‘মারা গিয়েছে’ মানে কী? বলুন খুন হয়েছে

আপনারা পারেনও!

“মারা” গিয়েছে মানে কি?

আপনারা কি বলতে চাইছেন সে মনের আনন্দে “মরে” গিয়েছে?

তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এই রাষ্ট্র তাকে হত্যা করেছে।

সে কি নিজে নিজে গ্রেফতার হয়ে গিয়েছিল? কে তাকে গ্রেফতার করেছে?

এই দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

এরপর? এরপর তিনি একবার-দুইবার না ছয় ছয় বার জামিন চেয়েছেন। কিন্তু পাননি।

কে তাকে জামিন দেয়নি?

এই দেশের বিচার বিভাগ। এই দেশের বিচারকগণ।

কেন তাকে জামিন দেয়া হয়নি? কোন আইনে তাকে ধরা হলো? কে করেছে সেই ডিজিটাল আইন?

এই দেশের সরকার।

এরপরও আপনারা এসে লিখছেন- আহা, “মরে” গেল মানুষটা!

আপনাদের এই আক্ষপ-আফসোসের কোন দরকার নেই। “মরে” গিয়েছে বলে আপনারাও আসলে এই হত্যার শামিল হয়েছেন।

তাকে হত্যা করা হয়েছে। হ্যাঁ, এই রাষ্ট্র তাকে হত্যা করেছে।

আজ দুপুর পার হয়ে গিয়েছে। এখন অবদি ময়না তদন্ত হয়নি। কেন হয়নি?

গল্প সাজাতে হবে না?

এরপর চমৎকার করে গল্প বানানো হবে। সেই গল্প আমাদের পত্র-পত্রিকা, টেলিভিশনে প্রচারও করা হবে।

কারা করবে জানেন?

এই দেশের শিল্প-সাহিত্য চর্চা করা মানুষ গুলো। সাংবাদিক বনে যাওয়া গণমাধ্যমকর্মী গুলো! এবং বুদ্ধিজীবী বনে যাওয়া শিক্ষক-আমলা গুলো!

আর এই আমরা, হ্যাঁ, এই আমরা এদেরকেই এই দেশের আইডল-সেলিব্রেটি বানাই!

এইতো কিছুক্ষণ আগেও দেখলাম দেশের নামকরা লেখক (!)-প্রকাশকরা নিজদের বই কতো ভালো; কি পরিমাণ বিক্রি হচ্ছে; নিজেরা কতো বড় সেলিব্রেটি এইসব নিয়ে কথা বলছেন- লিখছেন!

অথচ একজন মানুষকে শুধুমাত্র লেখালেখির জন্য হত্যা করা হলো, এই নিয়ে তাদের কিছু যায় আসছে না।

আর আমরা এদেরকেই সেলিব্রেটি বানাই।

এইসব সেলিব্রেটি দেশের জন্য, সমাজের জন্য, আমার-আপনার জন্য আসলে কী করেছে? কেন এরা এরপরও সেলিব্রেটি হয়ে যাচ্ছে?

কারন আমরাও এমনই।

অথচ মুশতাক ভাই দেশের মানুষের কথা ভাবত। দুর্নীতি নিয়ে কথা বলত। হত্যা-লুটপাট নিয়ে কথা বলত।

তিনি নিজে কী কোন দুর্নীতি করেছেন?

ক্যাডেট কলেজে পড়াশুনা করেছেন। আমাদের সময় দেশ সেরা ছাত্র না হতে পারলে এক জীবনেও ক্যাডেটে চান্স পাওয়া সম্ভব হতো না।

বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করে দেশে ফিরেছেন। কুমীর চাষের মতো ব্যতিক্রম কিছু করেছিলেন।

এতো কিছুর মাঝেও শুধু নিজেকে নিয়ে পড়ে থাকেন’নি। দেশ নিয়ে, দেশের সমাজ নিয়ে ভেবেছেন।

কিন্তু রাষ্ট্র এটা চায় না। উনাকে হত্যার মাধ্যমে রাষ্ট্র কি বুঝিয়ে দিয়েছে জানেন?

কোন কথা বলা যাবে না। ফুল-পাখি-লতা পাতা নিয়ে পড়ে থাকো। আমরা ইচ্ছা মতো লুটপাট করবো। ব্যাংক ডাকাতি করবো। হত্যা-ধর্ষণ, সবই করবো।

তোমাদের কাজ হচ্ছে- আমাদের সকল কিছু দেখে যাওয়া।

আর আপনারাও ভাবছেন- আমি তো আর কিছু লিখছি না। আমি তো আর কিছু বলছি না। আমার কিছু হবে না!

এই রাষ্ট্র একদিন আপনাকেও হত্যা করবে- স্রেফ চোখ দিয়ে দেখার জন্য। কিংবা কান দিয়ে শুনার জন্য।

এখনও সময় আছে- প্রতিবাদ করুন।

মুশতাক ভাই “মরে” যায়নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে।

এই রাষ্ট্র তাকে হত্যা করেছে। এটি একটি খুনি রাষ্ট্র। আমরা এই খুনি রাষ্ট্রের বিচার চাই।

লেখকঃ

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক