ছাত্রলীগের শীর্ষ সন্ত্রাসী দ্বীপের হত্যা তার কর্মফল

২রা জুলাই ছাত্রলীগ তাদের বুয়েট শাখার সাবেক সন্ত্রাসী দীপ হত্যাদিবসকে উল্লেখ করছে শহীদের স্মরণ হিসেবে। অথচ এই দীপের ইতিহাস আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেয় বুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ সবসময় সন্ত্রাসের রাজত্ব করেছে।

আরিফ রায়হান দীপ, বুয়েট মেকানিকাল ০৯, রোল ০৯১০১১৫

দীপের সাথে পরিচয় ২০১০ সালে, যখন আমি ওমেকাতে ক্লাস নেয়ার ট্রেনিং করছি। দীপও আমাদের সাথে সেই ট্রেনিং করতো। ফার্স্ট ইম্প্রেশনে ও ছিলো প্রচন্ড কনফিডেন্ট এবং চটপটে সভাবের। সেই ট্রেনিং সেশনগুলোর শেষে দীপ আর মেকানিকালের ফরহাদ ছিলো আমার সিগারেট বাডি এবং সেই খাতিরে জানলাম ও মেকাতে আমার সেকশনেই আছে, রোল নাম্বারে ফারাক কেবল বিশ। প্রচুর জোক ক্রাক করতে পারতো বলে ওর সাথে আড্ডা ভালোই জমতো।

যখন আমাদের ক্লাশ শুরু হলো, দেখা গেলো ওর আর আমার হলও এক, নজ্রুল ইসলাম হল। শুরুতে দীপ হলে সীট পেলেও আমি পাইনি। বাট, ক্লাসের শেষে প্রায়ই ওর রুমে যেতাম, আড্ডা দিতাম, ফুটবল খেলতাম, বিড়ি ফুকতাম। তখন পর্যন্ত সে খুবই লাইকেবল একজন ক্যারেক্টার ছিলো। পরিবর্তন শুরু হলো যখন ১-১ এর মাঝপথে সে ০৮ ব্যাচের মিঠুন আর আরেকটু সিনিয়র লিমন, এই দুই ছাত্রলীগের কুলাঙ্গার এর সাথে উঠাবসা শুরু করলো।

হঠাত দীপ মনে করতে লাগলো সে আর দশটা বুয়েটিয়ানের চেয়ে একটু বেশী কিছু। এই একটু বেশী কিছুর একটা নমুনা দেই। ১-১ এর শেষের দিকে একদিন মন খারাপ করে ওর রুমে গিয়ে বসে আছি। বললাম যে দুইবার হল প্রভস্টের সাথে ইন্টারভিউ দিয়েও হলে সীট পেলাম না। ও আমাকে বললো- বোকা ছেলে হলের সীট লাগলে হল প্রভোস্টের কাছে না গিয়ে যেনো দীপকে বলি, দীপ এই হলে প্রভোস্টের চেয়েও বেশী ক্ষমতাধর। কারন হল প্রভোস্ট নাকি রুম দেয়ার আগে অর ভাই ব্রাদারের সাথে কথা বলে নেয়।

উল্লেখ্য তখনকার হল প্রভোস্ট ছিলো আইপিইর জগতবিখ্যাত (পড়ুন কুখ্যাত) নিখিল রঞ্জন ধর। যাই হোক, ওর কথায় কান না দিয়ে অনেক মিথ্যা ভুজুং ভাজুং বলে পরে হলে সীট পেয়েছিলাম গণরুমে। পরে দীপই বলেছিলো আমি যেনো ওর রুমে গিয়ে থাকি, ওর আরেক রুম্মেট ছিলো ইলেক্ট্রিকাল ০৯ এর বাশার।

সেই খাতিরে ওর সাথে কিছুদিন রুম শেয়ার করা। অল্প কয়দিনেই বুঝে গিয়েছিলাম ওর সাথে থাকা যাবে না। প্রথম কারন ও প্রচন্ড নোংড়া। দ্বিতীয়ত, ওর কথা বার্তা দিনকেদিন উগ্রতর হচ্ছিলো। তৃতীয়ত, ও মোটামুটি ঠেলে ধাক্কায় আমাকে ০৮ এর মিঠুন এর রুমে নিয়ে যেতো, যেটা ছিলো আমার খুবই অপছন্দের। অতএব, আমি আবার গণ্রুমে ফেরত।

