বিশ্লেষণঃ সামিয়া রহমানকে নিয়ে কী হচ্ছে?

সামিয়া রহমান একজন বাংলাদেশি সাংবাদিক, উপস্থাপিকা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা হিসেবে পরিচিত।

তিনি ১৯৭৩ সালের ২৩ জুন ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবার বাড়ি যশোর শহরের পুরাতন কসবা কাজী পাড়ায়। বাবা কাজী মাহমুদুর রহমান একজন নাট্যকার, লেখক, অভিনেতা ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ বেতারের প্রোগ্রাম পরিচালক হিসেবে চাকরি করেছেন।

মা চট্টগ্রামের মেয়ে দিলরুবা রহমান একজন সঙ্গীতশিল্পী ও নাট্য অভিনেত্রী ছিলেন। চার বোনের মধ্যে সামিয়া রহমান তৃতীয়। সামিয়া রহমানের স্বামী হুসাইন বিন খালেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী ও তুরাগ ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক।

তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে বিএ (সম্মান) ও এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। উভয়তেই তিনি প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদক লাভ করেন।

পরিবেশ বিষয়ে এনজিওতে চাকরি জীবন শুরু করলেও ২০০০ সালে একুশে টিভিতে রিপোর্টার হিসেবে নিয়োগ পান। এখান থেকেই তার সাংবাদিকতা জীবন শুরু হয়। তিনি একুশে টিভিতে সংবাদ পাঠিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। বর্তমানে তিনি এ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত।

২০০১ সালে তৎকালীন সরকার কর্তৃক একুশে টিভি বন্ধ করে দিলে তিনি এনটিভি সংবাদ পাঠিকা হিসেবে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে এনটিভির চাকরি ছেড়ে আবার দেশ টিভিতে এক বছর কাজ করেন। মাঝে কয়েক বছর টেলিভিশন মিডিয়া থেকে দূরে থাকার পর ২০১২ একাত্তর টিভি কারেন্ট এপিয়ার্স এন্ড প্রোগ্রাম এডিটর হিসেবে কাজ করেন (২০১২-২০১৬)। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সালে নিউজ টোয়েন্টিফোর টিভিতে একই পদে যোগদান করেন।

সাংবাদিকতার পাশাপাশি সামিয়া রহমান একজন গবেষক ও লেখক। তার একাধিক গবেষণামূলক প্রবন্ধ বিভিন্ন জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তার দুটি বই অ্যামাজনে প্রকাশ পেয়েছে। তার একক লেখা প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৫টি। যৌথ লেখা রয়েছে ২টি।

২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান ও অপরাধবিজ্ঞান (ক্রিমিনোলজি) বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানের ‘A new dimension of Colonialism and Pop Culture : A Case Study of the Cultural Imperialism’- নামক আট পৃষ্ঠার একটি গবেষণা প্রবন্ধ সোশ্যাল সাইন্স রিভিউ জার্নালে প্রকাশিত হয়।

তবে তা ১৯৮২ সালের শিকাগো ইউনিভার্সিটির জার্নাল ‘ক্রিটিক্যাল ইনকোয়ারি’র ৪নং ভলিউমের ১৯ নম্বর পৃষ্ঠায় প্রকাশিত ফরাসি দার্শনিক মিশেল ফুকোর ‘Subject and Power’ নামের একটি নিবন্ধ থেকে প্রায় পাঁচ পৃষ্ঠা হুবহু নকল বলে অভিযোগ ওঠে।

২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এক লিখিত অভিযোগে মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এই চুরির কথা জানিয়েছিল ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো প্রেস।

শুধু মিশেল ফুকোই নন, বুদ্ধিজীবী এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ গ্রন্থের পাতার পর পাতাও সামিয়া ও মারজান হুবহু নকল করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এর একদিন পরে জানা যায়, উত্তর-উপনিবেশিক গবেষক ও দার্শনিক এডওয়ার্ড সাঈদের লেখা নিবন্ধ থেকেও কিছু অংশ হুবহু ব্যবহার করা হয়েছে সামিয়া ও মারজানের নিবন্ধে। সাঈদ একাডেমি অব প্যালেস্টাইনের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ করা হয়। সূত্রটি জানিয়েছে, এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ এর ‘টু ভিশন ইন হার্টনেস অব ডার্কনেস’, ‘কনসোলিডেটেড ভিশন’, এবং ‘ওভারলেপিং টেরোরিস্ট, ইন্টারউইন্ড হিস্টোরিস্ট’ আর্টিকেল থেকেও লেখা কপি করা হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান এবং ক্রিমিনোলজি বিভাগের শিক্ষক মাহফুজুল হক মারজানের লেখা ‘এ নিউ ডাইমেনশন অব কলোনিয়ালিজম অ্যান্ড পপ কালচার: এ কেস স্ট্যাডি অব দ্যা কালচারাল ইমপেরিয়ালিজম’ আর্টিকেলের ৮৯, ৯০ ও ৯১ পৃষ্ঠায় এডওয়ার্ড সাঈদের ‘কালচার অ্যান্ড ইমপেরিয়ালিজম’ এর ৫, ৬, ৬৬, ৬৭, ৬৮ এবং ১১৯ নম্বর পৃষ্ঠা থেকে কপি করা হয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নাসরিন আহমেদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে গত বছর ওই কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ার কথা বলা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তির সুপারিশ করা হয়নি।

