ইজরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনকে ভারত কিভাবে দেখবে?

ফেসবুকে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে সরকার নাকি অদূর ভবিষ্যতে ইজরায়েলের সাথে অফিশিয়াল সম্পর্ক তৈরির পথে হাটছে।

সৌদি ও আরব আমিরাতে বাংলাদেশের বিপুল জনগোষ্ঠী কাজ করে। যেহেতু এই দুটা আরব দেশই ইজরায়েলের আন অফিশিয়াল এলাই তাই ইজরায়েল ইস্যুতে নমনীয় হওয়ার জন্য ৩য় বৃহত্তম মুসলমান অধ্যুষিত দেশ বাংলাদেশের উপরে তাদের একটা প্রচ্ছন্ন চাপ থাকবেই।

একই চাপ পাকিস্তানের উপরেও আছে। সরকারের জন্য এ ইস্যুটাও মাল্টিরোল জেট ফাইটার ক্রয়ের মতই একটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্ড।

এখন যদি সত্যি সত্যিই বাংলাদেশ সরকার টু স্টেট সল্যুশনের ভিত্তিতে ( জেরুজালেম ছাড়া ফিলিস্তিন) আসলেই ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক তৈরির স্টেপ নেয় তাহলে ভারত কি সেটা সমর্থন করবে? যদিও ভারতকে মনে হয় তারা ইজরায়েলের চেয়েও বড় জায়নিস্ট।

তারা সমর্থন দিবে সহায়তা করবে হয়তো। কিন্তু এখানে ছোট্ট একটা ব্যাপারে ভার‍তের কিছুটা দ্বিধাদ্বন্দ থাকার কথা এবং যার কারণে তাদের জন্য খুব টাফ এবং ক্রুশিয়াল সিদ্ধান্ত হবে বাংলাদেশকে অফিশিয়ালি ইজরায়েলের সাথে সম্পর্ক গড়তে দেয়া।

নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া একটা সেন্সেটিভ যায়গা ভারত চীন উভয়ের জন্যই। এবং এই নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়ার মিথে একটা জ্যুইশ ডায়াস্পোরার গল্প আছে এবং এই অঞ্চলের বড় একটা অংশ ক্রিশ্চিয়ান। মনিপুর এবং মিজোরামের বড় একাংশের মানুষ নিজেদেরকে ইহুদিদের হারানো ১২ গোত্রের এক গোত্র “বনি মেনাশ” গোত্রের মানুষ বলে বিশ্বাস করে। আর কে না জানে পলেটিক্স ও মিলিটারি স্ট্র‍্যাটেজিতে ধর্ম সবসময়ই খুব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

চীন এখনো মধ্যপ্রাচ্যের দুয়ারে অপেক্ষায় আছে। পুর্বে পারস্য ও পশ্চিমে জিবুতি পর্যন্ত তাদের ফুটস্টেপ। কিন্তু মুল খেলার ময়দানে সরাসরি ঢুকার সুযোগ তাদের হয় নাই। জীবাশ্ম জ্বালানী শেষ হয়ে গেলেও মিডিলইস্ট সুয়েজ ক্যানেল, লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর এবং তিনটা আব্রাহামিক ধর্মের উৎপত্তিস্থল হিসেবে আরো বহু যুগ ধরেই গুরুত্বপূর্ণ থাকবে।

তাই খেলার ফল নির্ধারনি তিন ধর্মের মিলনস্থল আরব তথা লেভেন্টে ও এর আশেপাশে আরো ভালোভাবে পা রাখতে চীনের খুব জরুরী দরকার আব্রাহামিক ধর্মে একটা স্পেস। কোনো ভাবে একটা ইমোশনাল কানেকশন।

আর চীনকে নিজের প্রমিসল্যান্ড (নীলনদ টু ইউফ্রেটিস) এর এলাকা থেকে দূরে রাখতে কিংবা অন্ততপক্ষে বন্ধু না হোক নিরাপদে কন্টেইন করে রেখে মিডিলইস্টে নিজের সরাসরি প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখতে না চাওয়ার জন্য ইজরায়েলের প্রচেষ্টা অবশ্যই থাকবে।

এরজন্য তাদের নিরাপদ অথচ বিনিময় যোগ্য কিছু হাতে রাখতে চাওয়ার কথা যাতে তারা চীনের সাথে প্রয়োজনে বিনিময় করতে পারে। এন্ড অফ দ্যা ডে জ্যু এবং চীনা উভয়ই ভালো ব্যাবসায়ী।

বাংলাদেশের সাথে যদি অদূর ভবিষ্যতে ইজরায়েলের কোনোপ্রকার আনুষ্ঠানিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক তৈরি হয় তাহলে চীন এবং ইজরায়েল কি কোনোভাবে বাংলাদেশ প্ল্যাটফর্ম ব্যাবহার করবে নর্থইস্ট ইন্ডিয়ায় জ্যুইশ ডায়াস্পোরা ইস্যুতে? এবং এই প্রশ্নটা ইন্ডিয়ান স্ট্র‍্যাটেজিস্টদের হিসাবে কি থাকবে?

ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যে মনিপুরের এক অখ্যাত সংগঠন লন্ডনে বসে স্বাধীন মনিপুর ঘোষণা দিয়ে রাখছে গত বছর।। সবকিছু হিসাব করে এ অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটা মুসলিম প্রধান মিত্র দেশে ইজরায়েল ইস্যুতে ভারত কিভাবে পদক্ষেপ নেয় সেইটা দেখার জন্য অপেক্ষায় থাকলাম।

[নোট: ডায়াস্পোরা – অতি সংক্ষেপে ইহুদিদের গল্পগাথা মতে তাদের ১২টা গোত্র ছিলো। আসিরিয় ও ব্যাবিলনীয়রা আড়াই হাজার বছর আগে দুই ধাক্কায় ইহুদিদের দুইটা রাজ্য দখল করে সবাইরে মেরে ধরে নির্বাসন দেয়। এই মারধরের মুখে ১২ টার মধ্যে ১০টা গোত্র হারায়ে যায়। এই হারায়ে যাওয়া গোত্রগুলির মধ্যে একটা আফগানিস্তানে আর একটা পুর্ব ভারতের মিজোরাম ও মনিপুরে আশ্রয় নেয়।

ইসরায়েলের এক হিস্ট্রির প্রফেসরের দাবী করে, পশতুনরা হারানো গোত্রের একটা। তেমনি ভারতের মিজোরাম ও মনিপুরের স্থানীয় মিজো ও মনিপুরীদের একাংশের বিশ্বাস তারা ঐ হারানো গোত্রের একটা। মাঝেমধ্যেই এখান থেকে কিছু লোকরে ইজরায়েল মনে চাইলে নাগরিকত্ব দিয়ে নিয়া যায়।]