ভাষ্কর্য বিতর্ক ও হেফাজতে ইসলামের রাজনীতি

জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার ও হেফাজত মুখোমুখি ভাষ্কর্য নিয়ে। এর শেষ পরিণতি কি হতে পারে সে বিষয়ে আমার নিজস্ব ধারণা‌ আছে। তবে আমি তা ব্যাক্ত করতে চাই না।

একজন মসজিদের ইমাম তাঁর জুমার খুতবাতে সমাজের মধ্যে অনেক ইসলাম বিরোধী বিষয়ের অবতারণা করেন।

যেমন সূদী কারবার, ঘুষ, দুর্নীতি, অপরাজনীতি, খুন , ধর্ষণ, পর্দা না মানা। এই সব তিনি বলেন মুসল্লিদের মাঝে ইসলাম বিরোধী কাজের ব্যাপারে সচেতনতা জাগ্ৰত করার জন্য।

একজন ওয়ায়েজিন বা ইসলামী বক্তা তিনি ইসলামী জলসায় বক্তব্য দেয়ার সময় মসজিদের ইমামের মতো সমাজের মধ্যে বিরাজমান ইসলাম বিরোধী বিষয়গুলো সবার সামনে তুলে ধরে তার শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা বলেন।

মানুষ তাদের কথা শুনে নিজেকে সংশোধনের চেষ্টা করে। মসজিদের ইমাম বলেন আর ইসলামী বক্তা বলেন এদের শতভাগ আসেন কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফারেগ হয়ে।

মসজিদের ইমাম এবং ইসলামী বক্তারা তাদের বক্তব্য মোটিভেশন বা প্রেশনার অংশ হিসেবে তুলে ধরেন। তারা বক্তব্য দেয়ার সময় কাউকে চ্যালেঞ্জ করে কথা বলেননা।

মাওলানা আহদ শফী জানুয়ারি ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেন।

wiki/Hefazat-e-Islam_Bangladesh

হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর হতে তাদের কার্যক্রম দেশের সচেতন মহল অবগত। মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতের মহাসমাবেশ এবং এর পরবর্তী ঘটনা নিয়ে ধোঁয়াশা আছে।

এর পরেও মাওলানা আহমদ শফীর নেতৃত্বে শেখ হাসিনা সরকার কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদীসকে এম এ ডিগ্ৰীর সমপরিমাণ ঘোষণা করেন।

রমনা রেসকোর্সে কওমিরা শোকরানা সমাবেশ করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কওমি জননী অভিধায় অভিষিক্ত করেন কওমি আলেমরা।

ইতিমধ্যেই মাওলানা আহমদ শফী হাটহাজারী মাদ্রাসায় একটি দুঃখজনক ছাত্র বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে তাঁর সব পদ থেকে অপসারিত হয়ে ইন্তেকাল করেছেন।

মতিঝিল শাপলা চত্বরের ঘটনায় হেফাজতের বর্তমান আমীর পুলিশ নিগৃহের শিকার হন। বর্তমান হেফাজতের ১৫১ সদস্যের কমিটিতে ইসলামী রাজনীতিক খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক যুগ্মমহাসচিবের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।

মাওলানা মামুনুল হক একজন রাজনীতিবিদ। তার নিজস্ব রাজনৈতিক দল আছে। এই রকম একজন ব্যক্তিকে অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলামের যুগ্মমহাসচিব নির্বাচিত করার পরে হেফাজতে ইসলাম কতখানি অরাজনৈতিক সংগঠন থাকে সেবিষয়ে আপনারই বিচার করবেন।

ইতিমধ্যে চরমোনাই এর পীর সাহেব তার দল ইসলামী আন্দোলন হেফাজতে ইসলামের সঙ্গে মিলে ভাষ্কর্য বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। কওমি আলেমরা পীর এবং মাজার বিরোধী।

যতদুর জানি মাওলানা আহমদ শফী নিজে ভারতের মাওলানা হোসাইন আহমদ মাদানীর একজন খলিফা ছিলেন। তিনি তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে পর্যন্ত মানুষকে বায়াত করেছেন।

একটা বিষয় সবার দৃষ্টিতে আনতে চাই। তাহলো চরমোনাই এর পীরের মুরিদের সংখ্যা যা তারা যদি সবাই পীর সাহেবের দলকে ভোট দিতো তাহলে চরমোনাইয়ের পীর সাহেব বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন। কিন্তু তাতো ঘটেনি।