প্রায় তিন বছর পর ৯ সেপ্টেম্বর ২০২০, বুধবার সিন্ডিকেটের সভায় তদন্ত কমিটির রিপোর্ট উত্থাপন করা হয়।

এবিষয়ে অধ্যাপক নাসরীন আহমাদ বলেন, “প্লেইজারিজমের যে অভিযোগ ছিল, আমাদের তদন্তে দ্যাট হ্যাজ বিন প্রোভেন (তা প্রমাণিত হয়েছে)। আমাদের তদন্তে তাদের যৌথভাবে লেখা ছয়টি গবেষণা নিবন্ধনে প্যারার পর প্যারা হুবহু নকল পাওয়া গেছে।”

তাদের নিয়ে তদন্ত করতে নানা ধরনের চাপের সম্মুখীন হতে হয়েছে তদন্ত কমিটিকে।

নাসরীন আহমাদ বলেন, “আমাদের কলিগদের বিষয়ে যখন কোনো অভিযোগ ওঠে, আমরা চেষ্টা করি খুব কেয়ারফুলি দেখতে, যাতে তাদের উপর কোনো অন্যায় না হয়।

“কিন্তু তাদের ব্যাপারে আমরা যখন ইনকোয়ারি শুরু করি, চারপাশ থেকে নানা ধরনের চাপ আসতে থাকে। অনেক হৈ চৈ শুরু হয়। যাই হোক, আমরা আমাদের মতো কাজ করেছি।”

‘সামিয়া-মারজান পাতার পর পাতা নকল করেছেন৷ গবেষণা-নিবন্ধে অন্যের থেকে ধার আমরা নিতেই পারি, কিন্তু তার একটা পদ্ধতি আছে৷ সেই পদ্ধতি অনুসরণ না করে তাঁরা হুবহু কপি করেছেন৷ তাঁরা অনেকখানি চৌর্যবৃত্তি করেছেন৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি শনাক্তের সফটওয়্যারটি আমরা কাজে লাগিয়েছি৷ জানি না, এমন বোকার মতো কাজ তাঁরা কেন করলেন? এই ধরনের ঘটনার তদন্ত নিয়ে অনেক ঘটনাই ঘটে৷ আমরা সতর্ক না হলে চৌর্যবৃত্তি আরও ঘটবে৷’

সামিয়া-মারজানের গবেষণায় নিয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে গঠিত কমিটির সদস্য ছিলেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম৷ তিনি জানান, অভিযোগ ওঠা নিবন্ধটিসহ সামিয়া-মারজানের যৌথভাবে লেখা মোট ৬টি নিবন্ধ আমরা পর্যালোচনা করেছি৷ প্রতিটি নিবন্ধে ৬০-৮০ শতাংশ করে চৌর্যবৃত্তি করা হয়েছে৷

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের নিজস্ব জার্নাল সোশ্যাল সায়েন্স রিভিউয়ে সামিয়া ও মারজানের নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছিল৷ জার্নালটির সম্পাদক ছিলেন অনুষদের তৎকালীন ডিন অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ৷ তিনি বর্তমানে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্বে আছেন৷

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক শাওলী মাহবুব বলেন, ‘কোনও লেখক নিবন্ধ লিখতে অন্য কোনও লেখকের বক্তব্য বা তথ্য ব্যবহার করতেই পারেন। তবে অবশ্যই রেফারেন্সিংয়ের সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রেফারেন্সিংয়ের দুটি নিয়ম রয়েছে। একটি প্যারাফ্রেজিং এবং অন্যটি কোট। প্যারাফ্রেজিং পদ্ধতি হচ্ছে অপর লেখকের বক্তব্যের মূল অর্থ অপরিবর্তিত রেখে নিজের মতো করে লেখা। তবে সেই বক্তব্যের শেষে অবশ্যই সঠিক নিয়মে লেখকের নাম, সাল এবং পাতার নম্বর ব্যবহার করতে হবে।

অন্যদিকে, কোট করে লিখতে হলে ওই লেখকের বক্তব্য হুবহু লিখে লেখক ও বইয়ের নাম কোটেশন মার্কের মধ্যে আবদ্ধ করতে হয়। তবে কোট বা প্যারাফ্রেজিং, যা-ই করা হোক অন্য লেখকের বক্তব্যটুকু উল্লেখ করার পর সাইডনোটে বা ফুটনোটে অথবা বইয়ের শেষে অ্যাপেন্ডিক্সে তথ্যসূত্র (সাইটেশন) উল্লেখ করতেই হবে। অন্যথায় তা চৌর্যবৃত্তির মধ্যে পড়বে।’

ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ২৯ অক্টোবর তাদের একাডেমিক অপরাধের শাস্তির সুপারিশ করতে আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন ও সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. রহমত উল্লাহকে আহ্বায়ক করে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আইনি সুপারিশ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহউদ্দিনকে দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট।

ট্রাইব্যুনাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শাস্তির বিষয়ে সুপারিশ জমা দিলে ২৮ জানুয়ারি ২০২১, বৃহস্পতিবার সিন্ডিকেটের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এতে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এই শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক থেকে এক ধাপ নামিয়ে সহকারী অধ্যাপক করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট।

আলোচিত সেই গবেষণা প্রবন্ধে তার সহকর্মী অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজানও শাস্তি পাচ্ছেন। তাকে শিক্ষা ছুটি শেষে চাকরিতে যোগদানের পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে।

এছাড়া পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির আরেক ঘটনায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক ওমর ফারুককে সহকারী অধ্যাপক থেকে প্রভাষক পদে অবনমন ঘটানো হয়েছে। তার ডিগ্রিও বাতিল করা হয়েছে।

অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, “সামিয়া রহমানকে দুই বছরের জন্য সহযোগী অধ্যাপক থেকে সহকারী অধ্যাপকে পদাবনমন করা হয়েছে। দুই বছর পর সিন্ডিকেট তার পদোন্নতির বিষয় বিবেচনা করবে।

“আর যেহেতু মারজান লেকচারার এবং বিদেশে অবস্থান করছে, তাই শিক্ষা ছুটি শেষে জয়েন করার পর দুই বছর একই পদে থাকতে হবে। দুই বছর লেকচারার হিসেবে চাকরি করার পর পদোন্নতির জন্য আবেদন করতে পারবে।”

অন্যদিকে পিএইচডি থিসিসে জালিয়াতির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ২০১৮ সালে সিন্ডিকেটের এক সভায় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ওমর ফারুকের ডিগ্রি বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু তখন তাকে একাডেমিক কোনো শাস্তি দেওয়া হয়নি।

তার শাস্তি নির্ধারণে গত ২৯ অক্টোবর সিন্ডিকেট সভায় সিন্ডিকেট সদস্য ও আইনজীবী এ এফ এম মেজবাহ উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়।

অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর বলেন, “ওমর ফারুককে শাস্তি হিসেবে সহকারী অধ্যাপক থেকে লেকচারার পদে ডিমোশন দেওয়া হয়েছে এবং তার থিসির প্রত্যাহার করা হয়েছে।”

সিন্ডিকেটের সদস্য হুমায়ুন কবির বলেন, “এত কম শাস্তির বিষয়ে সভায় বিরোধিতা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন)। তার যুক্তি ছিল, নৈতিকতার স্খলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চাকরি চলে যায়। এখন কারও ডিগ্রিতে যখন জালিয়াতি ধরা পড়ে, এর চেয়ে বড় নৈতিক স্খলন আর কী হতে পারে। তাকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য উনি প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সিন্ডিকেট তাতে দ্বিমত পোষণ করে তাকে ডিমোশন দিয়েছে।”

সামিয়া রহমান ও সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান

সামিয়ার অস্বীকার 

সামিয়া থিসি চুরি অস্বীকার করে এর সম্পূর্ণ দোষ চাপিয়েছেন শিক্ষক মারজানের ওপর। আর মারজান বলছেন, তার ওপর দায় চাপাতে চাচ্ছেন সামিয়া।

লেখা চুরির বিষয়ে সামিয়া রহমান বলেন, ‘‘মারজান আমার কাছে কয়েকবছর আগে চাকরির জন্য অনুরোধ করেছিল। আমি তাকে বেসরকারি টিভিতে চাকরি দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তার সঙ্গে আর্টিকেল লিখতেও অনুরোধ করে আমাকে। আমি রাজি হয়েছিলাম, কিছু আইডিয়াও দিয়েছিলাম।

পরে সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হলো। শিক্ষক হওয়ার পরে তার বিরুদ্ধে প্রায়ই অভিযোগ আসত আমার কাছে। তাদের সবার সাধারণ অভিযোগ ছিল, ‘সে একটা বেয়াদব।’ পরে আমিও অনেকদিন তার সঙ্গে আর যোগাযোগ করিনি।’’

সামিয়া রহমান বলেন, ‘‘পারিবারিক সমস্যার কারণে আমি অনেকদিন বিদেশে ছিলাম। এরই মধ্যে সে আমার নাম বসিয়ে আমাকে না জানিয়ে একটি লেখা ডিন অফিসে রিভিউয়ের জন্য জমা দেয়। সেটা আমাকে জানায় ডিন অফিস। শুনে আমি অবাক হয়েছিলাম। মারজানকে ফোন করলে সে বলে, ‘ম্যাডাম, আপনাকে দেখাতে পারিনি। ভুল হয়ে গেছে, মাফ করে দেন।’ ততদিনে রিভিউ কমিটি লেখা ছাপার অনুমতি দিয়েছে।

কিন্তু আমি বিদেশে থাকার কারণে লেখাটির কোনও কপিও আমার কাছে ছিল না। লেখা ছাপার পরে দেখলাম, অত্যন্ত নিম্নমানের একটি লেখা। সঙ্গে সঙ্গে আমি ডিন অফিসকে জানাই, এই লেখা আমার না। আমি এই লেখার দায়িত্ব নেবো না। চিঠির কপিও আমার কাছে আছে। তদন্ত কমিটি আমাকে ডাকলে আমি সবই দেখাব।’

তবে শিক্ষক মাহফুজুল হল মারজান দাবি করছেন, নিবন্ধের বড় একটি অংশই সামিয়া রহমানের লেখা। তিনি বলেন, ‘সামিয়া রহমান মিথ্যা বলছেন। তিনি ওই আর্টিকেলের প্রথম লেখক। আর্টিকেলটির একটি বড় অংশ তিনি লিখেছেন। আর তার লেখা অংশেই অভিযোগ এসেছে। তিনি কোন অংশটি লিখেছেন, তার প্রমাণ আমার কাছে আছে। মোট কথা, তিনি তো আমার সরাসরি শিক্ষক। ফলে তিনি নিজের দায় আমার ওপর চাপাতে চাইছেন।’

লেখা চুরির অভিযোগ জানাজানি হয়ে গেলে মারজান দাবি করেন, নিবন্ধের বড় একটি অংশই সামিয়ার লেখা। ওই অংশগুলোতেই চুরির অভিযোগ এসেছে। নিবন্ধ লেখায় দু’জনের অংশগ্রহণের তথ্যপ্রমাণও মারজান সরবরাহ করেছেন ।

মারজানের সরবরাহ করা ইমেইলের স্ক্রিনশট থেকে দেখা যায়, মারজান ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট ইমেইলের মাধ্যমে সামিয়া রহমানকে লেখার কাজ শুরুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। ওইদিনই মারজানকে একটি ফিরতি ইমেইলের অ্যাটাচমেন্টে একটি ফাইল দিয়ে সামিয়া রহমান বলেন, ‘সাঈদ, ফুকো, চমস্কি শুরু করেছি। দেখি, কতটুকু এগুতে পারি। তুমি ততক্ষণে এটা অনুবাদ করতে থাকো। আর শুরুটা আমি অনুবাদ করে ফেলেছি।’

এরপর ওই বছরের ২৯ আগস্টও দুই শিক্ষকের মধ্যে কয়েকটি ইমেইল আদান-প্রদান হয় ওই নিবন্ধ লেখা নিয়ে। পরে ২০১৬ সালের ১৯ জুন তাদের মধ্যে বেশকিছু ইমেইলে নিবন্ধ লেখা নিয়ে আলাপ হয়। ইমেইলগুলোর স্ক্রিনশট পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, শিক্ষক মারজানকে কাজের নির্দেশনা দিয়েছেন সামিয়া রহমান। মারজান সেগুলো শেষ করে আবার সামিয়া রহমানকে পাঠিয়েছেন। সামিয়া রহমান নিজেও লেখা পাঠিয়েছেন মারজানকে।

নিবন্ধটি লেখার বিষয়ে শিক্ষক মারজান বলেন, ‘মিশেল ফুকো, এডওয়ার্ড সাঈদের অংশগুলো সামিয়া রহমানেরই লেখা। সেগুলোর প্রমাণও আমার কাছে আছে।’

লেখায় দু’জনেরই প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল কিনা জানতে চাইলে সামিয়া রহমান ১ অক্টোবর বলেন, ‘আমি ওকে  (মারজান) কিছু আইডিয়া দিয়েছিলাম সেই ২০১৫ সালের দিকে। লেখার বিষয়ে আমাদের মধ্যে তো কথা হয়েছেই। সেই হিসেবে ওকে কিছু আইডিয়া দিতেই পারি। সেখানে ফুকো, চমস্কি, সাঈদের নিবন্ধের প্রসঙ্গও আসতে পারে। কিন্তু এগুলো তো যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে।’

সামিয়া রহমান আরও বলেন, ‘পরে দীর্ঘদিন ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বন্ধ ছিল। এরই মধ্যে সে নিজে নিবন্ধটির লেখা শেষ করেছে। আমাকে লেখার কোনও কপিও দেয়নি। নিবন্ধটি কিভাবে লিখলো, কোথাও কোনও সমস্যা আছে কিনা, সেটা তো আমাকে দেখিয়ে নেওয়ার কথা। কিন্তু আমাকে সে দেখায়নি। সে নিজে নিজে ডিন অফিসে লেখাটি জমা দিয়েছে। আমি সেটা জানতামই না।’

এ শাস্তির সিদ্ধান্ত না মেনে সভার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সামিয়া রহমান।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় শুক্রবার গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে সামিয়া রহমান বলেন, আমি সিন্ডিকেট সভার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করব। কারণ আদালত ডকুমেন্ট দেখবে, শিক্ষক রাজনীতির নোংরা খেলা খেলবে না আদালত।

তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনাল সিদ্ধান্ত দিয়েছে যে আমি থিসিস জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত না। এরপরও আমাকে ঢাবির সিন্ডিকেট দোষী সাব্যস্ত করেছে। আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ষড়যন্ত্র করেছে। তদন্ত শুরু হওয়ার আগেই আমাকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল।

তদন্ত কমিটির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তদন্ত শুরুতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের প্রথম নারী ডিন ড. সাদেকা হালিম আমাকে বার বার (সামিয়া) দোষী সাব্যস্ত করেন। অথচ ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে- আমার দোষ নেই। আমি দোষী হলে অ্যাডিটোরিয়াল বোর্ডকেও দোষী করতে হবে। মারজান তদন্ত কমিটির কাছে বারবার নিজের দোষ স্বীকার করে বলেছেন, সে অসাবধানতা ভুল করেছেন।

সামিয়া রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে যিনি চৌর্যবৃত্তির বিচার করেন তিনি কি বিচারক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন, সেটি নিয়েও প্রশ্ন আছে। সবার আগে চৌর্যবৃত্তি সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। সকল শিক্ষককের সম্মতিতে চৌর্যবৃত্তির সংজ্ঞা ঠিক করতে হবে। আমাদের এখনও চৌর্যবৃত্তির সুনির্দিষ্ট কোনও সংজ্ঞা নেই। গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি করলে সেখানে শাস্তি হোক এটি চাই কিন্তু গবেষণায় চৌর্যবৃত্তি কাকে বলে সেটির আগে সংজ্ঞায়িত করতে হবে।

সামিয়া রহমানের অন্য চাকরির অনুমতিপত্র নেই ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতরে

সামিয়া রহমান একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদেও চাকরি করেন। একজন শিক্ষক মূল চাকরির পাশাপাশি খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। তবে এজন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হয়।

কিন্তু সামিয়া রহমানের অন্য চাকরির অনুমতির কোনও কাগজ নেই ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতরে। টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরিটিকে তিনি খণ্ডকালীন দাবি করছেন। তবে এমন শীর্ষপদে চাকরি অস্থায়ী হয় না বলেই মনে করেন দেশের বিশিষ্ট সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।

ঢাবির রেজিস্ট্রার দফতর সূত্রে জানা যায়, একজন শিক্ষক কেবলমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি পান। তবে শর্ত হচ্ছে, এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজের বিভাগের নিয়মিত কাজকর্মের কোনও বিঘ্ন ঘটাবেন না। এছাড়া, একটি স্থায়ী চাকরির পাশাপাশি অন্য কোনও স্থায়ী পদে চাকরি করার নিয়ম নেই। তবে স্থায়ী চাকরি করতে হলে শর্তসাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের অনুমতি নিতে হয়।

একইসঙ্গে দুটি চাকরি করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম সরওয়ার ভূইয়া বলেন, ‘শিক্ষকরা অন্য কোনও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি, দেশের বাইরে যাওয়ার জন্য ছুটি, দেশের বাইরে স্কলারশিপ নিয়ে যাওয়ার জন্য ছুটি অথবা স্থায়ী কোনও চাকরি নিয়ে ছুটি চাইলে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর অফার লেটারসহ আবেদন করতে হয়। পরে নিয়ম অনুযায়ী তার ছুটি মঞ্জুর অথবা নামঞ্জুর করা হয়।’

খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি কিভাবে মেলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একজন শিক্ষক কেবলমাত্র একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই কাজের অনুমতি পাবেন। তবে কেউ যদি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চান তাহলে অবশ্যই সিন্ডিকেট সভা থেকে অনুমতির প্রয়োজন হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় কোনও শিক্ষক অন্যত্র স্থায়ী পদে চাকরি করতে চাইলে সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে অনুমতি নিয়ে তা করতে পারেন। তবে চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ চার বছরের জন্য বিনা বেতনে ছুটি নিয়ে দেশে বা দেশের বাইরে স্থায়ী পদে চাকরি করতে পারেন।’

ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সামিয়া রহমান বর্তমানে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরি করছেন। এর আগেও তিনি আরেকটি টেলিভিশন চ্যানেলের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স এবং প্রোগ্রাম এডিটর হিসেবে কাজ করেন।

