গর্ভাবস্থায় গুলিবিদ্ধ শিশুকে ফিরিয়ে আনার নেপথ্যে ছিলেন যারা!

কানিজ হাসিনা শিউলি নামে কাউকে চেনেন? চেনেন না?
আমাদের আব্দুল হানিফ টাবলু স্যারকে ?

কে তাঁরা ?

উনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি।
আর উনার জীবন সঙ্গী একই বিভাগের প্রফেসর ডাঃ আব্দুল হানিফ টাবলু।
কিন্তু এই মানুষগুলোকে কেন চিনতে হবে?

এই মানুষগুলো চিনতে হবে, কারণ এই মানুষগুলো এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের আরো কিছু ডাক্তার মিলে বিস্ময়কর একটি কাজ করেছেন! অবশ্বাস্য একটি কাজ করেছেন! মায়ের গর্ভে গুলিবিদ্ধ সাত মাসের একটি শিশুর সফল অস্ত্রোপচার করেছেন, সেই শিশুটি বেঁচে গেছে, শুধু সে-ই না, বেঁচে গেছে শিশুটির মা-ও! কী আপনার কাছে অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না?

আমার কাছে হচ্ছে! আমার কাছে এটিকে রূপকথার গল্পের মতন মনে হচ্ছে! এই শিশুটি যখন বড় হবে, যখন মা হবে, যখন তার সন্তান তার হাতের ক্ষতচিহ্ন দেখিয়ে বলব, ‘মা, এই দাগ কিসের?’

সে বলবে, আমি যখন আমার মায়ের পেটে ছিলাম, তখন আমার গায়ে গুলি লেগেছিল, সেই গুলির দাগ?’
তার সন্তান গোলগোল চোখে পৃথিবীর সকল বিস্ময় নিয়ে বলবে, ‘ধ্যাত, কিসব আজগুবি গল্প বল? মায়ের পেটে কারো গুলি লাগে? আর যদি লাগেও, সে কি কখনও বাঁচে?

সে তখন কথা বলবে না। ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকবে। জগতের সকল অবশ্বাস তার ওই ছোট্ট শরীর জুড়ে, এই অবিশ্বাস, এই বিস্ময়কর রূপকথার গল্পের স্রষ্টা ডা. কানিজ হাসিনা শিউলি এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক বৃন্দ।

 

কিন্তু সেইমানুষগুলো্র নাম কেউ জানে না, কেউ তাকে চেনে না, এই অসম্ভবকে সম্ভব করে ফেলা মানুষটিকে কেউ চেনে না, কেউ না। তাকে নিয়ে কোন পত্রিকা নিউজ করে না, টিভি সংবাদ করে না (ছোট খাট এক দুয়েকটা সংবাদ ছাড়া কিছু অন্তত আমার চোখে পড়েনি)। কারণ কি? কারণ এই যে, তিনি ডাক্তার! আর ডাক্তারদের কাজই এই!

অথচ রোজ রোজ আমাদের পত্রিকার পাতা ভর্তি থাকে রাজনীতিবিদদের গলাবাজিতে, চোর, ডাকাত, সন্ত্রাসী, খুনীদের ছবিতে। অনিয়ম করা ডাক্তারদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধারে। আমরা এদের সবাইকে চিনি, আমরা চোর বদমাশ, খুনী, সন্ত্রাসী সবাইকেই চিনি, কিন্তু অমন একজন কানিজ হাসিনা শিউলিকে আমরা চিনি না।

আমরা ভালবাসতে জানি না, আমরা যোগ্য মানুষকে সম্মান দিতে জানি না, কিন্তু আমরা প্রত্যাশার হাড়ি উপুড় করে দিয়ে গালভরা বুলি আওড়াতে পারি। আমরা জানি, এই দেশে গুনী মানুষ নেই, ভালো মানুষ নেই, ভালো ডাক্তার নেই, এরা সকলে চামার, কসাই, ডাকাত।

কারণ, আমরা জানি না, যে দেশে গুণীর সমাদর নেই, ভালত্বের সমাদর নেই, কেবলি সমালোচনা আছে, সেদেশে গুনী জন্মাতে পারে না, ভালত্ব শেকড় গজালেও আলো জল হাওয়ার অভাবে বেড়ে উঠতে পারে না।

সেই অঙ্কুরোদগম হওয়া ভালত্বের চারা গাছগুলো বিশাল বিপুল ছায়াদায়ী বৃক্ষ হয়ে উঠতে পারে না। পারে না আমাদের কারণেই, আমরা তাতে জল দেই না, তার পরিচর্যা করি না, আমরা কেবল দাঁত মুখ খিঁচিয়ে বলতে পারি, আরও ভালো চাই, আরও আরও… আমরা কেবলি বলি, এই প্রবল তেষ্টার মরুর দেশে ছায়া নাই, ছায়া নাই, ছায়া কই, ছায়া কই! অথচ আমরা নিজেরাই রোজ ছায়াদায়ী এইসব বৃক্ষদের কেটে ফেলি, উপড়ে ফেলি সমূলে। এই আমরা, আমাদের দেশ!

এ কী আকালের দেশ, এ কী আকালের বেশ!!

লিখাঃসাদাত হোসেন

You cannot copy content of this page