫ জুলাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দিবস ঘোষণা করা হয়। এবং বর্তমানেও সেটি বহাল রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিভিন্ন তথ্য হতে দেখা যায়, ১৯৯৮ সালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার বাংলাদেশের ১২টি জেলায় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যার মধ্যে নোবিপ্রবি অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই “নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০১” পাশ হয়, ২০০৩ সালের ২৫ আগস্ট প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে সেই আইন কার্যকর হয় এবং ২০০৫ সালের ২৪ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে এর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালনের ইতিহাস ঘেটে দেখা যায়, উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনটিই আইন পাশের দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করে না।

উপরন্তু সবক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রমের সূচনাকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৬ সালে ২২ জুন শুরু হয়েছিল নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।

২২ জুনকে নোবিপ্রবি দিবস হিসেবেই পালন করা হচ্ছিল।

কিন্তু হঠাৎ করে ২০১৬ সালে তৎকালীন ভিসি ড. অহিদুজ্জামান আইন পাশ করলেন, এখন থেকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ১৫ জুলাই। কারণ বা যুক্তি হিসেবে জানালেন, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই সংসদে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আইন পাশ হয়।

অর্থাৎ, ২০০১ সালের ১৫ জুলাই যদি সংসদে এই আইন পাশ না হত তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হত না। তাই ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস।

কিন্তু, প্রশ্ন এসেছিল তাহলে ২২জুন? তিনি বললেন, ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন।

এই ঘটনা নেপথ্যে কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ড. অহিদুজ্জামান নোবিপ্রবিতে ভিসি হিসেবে যোগ দেন ২০১৫ সালে। ওই বছর ২২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস ও বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন একই ছিল এবং পালন হয়েছে।

কিন্তু, ওই দিবসে অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি তারেক রাশেদ উদ্দিন বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, আমি অনুরোধ করব বর্তমান ভিসিকে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার কর্তৃক সংসদে আইন পাশের (২০০১সাল ১৫ জুলাই) দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস করা হোক।”

উপরোক্ত ঘটনার বর্ণনা দিয়ে কয়েকজন সাবেক শিক্ষার্থী বলেন, তার মানে আমরা কী ধরে নেব আফিসার্স এসোসিয়েশনের ওই নেতার কথায় ভিসি প্রভাবিত হয়েছেন? এযাবতকাল আমরা দেখে আসছি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আইন অনুযায়ী ভিসি নয়, ভিসি অনুযায়ী আইন হয়।

যা দেখা গিয়েছে আহমদ ছফার বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখা “গাভি বৃত্তান্ত “আর মুহাম্মদ জাফর ইকবালের “মহব্বত আলির একদিন” দুটি উপন্যাসে।

আহমদ ছফার গাভি বৃত্তান্তে ভিসির ইচ্ছায় একটি গাভি হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্ত্বপূর্ণ জিনিস। আর মুহাম্মদ জাফর ইকবালের মহব্বত আলির একদিনে, ভিসির ইচ্ছায় বিশেষ রাজনীতিক দলের গুণ্ডা দিয়ে শিক্ষককেও লাঞ্ছিত করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন নোবিপ্রবিয়ান হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার যে, বিভিন্ন অন্যায় এবং অসঙ্গতিতে আমরা কথা বললেও নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোন প্রতিবাদ আমরা করছি না।

যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দিনে পালন করা হয় সেখানে আমরা একটি মহলের ষড়যন্ত্রের কুটকৌশলকে স্বীকৃতি দিচ্ছি।

ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা আমাদের দেশ স্বাধীনের পরেও অনেকবার দেখা গিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে ও ভবিষ্যৎ সোনার বাংলা বিনির্মানের কান্ডারি হিসেবে যে কোন অপশিক্ষাকে আমাদের রুখে দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিবেকবান ছাত্র হিসেবে আমাদের এই গর্বিত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন নোবিপ্রবিয়ান হিসেবে বিষয়টি আমাদের জন্য অত্যন্ত লজ্জার যে, বিভিন্ন অন্যায় এবং অসঙ্গতিতে আমরা কথা বললেও নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সাথে যে অন্যায় করা হয়েছে তার কোন প্রতিবাদ আমরা করছি না।

যেখানে বাংলাদেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ববিদ্যালয় দিবস একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার দিনে পালন করা হয় সেখানে আমরা একটি মহলের ষড়যন্ত্রের কুটকৌশলকে স্বীকৃতি দিচ্ছি।

ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য ইতিহাস বিকৃতির ঘটনা আমাদের দেশ স্বাধীনের পরেও অনেকবার দেখা গিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে ও ভবিষ্যৎ সোনার বাংলা বিনির্মানের কান্ডারি হিসেবে যে কোন অপশিক্ষাকে আমাদের রুখে দিতে হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বিবেকবান ছাত্র হিসেবে আমাদের এই গর্বিত ইতিহাসকে ফিরিয়ে আনতে হবে। এদিকে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করার জন্য গণস্বাক্ষর কার্যক্রম শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গণসাক্ষরের অন্যতম সমন্বয়ক বিশ্ববিদ্যালয় বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম সৌরভ বলেন, ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালনের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসকে আমরা অসম্মান করছি ।

ভুলে যাচ্ছি কবে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়েছিল বা এর গুরুত্ব কতটুকু।

নোবিপ্রবির একজন সচেতন শিক্ষার্থী হিসেবে যেই বিকৃত আকাঙ্ক্ষায় ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের জন্য এই হীন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল সেই পদক্ষেপের বিরোধিতা করি এবং ২২ জুনকে নোবিপ্রবি দিবস হিসেবে পুনর্বহালের দাবি জানাই।

এই দাবিতে একাত্মতা পোষণের জন্য গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করার যেই কার্যক্রম শুরু হয়েছে তাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহনকে সম্মান জানিয়ে প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নিবে বলে প্রত্যাশা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এলামনাই সদস্য এবং কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক সালাউদ্দিন পাঠান বলেন, ২০১১ সাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন প্রাণ হিসেবে এসে ২২ জুনকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পেয়েছি।

ইতিহাস থেকে জেনেছি এই দিনেই আমাদের প্রথম আবর্তনের অগ্রজরা তাদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এই আবেগকে সবারই সম্মান জানানো উচিত।

আশাকরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুরুত্ব দিয়ে এই বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা করবে।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠানকালীন শিক্ষক, বর্তমানে বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এবং ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম বলেন, একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিনকেই সকল বিশ্ববিদ্যালয় জন্মদিন হিসেবে পালন করে থাকে। তবে নোবিপ্রবিতে গতানুগতিক এই প্রথার বেত্যয় ঘটেছে।

NSTU
NSTU

তিনি বলেন, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পা রেখে ক্যাম্পাসকে মুখরিত করেছে, সেদিনই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালিত হওয়া উচিৎ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন, যেন উদ্বোধনের দিনকেই বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে পালন করার জন্য আইন প্রনয়ণ করা হয়।

এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ও নোবিপ্রবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুরকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

এই বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. দিদার-উল-আলম বলেন, আগের বছরে পালিত তারিখে এবারও বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালিত হবে। তবে যেহেতু অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দিনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হয়। আমরাও নির্দিষ্ট সভায় এটা নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবো।