ওয়াটার গেট কেলেঙ্কারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
কাহিনীটা হল, আমেরিকার ওয়াশিংটন ডিসিতে বিরোধীদল অর্থাৎ ডেমোক্রেট দলের হেড অফিসে রাষ্ট্রীয় বাহিনী FBI কে ব্যবহার করে আড়িপেতে কথা শোনার যন্ত্রপাতি বসিয়েছিলেন রিপাবলিকান দল থেকে আসা প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন !
আর এটা ফাঁস হওয়ার পর তাকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
এবার আমাদের দেশের দিকে তাকান।
NTMC অর্থাৎ National Telecommunication Monitoring Center নামের একটি প্রতিষ্ঠান বানানো হয়েছে ২০০৮ সালে।
যার কাজ হল নির্বিচারে, কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া, মানুষের ফোনে আড়িপেতে কথা শোনা।
ইমেইল, ফোন কল, অনলাইন একাউন্ট মনিটরিং করা।
একটা মানুষের বাসায় সার্চ ওয়ারেন্ট ছাড়া আইন শৃঙ্খলা বাহিনী প্রবেশ করলে সেটা যেমন অন্যায়, তেমনই ভাবে আড়িপেতে নির্বিচারে সবার কথা শোনাটাও অন্যায়। এটা প্রাইভেসি ব্রিচ।
সরকার আর সরকারে ক্ষমতাসীন দল, এই দুইটা জিনিস আলাদা। সরকারের তিনটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ, Administration, Judiciary and Legislation
একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে তার পলিসি মত Legislation তথা আইন প্রনয়ন করতে পারে। তবে তার মানে এই না যে যা ইচ্ছা তা করবে। এখানেই আসে চেক এন্ড ব্যালান্স।
কিন্তু যখন রাজনৈতিক দল Administration এবং Judiciary অর্থাৎ সবকিছু নিজের মত দলীয়করণ করে, তখন আর সরকার এবং সরকারী দলের ভেতর কোনো পার্থক্য থাকে না। মগের মুল্লুক প্রতিষ্ঠিত হয় তখনই।
আপনি যদি সরকারি দলে বসে রাষ্ট্রযন্ত্র ইউজ করে বিরোধি দলের সকল ছলাকলা কৌশল আগে থেকেই জেনে যান, তখন বিরোধি দলের আর কোনো রাজনীতিই থাকে না। তখন বিরোধি দলকে আন্ডার গ্রাউন্ডে যেতে হয় নিষিদ্ধ সংগঠনের মত।
ইভেন, ক্ষমতাসীন মানুষটির জন্যেও জিনিসটি নেগেটিভ।
উদাহরণ দিচ্ছি। ধরুন আপনি একটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান। আপনার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত প্রতিটি মানুষ আপনার সম্পর্কে কি বলাবলি করে, সেটা জানতে যদি আপনি খুবই আগ্রহী হন, এবং যদি সবার ফোনে পেগাসাস Spyware বসিয়ে তাদের কথাবার্তা মনিটরিং করার ট্রাই করেন, তাহলে আপনি প্রতিষ্ঠান ঠিকমত চালাতে পারবেন না। আপনি নিজেই প্যারানয়েড হয়ে যাবেন।
কারণ আপনার অগচরে প্রতিটি মানুষই কোনো না কোনা সময় আপনাকে নিয়ে গসিপিং করবে। চায়ের আড্ডায়, অফিস ক্যান্টিনে, কোথাও না কোথাও। ইভেন আপনার অফিসের সবচেয়ে ভাল কর্মচারি যাকে আপনি খুব পছন্দ করেন,এবং সেই কর্মচারিও মন থেকেই আপনার ভাল চায়,
দেখা যাবে সেও কোনো চায়ের আড্ডায় বা গসিপিংএ আপনাকে নিয়ে ফান করতেছে।
বলতেছে, “স্যারের পেটটা তো মিষ্টি কুমড়ার মত / স্যারের তো বৌ ছাড়াও অনেক বান্ধবি আছে/ জানিস, স্যারের পোলা ড্রাগ এডিক্ট/ জানিস, স্যারের গায়ে গন্ধ, মুখে গন্ধ; উনার বৌ কেমনে যে টলারেট করে ! ”
তো এসব শুনলে আপনি রাগের ঠেলায় লাল হবেন।
কাউকে বিশ্বাস করতে পারবেন না।
প্যারানয়েড হয়ে যাবেন।
আর যে আপনাকে প্রতিদিন সকালে আড়িপেতে শোনা রেকর্ডিংগুলো প্রভাইড করবে, সে খেলবে আরেক খেলা।
সে তখন নানান মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করবে। কর্মচারিদের ফোন দিয়ে বলবে, “তুই গতকাল চায়ের আড্ডায় স্যারের বিরুদ্ধে আজেবাজে বলেছিস, আমার কাছে রেকর্ডিং আছে। তুই আমাকে দশ লাখ টাকা দে, তা না হলে কিন্তু বলে দেব”
ব্যস….
এভাবেই আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রসাতলে যাবে। আর আপনি নিজের কাজ বাদ দিয়ে প্যারানয়েড হয়ে যাবেন। কাউকে বিশ্বাস করতে পারবেন না। নিজের কাছের লোকটিকেও না।
ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্ট সম্পূর্ণভাবে বিলোপ করা হোক। আর NTMC এর কার্যক্রম রুলস এন্ড রেগুলেশন এবং আইনের আয়তায় আনা হোক।
অন্যথায় এই লুপ চলতেই থাকবে।
– ফয়সাল শোভন