এই পর্যন্ত তাও চালানো যেতো। অবস্থা গুরুতর হওয়া শুরু করলো যখন তার পলিটিকাল ভাইরা যখন দীপকে বুঝায় ছারলো যে উপর মহলের নজরে আসতে হলে ক্যাম্পাসে তার নাম ডাক ফলাতে হবে। আর এই নাম ডাক আর ভয় চাউর করার অন্যতম হাতিয়ার হলো ঝামেলা বাধিয়ে কয়েকটা পলিটিকাল মারামারি করা।

এরই ফলাফল ০৬ এর র‍্যাগ কন্সার্টের সময় সিনিয়র এক ভাইকে পিটিয়ে হাত ভেঙ্গে দেয়া। এই ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাস একসাথে আন্দোলনে নামে, যার ফলে ০৮ এর দুইজন (মিঠুন, আরেকজনের নাম মনে নাই) বহিস্কৃত হয়। সেই বার দীপের কিছু হয় নাই (খুব সম্ভবত বাকি দুই জনই বেশী পিটিয়েছিলো)।

এই ঘটনাক্রমের ফলে বেশ কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ ডেভলপমেন্ট হলো। দীপকে তার পলিটিকাল সিনিয়ররা বুঝালো যে, সে পলিটিকাল নজরে আছে এবং সে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এদিকে আমাদের ব্যাচের ছেলেপেলেরা ওর সাথে আর তেমন একটা চলাফেরা করতোনা। এতে করে দীপের মাথায় এটা বসে গেলো যে সবাই এখন তাকে ভয় পায়। নেক্সট স্টেপে সে শুভ্র জ্যোতি, ফরহাদ, শুভম, আর আরো আট-দশজন নিয়ে একটা নজ্রুল এবং আহসানুল্লাহ হল কেন্দ্রিক একটা গ্রুপ বানালো যার নেতা সে এবং ব্রেইন শুভ্র আর টার্গেট সেটার সিনিয়র ব্যাচের ছাত্রলীগ।

এর রেসাল্ট হিসাবে দীপ ক্যাম্পাসের সবার চেনা হিট্ম্যান। ঊপর থেকে কারো দিকে আঙ্গুল দিয়ে ঈশারা করলেই তার উপর হামলা করা দীপের দায়িত্ব। তখন দীপের ক্যাম্পাসে খাওয়ার বিল লাগে না, ড্যনিং থেকে তার রুমে খাবার যায়, ক্যাম্পাসে তার বীর দর্পে চলাচল। বলাবাহুল্য, তার সাংগ পাংগরা কিছু পড়াশুনা করলেও দীপের তখন আর ক্লাস বা পড়াশুনার আর কোন বালাই নাই, ফলাফল ল্যাগার।

এদিকে আরো শুরু হলো দীপের নাড়ী কেলেঙ্কারি। খুব সম্ভবত ১-২ এর একদম শেষ দিকের কথা, হঠাত ক্যাম্পাসে কোন এক গ্রামের মেয়ে দীপের সাথে দেখা করতে হাজির এবং দুই দিনের মাথায় বিয়ে। পরে শুনেছি সেই মেয়ে গেস্ট রুমে এসে বসে থাকতো আর দীপ হলের মামা দিয়ে তাকে তাড়িয়ে দিতো।

এদিকে ক্যাম্পাসের একাধিক মেয়েদের সে ইনবক্সে ট্রমাটাইজ করে রাখতো। এর মাঝে একদিন ক্যাম্পাসে তার আপন বড় ভাই এসেছে তার খোজ নেয়ার জন্য। দৈবক্রমে উনি আমাকেই এসে জিগ্যেস করেছিলো আমি দীপকে চিনি কিনা , দীপ পড়াশুনা করে কিনা? এখন উনার কাছে দীপের বদনাম করা সমীচীন মনে করিনি তাই উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু, উনার কাছ থেকে এটা জানতে পেরেছিলাম যে দীপ তার পরিবারের সাথে কোনরকম যোগাযোগ রাখেনি।

