GST গুচ্ছঃ আর্কিটেকচার ভর্তি পরীক্ষার পরামর্শ

শাবিপ্রবি

এডমিশন প্রিপারেশনের একদম শুরু থেকেই আর্কিটেকচার নিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিল আমার, কিন্তু খুব বেশি কাউকেই এই বিষয়ে তেমন কোনো কথা বলতে দেখতাম না। তাই আমার অভিজ্ঞতা থেকে জুনিয়রদের জন্য কিছু গাইডলাইন দেওয়ার চেষ্টা করছি।

★BUET এ engg exam এর পরপরই archi exam হয়। CKRuet এ CUET KUET RUET মিলে একটাই archi exam হয় এবং সেটিও মেইন পরীক্ষার পর পরই অনুষ্ঠিত হয়। GST এ সব ভার্সিটি মিলে একটা পরীক্ষা হলেও যে যে ভার্সিটিতে Architecture department আছে সেগুলো তে আলাদা আলাদা archi exam হয়।

এগুলো হলোঃ SUST, KU, PUST, BSMRSTU, HSTU। সবগুলোতেই মেইন পরীক্ষা এবং আর্কিটেকচার পরীক্ষার নম্বর যোগ করে আলাদা একটি মেধাতালিকা বানানো হয়।

তাই একটা পরীক্ষা সামান্য খারাপ হলেও অন্য পরীক্ষাটা একটু বেশি ভালো দিলেও চান্স পাওয়ার একটা সম্ভাবনা থাকে।

যেহেতু আর্কির মেধা তালিকা আলাদা দেওয়া হয় তাই আর্কি পরীক্ষা যতই খারাপ হোক সেটা অন্যান্য সাবজেক্টে চান্স পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

আর এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে মেইন পরীক্ষা খুব বেশি খারাপ দিয়ে আর্কি পরীক্ষায় অনেক ভালো করলেই চান্স হয়ে যাবে।

মেধা তালিকা কিন্তু দুটো পরীক্ষার নাম্বার মিলিয়ে করা হয়। সুতরাং মেইন সাবজেক্ট গুলো পড়া বাদ দিয়ে সারাদিন শুধু আর্কি প্রিপারেশন নিলে কিছুই হবে না।

★আর্কি পরীক্ষার প্রিপারেশনের জন্য বাজারে কিছু বই পাওয়া যায়। আমার পরিচিত কেউ ছিলো না যিনি আর্কিটেকচারে পড়াশোনা করেছেন, আমি জয়কলি প্রকাশনীর একটা বই পড়ে বাসায় নিজে নিজে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।

এছাড়াও বুয়েটের আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের ভাইয়া আপুরাও একটা বই পাবলিশ করে। ইউটিউবে 10 ms এর কিছু ভিডিও ছিল আর্কি পরীক্ষা নিয়ে। ঐগুলোও দেখতাম।

★আর্কিটেকচারে চান্স পাওয়ার জন্য অনেক ভালো আর্টিস্ট হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু কিছু সিস্টেম ফলো করতে হয় আঁকার সময়।

অবসর সময়, যে সময়টাতে পড়তে আর ভালো লাগবেনা এই সময় গুলোতে বেশি বেশি চর্চা করা যেতে পারে।

★ পরীক্ষায় কী কী আসবে সেটা সাধারণত নির্দিষ্ট করা থাকে না। কিন্তু কম্পোজিশন, পোস্টার, পার্সপেক্টিভ ড্রয়িং, হিউম্যান ফিগার এগুলোই আসে মোটামুটি সব জায়গায়। SUST এ সাধারণ জ্ঞান ও আসে কিছু, এ ব্যাপারে পরে বলছি।

পরীক্ষায় টাইম ম্যানেজমেন্ট অনেক ইম্পর্ট্যান্ট। যেভাবেই হোক সব গুলো ড্রইং টাচ করতে হবে। কম্পোজিশনে অপেক্ষাকৃত কম সময় নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে, বাকিগুলোতে বেশি সময় পাওয়া যাবে তাহলে।

