যাদের রক্তে মুক্ত এদেশ – মুস্তাহিদ হোসেন ভূঁইয়া

“আমি তখন মুখে হাত দিই। আর বুঝি যে আমার পুরো মুখ রক্তে ভরে গেছে। তারপর আস্তে করে নিচে তাকাই, খেয়াল করলাম রক্তে আমার পুরো শরীর ভরে গেছে। কল চাপলে যেমন রক্ত বের হয়, তেমন অবস্থা।”

উত্তরায় আন্দোলন শুরু হয় ১৬ তারিখ। সেদিনই আমরা অনেকেই আন্দোলনে যোগ দেই। ছাত্রলীগের বেশ তৎপরতা ছিল সেদিনও। বি.এন.এস সেন্টার থেকে যাওয়ার সময় সেদিন আমি আবার একা ছিলাম, কলেজের আইডি কার্ড আর শার্ট গায়ে ছিল। সেখানে ছাত্রলীগের কয়েকজন আমাকে দেখতে পেয়ে ঘিরে ধরে, জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাও?” আমি বলি, “আন্দোলনে।” তারা গরম হয়ে বলে, “কিসের আন্দোলন তোমাদের?” আমি বলি, “কেন, আপনারা জানেন না কিসের আন্দোলন?” এটা বলার সাথে সাথেই সেখানে থাকা একজন আমার ঘাড় বরাবর জোরে একটা থাপ্পড় মারে। তখন ওখানকার সিনিয়র একজন অন্যদের বলে আমাকে ছেড়ে দেয় আর আমাকে বুঝায়, “আন্দোলনে যেয়ো না। ওদিকে গেলে সমস্যায় পড়বা।”

তারপর আমি বি.এন.এ সেন্টারে এসে ছাত্র ভাইদের সাথে যোগ দেই আর তাদের সব কিছু জানাই। সেদিনের আরেকটা ঘটনা না বললেই নয়। সেটা হলো, আমি একটু পরই খবর পাই যে ৭ নম্বর সেক্টরের ভিতর আমার আরেক বন্ধু, যার নাম “আব্দুর রহমান,” ছাত্রলীগ ওর পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করে আর ওকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ইট দিয়ে ওর মাথায়ও আঘাত করা হয়।

১৮ তারিখে ঘুম থেকে উঠেই খবর পাই যে আজকে তো পুরো ঢাকাতেই সিচুয়েশন অনেক খারাপ। তাও বুকে অনেকটা সাহস নিয়ে বের হই। সেদিন আমি ইউনিফর্ম না পরে শুধু আইডি কার্ড আর ওয়ালেটটা পকেটে ঢুকিয়ে নরমালি বের হই আর কি। বাসা থেকে নিষেধ করছিল যাতে না যাই। আমার বড় ভাই আবার আজিমপুরে চাকরি করে, ও তো সব দেখছিল ওখানকার সিচুয়েশন, তাই আমাকে কল করে নিষেধ করে যাতে বের না হই।কিন্তু কারো কথাই কানে নেই নি।

আমি আবার ১৬ তারিখের মতো ৮ নম্বর সেক্টরের রেল লাইন ধরে সেক্টরে ঢুকতেই দেখি, অবস্থা খুবই খারাপ। চারদিকে শুধু ধোঁয়া, গুলির আওয়াজ, মানে একদম ভয়ঙ্কর অবস্থা। আমি যখন কুয়েট মৈত্রী হাসপাতাল ক্রস করছিলাম, তখন দেখি ৪ জন গুলিবিদ্ধ মানুষকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কোলে করে। আমি তখন আমার অন্য ক্লোজ ফ্রেন্ডদেরকে যতটা সম্ভব পসিবল হয় কন্টাক করে বলি যে আজকে না আসতে, এইদিকে যাদের আসার কথা ছিল, তাদেরকে সিচুয়েশনটা বুঝাই। কিন্তু তারাও আমার কথা শোনে নাই।
এর মধ্যে আমার যে গৃহশিক্ষক, উনার সাথে আমার দেখা হয়ে যায় বি.এন.এস সেন্টারের ওভার ব্রিজের নিচে। তো ভাবলাম ভালোই পরিচিত কারো সাথে দেখা হয়ে গেছে। তখন আমি আর স্যার আন্দোলনকারীদের মধ্যে পানি, খাবার এসব দিতে লাগলাম। এভাবেই দুপুর কেটে যায়। তখন ভাবলাম, যাই জোহরের নামাজ আদায় করে আসি।
রাজউকের পাশে যে একটা বিডিআর মার্কেটের সাথে মসজিদ আছে, সেখানে গেলাম, নামাজ আদায় করলাম। নামাজ আদায় করে একটু এগিয়ে এগিয়ে আমি আর স্যার, আজমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় যেটা, সেখানকার গেটে বসলাম। সেখানে আজমপুর স্কুলের একজন স্যার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। সবাই ম্যাচ, পেস্ট এসব নিয়ে ওখানে রেডি ছিল যাতে টিয়ার শেল মারলে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।
তার ঠিক ১০-১২ মিনিট পর পুলিশের একটা সাদা গাড়ি আসে। আমি আজও জানি না ওই গাড়িকে কী বলে। আগে এটা আমি তেমন একটা দেখি নাই। ওই গাড়ির উপর থেকে একজন পুলিশ অফিসার চারদিকে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করছিল আর ভিতর থেকে নল দিয়ে আরেকজন গুলি করছিল। আমি আসলে পুরো ব্যাপারটা নিশ্চিত না… যা দেখেছি, ওটাই বলছি। যুদ্ধের মুভিগুলোতে যেমন দেখি, বড় কোনো একটা ট্যাংকের ওপরে কেউ বসা আর সেই স্পেশালাইজড গাড়ির ভিতর থেকে নল দিয়ে অদৃশ্য গুলি ছুটছে, পুরো ওমন লাগছিল। এক-দুইটা না ,দুই পাশে তিন-তিনটা করে মোট ছয়টা নল দিয়ে গুলি ছুড়ছিল । এটা কেউ না দেখলে বোঝানো মুশকিল। এটা দেখে সবাই দৌড়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঢুকতে যায়। আমিও ঢুকতেই যাব ঠিক তখনই একটা কিছু এসে পড়ে আমার চোখে। আমার দুই চোখই ব্ল্যাঙ্ক হয়ে যায়। আমি আর কিছু দেখতেই পারছিলাম না। আমি পড়ে যাই নিচে।
ওই মোমেন্টে আমাকে যদি আরেকটা গুলি করতো, হয়তো আমি স্পট ডেড হয়ে যেতাম। কিন্তু তারা আর গুলি করে নাই। গাড়িটা চলতে চলতে গুলি করতে করতে খুব ধীরে ধীরে এগোচ্ছিল। আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না আসলে কী হয়েছে—গুলির স্প্লিন্টার, বুলেট, টিয়ার শেল নাকি কী পড়েছে আমার চোখে। আমার মুখের বাঁ পাশ পুরো গরম হয়ে যায়।
তখন আমার স্যার দৌড়ে আসে। ততক্ষণে আমি আমার ডান চোখ দিয়ে একটু দেখতে শুরু করি। আমি তখন হাত দিয়ে মুখে হাত দেই, আর বুঝি যে আমার পুরো মুখ রক্তে ভরে গেছে। তারপর আস্তে করে নিচে তাকাই, খেয়াল করলাম রক্তে আমার পুরো শরীর ভরে গেছে। কল চিপলে যেমন রক্ত বের হয়, তেমন অবস্থা।
তখন শুধু আমি স্যারের আওয়াজ শুনতে পাই, “এই, এই আল্লাহ! সামী পড়ে গেছে, সামী পড়ে গেছে!” স্যার এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে ওই স্কুলের মাঠে নিয়ে যায়। তখন এক আন্দোলনকারী ভাই, আমি চিনি না তাকে, উনি কে ছিলেন জানি না। উনি ওনার গায়ের গেঞ্জি খুলে ছিঁড়ে আমার রক্ত বন্ধ করার জন্য আমার দুই চোখ শক্ত করে বেঁধে ফেলে।

তখন আমি একদম ব্লাইন্ড। আমাকে সবাই ধরে রিকশায় তোলে। ওই মোমেন্টেই আরেকজন আন্দোলনকারী আপু পেটে গুলি খায়। তো তাকে-ও আমার রিকশায় তুলে দেয়, কিন্তু জায়গা হচ্ছিল না, তাই তাকে খুব শক্ত করে ধরেও রাখা যাচ্ছিল না। পরে তাকে নামিয়ে অন্য একটা রিকশায় তুলে দেওয়া হয়।
তারপর আমাকে নিয়ে যাওয়া হয় কুয়েট মৈত্রী হাসপাতালে। আপু, ওখানে যাওয়ার পর তো কোনো সিটেই জায়গা ছিল না। সব দিক থেকে শুধু আহতরা আসছিল। চারদিকে চিৎকার রক্ত হাহাকার আর মানুষ আহত হয়ে শুধু আসতেই থাকে। পরে একটা হুইল চেয়ার নিয়ে আসে, আমি সেখানে বসি। ১০-১৫ মিনিট পর একজন ডাক্তার আসে। এসে আমার চোখের ওই বাঁধনটা খুলে, আমাকে ফার্স্ট এইড ট্রিটমেন্ট দিয়ে আবার ব্যান্ডেজ করে দেয়। উনি বলেন যে আমার চোখের অবস্থা অনেক খারাপ, আমাকে আগারগাঁও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে নিয়ে যেতে হবে।
আমার সাথে তখন পরিচিত বলতে শুধু আমার ওই স্যার ছিলেন। স্যারের তখন ইনস্ট্যান্ট কোনো ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট ছিল না, আর স্যারের ফোনেও ব্যালেন্স ছিল না যে কারো সাথে যোগাযোগ করবে। আর আমি এখন বাসায় কী জানাব? আমি কিছু জানাতে চাচ্ছিলাম না কারণ এখানে আসাও তখন সম্ভব ছিল না। আমি তখন একজনকে ডেকে বলি, একটা নাম্বার লিখে রাখেন আর কল দেন। উনি জিজ্ঞেস করেন, “কে?” আমি বলি, “আমার ফ্রেন্ড শিহাব। ওকে শুধু বলবেন যে সামী। তাহলেই হবে।” ওকে শুধু ঘটনা জানাবেন, ও চলে আসবে। শিহাব আমার সবচেয়ে ক্লোজ ফ্রেন্ড। তার মধ্যে আমার স্যার আমার ফোনে ভাইয়ার কল আসায় সেটা রিসিভ করে ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করেন আর সব জানিয়ে দেন। আমার ভাই আর তার বন্ধু, নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই চলে আসে।

তখন অবস্থা এত খারাপ ছিল পুরো ঢাকায় যে আগারগাঁও পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আমাকে ৭ নম্বর সেক্টরের আই কেয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওরা মানা করে দেয় যে আমার ট্রিটমেন্ট করতে পারবে না।
পরে ওখানে আমার আব্বু আর ৫ নম্বরে আমার চাবার বাসা, চাচি আর আমার কাজিন আসে। তারা জানিয়ে দেয় যে আমাকে আগারগাঁও চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটেই নিয়ে যেতে হবে। আর আমি সকাল থেকে কিছু খাইনি, তাছাড়া এত রক্ত ঝরেছে যে আমি খুবই দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম। তাই আমাকে স্যালাইন দেওয়া হয়। পরে আমরা রিকশায় করে মেট্রো স্টেশন পর্যন্ত যাওয়ার জন্য উঠি যাতে একটানা আগারগাঁও যাওয়া যায়। যাওয়ার পথে আব্বু রিকশা থামিয়ে কেক আর জুস কিনে আনেন, তখন আমি একটু কিছু মুখে দেই। এরপর আমার ভাই একটা সিএনজি দেখে ড্রাইভারকে অনুরোধ করেন যেন আমাকে আগারগাঁও নিয়ে যায়। ওই সময় আশেপাশের সবাই আমার অবস্থা দেখে এগিয়ে আসে, কেউ কেউ রিকশার ভাড়া পর্যন্ত দিয়ে দেয়। আমরা অনেক জোর করেও ফেরত দিতে পারিনি। তারপর আমি আমার বন্ধুর কাঁধে মাথা রেখে বসি, আর কিছু বলতে পারছিলাম না।