২০১২/১৩ তে যখন জামাত শিবির ইলিগ্যাল করা হলো, তখন দীপ মনে হয় আকাশের চাঁদ হাতে পেলো। সে তার দল নিয়ে তখন স্লোগান দিতো “একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা খাসি কর”। সে তখন ক্যাম্পাসের ত্রাস। সে তখন যে কাউকে শুধু একবার শিবির বলেই তার হাড্ডি মাংস এক করার ক্ষ্মতা রাখে। আর এই শিবিরের লিস্ট কিছু সে বানায় আর কিছু তার উপর মহল থেকে আদেশ আসে।

সো, তখন ক্যাম্পাসের কেউ আর তাকে কিচ্ছু বলার সাহস রাখে না। ৩-১ এর টার্ম শুরুর দিকে এই ধর পাকর চড়ম পর্যায়ে। প্রতি সপ্তাহেই সে কাউকে না কাউকে বেদম মাইর দিচ্ছে। যারা জাস্ট শুনেছে যে দীপ খুজতে এসেছিলো তারা হল আর কযাম্পাস ছাড়া।

দীপের নেতৃত্বে তখন সন্ধ্যার পর টর্চার সেল চলে। যারা হল ছেড়ে কেবল ক্লাসে আসে তাদের খুজতে সে একাডেমিক বিল্ডিঙের সামনে ওয়েট করে। এর উদাহরন আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিয়া। ৩-১ এর দ্বিতীয় সপ্তাহে আমরা যখন প্রোটোটাইপিং প্রোজেক্টে বিশাল কিছু করার স্বপ্ন দেখতে দেখতে ইএমই থেকে ক্লাস শেষে নামছি, তখন আমাদের সামনে থেকে দীপ আর তার দল কোন বলা কওয়া ছাড়া জিয়াকে বেধরক মারতে মারতে আরকির চিপায় নিয়ে যায়।

আমি রক্তাক্ত জিয়াকে বাচাতে তখন দীপকে ডেকে বললাম “তুইও বন্ধু, জিয়াও বন্ধু, ওর চোথা পড়ে পরীক্ষা দিছিস। আর মারিস না। অভিযোগ থাকলে পুলিশে দে। তাও মারিস না। মড়ে যাবে।“ এই কথা শোনার সাথে সাথে দীপ আমাকে মা**চোদ বলে আমার গালে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দেয়।

আমার নিজের মাথা গড়ম বিধায় আমি ওর কলার ধরে সেদিন কিছু একটা বলেছিলাম যাতে সে আমাকে আর মারার সাহস পায় নাই এবং সেদিন সন্ধ্যায় ইনবক্সে আমার কাছে ক্ষমা চায়!!! কি বলেছিলাম তা আমি শেয়ার করতে চাই না।

বাট, তখন শুভ্র এসে ইন্টারফেয়ার করে আমাকে আশ্বস্ত করে যে জিয়াকে আর মারা হবে না। এবং সাইফকে বলে আমাকে যেনো এখান থেকে নিয়ে যায়, এবং সাইফকেও বলে যে আর মার ধর হবে না। তখন মুনা এবং আরো কয়েকজন আমাদের টিচারদের ফোন করে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসে নাই। এরপর জিয়কে পুলিশে দেয়া হয়। জিয়া সেদিনই পুলিশের কাছ থেকে ছাড়া পেলেও, তার একটা সেমিস্টার ড্রপ যায়। এই জিয়া আজকে কার্নেগি মেলন এর থেকে পিএইচডি হোল্ডার এবং তার নামের পাশে এচিভমেন্টের লিস্ট অনেক লম্বা।

যাই হোক, দীপের এই কার্যকলাপ চলতেই থাকে বরঞ্চ আরো বেপড়োয়া হয়। তার এই বেধরক মারের লিস্টে শিবির কতটুকু ছিলো তা জানিনা, তবে এটা জানি যে ভিসি বিরোধী আন্দোলনের পরিচিত মুখগুলো ছিলো। সেই ভিসি বিরোধী আন্দোলন যে আন্দলনে প্রধান্মন্ত্রী বলেছিলেন যে তিনি বুয়েটের শিক্ষার্থীদের দাবিতে বিব্রত।

তার এই বেধরক মারের লিস্টে খুব সম্ভবত আহসানুল্লাহ হলের ইমামও ছিলো। সত্য মিথ্যা জানিনা, বাট শুনেছি দীপের খুনি মেজবাহ সেই ইমামের ভালো বন্ধু ছিলো। আমার ধারনা, ইমামকে মারার প্রতিশোধেই দীপ খুন হয়। বাট এটা স্পেকুলেশন, কখনো খতিয়ে দেখার আগ্রহ বোধ করি নাই।

এখন যারা সনি আপু কিংবা আবরার ফাহাদের সাথে একই কাতারে দীপের হত্যাকে আনতে চান, তাদের কাছে প্রশ্ন করি-আদৌ কি এই তিনটা ট্রাজেডি এক?