কিন্তু তার অন্যত্র চাকরির অনুমতি বিষয়ে কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির সহকারী রেজিস্ট্রার মোক্তার হোসেন বলেন, ‘তিনি (সামিয়া) আবেদন লিখেছিলেন উপাচার্য বরাবর। তাই তিনি অনুমতির চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে আনলেও সেটি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলে তার কাজে অনুমতির কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই। তিনি যদি অন্যত্র কাজের অনুমতি পান তাহলে তৎকালীন উপাচার্যই তা দিয়েছেন। অনুমতি পেয়েছেন কিনা তার কোনও নথি বা এ সংক্রন্ত কোনও চিঠি রেজিস্ট্রার দফতরে নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক দাবি করেন সামিয়া রহমানের অন্যত্র খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি রেজিস্ট্রার দফতরের মাধ্যমেই হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সামিয়া রহমানের অন্যত্র খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি আমি দিয়েছিলাম। আর সেটি রেজিস্ট্রার দফতরের মাধ্যমেই হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, ‘সামিয়া রহমানসহ যাদের বিরুদ্ধে হঠাৎ নানা অভিযোগ উঠছে, তারা সবাই সাবেক উপাচার্য আরেফিন সিদ্দিকের ঘনিষ্ঠজন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান বলেন, ‘শিক্ষকরা খণ্ডকালীন কাজের অনুমতি চাইলে রেজিস্ট্রার দফতর বরাবর আবেদন করতে হয়। তারপর উপাচার্য চূড়ান্ত অনুমোদন দেন। কিন্তু যে অনুমতিগুলো সিন্ডিকেট পাঠানোর প্রয়োজন হয়, সেগুলো সেখানেই পাঠানো হয়। অনুমতি পাওয়ার পর রেজিস্ট্রার দফতরই তা বাস্তবায়ন করে।’

সামিয়া রহমান বরাবরই দাবি করছেন, তিনি ফ্রিল্যান্স হিসেবে টেলিভিশনটির হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স পদে চাকরি করছেন। এর আগেও তিনি যে টেলিভিশনগুলোতে কাজ করেছেন সেখানেও ফ্রিল্যান্স হিসেবে কাজ করেছেন।

হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, হেড অব নিউজ পদগুলো খণ্ডকালীন হতে পারে কি না জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজ) সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে একটি পেশাগত কাঠামো রয়েছে। চিফ রিপোর্টার, নিউজ এডিটর, হেড অব কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, হেড অব নিউজ­– এগুলো মৌলিক পদ। সেগুলো কখনোই খণ্ডকালীন হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ, এই পদগুলোতে যারা চাকরি করেন তাদের সার্বক্ষণিক কাজের মধ্যে থাকতে হয়, চিন্তার মধ্যে থাকতে হয়। তবে টেলিভিশনের ক্ষেত্রে এখনও সেভাবে পেশাগত কাঠামো ঠিক করা নেই। তবে মৌলিক পদ হওয়ায় খুব স্বাভাবিকভাবে এগুলো স্থায়ী পদ। ফলে এগুলো খণ্ডকালীন হওয়ার সুযোগ নেই।’

নিয়ম অনুযায়ী, কোনও শিক্ষক অনুমতি নিয়ে আরও দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মোট ৬ ঘণ্টা সময় খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। সেখান থেকে পাওয়া বেতনের ১০ শতাংশ তাকে নিজের প্রতিষ্ঠানে দিতে হয়। তিনি আদৌ এসব নিয়ম মানেন কিনা, তা অবশ্যই কর্তৃপক্ষের খতিয়ে দেখা উচিত।’

ভিসি আক্তারুজ্জামান ও ডিন সাদেকার আক্রোশের শিকার সামিয়া মৃত্যু শয্যায় : পিতার স্ট্যাটাস

সিন্ডিকেট সিদ্ধান্ত জানানোর পর সামিয়া রহমানের পিতা কাজী মাহমুদুর রহমান তার ফেসবুক ওয়ালে একটি পোস্ট দেনঃ

সবার অবগতির জন্যে জানাচ্ছি যে আমার কন্যা সামিয়া রহমানকে তার নামে মুদ্রিত নিবন্ধে ফুকোর বক্তব্যের কিছু অংশ প্লেগারিজমের দায়ে অভিযুক্ত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন সাদেকা হালিমের সিন্ডিকেট চক্রটি তার পদাবনতি ঘটিয়েছে। অথচ বিতর্কিত এই নিবন্ধটি সামিয়া লেখেনি, সে তাতে স্বাক্ষর করেনি এবং নিজেও জমা দেয়নি। সামিয়ার নামে এই কাজটি করেছিল ষ-ড়য–ন্ত্রী-দের পক্ষে ক্রিমিনোলজির সহকারী অধ্যাপক মারজান। বিষয়টি সামিয়া রহমান পরে জানার পর সে এর তীব্র প্রতিবাদ জানায় এবং নিবন্ধটি যে সে লেখেনি সে বিষয়ে তার সকল প্রমাণ পত্র পেশ করে। কিন্তু ভিসি আক্তারুজ্জামান ও ডিন সাদেকা হালিম তার সকল প্রমাণ পত্র উপেক্ষা করে।

কারণ পূর্ব থেকেই তারা সামিয়ার প্রতি বিরূপ ও -হিং-সা-পরায়–ণ ছিল। তারা ক্ষমতায় আসার পর সামিয়াকে শাস্তি দিতে মারজানকে দাবার ঘুটি হিসাবে ব্যবহার করে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে। গত তিন বছর যাবত ভিসি আক্তারুজ্জামান ও ডিন সাদেকা হালিম বিভিন্ন সময়ে সামিয়াকে চূড়ান্ত ভাবে অপমানিত ও বিপর্যস্ত করেছে। ট্রাইবুনালের পর্যবেক্ষণ ও অন্যান্য অধ্যাপকদের মতামত উপেক্ষা করে তারা বিচারের নামে প্রহসন করে সামিয়াকে পদাবনতি করে সহকারী অধ্যাপক করেছে এবং তাদের ষ-ড়-য-ন্ত্রের দাবার ঘুটি মার-জা-নকে পুরস্কার স্বরূপ পূর্বেই স্কলারশিপ দিয়ে আমেরিকায় পাঠিয়ে দিয়েছে ।

ভিসি আক্তারুজ্জামান ও ডিন সাদেকা হালিমের ব্যক্তিগত আ-ক্রো-শে-র শি–কার নি-র্যা-তিত সামিয়া রহমান কয়েকবার আ-ত্মহত্যা–র চেষ্টা করেছে। কিন্তু আমাদের ও তার স্বামী ও সন্তানদের কড়া পাহারায় তা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। কিন্তু এখন আমাদের পক্ষেও তাকে এ ভাবে বাঁচিয়ে রাখা আর সম্ভব হচ্ছে না।

সামিয়া বলতে গেলে এখন মৃত্যু শ-য্যা-য়। আশংকা করছি শীঘ্রই আমাদের অ-জ্ঞাতে সে হয়তো মৃত্যু-কেই বরন করে নেবে। ডাক্তার বলেছেন মানসিক বিপর্যয়ে তার শারীরিক অবস্থা গভীর সংকটে। লাংস অত্যন্ত দুর্বল , অ-ক্সিজেন লেভেল এখন একাত্তরে।বেঁচে থাকার জন্যে নুন্যতম প্রয়োজন নব্বই। আমাদের সতর্ক-তা সত্ত্বেও অনকাংখিত তার এই দুঃখজনক মৃ-ত্যু যদি ঘটে তার জন্যে একমাত্র দায়ী ভিসি আক্তারুজ্জামান ও ডিন সাদেকা হালিম । তার মৃত্যু ঘটলে আমরা কারো দোয়া বা সহানুভূতি চাই না। কারণ আপনাদের অধিকাংশই ইতোমধ্যে সামিয়ার চ-রি-ত্র হন-নে বিপুল উৎসাহ, আনন্দ পেয়েছেন। বাংগালি জাতির চরিত্রে এটাই স্বাভাবিক।তবে সামিয়ার অকাল মৃত্যু ঘটলে এর জন্যে দায়ী ভিসিআক্তারুজ্জামান ও তার ডিন সাদেকা হালিমকে আমরা রেহাই দেব না।”

না জেনেই লোকে মায়ের সমালোচনা করছে : সামিয়া রহমানের ছেলে

সামিয়া রহমানের বিরুদ্ধে ‘লেখাচুরি’র অভিযোগ উঠার পর ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিল তাঁর ছেলে রাশাদ হোসাইন। ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ বিকেলে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে রাশাদ দাবি করে, তাঁর মায়ের ওপর আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন। কিছু না জেনেই লোকজন অন্ধভাবে সমালোচনা করছে।

ইংরেজি ভাষায় দেওয়া স্ট্যাটাসটিতে রাশাদ লিখেছে, ‘গত কিছুদিন ধরে আমার মা টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক সামিয়া রহমান অন্য কারো লেখাচুরির অভিযোগের মুখোমুখি হচ্ছেন। এ বিষয়ে আমি বলবো, এটা ভিত্তিহীন অভিযোগ ছাড়া্ আর কিছু নয়।’

নিজের দীর্ঘ স্ট্যাটাসটি সবাইকে পড়ার অনুরোধ জানিয়ে রাশাদ লিখেছে, ‘ঢাকা ট্রিবিউনে প্রথম খবরটি প্রকাশিত হয়। আরো কিছু সংবাদমাধ্যম খবরটি প্রকাশ করলে এটি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর লোকজন আমার মায়ের সমালোচনা করতে থাকে। এই অবস্থানে পৌঁছাতে তাঁর ২০ বছরের বেশি সময়ের কঠোর পরিশ্রম, পুরো পরিবারের দিকে কালি ছুড়তে শুরু করে। আসলে কী ঘটেছে, তার বিন্দুমাত্র না জেনেই লোকে অন্ধভাবে মায়ের সমালোচনা করছে।’

রাশাদ লিখেছে, ‘এই ঘটনার শুরু এক অথবা দুই বছর আগে। আমার মায়ের একজন ছাত্র সৈয়দ মারজান (এ ঘটনার খলনায়ক) যৌথভাবে একটি নিবন্ধ লেখার প্রস্তাব দেয়। প্রথমে সায় দিলেও পরে মারজানের লেখার ধরন ও দৃষ্টিভঙ্গি তিনি পছন্দ করছিলেন না। ওই নিবন্ধ লেখা থেকে তিনি নিজেকে সরিয়ে নেন। এক বছর কেটে যায়। এরপর ঘটে বাজে ঘটনাটি। বইয়ের লেখা থেকে লোকজন খুঁজে বের করে, অন্য কিছু জার্নাল থেকে প্রচুর রেফারেন্স নেওয়া হয়েছে।

