রিলিজিয়াস ব্লাসফেমির চেয়ে ভয়াবহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হিস্ট্রিক্যাল ব্লাসফেমি

মো: আদনান আরিফ সেলিম

মো: আদনান আরিফ সেলিমঃ প্রজন্মের পর প্রজন্মকে রিলিজিয়াস ব্লাসফেমির ভয় দেখানো বুড়ো ধাঙড় টকমারানিরা আস্তে আস্তে দেশটাকে হিস্ট্রিক্যাল ব্লাসফেমির দিকে ঠেলে দিলো।

টাকা কামানোর নানা ধান্দায় থেকে সারাদিনে একটা বইয়ের পাতা উল্টানোর উপযুক্ত সময় বের করতে না পারা বুদ্ধিজীবী সাজা আজব চিজগুলো এক একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধীরে ধীরে বিপন্ন কোনো আস্তাবল-গোয়ালের রূপ দিয়েছে ইতোমধ্যেই।

কেউ কেউ বলতে পারেন নিজে একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করে কিভাবে এদের বিরুদ্ধে এমন শক্তহাতে প্রতিবাদে নামতে বাধ্য হলাম।

সহজ উত্তর হিসেবে বলতে চাই চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত যে ধারার জমিদারি প্রথার সৃষ্টি করেছিল সম্প্রতি কিছুলোক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিজ নিজ এস্টেট তথা জমিদারী মনে করে।

একজন ইতিহাসের শিক্ষক ও বিবেকবান মানুষ হিসেবে সেটা হতে দিতে পারি না। তাই প্রতিবাদ করে যাওয়াটা কর্তব্য মনে করছি।

কৃষক যেমন তার গোয়ালে গরু-ছাগল নিয়ে বাঁধে এরা নিজেদের কু-সন্তানকে দাফন করার মতো কোনো গোরস্তানও পায় না।

সবগুলোকে নিয়ে কবর দেওয়া লাগে স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ে এনেই। জন্মের পর থেকে শক্তিমান মা-বাপের হারাম রোজগারে ঘি-মাংস খেয়ে বড় হওয়া রাজ্যের অলস এসব দোপেয়ে জন্তুর নামের পাশে শিক্ষক পদবী লাগলেও আদতে থেকে যায় অমানুষ।

তাই আমরা দেখি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহান বিজয় দিবসের ফুল দিতে গিয়েও গরু ছাগলের চাড়িতে মুখ দেওয়ার মতো গুঁতোগুঁতি হয়।

পাবিপ্রবিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ নিয়ে শিক্ষকদের হাতাহাতি
পাবিপ্রবিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ নিয়ে শিক্ষকদের হাতাহাতি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজয় দিবসের ব্যানারে আমরা দেখি শহীদ মিনারের ছবি।

আরেককাঠি সরেস হয়ে বেরোবিতে জাতীয় পতাকার মাঝের লাল হয়ে গেছে চতুষ্কোণাকৃতির একটা আজগুবি অবয়ব।

পড়ুনঃ চবিতে বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনারের ছবি

চতুর্ভুজ আকারের লাল বৃত্ত আকা পতাকা হাতে বেরোবি শিক্ষকরা

পড়ুনঃ জাতীয় পতাকা বিকৃতির দায়ে ভিসি কলিমউল্লাহসহ ৯ শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের

আমাদের অন্তকরণ শেষ হয়ে গেছে। যারা নিজেকে জাতির বিবেক দাবি করে তারা চোর-চোট্টা আর ছোটলোক। কথিত বড় বড় অধ্যাপক যেখানে সামান্য ৫০ হাজার টাকা ফেলোশিপের লোভ সামলাতে পারে না সে দেশে আমরা প্রত্যেকেই অভিবাসী।

রাষ্ট্রব্যবস্থা, সরকার কিংবা পরিস্থিতির দোষ দিয়ে লাভ নাই, কমবেশী আমরা সবাই এর জন্য দায়ী। তাই জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে এসব ‍বুড়ো শকুন, যেখানে পতাকার গোলাকৃতির লাল যন্ত্রণায় চারকোণা হয়ে গেছে।

আমরা যারা ভাল রেজাল্ট করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হওয়ার লোভে শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় সত্য বলতে ভয় পাই। যদি ভাগ্যগুণে শিক্ষক হই তারপর প্রমোশন আটকাবে এই দুশ্চিন্তায় সত্য বলতে ভয় পাই।

প্রমোশন আটকানোর ভয় পার হলে পেয়ে বসে পদ-পদবীর লোভ। কথিত শুদ্ধ অন্তঃকরণ ওয়ালা ঐসব মানুষ প্রতিবাদ করা দূরে থাক আমরা যারা সাহস করে দুই কথা লিখি তাদের লেখাগুলোও এড়িয়ে যায়।

কিন্ত সত্যটা মোটেও তেমন নয়। আপনি যদি বিশ্বাসী মুসলিম হন আপনার মনে করা উচিত আপনার রিজিকের মালিক মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।