দীপ হত্যার পরে পুরো ক্যাম্পাসে এমন কোন সেন্টিমেন্ট ছিলোনা যে খুব ভালো কিছু হয়েছে। আবার এটাও সত্য যে, দীপের চলে যাওয়ায় মেজরিটি হাফ ছেড়ে বেচেছে। এখন দীপ শহীদ হয়েছিলো কি না তার পক্ষে বিপক্ষে কথা চলছে। আমি বলবো সে শহীদ হয়ছে, বাট নট ফর এ গুড কস। সে হয়েছে বলির পাঠা।

রাজনৈতিক সূক্ষ্ম বুদ্ধি তার মাথায় কখোনোই ছিলো না। সে ভেবেছিলো পলিটিকাল সিনিয়রদের আসির্বাদে হিট্ম্যান থেকে সে বড় নেতা হবে!! তার সিনিয়ররা বেঁচে আছে, সে নেই। তাকে দাবার সৈন্য হিসাবেই ব্যবহার করা হয়েছিলো। সে শহীদ হয়ছে এটা দেখানোর জন্য যে, ক্যাম্পাসের এই নষ্ট পলিটিক্স কারোর জন্যই ভালো ফল আনছে না। যারা ক্যাম্পাসের এই নষ্ট পলিটিক্স ফেরানোর জন্য লাফাচ্ছেন তাদের বলবো, ইতিহাস ঘেটে দেখেন। তিনটা অপার সম্ভাবনার প্রাণ গেছে এই অভিশাপ দূর করতে। আবার এই ফ্রাঙ্কেন্সটাইনকে ফিরিয়ে আনলে এবার ফলাফল আরো ভয়ংকর হবে।

যে ছয়টা ছেলে পলিটিক্স ফেরানোর জন্য সংবাদ সম্মেলন করলো তাদের বলবো, ভয় পাও, ইতিহাস জানো, এই অক্টোপাস তোমাদের খেয়ে ছুড়ে ফেলবে। তোমাদের সামনে অনেক সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, মিথ্যা প্রলোভনে পরে এই ভবিষ্যৎ নিজের হাতে নষ্ট করোনা। পলিটিক্সে ক্যারিয়ার গড়তে চাইলে পড়াশুনা ঠিক রেখে ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে মূল ধারার রাজনীতি করো। ক্যাম্পাসের ভালো চাইলে পার্টি পলিটিক্স না করে ছাত্রদের সাথে ছাত্রদের নিয়ে কাজ করো। পলিটিকাল পার্টির ইন্টারেস্ট আর তোমাদের ইন্টারেস্ট এলাইন করে না।

