শিক্ষিকাকে পদোন্নতিতে রাবি ভিসির তোড়জোড়, আইইআর পরিচালকের পদত্যাগ!

Ru teacher vc রাবি শিক্ষক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অধ্যাপক গোলাম কবীর।

দায়িত্ব নেয়ার নয় মাসের মাথায় বুধবার (২৫ নভেম্বর ) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর এই পদত্যাগ পত্র জমা দেন তিনি।

পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করে অধ্যাপক গোলাম কবীর বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়েছি। অনেকগুলো তদন্ত কমিটিতে ছিলাম। এখন আর এসব কমিটিতে থাকতে অনিচ্ছুক। এখন বিভাগে ফিরে যেতে চাই।

তাই গতকাল (২৪ নভেম্বর) উপাচার্য বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। আজ রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।

তবে পদত্যাগের পেছনে অন্য কোনও কারণ রয়েছে কিনা সে বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

এদিকে, আইইআর পরিচালকের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা হয়েছে কিনা সে বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক এম এ বারীকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।

প্রসঙ্গত, এর আগে দায়িত্ব নেয়ার এক বছর হবার আগেই চলতি বছর মার্চে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেন আইইআরের নবম পরিচালক অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী।

তারপর উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক গোলাম কবিরকে আইইআরের পরিচালক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। নিয়োগের ৯ মাস না যেতেই তিনিও পদত্যাগ করলেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক জানান, নিয়োগ ও পদন্নোতিতে স্বজনপ্রীতি, স্বেচ্ছাচারিতা ও অনিয়ম নিয়ে উপাচার্য আব্দুস সোবহানের সঙ্গে বিরোধের সৃষ্টি হয় অধ্যাপক গোলাম কবীরের।

এই বিরোধের জেরে আইআইআরের পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন তিনি।

রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত অধ্যাপক গোলাম কবীরের হঠাৎ পদত্যাগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সিনিয়র অধ্যাপকের কাছে জানতে চাইলে তারা প্রতিক্রিয়া জানান।

তারা জানান, অধ্যাপক আব্দুস সোবাহান দ্বিতীয় মেয়াদে উপাচার্যের দায়িত্ব নেওয়ার পর রাবি স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ পান বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দফতরের সাবেক প্রশাসক ও উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এফ এম হায়দারের স্ত্রী।

এর আগে তিনি দীর্ঘদিন একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। কিন্তু, নিয়ম অনুযায়ী আগের চাকরি থেকে ছাড়পত্র জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তিনি তা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়কে জমা দেননি।

এই বিষয়ে অধ্যাপক গোলাম কবীর বলেন, আমার আগের পরিচালকের সময়ে ওই শিক্ষিকা আগের চাকরির ছাড়পত্র জমা না দিয়েই চাকরি পেয়ে যান। নিয়ম অনুযায়ী ওই ছাড়পত্র দেয়া বাধ্যতামূলক।

ছাড়পত্র জমা না দিয়েই তিনি আগের চাকরির সার্ভিস কাউন্ট করে পদোন্নতির আবেদন করেন। তৎকালিন রেজিস্ট্রার, আইইআরের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের প্রিন্সিপাল সেটি নাকচ করে দেন।

এখন আবার ওই শিক্ষিকাকে পদোন্নতি দিতে আমাকে চাপ দেয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ম বহির্ভূত।

এছাড়া পদোন্নতির জন্য ওই নারী শিক্ষিক আগের সার্ভিস গণ্য করার আবেদন করেন। তবে বিষয়টি নিয়ম বহির্ভূত হওয়ায় আবেদনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, আইইআরের আগের পরিচালক ও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের অধ্যক্ষ নাকচ করে দেন।

সম্প্রতি, ফের ওই শিক্ষককে পদোন্নতি দিতে তোড়জোড় শুরু হয়। উপাচার্য আইইআরের পরিচালক অধ্যাপক গোলাম কবীরের কাছ থেকে নথিপত্র চেয়ে পাঠান।

এই নিয়ে এফএম আলী হায়দারের সঙ্গে আইইআরের পরিচালকের উচ্চবাচ্য হয়।

তবে প্রসঙ্গটি এড়াতে গিয়ে উচ্চবাচ্যের বিষয়টি অস্বীকার করেন অধ্যাপক গোলাম কবীর। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি।

অধ্যাপক এম আলী হায়দারের স্ত্রী নিয়োগ পাওয়ার সময় আইইআর এর পরিচালক ছিলেন অধ্যাপক আবুল হাসান চৌধুরী।

আগের চাকরি থেকে ছাড়পত্র জমা না দেওয়া সত্ত্বেও নিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষিকা পরে ছাড়পত্র জমা দেবেন বলে জানিয়েছিলেন।

পরে একাধিকবার তাকে ছাড়পত্রের জন্য তাগাদা দেওয়া হলেও তিনি বিভিন্ন অজুহাতে এখনও ছাড়পত্র এনে জমা দেননি।

পদোন্নতির আবেদনের বিষয়ে তিনি বলেন, আইন সম্মত না হওয়ায় তার আবেদন নাকচ করা হয়।

চাপ প্রয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে কোনও চাপ প্রয়োগ করা হয়নি।

তিনি নিজ থেকে পদত্যাগ করেছেন। এছাড়া আমার কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টিও অসত্য। আমি এখনও পদত্যাগপত্র পাইনি।

পদোন্নতির ফাইল চাওয়ার বিষয়টিও অসত্য বলে দাবি করে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম আছে, কেউ যদি ১০ বছরের বেশি সময় কোথায়ও চাকরি করার পর এখানে যোগ দেন এবং তার বেতনের ১০ শতাংশ এখানে জমা দেন তবে বিগত চাকরির সময়কাল এখানে গণ্য হবে।

সেক্ষেত্রে হায়দার সাহেবের স্ত্রী যদি যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করেন তাহলে পাবেন অন্যথায় পাবেন না। এখানে চাপ প্রয়োগের কোনও প্রশ্নই আসে না।

উপাচার্য আরও বলেন, ‘‘সম্প্রতি গোলাম কবীর আমাকে ফোন করে জানান, ‘আইইআরের অধীনে তিনটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে , এগুলো দেখভাল করতে পারছেন না।’ তিনি একবার স্ট্রোক করে হাসপাতালে ছিলেন।

কথার এক ফাঁকে গোলাম কবীর আমাকে (উপাচার্য) বলেন, ‘পারিবারিকভাবেও অশান্তি হচ্ছে, তার মেয়ের জামাইয়ের চাকরি স্থায়ী হয়নি, এসব কারণে তিনি এখন আর আইইআর পরিচালক পদে থাকতে রাজি নন।’’

তবে নিজের মেয়ের জামাতার চাকরির স্থায়ী হওয়ার সঙ্গে পদত্যাগের বিষয়টি সম্পর্কিত নয় বলে দাবি করেন অধ্যাপক গোলাম কবীর।

তিনি বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি ভিন্ন গ্রাউন্ডে, এর সঙ্গে জামাতার চাকরির কোনও সম্পর্ক নাই।’

প্রসঙ্গত, উপাচার্য আব্দুস সোবহানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণের দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।

এসব অনিয়ম ও দুর্নীতি তদন্তে ইউজিসি তাকে শুনানিতে ডাকলেও তাতে অংশ নেননি তিনি। তবে এরই মধ্যে ইউজিসি সেই তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়েছে বলে জানা যায়।