পীর মুরিদের সম্পর্ক আর রাজনীতির সম্পর্ক এক নয় তাঁর মুরীদের কাছে এটা তাই প্রমাণ করে। চরমোনাইয়ের পীরের মুরিদরা পীরকে মুরিদ হিসাবে টাকা পয়সা নজরানা দেয়া, ওরশে গরু ছাগল সব দেয় কিন্তু নির্বাচনে ভোট দেয়না।

কেন ভোট দেয়না এর কারণ বাংলাদেশের মানুষ মনেকরে পীর সাহেবরা তাদের ধর্মীয় রাহবার হিসাবে থাকবেন। পবিত্র থাকবেন। রাজনীতির মতো বারোমিশেলি সত্য মিথ্যার মিশ্রনে তারা থাকবেন না।

বাংলাদেশের পীর এবং আলেমদের অবস্থা বাংলাদেশের জনগনের কাছে ইংল্যান্ডের রাজা রাণীর মতো। ইংল্যান্ডের রাজা বা রাণীকে রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে ইংল্যান্ডের লোকেদের ধারণা হলো “King can do no wrong”. অর্থ রাজা কোনো ভুল করতে পারেননা।

অর্থাৎ রাজা রাজনীতির উর্ধ্বে থাকলে কোনো ভুল করতে পারবেন না। ঠিক তেমনি বাংলাদেশের মানুষও মনে করে ধর্মীয় রাহবার পীর এবং আলেমদের রাজনীতির উর্ধ্বে রাখতে হবে।

এটা এদেশের মানুষের বিশুদ্ধ ধর্মীয় চিন্তা। এটার সাথে রাজনীতির কোনো সম্পর্ক নাই। এই জন্যই বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মকে রাজনীতি থেকে আলাদা রাখতে চায়। রাজনীতির বাইরে এদেশের সাধারণ মানুষের যে ধর্মী চিন্তা এতে মৌলবাদের কনো স্থান নাই।

তারা নিজেরাও ধর্ম চিন্তায় মৌলবাদী নয়। তবে ইসলাম ধর্মের ব্যাপারে তাদের নিজস্ব একটি ধর্মীয় সাংস্কৃতিক ধারণা আছে যা তারা শত প্ররোচনার মাঝেও সযত্নে লালন করে চলেছে এবং ভবিষ্যতেও চলবে।

এটা এদেশের আলেমরা গভীর ভাবে উপলব্ধি করেন বলে মনে হয়না। তার কারণ স্পষ্ট। এতো প্রচারণার পরেও পীরের মুরিদের সংখ্যা কমেনি। মাজারে উপস্থিতির হারও কমেনি বাংলাদেশে।

একই সাথে এটা জানার পরেও যে কওমি আলেমরা পীর মাজার বিরোধী তার পরেও এই পীরের মুরিদের এবং মাজারে মানতকারীদের দানেই কিন্তু দেশে ১৯ হাজারের মতো কওমি মাদ্রাসা চালু রয়েছে।

লেখার কলেবর বৃদ্ধি না করে যা বলতে চাই তাহলো মিতিঝিলের শাপলা চত্তরের দুঃখজনক ঘটনার পরে হেফাজতে ইসলামের বর্তমান আমীর নিগৃহীত হন। ঐ ঘটনায় আহত নিহতদের নিয়ে তাঁর মনে ক্ষত রয়েছে।

তাঁর এই ব্যাক্তিগত ক্ষোভকে উষ্কে দিয়ে তার আগুনে মিষ্টি আলু পোড়া দিয়ে খেতে গিয়ে হেফাজতের রাজনৈতিক নেতারা যাতে হেফাজতের মতো অরাজনৈতিক সংগঠনকে নিজেদের দলীয় রাজনীতির ঘুটিতে পরিণত করতে না পারে সে বিষয়ে হেফাজতের সম্মানিত আমীর মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সজাগ থাকবেন বলে আমরা মনে করি।

 

ভাষ্কর্য নিয়ে বিতর্কের মূল বিষয় দাঁড়িয়েছে ভাষ্কর্য নির্মাণ নিষিদ্ধ নয় তবে তা যেন কোনো জীবন্ত মানুষ কিংবা পশুপাখির না হয়।

