বেস্টসেলার বই গুলো সমসাময়িক সমাজ ও রুচির বহিঃপ্রকাশ

১০ বছর আগে, ২০১১ সালে বই মেলার বেস্ট সেলার ছিল হুমায়ূন আহমেদের কোন একটা বই। তখন অনেকে এসব নিয়ে হায় হুতাশ করত – কিভাবে হুমায়ূন আহমেদের মত একজন বাজারী লেখকের বই বছরের পর বছর বেস্ট সেলার হয়!

আমাকে কেউ যদি বলত ১০ বছর পরে ২০২১ সালে বইমেলার বেস্ট সেলার হবে “ঘরে বসে Spoken English” আমি জীবনেও বিশ্বাস করতাম না! “ঘরে বসে Spoken English” বইটা আমি পড়ে দেখি নাই, বইটা খুব ভালো হবে আশা করি।

“ঘরে বসে Spoken English” বইটার ক্রেতা একটা বিশেষ শ্রেণীর পাঠকেরা, যাদের অধিকাংশই হয়ত লেখিকার ইউটিউব চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবার। যেই কন্টেন্ট হয়ত ফ্রি তে ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে তা পাঠকেরা টাকা দিয়ে মেলা থেকে কিনছেন- ব্যাপারটা কিনতু বেশ পজেটিভ। এরকম অতীতে দেখা যায়নি, বরং পাইরেসী করা বইয়ের পিডিএফ ইন্টারনেটে ছড়ানোর মত ঘটনা ঘটেছে।

আশঙ্কার ব্যাপারটা অন্যখানে। এখনকার পাঠকেরা এমন সব বই কিনতে চান, যা পড়ে তাদের “লাভ” হবে। “ঘরে বসে Spoken English” বইটা তিনি কিনছেন কারণ তার লক্ষ্য এই বইটা পড়ে তিনি কিছু ইংরেজী ভোকাবুলারী শিখবেন, যেটা তার চাকরী/ভর্তি/একাডেমিক পরীক্ষায় কাজে লাগবে।

এমাজন বা নিউ ইয়র্ক বেস্ট সেলার বুক লিস্টে প্রথম দিকে সবসময়ই ফিকশন/অটোবায়োগ্রাফী জনরার বই ঘুরাফেরা করে, সাথে প্রবন্ধ বা মোটিভেশনাল বই যে একেবারে থাকে না এমনটা নয়। তাদের সাথে আমাদের মূল পার্থক্য তারা সারা বছরই বই কেনেন, আমরা বছরে একমাস বই কিনি। সেই একমাসের বই বিক্রির পরিসঙ্খ্যানে যখন দেখায় “সবার জন্য Vocabulary”, “ঘরে বসে Spoken English”, “প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ”, “নেভার স্টপ লার্নিং” বা “স্টুডেন্ট হ্যাকস” বইগুলো বিগত বছরগুলোতে বেস্ট সেলার হইছে তখন তা দেশের একটা পুরা জেনারেশনের মূলধারার পাঠকদের প্রায়োরিটি ব্যাসিসের যে ফেইজশিফট হইছে তার ইঙ্গিত দেয়।

আজকে থেকে ১০ বছর পর ২০৩১ সালে মিলিয়ন সাবস্ক্রাইবার ওয়ালা বিসিএস এমপিথ্রি চ্যানেলের সুশ্রী চেহারার কোনো ইউটিউবারের লেখা “ঘরে বসে BCS” বা “সবার জন্য Bank Job” বেস্ট সেলার হবে- এরকম প্রফেসীতে আমি অবিশ্বাস তো করবই না বরং এটাই অবশ্যম্ভাবী বলে মনে হইতেছে।

লেখকঃ ইউনিভার্সিটি ওব টেনেসি, নক্সভিল এ কর্মরত