বিয়ের প্রলোভন ব্যাপারটি নারীর জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর

ধর্ষণ

‘বিয়ের প্রলোভন’ ব্যাপারটি নারীর জন্য অত্যন্ত অমর্যাদাকর। আর প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ, এটি খুব হাস্যকর। ধর্ষণের মতো গুরুতর বিষয়কে এটি লঘু শরবতে পরিণত করেছে। নারীদের উচিত, তাদের নিজেদের স্বার্থেই এসব নকল ধর্ষণের প্রতিবাদ করা। আর বাংলাদেশের আইনে, ধর্ষণের সংজ্ঞায় যে ‘প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায় করিয়া’ নামক ভুতুরে বাক্যটি ঢুকানো হয়েছে, তা বাতিল করা উচিত।

কোনো সভ্য দেশের আইনে, ধর্ষণের ‘মেন্স রিয়া’র সংজ্ঞায় ‘প্রতারণামূলকভাবে সম্মতি আদায়’-এর কোনো উদাহরণ নেই। কারণ এটি ধর্ষণের চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক। সঙ্গম আর ধর্ষণ এক জিনিস নয়। ধর্ষণ একটি ট্রমাটাইজড ব্যাপার, যা ভুক্তভোগীকে অনেকটা লাশ বানিয়ে ফেলে।

আর সঙ্গম উপভোগের ব্যাপার, যার কোনো ভুক্তভোগী নেই। কিন্তু আমাদের বিচক্ষণেরা এমনভাবে আইন বানিয়েছেন, যেন এর উদ্দেশ্যই হলো বিচারের পরিবর্তে অবিচারকে উৎসাহিত করা। অভিনয়শিল্পী আর ব্যবসাশিল্পীরা যখন আইন প্রণয়ন করেন, তখন এর চেয়ে ভালো আর কী আশা করি?

প্রলোভন শব্দটিতে লুকিয়ে আছে বড়শী দিয়ে মাছ শিকারের গন্ধ। আমাদের নারীরা কি মাছ? আর বিয়ে কি কোনো টোপওয়ালা বড়শি? এটি কি নারীর আত্মমর্যাদার সাথে যায়? একটি নারী, কোনো পুরুষের ঘর করার লোভে দেহ সঁপে দিচ্ছে, এটি কি নারীর জন্য কোনো শ্রবণসুন্দর ব্যাপার? ধর্ষণের যে ট্রমা ও ভয়াবহতা, তার কি কোনো তুলনা হয় এ সঁপাসঁপির সাথে?

বিয়ে একটি প্রথা ও প্রতিষ্ঠান। যে-সমাজে বিয়ে করা কঠিন হয়ে পড়ে, সে-সমাজে নারীপুরুষ, বিয়েকে সামনে রেখে পরস্পরের কাছাকাছি আসে। ঘনিষ্ঠ হয়। আদান-প্রদান করে মন ও শরীর। কিন্তু এ ঘনিষ্ঠতা চিরকাল নাও থাকতে পারে। এটি খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু একে পুঁজি করে এক পক্ষ আরেক পক্ষের উপর মামলা ঠুকে দেবে, তা উচিত নয়। এরকমটি চললে, সমাজে নারী-পুরুষের দেখাসাক্ষাৎও বিপজ্জনক হয়ে উঠবে।

আর বিয়ের প্রলোভন ব্যাপারটি এতো একপেশে কেন, তাও আমার বোধগম্য নয়। একজন নারীও তো একজন পুরুষকে বিয়ের প্রলোভন দেখাতে পারে। সেক্ষেত্রে প্রতারিত পুরুষটি কোন আইনে প্রতিকার চাইবে?

আমার মনে হয়, মানুষের স্বাভাবিক জৈবিক সম্পর্কগুলিকে আইন দ্বারা বাধাগ্রস্ত করা উচিত নয়। কিছু বিষয়, আইন ও রাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের বাহিরে থাকা উচিত।

কে কাকে বিয়ের প্রলোভন দেখালো, কার সাথে কার মনোমালিন্য ঘটলো, কে কাকে নিয়ে পার্কে বসে থাকলো, এসব ব্যাপার মানুষের ব্যক্তিগত পরিমন্ডলেই থাকুক। অন্যথায়, সমাজে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা আরও বাড়তে থাকবে।

—মহিউদ্দিন মোহাম্মদ

You cannot copy content of this page