কম্পোজিশনে ফোকাসিং, রুলস অব থার্ড, ইন্টারলকিং, ওভারলেপিং, অর্ডার, ব্যালেন্স এগুলোর ব্যাপারে ধারণা রাখলে ভালো। সর্বোপরি চোখের দেখার সৌন্দর্যটা বাড়াতে হবে, প্রকৃতির খুব ছোটো খাটো অংশেও খুব সুন্দর কম্পোজিশন লুকিয়ে থাকে।

পার্সপেক্টিভ আর হিউম্যান ফিগারে সবচাইতে ইম্পরট্যান্ট হলো proportion ঠিক রাখা। পোস্টারের ক্ষেত্রে মূল বিষয়টুকু দৃষ্টিনন্দন ভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। সবগুলো ড্রইং ই পরিষ্কার রাখতে হবে। বিভিন্ন ধরণের পেন্সিল ব্যবহার করা যেতে পারে।

SUST এর জিকে নিয়ে আমার মতে এতো প্যারা খাওয়ার দরকার নাই। মূলত এইটার কোনো সিলেবাস নাই, যেকোন টপিক থেকে আসতে পারে।

তাই যে জিনিসটা তোমার জন্য আনকমন সেটা বেশিরভাগ পরিক্ষার্থীর জন্য আনকমন ই হওয়া স্বাভাবিক ।

কিন্তু যে জিনিসগুলো সবার জন্য কমন ঐগুলো ভুললে চলবে না। যেমন আমাদের সময় একটা প্রশ্ন ছিল- “টেরাকোটা কী” এই প্রশ্নের উত্তর সবারই জানা।

জিকের জন্য সাম্প্রতিক বিষয়সমূহ সম্পর্কে, পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ কিছু স্থাপত্য, স্থাপত্য বিষয়ক পুরষ্কার, বাংলাদেশের বিশেষ কিছু স্থপতি সম্পর্কে ধারণা নিতে পারো।

আমি যে বইটা দিয়ে প্রিপারেশন নিয়েছিলাম, ঐখানে কিছু প্রশ্নত্তোর ছিল, আমি সেগুলো থেকে, আর গুগল থেকে এসব সম্পর্কে পড়াশোনা করতাম।

★সবগুলো ড্রইং ই কিন্তু free hand এ করতে হবে। মানে মুক্তহস্ত অংকন। কোনো ধরনের সে্কল, কম্পাস, চাঁদা এসব ব্যবহার করা যাবে না। বিভিন্ন ধরণের পেন্সিল নিতে পারবে।

অনেকেই জিজ্ঞেস করে বোর্ড, চারকোল বা মেকানিকাল পেন্সিল নেওয়া যাবে কিনা। এ ব্যাপারে আলাদা কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই যথাসম্ভব, কিন্তু আমার মতে এসব নেওয়ার দরকার নাই।

কলম, পেন্সিল, শার্পনার আর রাবার নিয়ে গেলেই যথেষ্ঠ।

★আমার নিজের একটা দুর্বলতা ছিল যে আমি হিউম্যান ফিগার ভালোমতো আঁকতে পারি না। একারণে আমি চেষ্টা করতাম পরীক্ষার হলে এটা বাদে বাকিগুলোতে বেশি ইফোর্ট দিতে।

কারণ আমি জানতাম হিউম্যান ফিগারে আমি যত সময়ই ব্যায় করি না কেন, খুব বেশি ভালো করতে পারবো না।

যাতে হিউম্যান ফিগারে একটু কম নম্বর পেলেও বাকিগুলোতে একটু বেশি পেয়ে সেটাকে ওভারকাম করতে পারি তাই এ কাজটা করতাম।

সুতরাং নিজের উইক পয়েন্ট আর স্ট্রং পয়েন্ট খুঁজে বের করতে হবে।

সবশেষে সবার জন্য শুভকামনা। এডমিশন টাইমে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। যত যা ই হোক মানসিক ভাবে শক্ত থাকতে হবে, কোনোভাবে হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখতে হবে।

আশা করি এই লিখাগুলো একটু হলেও কারো উপকারে আসবে

তাসফিয়া তাবাসসুম সুবাহ
স্থাপত্য ‘২০-২১ সেশন
শা বি প্র বি