ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কালো দিবস আজ

 

২০০৭ সালের ২০ আগস্ট বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ এবং লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্রদের মধ্যে ফুটবল খেলা চলছিল।

ওই খেলাকে কেন্দ্র করে উপস্থিত ছাত্র ও সেনা সদস্যদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।
খেলার মাঠেই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালায় উপস্থিত সেনাসদস্যরা।

এর প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক মোবাশ্বের মোনেম সেনাসদস্যদের দ্বারা শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত হন।

এ ঘটনা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে গেলে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। ছাত্রদের কাছে সেনা সদস্যদের ক্ষমা চাওয়ার দাবি ওঠে। কিন্তু সেনাবাহিনী তা মেনে নেয়নি।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারসহ ওই ঘটনায় জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করা হয়।

এ রকম পরিস্থিতিতে ২১ আগস্ট নির্যাতনের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে আসে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বস্তরের শিক্ষার্থী। স্বতঃস্ফূর্তভাবে তারা বিক্ষোভ করতে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে।

তখন তাদের ওপর আক্রমণ চালায় পুলিশ। নীলক্ষেত, টিএসসি, কার্জন হল এলাকাসহ ক্যাম্পাস পরিণত হয় রণক্ষেত্রে।

পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটে আহত হন শত শত ছাত্র। আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র থেকে ক্যাম্প সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় সেনাবাহিনী।

২২ আগস্ট এই আন্দোলন গোটা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ে। রাজশাহীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন রিক্সাচালক আনোয়ার।

পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে তৎকালীন সেনা-তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২২ আগস্ট বিভাগীয় শহরগুলোতে কারফিউ জারি করে।

ওইদিন সন্ধ্যার মধ্যেই ঢাবির আবাসিক ছাত্র-ছাত্রীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এরপর ২৩ আগস্ট রাতে আটক করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন ও অধ্যাপক হারুন-অর-রশিদকে।

তাদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় অজানা স্থানে। এছাড়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সাইদুর রহমান খান, আবদুস সোবহান, মলয় কুমার ভৌমিক, দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস, আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সেলিম রেজা নিউটনকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়। পরে ঢাবির আরও দুই শিক্ষকসহ ৫ ছাত্র নেতাকে গ্রেফতার করে সেনা সমর্থিত সরকার।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়।ঘটনার পর দীর্ঘ ৬৬ দিন পর খুলে দেয়া হয় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস।

প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলো নির্যাতনবিরোধী ব্যানারে মাঠে নামে। ধীরে ধীরে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তির আন্দোলনও বেগবান হতে থাকে।

পরে আরও দুটি ব্যানারে ছাত্রবন্ধু ও নির্যাতন প্রতিরোধ ছাত্র আন্দোলন ছাত্র-শিক্ষক মুক্তির আন্দোলনে গতির সঞ্চার করেছিল।

ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি আন্দোলনের কাছে হার মানে সেনাসমর্থিত সরকার। বাধ্য হয়ে গ্রেফতারকৃত ছাত্র-শিক্ষকদের মুক্তি দেয়া হয়।

পরের বছর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার ২৩ আগস্টকে কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।

ছবিটি সকল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে হুমকি, যারা মাত্র ২৭৯ একরের গণ্ডির প্রমত্ত শক্তি উপলব্ধি করতে পারে না কিংবা পূর্বে পারেনি।

এই নিপীড়ন বিরোধী আন্দোলন থেকেই অগণতান্ত্রিক, জনসমর্থনহীন ও অসাংবিধানিক (সংবিধানুযায়ী ৯০ দিন) সরকারের ভীত নড়ে যায় এবং এভাবে তৎকালীন প্রগতিশীল, উৎসাহী, গণতান্ত্রিক চেতনাধারী ঢাবি শিক্ষার্থীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পতনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।