যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোতে অনুমোদন পেলো ফাইজারের ভ্যাকসিন

ফাইজার করোনা ভ্যাক্সিন

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ যখন বিশ্বব্যাপী চলছে , সংক্রমণ বৃদ্ধির পাশাপাশি সমানতালে বেড়েই চলেছে প্রাণহানি, কোনোভাবেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছিল না এই ভাইরাসের;

ঠিক তখনই একের পর এক দেশ মহামারি এই ভাইরাস মোকাবিলায় অনুমোদন দিয়ে যাচ্ছে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন।

সর্বশেষ শুক্রবার ফাইজার-বায়োএনটেকের যৌথ উদ্যোগে তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের টিকার জরুরি ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এফডিএ)। সংবাদমাধ্যম বিবিসি এক প্রতিবেদনে শনিবার (১২ ডিসেম্বর) এ খবর জানিয়েছে।

ভ্যাকসিনটির জরুরি অনুমোদনের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের তীব্র চাপের মুখে পড়েছিল এফডিএ।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী আলেক্স অ্যাজার স্থানীয় সময় শুক্রবার সকালে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সোম অথবা মঙ্গলবারের মধ্যে গণ টিকাদান কার্যক্রম শুরু করতে ফাইজারের সঙ্গে কাজ করবে তাঁর বিভাগ।

বিবিসি জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেকের ওই টিকা ব্যবহারের ব্যাপারে গত বৃহস্পতিবার সমর্থন দেন এফডিএর বিশেষজ্ঞরা। এরপর থেকেই এফডিএর ওপর চাপ পড়তে থাকে অনুমোদনের জন্য।

এদিকে, স্থানীয় গতকাল শুক্রবার ক্ষোভ জানিয়ে এফডিএকে ‘বড়, বৃদ্ধ ও ধীরগতিসম্পন্ন কচ্ছপ’ বলে টুইট করেন ট্রাম্প। এফডিএ প্রধানকে উদ্দেশ করে ট্রাম্প আরো লিখেছিলেন, ‘ড. হান, এখনই ভ্যাকসিনটি নিয়ে আসুন। খেলা বন্ধ করে মানুষের জীবন বাঁচানো শুরু করুন।’

ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন ব্যবহারে ঝুঁকির তুলনায় উপকারিতার মাত্রা বেশি কি না, তা নির্ধারণ করতে আলোচনায় বসেছিল এফডিএ পরামর্শ দানকারী ২৩-সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ দল। বৈঠক শেষে ভ্যাকসিন ব্যবহারের পক্ষে রায় দেয় দলটি।

এর আগে গত বুধবার মার্কিন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যালেক্স অ্যাজার বলেছিলেন, ‘এফডিএর অনুমোদন পাওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই আমরা ভ্যাকসিন হাতে পেয়ে যাব বলে আশা করছি। আর, ভ্যাকসিন পাওয়ার পর পরই সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকা ব্যক্তিদের টিকাদান শুরু করা হবে।’

মার্কিন সরকারের টিকা সরবরাহ কর্মসূচি ‘অপারেশন র‍্যাপ স্পিড’-এর পক্ষ থেকে জানানো হয়, অনুমোদন পাওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করা হবে।

চলতি ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ধাপে ভ্যাকসিনের ৬৪ লাখ ডোজ সরবরাহের পরিকল্পনা করছে ফাইজার। প্রতিটি টিকার দুটি করে ডোজ প্রয়োজন হবে। সে হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ধাপে ৩০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে। যুক্তরাষ্ট্রের মোট জনসংখ্যা ৩৩ কোটি।

বিবিসি জানিয়েছে, এর আগে স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার ভ্যাকসিনটির জরুরি অনুমোদনের সুপারিশ করেছিলেন মার্কিন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরা যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটা সময়ে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগের সুপারিশ করলেন, যখন দেশটিতে করোনার থাবা নতুন করে আঘাত হানছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারি আকারে শুরুর পর যুক্তরাষ্ট্রে গত বুধবার একদিনে কোভিড-১৯ রোগে রেকর্ড সংখ্যক মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার ৫৪ জন মারা গেছে। এর আগে গত ৭ মে যুক্তরাষ্ট্রে সর্বাধিক দুই হাজার ৭৬৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। কোভিড ট্র্যাকিং প্রজেক্টের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে মোট এক লাখের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চলতি বছরের ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) করোনাকে মহামারি ঘোষণা করে। এর আগে ২০ জানুয়ারি জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।

বিশ্বে করোনাভাইরাসে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এ পর্যন্ত এক কোটি ৫৮ লাখ ৩৪ হাজার ৯৬৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মোট ২ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।

এছাড়া ফাইজারের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাস টিকার অনুমোদন দিয়েছে মেক্সিকো।

দেশটির ডেপুটি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হুগো লোপেজ-গটাল বলেন, মেক্সিকো হচ্ছে চতুর্থ দেশ যার স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোফাপ্রিস ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন জরুরি ব্যবহার অনুমোদনের আবেদন মঞ্জুর করেছে।

মেক্সিকো সরকার এ সপ্তাহে ঘোষণা দিয়েছে যে ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তারা টিকাদান কর্মসূচি শুরু করবে।

প্রথম ধাপে তারা ১ লাখ ২৫ হাজার মানুষকে ২ লাখ ৫০ হাজার ডোজ টিকা দেবে। তবে এ কর্মসূচি শুরু করতে স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা কোফাপ্রিস কর্তৃক এ ভ্যাকসিনের অনুমোদন পাওয়া আবশ্যক।

মেক্সিকোতে টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে এ মহামারি মোকাবেলার সামনের সারিতে থাকা মেডিকেল স্টাফরা অগ্রাধিকার পাবে।

সরকার জানায়, মেক্সিকো ফাইজারের ৩ কোটি ৪৪ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন ক্রয়ের চুক্তি করেছে। প্রথম রাউন্ড টিকা দেয়ার পর তারা জানুয়ারি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত প্রতি মাসে ১০ লাখ হারে এবং এপ্রিলে ১ কোটি ২০ লাখ টিকা পাওয়ার আশা করছে।