জীবন আছে এমন বস্তুর ভাষ্কর্য নির্মাণ করলে তা মূর্তি বলে বিবেচিত হবে। এবং এটা নির্মাণ করা হারাম। এটা করতে গিয়ে ভাষ্কর্য ও মূর্তিকে সমার্থক বিবেচনা করা হচ্ছে।

কোরআনে মূর্তি পূজার প্রমাণ আছে। কবে থেকে এই মূর্তি পূজার প্রচলন হয়েছে তার সঠিক সময় নির্ধারণ সম্ভব নয়।

হযরত মুসা আঃ এর সময় সামেরি স্বর্ণ ও রৌপ্য দিয়ে বাছুর তৈরি করে তার এবাদাত বা পূজার প্রচলন করেছিলো(২০:৮৮)।

হযরত মুসা আঃ এই গোবৎসকে আগুনে জ্বালিয়ে এর ভষ্ম সাগরে নিক্ষেপ/ ছড়িয়ে দেন (২০:৯৭)। এর পরে হযরত ইব্রাহীম আঃ তাঁর সম্প্রদায়ের পূজ্য মুর্তিসমুহ নিজ হাতে ধ্বংস করে বড় মুর্তির ঘাড়ে কুঠার রেখে দেন(২১:৫২..৬৩)।

এর পরে‌ মক্কা বিজয়ের অন্তে নবী মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বাবা ঘরে পূজিত মূর্তি ধ্বংস করেন(১৭:৮১ )।

ভাষ্কর্য নির্মাণের প্রমাণ পাওয়া যায় হযরত সোলায়মান আঃ এর সময়। তাঁর রাজত্বের সময় তিনি জ্বীনদের দিয়ে ভাষ্কর্য নির্মাণ করাতেন(৩৪:১৩)।

এই ভাষ্কর্য কিসের ছিলো তার কোনো বর্ণনা কোরআনে আছে বলে আমার জানা নাই। তবে আল্লাহর নবী হিসাবে তিনি এমন ভাষ্কর্য নির্মাণ করেননি যা আল্লাহ অপছন্দ করেন।

কেন হযরত সোলায়মান আঃ ভাষ্কর্য নির্মাণ করেছিলেন তার উদ্দেশ্য নিশ্চয় সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এটা বলা যেতে পারে। কারণ আল্লাহ সৌন্দর্য পছন্দ করেন(৭:৩১,৩২)।

মূর্তি প্রস্তুতকারীর কেয়ামতের দিনে যে আজাবের কথা হাদীসে এসেছে তা পূজার নিমিত্তে নির্মিত মূর্তি প্রস্তুতকারীর ক্ষেত্রে।

এই হাদীসকে যদি জেনারালাইজড করা হয় তবে আজকে ইউটিউবে, টেলিভিশনে যে জীবন্ত মূর্তি দেখি কিংবা ক্যামেরা ও মোবাইলে ছবি তোলার ক্ষেত্রেও একই বিধান প্রযোজ্য হবার কথা। এবিষয়ে বিশদ গবেষণা প্রয়োজন।

মানুষ যতই চেষ্টা করুক না কেন আল্লাহর সৃষ্টির মতো কোনো কিছুই সৃষ্টি করতে‌ পারবেনা এমন কি মাছিওনা (২২:৭৩)।

অতএব মূর্তি এবং ভাষ্কর্য কোনোটাই আল্লাহর সৃষ্টির বিকল্প নয়। কোনো জীবন্ত বস্তুর ভাষ্কর্য যদি মিনিয়েচার কিংবা বিমূর্ত হয় যার আকার বুঝা যায়না তাহলে মূর্তি হবে কিনা গবেষণার দাবি রাখে।

হযরত ঈসা আঃ এর একটি মোজেজা ছিল তিনি আল্লাহর হুকুমে কাদামাটি দিয়ে পাখি তৈরী করে তাতে ফু দিলে তা আল্লাহর হুকুমে পাখি হয়ে উড়ে যেতো(৩:৪৯)।

হযরত ঈসা আঃ কাদামাটি দিয়ে পাখির কায়া তৈরি করে তাতে ফু দিলে তা পাখি হতো। তার আগ পর্যন্ত সেই পাখির কায়াকে কি পাখি বলা হবে?