প্রচুর পরিমানে বানান ভুলের জন্য দুঃখিত।

– বাপ্পি রহমান

2.
বুয়েটে আধিপত্যবাদী ক্যাডার রাজনীতির বিরোধীতার রেফারেন্স হিসেবে আমরা যখনই সনি আপু এবং আবরারের নাম ব্যবহার করি, নন-বুয়েটিয়ান এবং ছাত্রলীগ বুয়েটিয়ানরা সেই লিস্টে দীপ কেন মিসিং, পয়েন্ট তুলে পুরো আলাপটাকেই জঙ্গিবাদ-হিজবুত তাহরির দিকে নিয়ে যায়।
ব্যাপারটা নিয়ে ভাবছিলাম। সনি আপু নিহত হলেন প্রায় ২ যুগ আগে, তবু তিনি প্রাসঙ্গিক। তার বা আবরারের প্রতি বুয়েটিয়ানদের যে আবেগ কাজ করে, দীপের ক্ষেত্রে কেন নয়— এটা কি কেবলই তার রাজনৈতিক পরিচয়, নাকি কর্মফল—- কালেক্টিভ বিহেভিয়ার এবং রেসপন্স বোঝার ক্ষেত্রে এটা একটা ক্লাসিকাল কেইস হতে পারে।
২০০৬ ব্যাচের র্যাগ প্রোগ্রামে সেই ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে (নাম সম্ভবত ইশান) হলের ভেতরে ঢুকে বেদম পেটায় জুনিয়র ব্যাচের কয়েকজন। ছেলেটির হাত ভেঙ্গে যায়, ক্রিটিকাল অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়৷ হামলাকারীরা প্রত্যেকেই ছাত্রলীগের স্বীকৃত কর্মী।
ফুঁঁসে উঠে বুয়েট শিক্ষার্থীরা । লাগাতার আন্দোলন শুরু করে। এলামনাইরাও তাদের সমর্থন জানায়। আন্দোলনের প্রাবল্যে বুয়েট কর্তৃপক্ষ কয়েকজনকে শাস্তি দেয়। ১২ বছর আগের ঘটনা। সবার নাম মনে নেই। দুজনের নাম ভুলিনি ০৮ ব্যাচের সুজিত, এবং ০৯ ব্যাচের দীপ। হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ এনে তারা সম্ভবত একাডেমিক লাইফ কন্টিনিউ করতে পেরেছিল। এ নিয়েও অসন্তোষ ছিল বুয়েটিয়ান কমিউনিটিতে।
মাত্র কিছুদিন আগে যার শাস্তির দাবিতে সমগ্র বুয়েট উত্তাল, এবং যাকে মন থেকে ঘৃণা করে, তাকে অন্য একজন ইনোসেন্টের সাথে মেলানোটা কঠিন আসলে।
মানুষের অনুভূতিও তীব্র পলিটিক্যাল। ধরা যাক আপনার মহল্লার একটা ছেলে যে কোনো সাতে-পাঁচে নেই, তাকে এক সন্ধ্যায় মিথ্যা অভিযোগে একদল সন্ত্রাসী খুন করলো। আপনি এই নারকীয় বীভৎসতা সহ্য করতে পারবেন না।
একই মহল্লায় একজন মাস্তান থাকে; যে চাঁদাবাজি করে, দোকানে বাকি খায়, কারণে অকারণে এলাকাবাসীকে হুমকি ধামকি দেয়, এলাকার এক বয়জেষ্ঠকে মেরে পঙ্গু করে দিয়েছে, কিন্তু তার ভয়ে কেউ কিছু বলে না৷ একদিন জানলেন সেলুনে চুল কাটারত অবস্থায় প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যা করেছে। আপনি যদি তার সরাসরি রক্তসম্পর্কীয় কেউ না হন, তবু খারাপ লাগবে। এমন নৃশংস মৃত্যু কখনোই কাম্য নয়।
মহল্লার নিরীহ ছেলেটির মৃত্যুতে আপনার চোখে জল এসেছিল, আপনি ঘুমুতে পারেননি; সেলুনে খুন হওয়া ব্যক্তির প্রতিও কি আপনার অনুভূতি একইভাবে কাজ করা সম্ভব!
এটা কোনো হাইপোথেটিকাল কেইস নয়। এরকম সিচুয়েশনে আমাদের প্রায়ই পড়তে হয়।
সেই ব্যক্তির অনুসারী এবং ঘনিষ্ঠজনেরা যদি এসে বলতে থাকে- এই একই মহল্লায় ওমুকে খুন হলো, তার জন্য কান্নাকাটি করলেন, অথচ সেলুনে আমাদের ভাইকে জল্লাদের মতো হত্যা করলো তার তো প্রতিবাদ করলেন না, তার মানে আপনি জঙ্গি এবং আমাদের দলের বিরোধী—- ব্যাপারটা কি আসলেই এভাবে কাজ করে?
আমার লেখাপত্র যারা পড়েন, তারা নিশ্চিতভাবেই জানেন অর্গানাইজড ধর্ম এবং পার্টি পলিটিক্স– এ দুই টপিকে আমি সচেতনভাবে নীরবতা পালন করি৷ কারণ দুটোর সঙ্গেই গণমানুষের আবেগ জড়িত, এবং গণমানুষ শেষ পর্যন্ত সুবিধাবাদী। আপনি তার অধিকার আদায়ের জন্য নিজেকে ঝুঁকিতে ফেলছেন, অথচ দেখবেন সামান্য প্রলোভনেই সে বা তারা ডিগবাজি দেয় জায়েদ খানের চাইতেও নিপুণ দক্ষতায়।
আমি একজন ইন্ডিভিজুয়াল, এবং মতাদর্শগতভাবে এনার্কিস্ট। সনী আপুর ঘটনার সময় স্কুলে পড়তাম, পত্রিকায় তার সংবাদ পড়ে বিমর্ষ হয়েছিলাম। আবরারের ঘটনা যতদিনে তার ৭ বছর আগে ক্যাম্পাস ছেড়েছি, কিন্তু ৬ বছর শেরে বাংলা হলে ছিলাম। মার্ডার স্পটটা একদম দগদগে। যেজন্য আবরার আমাকে এখনো যাতনা দেয়। ০৬ এর ইশানের ঘটনার সময় ক্যাম্পাসে ছিলাম।
ফলে আন্দোলনটা একদম সচক্ষে দেখেছি। যে কারণে দীপের মর্মান্তিক পরিণতির জন্য মায়া হয়, তার পরিবারের লোকদের কথা চিন্তা করলে বিমূঢ় হয়ে পড়ি, কিন্তু বুয়েটে পার্টি পলিটিক্সের ভিক্টিম হিসেবে সনী আপু বা আবরার যেমন স্বত:স্ফূর্তভাবে সর্বাবস্থায় চলে আসে, দীপের নাম আমাকে স্মৃতি থেকে স্মরণ করতে হয়, এবং মৃতের প্রতি অভিযোগ রাখতে নেই বিধান দিয়ে তার প্রতি পূর্ণ সহমর্মী হই। এতে সময় লাগে ৫ সেকেন্ড!
আবরার আর সনি আপুর চাইতে দীপ ওই ৫ সেকেন্ডই পিছিয়ে।
– মাহফুজ সিদ্দিক হিমালয়
3.
বুয়েটে ভর্তি হওয়া একজন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীর মৃত্যুবার্ষিকী ছিল আজ।

