শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না: ঢাবি ভিসি

ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামান

শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান না করে পরীক্ষা নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করে আলোচনাসাপেক্ষে পরীক্ষা গ্রহণ করবে।

এতে কোনো জবরদস্তির সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীদের কল্যাণই প্রথম কাজ। শিক্ষার্থীদের কোনোভাবেই ঝুঁকিতে ফেলা যাবে না।

কয়েকটি বিভাগ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপ না করেই পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করেছে জানালে ঢাবি উপাচার্য বলেন, আপনি বিভ্রান্ত হচ্ছেন কিংবা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।

বিভাগগুলো ডিসেন্ট্রালাইজড। পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাই ভালো বুঝবেন। তারা নিজেদের মতো করে সিদ্ধান্ত নেবেন।

আবাসিক শিক্ষার্থীদের থাকার ব্যবস্থা বিবেচনায় না রেখে হল না খুলেই অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলে পরীক্ষা গ্রহণ করার সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আগেই বলেছি— যদি সম্ভব হয়, তবে পরীক্ষা গ্রহণ করবে। না হলে করবে না।’

ছাত্রসংগঠনগুলো কী বলছে

হল না খুলেই পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার তিন দিন পর গত ১৩ ডিসেম্বর স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।

ঢাবির হল খুলে পরীক্ষার নেওয়ার আহ্বান ছাত্রলীগের

হলে থাকার ব্যবস্থা নিশ্চিত না করে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া একপাক্ষিক, শিক্ষার্থীদের স্বার্থের বিপ্রতীপ, বিদ্যমান বাস্তবতায় অনুপযুক্ত সমাধান এবং কোনো অবস্থাতেই অভিভাবকসুলভ নয় বলে স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

হল বন্ধ রেখে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন: ছাত্র ফ্রন্ট

স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের প্রস্তুতির কথা বিবেচনা করে পরীক্ষা নেওয়ার তারিখ আরও একমাস পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশন।

গত ১৭ ডিসেম্বর উপাচার্য বরাবর মোট ৯টি প্রস্তাবসহ স্মারকলিপি দিয়েছে সংগঠনটি।

ছাত্র ফেডারেশনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আবু রায়হান খান বলেন, ‘আমরা উপাচার্য স্যারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি।

কিন্তু এরপরও দেখলাম, এই অবস্থাতেও কয়েকটি বিভাগ পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এমনকি তারিখও ঘোষণা করেছে। প্রশাসন মূলত দায়সারা একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের স্বার্থের কথা ন্যূনতম চিন্তা করেনি।’

এর আগে ১০ ডিসেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলে নেওয়া সিদ্ধান্তের ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে গুগল ফর্মের মাধ্যমে একটি অনলাইন জরিপের আয়োজন করে ছাত্র ফেডারেশন।

‘পরীক্ষা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মতামত’ শিরোনামের জরিপটি ১১ ডিসেম্বর থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চালানো হয়। এতে এক হাজার ৩৬ জন শিক্ষার্থী তাদের মতামত প্রকাশ করে।

‘আপনি কি হল না খুলে অনার্স শেষ বর্ষ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাপারে একমত?’— এই প্রশ্নের উত্তরে ৯৩০ (৮৯.৭%) জন না ভোট ও ১০৬ (১০.২%) জন হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন।

‘আপনি কি অনলাইনে ছাত্রদের মিড/ইনকোর্স/টিউটোরিয়াল নেয়ার ব্যাপারে একমত?’— এ প্রশ্নের উত্তরে ২৯২ (২৮.২%) জন ছাত্র হ্যাঁ ভোট ও ৭৪৫ (৭১.৮%) জন না ভোট দিয়েছেন।

‘আপনি কি চান প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় খোলার উদ্যোগ নিক?’— এ প্রশ্নের উত্তরে হ্যাঁ ভোট দিয়েছেন ৬৮২ (৬৫.৮%) জন, না ভোট দিয়েছেন ৩৫৪ (৩৪.২%) জন।

শিক্ষার্থীদের লিখিত মতামত বক্সে ৬৬৭ জন তাদের নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এদিকে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল খুলে দিয়ে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। এই দাবিতে বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) সংগঠনটির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম রাকিব ও সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমানের সই করা একটি স্মারকলিপি উপাচার্য বরাবর জমা দেওয়া হয়েছে।