কোরআন অনুযায়ী পাখির কায়া আর পাখি এক জিনিস নয়। তাহলে পাখি হওয়ার আগে পাখির কায়াকে পাখির ভাষ্কর্য বলা যাবে কি না গবেষণার দাবী রাখে।

হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ নিজ হাতে সৃষ্টি করেন( ৩৮:৭৫)। হযরত আদম আঃ কে পূর্ণ ভাবে সৃষ্টি করার পরে তাতে আল্লাহ তাঁর তরফ থেকে রুহ ফুকে দেন (১৫:২৯)।

হযরত আদম আঃ এর ভিতরে রুহ ফুকে দেয়ার পরে আল্লাহ ফেরেশতাদের হযরত আদমকে সেজদা করার আদেশ করেন। রুহ ফুকে দেয়ার আগ পর্যন্ত হযরত আদম আঃ কে আল্লাহ ফেরেশতাদের সেজদার আদেশ দেন নাই।

আমরা আমাদের চার পাশে লক্ষ্য করলে দেখবো এমন কিছু কাজ হচ্ছে যা অনেক আলেমের মতে ইসলাম সম্মত নয়ঃ

১। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্ৰহনের আগে ও‌ সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পরে দলীয় প্রধানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন।

২। বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন।
৩। ভাষ্কর্যের পাদদেশে বসে অনশন পালন, বিক্ষোভ প্রদর্শন। ভাষ্কর্যের চোখে কালো পট্টি বেঁধে দিয়ে প্রতিকি প্রতিবাদ জ্ঞাপন।

৪। মাজারে মোমবাতি, আগরবাতি প্রজ্জ্বলন। মাজারে গিলাফ চড়ানো, ওরোশ পালন, বিভিন্ন পদ্ধতিতে দলীয় জিকির করা ইত্যাদি।

কোরআন নাজিলের পরে আল্লাহ কোরআনে ঘোষণা করেছেন – তিনিই কোরআন নাজিল করেছেন এবং তিনিই কোরআনের হেফাজত করবেন (১৫:৯)।

এর অর্থ দাঁড়ায় কেয়ামত পর্যন্ত কোনো মুসলমান কখনো স্বজ্ঞানে মূর্তি পূজা করবেনা। এতে প্রমাণিত হয় ভাষ্কর্য কিংবা ভাষ্কর্যের নামে যত মূর্তিই নির্মাণ হোকনা কেন কোনো মুসলমান তার পূজা করবেনা।

প্রাণহীন মূর্তি এবং ভাষ্কর্য দ্বারা গুনাহের কাজ হবে বা হবার সম্ভাবনা আছে যেমন উপরে ১ থেকে ৪ নম্বরে যা বলা হয়েছে। হযরত মুসা আঃ সামেরি কতৃক নির্মিত গোবৎস আগুনে পুড়ে তার ভষ্ম সাগরে ছড়িয়ে দেন।

কারণ বনী ইসরাইলের লোকজন এই গোবৎসের পূজা করছিলো। হযরত ইব্রাহীম আঃ যে মূর্তি ধ্বংস করেছিলেন সেসবের পূজা করতো হযরত ইব্রাহীমের সম্প্রদায়ের মানুষেরা।

হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ক্বাবা ঘরের মূর্তি ধ্বংস করেন কারণ মক্কার কোরেশরা এইসব মূর্তির পূজা করতো।

একটা বিষয় মনে রাখা জরুরী মনে করি তাহলো মাংস খাওয়া হালাল এমন পশুকে যদি বলী দেয়া হয় তবে তার মাংস খাওয়া মুসলমানদের জন্য জায়েজ নয়।

কিন্তু ঐ পশুকে একই সম্প্রদায়ের মানুষ দেবতা জ্ঞান করে বলে তার দুধ এবং মাংস ভক্ষণ মুসলমানদের জন্য হারাম নয়। যেমন হিন্দুদের কাছে গরু দেবতার বাহন। হাঁস, রাজহাঁস দেব, দেবীর বাহন বলে তার মাংস খাওয়া মুসলমানদের জন্য নিষিদ্ধ নয়।

পেট্রা একটি বিস্ময়। এই পেট্রা পাহাড় কেটে তাতে বাসস্থান, কবরস্তান, মিলনায়তন, প্রভৃতি তরী করা হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ৩০০ শত অব্দে।