বুয়েটের মেকানিকাল ‘০৯ ব্যাচে ভর্তি হওয়া ০৯১০১১৫ নাম্বার রোলধারী ছাত্র,আরিফ রাগহান দ্বীপ হচ্ছে সে।

ভর্তির পর একটা সেশনাল কোর্স (০.৭৫) ছাড়া আর কোনো কোর্স পাশ করতে শোনা যায়নি তাকে।

২০১২ সালের বছরের প্রথম দিনে বুয়েট অথরিটি থাকে বুয়েট থেকে বহিষ্কার করেছিল। নিউজ লিংক –

https://bangla.bdnews24.com/amp/story/campus%2Farticle519807.bdnews

এরপরেও সে ক্যাম্পাসে থাকত। নজরুল হলের আস্ত একটা রুম দখল করে থাকত সে। ড্রাগের আসর বসাত সেখানে। টাকার বিনিময়ে প্রক্সি পরীক্ষা দেওয়ার একটা সিন্ডিকেট ও চালাত। এমনকি, প্রশ্ন ফাসের সাথে জড়িত ছিল কিনা জানিনা ( সেই সময় প্রশ্ন ফাস সম্পর্কিত কিছু শুনি নাই)

এইরকম এক বান্দাকে খুন করেছে বুয়েটেরই আরেক বান্দা -হেফাজতে ইসলামের জ ঙ্গি । নাম ছিল মেজবাহ। খুনের পর ধরাও পড়েছে। আওয়ামীলীগের আমলে ছাত্রলীগের এক ছেলে খুন হয়েছে, বিচার নিয়ে তো কারো কোনো সংশয় নাই।

কিন্তু এরই মধ্যে অনলাইনে দ্বীপকে ‘মেধাবী’ ‘বীর’ ‘ক্ষণজন্মা’ ইত্যাদি বহু টাইটেল দিয়ে তাকে নিয়ে জ্বালাময়ী স্ট্যাটাস দিতে দেখছি কাউকে কাউকে।

সাদাত হোসেন মান্টোর গল্পটা মনে পড়ছে। চোরটা যেমন মরার পর দরবেশ বাবার মর্যাদা পেয়ে গেল, দ্বীপ ও মনে হচ্ছে সেই পথে যাচ্ছে।
– জহিরুল ইসলাম

You cannot copy content of this page