সিএনজি করে মিরপুর ১০ আসার পর দেখি সেটাও এক রণক্ষেত্র। আমার গলায় আইডি কার্ড ঝুলানো ছিল, সঙ্গে রক্তমাখা জামা দেখে তারা বুঝে যায় আমি ছাত্র। তাই আমাদের সিএনজির দিকে তাক করে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হয়। কিন্তু আমাদের সিএনজি ড্রাইভার খুব কষ্ট করে শেষ পর্যন্ত আমাদের আগারগাঁও পৌঁছে দেন। তখন প্রায় ৪টা বাজে।
ওখানে গিয়েও একই অবস্থা, আপু। শুধু চোখে গুলি, কেউ এক চোখে, কেউ দুই চোখে, কেউ চোখে রাবার বুলেট নিয়ে এসেছে তো কেউ টিয়ার শেলের আঘাতে।

সেদিন আরও এক ঘণ্টা পর আমাকে ওটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেদিন আমার চোখ থেকে দুটি গুলি বের করা হয়, কিন্তু আরেকটা গুলি অনেক ভেতরে ছিল। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয় যে এটা এখন বের করা সম্ভব না। ওটি থেকে বের হতে প্রায় ৬:৩০ বেজে যায়। তখন আর বাসায় টঙ্গীতে ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আমরা মিরপুরে আমার ভাইয়ের শ্বশুরবাড়িতে চলে যাই। রাত ৯টার দিকে আম্মু আর ভাবি এসে পৌঁছান। আমার বন্ধু তখনও আমার সঙ্গে থাকে।

রাত ৯টার দিকে আমার বন্ধু এসে আমাকে জানায়, মুগ্ধ ভাই মারা গেছেন। তিনি আবার আমাদের পূর্বপরিচিত ছিলেন, আমার বড় ভাইয়ের ক্লাসমেট। আমি তখন ভাবছিলাম, আসলে কী নিয়ে কাঁদবো—চোখ হারানোর কষ্টে নাকি বড় ভাইয়ের মতো মানুষটাকে হারানোর জন্য? আমি বুঝতেই পারছিলাম না, আপু। তা রউপর আমার চোখের চিন্তায় শরীরে যে আরও ছড়্রা গুলি বা স্প্লিন্টার ছিল, সেটা আমাদের কারও মাথায় আসেনি। এগুলো দ্রুত বের না করলে মাংসের সঙ্গে মিশে মিশে যায় আর অনেক ব্যথা হচ্ছিল।
পরে ৪ দিন পর ভোরে প্রায় ৬ টার দিকে খালপাড় দিয়ে উত্তরা ৫ নম্বরে কাকার বাসায় উঠি। সেখান থেকে একটা হাসপাতালে যাই শরীরের বাকি স্প্লিন্টারগুলো বের করতে। তারপর আবার কাকার বাসায় থাকি আরও কয়েক দিন।
পরে স্কয়ার হসপিটালের একজন ডাক্তার দেখাই যিনি অনেকক্ষণ এগুলো এক্সামিনেশনের পরে বলে যে আমার চোখের আশেপাশে যেই ব্লাড জমে আছে এবং আরেকটি যেই বুলেট আমার চোখে থেকে গেছে সে সবকিছু ঠিক করতে অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এই অপারেশনের সকল ইকুইপমেন্ট স্কয়ার হসপিটাল এর কাছে নাই তাই তিনি আমাকে খামারবাড়ির ইস্পাহানি চক্ষু হসপিটাল সাজেস্ট করেন। কিন্তু সেই সময় ওই হসপিটাল বন্ধ ছিল পরবর্তীতে তা খোলার পরে আমরা ওই হসপিটালে গেলে তারা যখন জানতে পারে আমি আন্দোলনে আহত হয়েছি তারা বলে দেয় যে আন্দোলনে আহতদের কোন চিকিৎসা দেওয়া হবে না। তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে এবং আন্দোলনে আহতদেরকে তারা চিকিৎসা দিলে তাদের সমস্যা হবে।

পরবর্তীতে ওই হাসপাতালের একজন লোকের সাথে আমার ভাইয়ার পরিচিত থাকার কারণে ভাইয়া ঐ লোকের শরণাপন্ন হয়ে সেখানে আমার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয় কিন্তু আমি যে আন্দোলনে গুলি বিদ্ধ হয়েছি সেটা আমার কাগজপত্রে লুকোতে হয়েছে। বা লিখিত কোন ফর্মে এমন কোন কিছু লিখা হয়নি। অন্য কোনখানে আমি কোনভাবে ইট পাটকেলের আঘাত খেয়েছি বা এক্সিডেন্ট হয়েছে এরকম একটা ইস্যুতে তারা আমার চিকিৎসা করে। অবশেষে আগস্টের ৩ তারিখ আমার অপারেশন হয়। তবে তারাও আমার যে রিমেনিং বুলেটটা ছিল সেটা বের করতে পারে নাই।৪ তারিখ বাসায় চলে আসি রিলিজ পেয়ে। তারপর তো সেই কাঙ্খিত পাঁচ তারিখ। এই কয়েকদিনের মধ্যে ফেসবুকে আমার আইডি কার্ডের ছবি চলে যাওয়া আব্বু আম্মু আমার সকল ধরনের কন্টাক করার ব্যবস্থা বন্ধ রেখেছিল । আমার ফোন নাম্বার, সোশ্যাল মিডিয়া সবকিছু। তার ওপর যেভাবে শোনা যাচ্ছিল যে ছাত্রদের লিস্ট করছে কে কোথায় আন্দোলনে গিয়েছিল কে কোথায় আছে ধরপাকড় চলছে এসব নিয়ে অনেক আতংকে দিনগুলো কেটেছে। আর তারপরও অনেক হসপিটালে দৌড়াইছি যে যেখানে বলছে এই ডাক্তার ভালো সেই ডাক্তার ভালো ওই হসপিটালে যাও অনেক জায়গাতেই গেছি বাট সবার সকল হসপিটালের সকল ডাক্তাররা এক কথা যে আমার চোখের রেটিনা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে গেছে ছিড়ে গেছে এটা আর কখনোই সম্ভব না ঠিক করা আমি আর বাম চোখে কখনোই দেখবো না কোনদিন।

তবু আসলে আফসোস নাই, যা করছি দেশের জন্য করছি মানুষের কথা চিন্তা করে করছি । যদি কোনদিন আবার দরকার পড়ে তাহলে আবার বাকি এক চোখ যেটা আছে সেটা নিয়ে আন্দোলন নামার আগে দুইবার চিন্তা করব না। শুধু একটাই চাওয়া, আমাদের এই বিপ্লবটা যেন কোন ভাবে ব্যর্থ না হয় আর যারা এই বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত ছিল তাদেরকে যেন জীবনে কখনো এই কারণে ভোগান্তি পোহাতে না হয়।

মোহাম্মদ মুস্তাহিদ হোসেন ভূঁইয়া সামি
উত্তরা হাই স্কুল এন্ড কলেজ ( হসচ -২৪ ব্যাচ)

You cannot copy content of this page