কোরআন নাজিল শুরু হয় হয় ৬০৯ খৃঃ এবং ৬৩২ খৃঃ শেষ হয়। মক্কা বিজয়ের পরে এবং তারো পরে খলিফাদের যুগে পেট্রা নগরীর পাহাড়ের গায়ে খোদিত মানুষের ভাষ্কর্য ভেঙ্গে ফেলার কোনো গরজ খলিফারা বোধ করেননি।

যদিও পেট্রা ১৮১২ খৃঃ আবিষ্কার হয়। কিন্তু হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খলিফাদের সময় পেট্রা প্রত্ন নিদর্শনে পরিণত হয়নি এমন ধারনা হয়।

আল্লাহ বিশ্বের বুকে ভ্রমন করতে বলছেন এটা দেখার জন্য যে সত্য প্রত্যাক্ষানকারীদের পরিণতি কি হয়েছিল(৩:১৩৭)।

এই নিদর্শন সমূহ সমুদ্রের নীচে, পাহাড়ের উপরে ও কন্দরে, মাটির নীচে, মাটির উপর এবং জঙ্গলে সংরক্ষিত আছে। এই নিদর্শন সমূহ আবিষ্কার করা এবং এর সংরক্ষণ করা মানুষের কোরআনী দায়িত্ব।

এই নিদর্শনের মধ্যে মানুষ ও প্রণীর ভাষ্কর্য আছে তা নিশ্চিত। যেমন মিশরে ফেরাউনের মমীসহ ঐ সময়ের অনেক নিদর্শন আবিষ্কার হয়েছে এবং হচ্ছে।

সত্য প্রত্যাক্ষানকারীদের শেষ পরিণতি কি হয়েছিল তা জানতে নতুন অবিষ্কার যেমন করতে হবে তেমনি আবিষ্কার হওয়া নিদর্শনগুলিও সংরক্ষণ করতে হবে।

অতএব মিশরে আবিষ্কার হওয়া মমীসমুহ যার মধ্যে মানুষের মমীও আছে তা কোরআন অনুযায়ী সংরক্ষণ করতে হবে পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হিসেবে।

ফেরাউনের মমী আবীষ্কার হয়েছে ১৮৮১ খৃঃ। অথচ এর ১০০০ বছরেও আগে কোরআনে আল্লাহ ফেরাউনের মমী ভবিষ্যতে সংরক্ষণের ভবিষ্যত বাণী করেছেন।

“আজ আমি তোমার দেহকে রক্ষা করব যাতে তুমি তোমার পরবর্তীদের জন্য নিদর্শন হতে পার।’ অধিকাংশ মানুষই আমার নিদর্শনাবলী সম্পর্কে নিশ্চিতই উদাসীন।’’”(১০:৯২)।

এখন বিশ্ব মুসলিমের দায়িত্ব ফেরাউনের মমীকে সংরক্ষণ করা। এই সম্বন্ধে কোরআনের নির্দেশ পরিষ্কার। এ বিষয়ে মানুষের উদাসীন হবার কোনো অবকাশ নাই। কেবল মানুষের মমী বা ভাষ্কর্য বলে ফেরাউনের মমীকে ধ্বংস করা কি কোরআন সম্মত‌ হবে?

https://photos.app.goo.gl/9PY3sqC3o5oaXrKP8

পরিশেষে বলবো নিয়ত হলো মূল বিষয়। কোন নিয়ত সামনে রেখে কি করা হচ্ছে? হযরত মুসা আঃ হযরত ইব্রাহীম আঃ এবং হযরত মোহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমন সব মূর্তি ধ্বংস করেছেন যেসবের পূজা করা হতো।

এর বাইরে কোনো মুর্তি বা ভাষ্কর্য তাঁরা ভেঙ্গেছেন এমন নজির আমি কোরআনে পাইনি। থাকতে পারে তবে আমি জানিনা। মূর্তি এবং ভাষ্কর্য নিয়ে স্বল্প পরিসরে আলোচনা করেছি। বিচার আপনারা করবেন।

লেখকঃ  জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।

সাবেক মহাপরিচালক, বিডি আর

জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।  সাবেক মহাপরিচালক, বিডি আর
জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান। সাবেক মহাপরিচালক, বিডি আর

You cannot copy content of this page