আর যদি অবিশ্বাসী হন, জেনে রাখুন আল্লাহ আপনার প্রাপ্য কর্মফলও আপনাকে দেবে। যাই হোক আপনারা যারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেন, পাশাপাশি কম নম্বর দেওয়ার ভয়ে শিক্ষক নামধারী জন্তুগুলোকেও ভয় পান, তারা মূলত নব্য মুশরিক।

অপকর্মের প্রতিবাদ যদি জীবনে অসফল হওয়ার কারণ হয়ে থাকতো স্কুল জীবনে থাকতেই আমার লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। আমার স্কুলে মাস্টারি করা ঐসব লোক (শিক্ষক বলছি না ওদের।

আবদুল হাই, রায় বাটাল, রবি চিটার কিংবা নায়েম ভোকরা) আমার এস এস সির সার্টিফিকেট নিয়ে বের হতে দিতো না।

কলেজে গিয়েও পরিস্থিতি অন্যথা ছিল না। গণিতের পরিমল স্যার আর তার ছেলে যে ইতরামি করেছে সেখানে সরাসরি প্রতিবাদ করেছি। স্পষ্ট বলে দিয়েছি আপনার কিংবা আপনার ছেলের কাছে প্রাইভেট পড়ার আমার দরকার নাই।

তার ধারাবাহিকতা বিশ্ববিদ্যালয়েও অব্যহত ছিল। সাধারণ টার্মিনোলজি না বোঝা জনৈক শিক্ষিকা গায়ের জোরে সব মুখস্থ করাতে চাইতেন। উনার বিরুদ্ধে এমন ভয়াবহভাবে প্রতিবাদ করেছিলাম যা কমবেশি অনেকের মুখে মুখে গল্প হয়ে ফেরে।

এর বাইরে আরও কয়েকজন গুণধর শিক্ষক শিক্ষিকা ছিলেন যারা আমার নাম শুনলেও রাগে ঘৃণায় সোজা বেসিনে গিয়ে কুলি করতেন। কিন্ত তাদের সাহসও হয়নি আমার মুখোমুখি দাঁড়ানোর। এর এমনি ঘটনা প্রমাণ করে, প্রতিবাদ ক্যরিয়ারের জন্য হুমকি নয়, বরঞ্চ মানুষের আত্মবিশ্বাস প্রলম্বিত করে।

কিন্ত সেই শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে আমি বিশ্বাস করি ‘পৃথিবীটাকে ধ্বংস করার কোনো ক্ষমতা খারাপ লোকেদের নাই।

পৃথিবী ধ্বংস হবে কথিত ভাল লোকের মুখোশধারী ক্লীবদের নীরবতায়’। তাই যারা অসভ্য, ইতর এবং জঘন্য ছোটলোক তাদের আগে ভদ্রলোকের মুখোশধারী ধান্দাবাজদের ছ্যাঁচা দেওয়া দরকার। কারণ এরা কেনো অন্যায়ের প্রতিবাদ তো করেই না, যে করে তাকে বাধা দেয়।

প্রকারন্তরে এরাই দুষ্কৃতিকারীদের মূল পৃষ্ঠপোষকের দায়িত্ব পালন করে।

এটা সত্য যে সবথেকে উপযুক্ত সক্ষমতা থাকার পরেও আমি নিজ বিভাগে শিক্ষক হতে পারিনি। হয়ত কেউ কেউ বলবেন এটা আমার জঘন্য রকম প্রতিবাদী চরিত্রের ফল যা আমি বিশ্বাস করি না।

মূল সমস্যা হচ্ছে মেরুদণ্ডহীন শিক্ষকরা তাদের পা-চাটা লোক নিয়ে বিভাগ নিয়ে বিভাগ ভরতে চান। এখানে সবথেকে বড় যোগ্যতা চাটুকারিতা, নির্লজ্জতা আর আত্মীয়তার কোটা। আমি অন্তত এমন বিশাল গুণের মধ্যে কোনোটারই অধিকারী হতে পারিনি।

আর সেজন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা।

সিনিয়র অধ্যাপকরা ইতোমধ্যেই স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়কে কোরবানি দিয়ে ফেলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়গলোর মাংস কাটাকাটি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে।

এবার বণ্টনের পালা। উনারা প্রথমেই নিজের ভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় নাম জমিদারিতে স্ব স্ব সন্তানের অংশ দাবি করছেন। তারপর বাকি থাকে আত্মীয়স্বজন আর পা-চাটা কুকুরতূল্য মিসকিনের দল।

পড়ুনঃ নিয়ম পরিবর্তন করে ভিসির মেয়ে ও জামাতার নিয়োগ নিয়ে শাস্তির মুখোমুখি রাবির ৭ শিক্ষক-কর্মকর্তা

যাদের একটারও পারতপক্ষে কোনো যোগ্যতা নাই। এজন্যই চারকোণা লাল জাতীয় পতাকা, ফুল দিতে গিয়ে ষাঁড়ের মতো ‍গুঁতোগুঁতি কিংবা বিজয় দিবসের ব্যানারে শহীদ মিনার এতো স্বাভাবিক ঘটনা।

লেখকঃ মো: আদনান আরিফ সেলিম
সহকারী অধ্যাপক
ইতিহাস বিভাগ
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়