এরপরই অন্যের লেখা নেওয়ার ব্যাপারে জানতে লোকজন মাকে ফোন করতে শুরু করে। ঢাকা ট্রিবিউন এ নিয়ে রিপোর্ট করে। মারজানের পরিচয়ে থাকা শয়তান তাৎক্ষণিকভাবে আত্মপক্ষ সমর্থন করে। সবাইকে বলতে থাকে, নিবন্ধটির মূল লেখক সামিয়া, আর সে শুধু সামিয়ার আদেশ পালন করেছে। আমি নিশ্চিত, বই প্রকাশ করতে গিয়ে অন্যের নাম ব্যবহার করা অপরাধ।

আমার মা দয়ালু ছিলেন বলেই তার নামে মামলা করেনি। সত্যি বলতে, মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মারজান প্রত্যেক সাংবাদিকদের বলছে, সব দোষ সামিয়ার। প্রায় সবাই আমার মায়ের বিরুদ্ধে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, অনেক সাংবাদিক, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা কেউই তাঁর পাশে নাই।

এর কারণ একটাই—অভ্যন্তরীণ রাজনীতি। কঠোর পরিশ্রম ও নিজের ব্যক্তিগত সময় ব্যয় করে তিনি যে খ্যাতি অর্জন করেছেন, তা ধ্বংস হয়ে গেছে।’

রাশাদ লিখেছে, ‘আমার মা আতঙ্কগ্রস্ত ছিলেন। অতি সংবেদনশীল মানুষ হয়েও তিনি এসব সংবাদের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া দেখাননি। লোকজন উল্টো অন্ধভাবে আমার মায়ের সমালোচনা করতে থাকে। এমনভাবে প্রচারনা করেতে থাকে যেন মা তাঁর পুরো ক্যারিয়ারে কেবল প্রতারনাই করে গেছেন।

এটা খুবই বাজে পরিস্থিতি। দুশ্চিন্তা করার বদলে ছেলের ফেসবুকে লেখা অনেকের কাছে হাস্যকর মনে হতে পারে। তবে ব্যাপারটা এমন নয়। এ ঘটনা আমার জীবন নষ্ট করে দিচ্ছে বলেই লিখছি। আমাদের পরিবার খুব দুঃসহ সময়ে আছে, মায়ের জীবন দুর্বিসহ। আর সবই হয়েছে কেবল একটি মানুষের জন্য।’

রাশাদ জানায়, সংবাদ সম্মেলন অথবা আদালতে সব খুলে বলা হবে। সেটা খুব দ্রুত অথবা দেরিতে। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের সব কিছু থাকার পরও তাঁর মা এসব চালিয়ে যাবার ইচ্ছাশক্তিটুকুও পাচ্ছেন না। এর কারণ ফেসবুক পোস্ট।

মায়ের প্রতি ঘৃণাকারীদের প্রতি রাশাদের প্রশ্ন, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন সাংবাদিক, যার বই অ্যামাজনের মতো ট্রিলিয়ন ডলারের প্রতিষ্ঠানে আছে, তিনি স্থানীয় একটি জার্নালের প্রকাশের জন্য কি অন্যের লেখা চুরি করবেন?

ঘৃণাকারীদের উদ্দেশে রাশাদ লিখেছে, কেবল ঈর্ষা থেকে তাঁর মায়ের সঙ্গে এমন আচরণ করা হয়েছে। তাঁর মা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেরা ছাত্রী ছিলেন। দুবার স্বর্ণপদক জিতেছেন। নিউজটোয়েন্টিফোরবিডিতে শীর্ষপদে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশের শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘকাল ধরে অধ্যাপনা করছেন।

গত দু্ই দশকের বেশি সময় ধরে তিনি তিলে তিলে নিজেকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এখনও কর্মজীবনকে সমৃদ্ধ করার জন্য নিত্য পরিশ্রম করছেন। এর পরও ঘৃণাকারীরা ঘৃণা করবেই। কারণ এতেই তারা সুখ খুঁজে পায়।

মায়ের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে রাশাদ লিখেছে, ‘দয়া করে সত্যি কথাটা আপনার আত্মীয়-স্বজনের কাছে ছড়িয়ে দিন। যেন তাঁরা আত্মবিশ্বাস পান, শত্রুদের মোকাবিলা করতে পারেন। আমার মায়ের ক্যারিয়ার ধ্বংসের মুখে। কিছু লোক কিছুতেই তাদের ধারনা বদলাবে না। সমালোচনা করবেই।

এর কারণ, একজন নারী মিডিয়ায় এতটা সম্মানজনক পদে আছেন। সবার প্রতি অনেুরোধ, ঘটনাটি আপনাদের আত্মীয়-স্বজনকে জানান। এতটা পর্যন্ত পড়ার জন্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনাদের সহায় হোন।’

তথ্য উপাত্তঃ বিডিনিউজ, বাংলা ট্রিবিউন